বেশ কিছু সময় যাবৎ এমনটা মনে হচ্ছে যে, ভারত চিনের সঙ্গে তার সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে আগ্রহী। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও সুদৃঢ় পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। বিদেশমন্ত্রী ডক্টর এস জয়শঙ্কর বারবার উল্লেখ করেছেন যে, পূর্ব লাদাখে সীমান্ত সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কোনও অগ্রগতি হতে পারে না।
জুলাই মাসে অর্থ মন্ত্রক তার বার্ষিক অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে এবং এর রফতানিতে ভারতের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করার জন্য চিন থেকে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছে। এটি বেশ আশ্চর্যের। কারণ ২০২০ সালে পূর্ব লাদাখে চাপানউতোরের ফলে ভারত চিন থেকে এফডিআই-এর উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারত যদি প্রচলিত ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ কৌশলের সুবিধা নিতে চায়, তা হলে তাকে হয় চিনা সরবরাহ শৃঙ্খলে সমন্বিত হতে হবে অথবা ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রফতানি বৃদ্ধি করতে’ চিন থেকে এফডিআই ব্যবহার করতে হবে, ঠিক একই পদ্ধতিতে যেমনটা এর আগে পূর্ব এশীয় দেশগুলি করেছে। সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে যে, ‘চিনা সংস্থাগুলিকে ভারতে বিনিয়োগ করা এবং তার পরে চিন থেকে আমদানি করার পরিবর্তে এই বাজারে পণ্যগুলি রফতানি করা, ন্যূনতম মূল্য যোগ করা আরও কার্যকর হবে।’
উভয় পক্ষই তাদের নিজ নিজ অবস্থানে দৃঢ় থেকেছে। ভারত জোর দিয়ে বলছে যে, সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য পূর্ব লাদাখে স্থিতাবস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে। অন্য দিকে চিন আবার জোর দিয়ে বলেছে যে, সেখানে আদৌ কোনও প্রকৃত সমস্যাই নেই এবং ভারতের উচিত সীমান্ত সংক্রান্ত সমস্যাগুলিকে এক পাশে সরিয়ে রাখা এবং চিনের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল রাখার লক্ষ্যে এগোনো।
অর্থমন্ত্রকের এই মতামতগুলি বর্তমান নীতির উপর প্রভাব ফেলে কি না তা অবশ্য সময় বলবে। তবে সামান্য হলেও পরিবর্তন হয়েছে। উভয় পক্ষই তাদের নিজ নিজ অবস্থানে দৃঢ় থেকেছে। ভারত জোর দিয়ে বলছে যে, সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য পূর্ব লাদাখে স্থিতাবস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে। অন্য দিকে চিন আবার জোর দিয়ে বলেছে যে, সেখানে আদৌ কোনও প্রকৃত সমস্যাই নেই এবং ভারতের উচিত সীমান্ত সংক্রান্ত সমস্যাগুলিকে এক পাশে সরিয়ে রাখা এবং চিনের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল রাখার লক্ষ্যে এগোনো।
জুলাই মাসের শুরুতে এস জয়শঙ্কর সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন-এর (এসসিও) বৈঠকের পাশাপাশি তার চিনা প্রতিপক্ষ ওয়াং ইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। জয়শঙ্কর এক্স-এ উল্লেখ করেছেন যে, তিনি এবং তাঁর প্রতিপক্ষ ‘সীমান্ত অঞ্চলে অবশিষ্ট সমস্যাগুলির প্রাথমিক সমাধান নিয়ে আলোচনা করেছেন।‘ এবং তাঁরা ‘কূটনৈতিক ও সামরিক উপায়ের মাধ্যমে প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করতে’ সম্মত হয়েছেন। এর পাশাপাশি জয়শঙ্কর আরও উল্লেখ করেছেন যে, ‘এলএসি-কে সম্মান করা এবং সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও সুস্থিতি সুনিশ্চিত করা অপরিহার্য।’ তিনি বলেন যে, দুই দেশের সুসম্পর্কের চাবিকাঠি ছিল ‘তিনটি পারস্পরিক উপাদান’ – অর্থাৎ ‘পারস্পরিক শ্রদ্ধা, পারস্পরিক সংবেদনশীলতা এবং পারস্পরিক স্বার্থ’।
বিদেশ মন্ত্রকের একটি সাংবাদিক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দুই মন্ত্রী এ বিষয়েই সহমত পোষণ করেছেন যে, ‘সীমান্তে বর্তমান পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত করা উভয় পক্ষের স্বার্থের জন্য অনুকূল নয়।’ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, জয়শঙ্কর ‘অতীতে দুই সরকারের মধ্যে উপনীত প্রাসঙ্গিক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি, প্রোটোকল এবং সমঝোতাগুলি সম্পূর্ণ রূপে মেনে চলার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন।’
তিন সপ্তাহ পর লাওসের ভিয়েনতিয়েনে দুই বিদেশমন্ত্রীরই আবার দেখা হয়; আনুষ্ঠানিক এমইএ সাংবাদিক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাঁদের আলোচনায় ‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্থিতিশীল ও পুনর্গঠনের জন্য প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর অবশিষ্ট সমস্যাগুলির একটি প্রাথমিক সমাধান’ খোঁজার প্রয়োজনীয়তার উপর মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।’ এই বিজ্ঞপ্তিতেও ‘তিন পারস্পরিক উপাদান’-এর গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
ভারত ও চিনের অবস্থানের মধ্যে কতটা ব্যবধান রয়ে গিয়েছে, তা অবশ্য বৈঠকের পর চিনা সাংবাদিক বিজ্ঞপ্তি থেকেই স্পষ্ট হয়েছে, যেখানে সীমান্ত সমস্যাকে কার্যত উপেক্ষা করেছে এবং উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘চিন-ভারত সম্পর্কের স্থিতিশীল উন্নয়নের জন্য দুই পক্ষের উচিত পার্থক্য ও দ্বন্দ্বের ঊর্ধ্বে উঠে যুক্তিসঙ্গত পন্থা অবলম্বন করা।’
বিবৃতিতে জয়শঙ্করের কথা উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে যে, দুই পক্ষের ‘বিস্তৃত অভিন্ন স্বার্থ’ বিদ্যমান এবং ‘সীমান্ত অঞ্চলের পরিস্থিতি দুই সম্পর্কের মধ্যে কালো ছায়া ফেলেছে।’ তবে ভারতীয় পক্ষ ‘ভিন্নতার সমাধান খুঁজতে চিরাচরিত, কৌশলগত এবং উন্মুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি নিতে’ প্রস্তুত।
শীর্ষ স্তরে প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে নিউজউইক ম্যাগাজিনকে একটি সাক্ষাত্কার দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী চিনের সঙ্গে সম্পর্ক ‘গুরুত্বপূর্ণ ও তাত্পর্যপূর্ণ’। তিনি আরও যোগ করেন, এটি তাঁর ‘বিশ্বাস যে, আমাদের সীমান্তে দীর্ঘস্থায়ী পরিস্থিতির সমাধান করা দরকার, যাতে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততায় যে কোনও অস্বাভাবিকতাকে কাটিয়ে ওঠা যায়।’ মোদী আরও বলেন, তিনি আশা ও বিশ্বাস করেন যে, ‘কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে ইতিবাচক ও গঠনমূলক দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে আমরা আমাদের সীমান্তে শান্তি ও সুস্থিতি পুনরুদ্ধার করতে ও বজায় রাখতে সক্ষম হব।’
পূর্ব লাদাখে সামরিক ও কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে দুই পক্ষই ২০২০ সালে চিনাদের তরফে অবরুদ্ধ করে রাখা ছ’টি এলাকার মধ্যে তিনটি এলাকাকে ‘টহলদারিবিহীন এলাকা’য় পরিণত করতে সক্ষম হয়েছে এবং ভারতীয় বাহিনী কুগরাং নদী উপত্যকা, গোগরা এবং প্যাংগং সো-এ টহল দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। সমঝোতার অংশ হিসাবে স্পাংগুর সো-এর দিকে মুখ করে থাকা কৈলাস পর্বতাঞ্চল থেকে ভারতীয় সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
এখনও পর্যন্ত উভয় পক্ষই এলএসি-র উভয় পাশে যথেষ্ট পরিমাণে অতিরিক্ত বাহিনী বজায় রাখার বিষয়টিকে অব্যাহত রেখেছে।
তবে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চিনা অবরোধ এখনও বিদ্যমান এবং সেগুলি হল উত্তরে ডেপসাং বাল্জ এবং দক্ষিণে চার্ডিং-নিংলুং নালা এলাকা। এখনও পর্যন্ত উভয় পক্ষই এলএসি-র উভয় পাশে যথেষ্ট পরিমাণে অতিরিক্ত বাহিনী বজায় রাখার বিষয়টিকে অব্যাহত রেখেছে। শুধু মাত্র সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নকরণের পথে হাঁটলেই পূর্ব লাদাখে উত্তেজনা কমবে।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য কোর কম্যান্ডার পর্যায়ের ২১তম দফার বৈঠকটি ২০২৪ সালে চুশুল-মোল্ডো সীমান্ত মিটিং পয়েন্টে হয়েছিল। এবং এর সমান্তরাল ভাবে ২৭ মার্চ বেজিংয়ে ওয়ার্কিং মেকানিজম ফর কনসালটেশন অ্যান্ড কোঅর্ডিনেশন-এর (ডব্লিউএমসিসি)-এর নিয়মাবলির অধীনে কর্মকর্তাদের ২৯তম বৈঠক হয়েছিল। সীমান্ত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আর কোনও প্রাতিষ্ঠানিক বৈঠকই হয়নি। যদিও ওয়াং এবং জয়শঙ্কর আস্তানায় আশা প্রকাশ করেছিলেন যে, দ্রুতই ডব্লিউএমসিসি-র একটি বৈঠক হবে।
২০২০ সালে চিনের তরফে যা যা ঘটানো হয়েছে, তার আসল লক্ষ্য কী ছিল, তা আজও রহস্যে ঘেরা। ২০১৯ সালে শি জিনপিং চেন্নাইতে দ্বিতীয় অনানুষ্ঠানিক শীর্ষ সম্মেলনের জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে আসন্ন সময়ে দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্কের কথাই বলা হয়েছিল। আবার ২০১৯ ঠিক সেই বছরই, যে সময়ে লেনদেনের সংখ্যার (৫২৭) পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে চিনা বিনিয়োগ শীর্ষে ছিল। এ ক্ষেত্রে অবশ্য সর্বাধিক বিনিয়োগের বছর ছিল ২০১৫, যে বার ৮৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছিল।
কিন্তু ১৯৯৬ সালের সামরিক আস্থা নির্মাণ চুক্তি লঙ্ঘন করে আকস্মিক আক্রমণ হেনেছিল চিন এবং এলএসি-র অংশগুলিতে ভারতীয় সেনাদের টহল দেওয়া থেকে বিরত রাখতে পূর্ব লাদাখের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে অবরোধ স্থাপন করে। চিন কোনও ভারতীয় পোস্টে আক্রমণ করেনি এবং গলওয়ানের ঘটনার – যার ফলে ২০ জন ভারতীয় সৈন্যের মৃত্যু হয়েছিল – পর কোনও পরিকল্পিত পদক্ষেপ করার বদলে পরিস্থিতিই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল।
ভারতীয় প্রতিক্রিয়া ছিল দ্রুত ও কঠিন। শত শত চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ভারত সাংবাদিক বিজ্ঞপ্তি (প্রেস নোট ৩) প্রকাশ করে, যেখানে ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত ভাগ করে নেওয়া দেশগুলির বিনিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। স্পষ্টতই ‘কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে ভারতীয় সংস্থাগুলির সুবিধাবাদী দখল/অধিগ্রহণ’ রোধ করার লক্ষ্যে এমনটা করা হলেও এর প্রকৃত প্রভাব চিন থেকে এফডিআই প্রবাহের উপর স্পষ্ট পড়েছিল এবং চিন কাকতালীয় ভাবে সেই সময়ে পূর্ব লাদাখে অনুপ্রবেশ করেছিল। ২০২২ সালের মার্চ মাসে এই সংসদীয় প্রশ্নই উত্থাপিত হয়েছিল যে, আগের দুই বছরে ৩৪৭টি আবেদন গৃহীত হয়েছিল এবং এর মধ্যে ৬৬টি অনুমোদিত হয়েছিল ও ১৯৩টি বাতিল করা হয়েছিল।
শত শত চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ভারত সাংবাদিক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যেখানে ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত ভাগ করে নেওয়া দেশগুলির বিনিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এই সব সত্ত্বেও ভারত-চিন বাণিজ্য বাড়তে থেকেছে এবং ২০২৩-২৪ সালে এই বাণিজ্যের পরিমাণ ১১৮.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছয়। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় চিন ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হয়ে ওঠে। ভারত মাত্র ১৬.৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করে এবং ১০১.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আমদানি করে। এই অঙ্ক বিশাল ভারসাম্যহীনতাকেই দর্শায়। টেলিকম যন্ত্রাংশ, ওষুধের উপাদান এবং উন্নত প্রযুক্তি উপাদানগুলির মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যগুলির জন্য ভারত চিনের উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল।
চিন থেকে বর্ধিত এফডিআই চাওয়ার জন্য অর্থনৈতিক সমীক্ষার আহ্বানটিও আসলে ভারত সরকারের তরফে এই স্বীকারোক্তিই ছিল যে, ভারতের উৎপাদন শিল্পকে শক্তিশালী করতে এবং তাদের বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক করে তোলার জন্য ২০২০ সালে চালু করা প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনভেস্টমেন্ট (পিএলআই) স্কিমটি প্রত্যাশামাফিক ভাল কাজ করছে না।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের দিক থেকে দেখলে বল এখন চিনের কোর্টে অর্থাৎ যা করার এ বার চিনকেই করতে হবে। ভারত সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে, পূর্ব লাদাখে সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তারা সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ইচ্ছুক নয়। চিন সেই দাবিকে উপেক্ষা করে চলেছে এবং আরও ভাল সম্পর্কের আহ্বান জানিয়েছে। ইতিমধ্যে উভয় পক্ষই এলএসি বরাবর অতিরিক্ত বাহিনী বজায় রাখার পাশাপাশি সীমান্তের উভয় পাশে তাদের অবস্থান অব্যাহত রেখেছে।
মনোজ জোশি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিস্টিঙ্গুইশড ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.