Author : Harsh V. Pant

Published on Jan 07, 2022 Updated 0 Hours ago

আঞ্চলিক জটিলতা ও সেই সঙ্গে নিজস্ব উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের আরও সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন।

মায়ানমার সম্পর্কে ভারতের সাদা–কালো দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া অনুচিত

ভারতীয় বিদেশসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা সম্প্রতি মায়ানমারে গিয়েছিলেন সেখানকার পরিস্থিতির সরেজমিন মূল্যায়ন করতে, এবং ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিবেশীর নানা সংকট সমাধানের সর্বজনগ্রাহ্য সূত্র খুঁজে বার করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে উদ্বুদ্ধ করতে। নয়াদিল্লির অবশ্যই মায়ানমারে অতি গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে, যা তারা রক্ষা করতে এবং আরও প্রসারিত করতে চায়। যদিও পশ্চিমীরা গণতন্ত্রকে তাদের মায়ানমার নীতির একমাত্র মাপকাঠি করেছে, ভারতের সেই বিলাসিতার অবকাশ নেই। মায়ানমারের অন্য নিকটবর্তী প্রতিবেশীদের মতোই ভারত মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর স্বৈরাচারী প্রবণতা ছেঁটে ফেলতে আগ্রহী, কিন্তু সেখানে তার একাধিক স্বার্থ থাকায় তাকে সেখানকার সব পক্ষের সঙ্গেই কথাবার্তার পথ খুলে রাখতে হয়।

ফেব্রুয়ারি মাসে মায়ানমার সেনাবাহিনী একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া এবং আং সান সু চি ও তাঁর ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি–র (এনএলডি) অন্য নেতাদের আটক করার পর থেকে মায়ানমারে অশান্তি চলছে। ভারত প্রথম থেকেই স্পষ্ট ভাবে বলেছে যে গণতন্ত্রের পথে গত কয়েক দশক ধরে মায়ানমারের যা কিছু অর্জন তা খর্ব হতে দেওয়া উচিত নয়। ডিসেম্বর মাসের শুরুতে, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিরোধিতা উস্কে দেওয়া ও কোভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য সু চিকে চার বছরের (পরে কমিয়ে দু বছরের) কারাদণ্ড দেওয়ার পরে, নয়াদিল্লি ‘‌‌যে কোনও ঘটনা যা এই সব প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে এবং বিরোধ বাড়ায়’‌ সেই সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে এই আশা প্রকাশ করেছিল যে ‘‌তাদের দেশের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে সব পক্ষকে সংলাপের পথ প্রশস্ত করার চেষ্টা করতে হবে’‌।

ভারত প্রথম থেকেই স্পষ্ট ভাবে বলেছে যে গণতন্ত্রের পথে গত কয়েক দশক ধরে মায়ানমারের যা কিছু অর্জন তা খর্ব করা উচিত নয়।

কিন্তু ভারতের জন্য মায়ানমার এবং সংলগ্ন অঞ্চল থেকে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলো সরকারের চেহারা–চরিত্রের উপর নির্ভর করে না, এবং স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল (এসএসি) ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের প্রক্রিয়াও আর স্থগিত রাখা যাবে না। গত নভেম্বর মাসে মণিপুরে মায়ানমার সীমান্তের কাছে অসম রাইফেলসের একটি কনভয়ের উপর মারাত্মক হামলা আবার মনে করিয়ে দিল উত্তর-পূর্বে সমস্যা তৈরির জন্য চিনের প্রয়াসের কথা, বিশেষ করে এমন সময়ে যখন এলএসি বরাবর সীমান্তে উত্তেজনা বেশি থাকে। ভারত ও মায়ানমারের মধ্যে ফাঁকফোকরযুক্ত সীমান্তের কারণে কোভিড -১৯ অতিমারিও প্রভাব ফেলেছে। মায়ানমারে অতিমারির কারণে অর্থনৈতিক সঙ্কটের ফলে একটি মানবিক সঙ্কট তৈরি হলে তা ভারতের জন্য সব দিক থেকে শুধু ক্ষতিরই কারণ হবে। কাজেই যে কোনও ভাবে জরুরি ভিত্তিতে তা ঠেকাতে হবে।

মায়ানমারের সীমান্তবর্তী একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারতের উচিত গণতান্ত্রিক পথে এগনোর জন্য স্পষ্ট ভাবে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়ার উপর জোর দেওয়া;‌ কিন্তু প্রতিবেশী হিসেবে ভারত এই বিষয়েও সচেতন যে মায়ানমার কখনওই আন্তর্জাতিক চাপের মুখে তেমন ভাবে সাড়া দেয়নি। মায়ানমারে যে কোনও গণতান্ত্রিক উত্তরণের ক্ষেত্রে মুখ্য হবে সেখানকার সেনাবাহিনীর ভূমিকা, আর সে কারণেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ প্রয়োজন। দ্বিপাক্ষিক ভাবে বা বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ফোরামে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানালেও নয়াদিল্লিকে তাই মায়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। আর তা রাখতে হয় যেমন ভারতীয় স্বার্থ নিরাপদ রাখার জন্য, তেমনই রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি সহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রশ্নে সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে উপযুক্ত অংশীদার হয়ে ওঠার জন্য। সেনাবাহিনীকে প্রান্তিক করে রাখলে তা মায়ানমারকে চিনের দিকে ঠেলে দেবে, যে সেখান থেকে তার অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে নিজের স্বার্থসিদ্ধি করে নেবে। অভ্যুত্থানের পর থেকে মায়ানমারের উপর চিন নিজের অর্থনৈতিক মুষ্টি আরও শক্ত করেছে, এবং তা করেছে বিশেষ ভাবে চিন-মায়ানমার অর্থনৈতিক করিডরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলির উপর নজর কেন্দ্রীভূত করে।

আসিয়ানের পরবর্তী চেয়ারপার্সন কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানুয়ারি মাসে মায়ানমার সফরে যাবেন, এবং সম্ভবত নতুন করে যোগাযোগের শর্তাদি নির্ধারণ করবেন।

পশ্চিমীরা যখন নিন্দা ও নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রেখেছে, সেই সময় চিন মায়ানমারে বিনিয়োগ করছে এবং দেশটিকে নিজের কক্ষপথে টানছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অত্যধিক ব্যবহার–করে–ফেলা আরও নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়ে চলেছে, যদিও তাতে কাজ কিছুই হয় না। মায়ানমারের সেনাবাহিনী পশ্চিমী বিশ্বের বাগাড়ম্বর নিয়ে মাথা ঘামানো বন্ধ করে দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এই অবস্থায় প্রতিবেশী দেশগুলোকেই সামরিক শাসকদের আচরণ গঠনমূলক করে তুলতে হবে। এটা আশ্চর্যের কিছু নয় যে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও আসিয়ান–এর অধিকাংশ সদস্যের মতো অনেক দেশই মায়ানমারে সামরিক শাসনের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য এগিয়ে এসেছে। আসিয়ানের পরবর্তী চেয়ারপার্সন কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানুয়ারি মাসে মায়ানমার সফরে যাবেন, এবং সম্ভবত নতুন করে যোগাযোগের শর্তাদি নির্ধারণ করবেন।

তাই নয়াদিল্লিরও মায়ানমারের কাছে পৌঁছে যাওয়া ও নিজের নিজস্ব গতিপথ তৈরি করা প্রয়োজন। বিদেশসচিবের সফর তাঁকে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করে দেবে, আর তাদের সঙ্গে কথাবার্তার মাধ্যমে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের কাছ থেকে তাদের প্রত্যাশাও বুঝে নেওয়া সম্ভব হবে। আবার তিনি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যাতে শুরু হতে পারে তা নিশ্চিত করতে সামরিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কাজ করছেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনও কিছুকে সাদা আর কালোয় ভাগ করে ফেলাটা আদৌ কাজের নয়। ভারতের আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও প্রতিবেশীদের নিয়ে জটিলতার কারণেই ভারতকে মায়ানমারের বিষয়ে আরও সূক্ষ্ম অবস্থান নিতে হবে। মায়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির নিজের অতি–আবশ্যক বাস্তববাদ হারিয়ে ফেলা উচিত নয়।


এই নিবন্ধটি প্রথম প্রকাশিত হয় দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায়।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.