-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ভারত-কানাডার সম্পর্কে বিচ্যুতি ক্ষমতা পরিবর্তনের গতিশীলতাকেই দর্শায়। কারণ ভারতের মতো দেশগুলি কূটনৈতিক নিয়মের চেয়ে ক্রমবর্ধমান ভাবে জাতীয় অখণ্ডতাকেই অগ্রাধিকার দেয়।
Image Source: Getty
ভারত ও কানাডার মধ্যে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে, যার ফলে উভয় পক্ষের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করা হয়েছে এবং দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাই এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য এই কূটনৈতিক সংঘর্ষকে পরিসংখ্যান ও দুই দেশের মূল নীতিগুলির আঙ্গিকে বিচার করা অপরিহার্য। সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি কি দেশগুলিকে ভিন্ন ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে প্ররোচনা জোগাচ্ছে?
বর্তমান আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় এ নিয়ে একটি ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে যে, আমরা হয়তো সার্বভৌমত্বের যুগে ফিরে এসেছি। এটি আন্তর্জাতিক ইতিহাসে সম্পূর্ণ নতুন বিতর্ক না হলেও - যা ১৬৪৮ সালে ওয়েস্টফালিয়ান ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর থেকে বেশ কয়েক বার প্রকাশ্যে উঠে এসেছিল - সম্প্রতি গত শতাব্দীর শেষের দিকে বিশ্বায়ন বনাম সার্বভৌমত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এই ধারণাকেই পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যে, পরিসংখ্যানের তুলনায় মৌলিক নীতিগুলির মধ্যে সার্বভৌমত্বই অন্যতম। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে ক্রমবর্ধমান শক্তিগুলি সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত বিতর্ককে বিভিন্ন ভাবে উস্কে দিয়েছে। উনিশ শতকে আমেরিকার শক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশটির সার্বভৌমত্বের সম্প্রসারণকে ‘ম্যানিফেস্ট ডেস্টিনি’ বলে তকমা এঁটে দেওয়া হয়েছিল। সে সময়ে মেক্সিকোর ৫৫ শতাংশ ভূখণ্ড অর্থাৎ আজকের দিনের ক্যালিফোর্নিয়া, নেভাদা, উটা, নিউ মেক্সিকো, অ্যারিজোনা, কলোরাডো এবং ওকলাহোমা, কানসাস ও ওয়াইমিং-এর কিছু অংশের ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য। বিশ শতকে উন্নয়নশীল বিশ্বের সার্বভৌমত্বের বিষয়টি স্বার্থ ছাড়াই ঔপনিবেশিকতার আকারে পশ্চিমীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। গত শতাব্দীর শেষে এবং এই শতাব্দীর শুরু থেকে, বিশ্বায়ন একাধিক উপায়ে এ কথা সুনিশ্চিত করেছে যে, সার্বভৌমত্ব আন্তর্দেশীয় হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ যুক্তি দিয়েছিলেন যে, সার্বভৌমত্বের যুগ শেষ হয়েছে। অনেক দেশ দ্বৈত নাগরিকত্বের অনুমতি দিয়েছে, পূর্ব থেকে পশ্চিমে অভিবাসন বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগের দরুন অকল্পনীয় বাধা ভেঙে মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। নানা দেশের মধ্যে ভারত-কানাডা সম্পর্ক জাতি-রাষ্ট্রগুলির অন্তর্নিহিত চরিত্রে আসন্ন সাংস্কৃতিক ও জাতিগত পরিবর্তনের একটি প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগী হয়ে থেকেছে যেমনটা একুশ শতক জুড়ে দেখা গিয়েছে। যাই হোক, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্দেশীয় সার্বভৌম উদ্বেগগুলি তীব্রতর হয়েছে এবং এর অন্ধকার দিকটি প্রকাশ্যে উঠে এসেছে। কানাডা ও ভারতের মধ্যে বর্তমানে যে সমস্যাগুলি চলছে তার বেশির ভাগই উপরোক্ত ঘটনার প্রতিফলন।
বিশ শতকে উন্নয়নশীল বিশ্বের সার্বভৌমত্বের বিষয়টি স্বার্থ ছাড়াই ঔপনিবেশিকতার আকারে পশ্চিমীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।
ভারতের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে এ হেন উপাদানগুলিকে কানাডার তরফে আশ্রয় প্রদান দেশটির অভ্যন্তরীণ উদারনৈতিক প্রসারের বিচ্যুতিকেই দর্শায়। কানাডায় গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার আড়ালে বর্তমানে আন্তর্দেশীয় অপরাধীরা রাজনৈতিক সুরক্ষা পাচ্ছে। একুশ শতাব্দীর রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বকে কেন্দ্র করে বিতর্কগুলি রাষ্ট্র থেকে ব্যক্তিজীবনে ছড়িয়ে পড়েছে এবং যখন এটিকে আন্তর্দেশীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখা হয়, তখন রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের দাবিগুলি ব্যক্তিবাদী দাবিগুলিকে অগ্রাহ্য করে। ব্যক্তির সার্বভৌম অধিকার হল রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয় ক্ষেত্রেই তার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা ও তা জোরদার করা। ভারত এবং শিখ জনগোষ্ঠীর মধ্যে অতীতের খালিস্তানি আন্দোলনের কানাডায় পুনর্জাগরণ দুই গণতন্ত্রের মধ্যকার অপ্রতিসাম্যতাকেই দর্শায়। এই দ্বিধা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ বর্তমান পরিস্থিতিকে প্রধানত লিবারাল পার্টির আধিকারিক অর্থাৎ কানাডার উদারপন্থী অভিজাতদের রাজনীতির বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়েছে।
ভারত ও কানাডার মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্কের অবনমনকে ক্ষমতার গতিশীলতা ও রাষ্ট্রীয় প্রতিক্রিয়া পরিবর্তনের একটি পাঠ বলা যেতে পারে। আধুনিক রাষ্ট্রগুলির প্রতিক্রিয়া - বিশেষ করে ভারতের মতো যে দেশগুলি তাদের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক অবস্থান সম্পর্কে সচেতন - একটি দৃঢ়তর বৈদেশিক নীতির দিকে চালিত করে, যেটিতে ঐতিহ্যগত এবং প্রত্যাশিত কূটনৈতিক নৈপুণ্যের চেয়ে জাতীয় অখণ্ডতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
আধুনিক রাষ্ট্রগুলির প্রতিক্রিয়া - বিশেষ করে ভারতের মতো যে দেশগুলি তাদের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক অবস্থান সম্পর্কে সচেতন - একটি দৃঢ়তর বৈদেশিক নীতির দিকে চালিত করে, যেটিতে ঐতিহ্যগত এবং প্রত্যাশিত কূটনৈতিক নৈপুণ্যের চেয়ে জাতীয় অখণ্ডতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
চিত্রনাট্যে বদল
বর্তমানে ভারত কানাডার প্রেক্ষিতে তার আখ্যানে ব্যাপক বদল এনেছে। ভারতের অর্থনীতি বিশ্বের পঞ্চম-বৃহত্তম, যেখানে কানাডা নবম স্থানে রয়েছে। ভারত ২০২২ সালে কানাডায় ৫.৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করেছে। আর কানাডা ৪.৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করেছে। কানাডার বিদেশি পড়ুয়াদের সবচেয়ে বড় উৎস হল ভারত, যেখানে প্রায় ছ’লক্ষ ভারতীয় পড়ুয়া কানাডীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতে পড়াশোনা করেন। ভারতীয় হিসাবে চিহ্নিত প্রায় ১.৪ মিলিয়ন কানাডীয়দের উপস্থিতি এই সম্পর্কের জটিলতায় আর একটি স্তর যোগ করে, যা একটি শক্তিশালী প্রবাসী জনভিত্তি গড়ে তোলে। এই অনুকূল পরিসংখ্যান সত্ত্বেও বর্তমান কূটনৈতিক সঙ্কট এক অপ্রতিসমতাকেই দর্শায়, যেটিকে কানাডা স্বীকার করতে অনিচ্ছুক বলে মনে হয়। ভারত-কানাডা সম্পর্কের নিয়ন্ত্রক পরামিতিগুলি উল্লেখযোগ্য ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে; ভারতের ক্রমবর্ধমান শক্তি ও প্রভাব ‘উন্নত-অনুন্নত’ বা পূর্ব-পশ্চিমের পূর্ববর্তী প্রভাবশালী আখ্যানকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিসরে ভারতের দৃঢ়তা তার বিদেশনীতির একটি নিয়ন্ত্রিত অথচ প্রয়োজনীয় পুনর্নির্মাণ, যা সুপ্ত হুমকির পাশাপাশি প্রথাগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঊর্ধ্বে বিস্তৃত হুমকির প্রতি সংবেদনশীল। এই বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সার্বভৌমত্বের প্রসঙ্গটি, যা আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতিতে বর্তমান মন্থনে গুরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং হামাস ও ইজরায়েলের মধ্যে বিদ্যমান সংঘর্ষ দর্শায় যে, কীভাবে সার্বভৌমত্বের ধারণাটি শুধুমাত্র ভিত্তিগত নয়, বরং আন্তর্জাতিক সংঘাতের জন্য এটি এমন এক সংঘর্ষবিন্দু, যা প্রায়শই একটি রাষ্ট্রের সক্রিয়তাকে আকার দেওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রবাদের অন্যান্য পরামিতিকে অতিক্রম করে। খালিস্তানিদের দ্বারা একটি অনিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক সমন্বয় - বিশেষ করে কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে - বিচ্ছিন্নতাবাদের জন্য নতুন করে আহ্বানের মাধ্যমে ভারতের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। ভারত খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তার সার্বভৌমত্বের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে। কারণ তারা কানাডার সীমান্তের মধ্যে থেকে একটি মৌলবাদী কর্মসূচির প্রচার চালানোর চেষ্টা করছে। এই ধরনের কর্মসূচি প্রচারকারীদের জন্য প্রত্যর্পণ এবং জবাবদিহিতার জন্য ভারতের দাবি শুধুমাত্র রাজনৈতিক অবস্থানই নয়, বরং একই সঙ্গে দেশটির জাতীয় অখণ্ডতা সংরক্ষণের মূলে নিহিত একটি বৈধ উদ্বেগও বটে। কানাডাকে অবশ্যই এই আবেগের স্বীকৃতি দিতে হবে, বিশেষ করে আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদের সঙ্গে তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা অর্থাৎ কেবেকের পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে।
ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং হামাস ও ইজরায়েলের মধ্যে বিদ্যমান সংঘর্ষ দর্শায় যে, কীভাবে সার্বভৌমত্বের ধারণাটি শুধু মাত্র ভিত্তিগত নয়, বরং আন্তর্জাতিক সংঘাতের জন্য এটি এমন এক সংঘর্ষবিন্দু, যা প্রায়শই একটি রাষ্ট্রের সক্রিয়তাকে আকার দেওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রবাদের অন্যান্য পরামিতিকে অতিক্রম করে।
কানাডা প্রায়শই তার অভ্যন্তরীণ ভিন্নমত পোষণকারীদের আবাসস্থল হিসেবে গর্ব বোধ করে। তা সত্ত্বেও কানাডা সার্বভৌমত্বের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলি পরিচালনা এবং একটি রাষ্ট্রের আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে হুমকিস্বরূপ বাহ্যিক চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলার মধ্যে পার্থক্যকে উপেক্ষা করে যায়। কানাডীয়রা কেবেকের মতো অঞ্চলে স্বায়ত্তশাসনের অভ্যন্তরীণ দাবিগুলিকে মান্যতা দেওয়ার বিষয়টিকে প্রশংসনীয় বলে মনে করলেও তাদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে, ভারতের পরিস্থিতি সেই সকল বাহ্যিক শক্তির ফলে জটিলতর হয়ে উঠেছে, যারা অন্য কোনও রাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট।
প্রায়শই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্বের দাবির মধ্যে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক থাকে। বিশ্ব যখন সার্বভৌমত্বের যুগে পুনঃপ্রবেশ করছে, দেশগুলিকে হুমকি ও রাষ্ট্রীয় প্রতিক্রিয়ার দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিসরের মাঝে পথ চলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কানাডার জন্য, সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে ভারতের প্রকৃত ও বৈধ উদ্বেগকে স্বীকৃতি দেওয়া দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হবে। কানাডা যদি আন্তর্জাতিক শক্তির পরিসরের পরিবর্তনকে উপেক্ষা করতে থাকে, তা হলে ভারতের সঙ্গে তার সম্পর্ক আরও সমস্যার মুখে পড়বে, যা শুধুমাত্র দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও কূটনীতির উপরেই নয়, এশিয়াতে তার নিজস্ব ভূমিকার উপরেও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ কানাডা তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের মাধ্যমে এমনটা অর্জন করতে আগ্রহী। এই পরিবর্তনগুলিকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যর্থতা ঐতিহাসিক ভাবে শক্তিশালী সম্পর্ককে দুর্বল করে দেওয়ার সম্ভাবনা রাখে। সার্বভৌমত্বের এই যুগে পথ করে নেওয়ার মাঝে উদীয়মান শক্তিগুলির তরফে রাষ্ট্রীয় প্রতিক্রিয়া হুমকির অবয়ব বদলকারী প্রকৃতির সঙ্গে সমানুপাতিক ভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, বিশেষ করে যখন হুমকিগুলি চরিত্রগত ভাবে আন্তর্দেশীয় প্রকৃতির হয়।
বিবেক মিশ্র অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ডেপুটি ডিরেক্টর।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Vivek Mishra is Deputy Director – Strategic Studies Programme at the Observer Research Foundation. His work focuses on US foreign policy, domestic politics in the US, ...
Read More +