Author : Harsh V. Pant

Published on Apr 30, 2022 Updated 0 Hours ago

যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ভারত-ব্রিটেন সম্পর্কের ধারা ঊর্ধ্বমুখী।

ভারত এবং ব্রিটেন: এক নতুন উত্তরাধিকারের নির্মাণ

ইউক্রেনের যুদ্ধ বিশ্বে অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন এনেছে এবং আন্তর্জাতিক শক্তিগুলি তাদের নিজ নিজ বৈদেশিক নীতির পুনর্বিন্যাস করছে। ভারত আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে কারণ বর্তমানে নয়াদিল্লি বিভিন্ন দেশ থেকে আসা কূটনীতিবিদ এবং উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের আলাপ-আলোচনায় অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। ৩১ মার্চ ব্রিটেনের বিদেশ সচিব এলিজাবেথ ট্রাস এক বৃহত্তর কূটনৈতিক কৌশলের অঙ্গ হিসেবে নয়াদিল্লি সফরে আসেন। তিনি গত অক্টোবরেও ভারত সফরে এসেছিলেন। এলিজাবেথ ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং ভারত-ব্রিটেন স্ট্র্যাটেজিক ফিউচার ফোরামের একটি ট্র্যাক ১.৫ ডায়লগের উদ্বোধনী সংস্করণে অংশগ্রহণ করেন।

পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র

ইউক্রেন সঙ্কটের ফলে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলি সত্ত্বেও ভারত-ব্রিটেন সম্পর্কের ধারা ঊর্ধ্বমুখীই থেকেছে যার প্রকৃষ্টতম উদাহরণ হল ২০২১ সালের ৪ মে দুই দেশের মধ্যে কম্প্রিহেনসিভ স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ স্বাক্ষরের ঘটনা। এই চুক্তিটিতে ভারত-ব্রিটেন সম্পর্কের জন্য ২০৩০ রোড ম্যাপ বা লক্ষ্যমাত্রাও স্থির করা হয়েছে যাতে প্রধানত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য অংশীদারিত্বের রূপরেখা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। নয়াদিল্লিতে তাঁর সফরের সময়ে এলিজাবেথ ট্রাস রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা এবং মস্কোর উপরে বিশ্বজনীন কৌশলগত নির্ভরতা কমানোর উপরে জোর দেন। এমনটা করার জন্য তিনি আগ্রাসী দেশের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রগুলির একজোট হয়ে কাজ করার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন। সর্বোপরি তিনি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে  ব্রিটেন এবং ভারতের মধ্যে আরও গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলার গুরুত্বের উপরে জোর দেন, যার ফলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হওয়ার পাশাপাশি অঞ্চলটির নিরাপত্তাও শক্তিশালী হবে। এ ছাড়াও তিনি দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বাণিজ্য এবং সাইবার নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন। একটি নতুন যৌথ সাইবার সুরক্ষা কর্মসূচির ঘোষণা হতে চলেছে, যার লক্ষ্য হবে ভারত এবং ব্রিটেনের অনলাইন পরিকাঠামোকে সুরক্ষিত রাখা, যে হেতু উভয় দেশই সাইবার দুষ্কৃতী এবং র‍্যানসমওয়্যারের যৌথ হুমকি মোকাবিলায় একজোট হয়ে অনুশীলন চালানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। ভারত এবং ব্রিটেন উদীয়মান প্রযুক্তির বিষয়েও একটি মন্ত্রী পর্যায়ের শীর্ষ সম্মেলন অর্থাৎ দুই দেশের প্রথম স্ট্র্যাটেজিক টেক ডায়লগ মঞ্চস্থ করার পরিকল্পনা করছে।

ব্রিটেন এবং ভারত সামুদ্রিক অঞ্চলে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করতে সহমত হয়েছে। কারণ ব্রিটেন ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক ওশানস ইনিশিয়েটিভে যোগদান করবে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সামুদ্রিক নিরাপত্তা বিষয়ে একটি প্রধান অংশীদার হবে।

এর পাশাপাশি ব্রিটেন এবং ভারত সামুদ্রিক অঞ্চলে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করতে সহমত হয়েছে। ব্রিটেন ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক ওশানস ইনিশিয়েটিভে যোগদান করবে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সামুদ্রিক নিরাপত্তা বিষয়ে একটি প্রধান অংশীদার হবে। ২০২১ সালে এইচ এম এস কুইন এলিজাবেথ এবং ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ বঙ্গোপসাগরে ভারতীয় নৌবাহিনীর সঙ্গে একটি সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণ করে। এর পরে তারা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও তাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর সঙ্গে মহড়া চালায়। ২০১৫ সালে ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে স্বাক্ষরিত ডিফেন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি পার্টনারশিপ অনুযায়ী ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কেট শেয়ার বা অংশীদারিত্বের পরিমাণ এবং প্রতিরক্ষা উভয় ক্ষেত্রেই ভারত ব্রিটেনের এক গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার। ব্রিটেন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি আঞ্চলিক শক্তি হয়ে উঠেছে। কারণ ওমান, সিঙ্গাপুর, বাহরিন, কেনিয়া এবং ব্রিটিশ-ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তাদের নেভাল ফেসিলিটি বা নৌবহর সংক্রান্ত পরিকাঠামো রয়েছে।

ভারতে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহারকে সমর্থন করার জন্য ব্রিটেন ৭০ মিলিয়ন পাউন্ডের ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ তহবিলও সুনিশ্চিত করেছে, যা এই অঞ্চলে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির পরিকাঠামো তৈরিতে এবং সৌর শক্তির বিকাশে সাহায্য করবে৷ জানুয়ারি মাসে ভারত ও ব্রিটেন ভারত-ইউ কে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট বা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির প্রথম দফার আলোচনা সম্পন্ন করে। এই আলোচনায় বিশ্বের পঞ্চম এবং ষষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতিগুলির মধ্যে একটি বিস্তৃত সর্বাত্মক চুক্তি সুনিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়। এটিতে উভয় দেশের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা ২৬টি নীতিকে কেন্দ্র করে ৩২টি অধিবেশনে আলোচনা চালান। প্রথম দফার আলোচনা ২০২২ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত পরবর্তী দফাগুলির আলোচনার ভিত্তি স্থাপন করেছিল। ভারত এবং ব্রিটেন এই মাসে নয়াদিল্লিতে একটি প্রাথমিক পর্যায়ের চুক্তি স্বাক্ষরের প্রত্যাশিত সম্ভাবনা নিয়ে মিলিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ নয়াদিল্লি শ্রমনিবিড় রফতানির জন্য শুল্ক ছাড়ের পাশাপাশি ব্রিটিশ বাজারে ভারতীয় মৎস্য, ওষুধ এবং কৃষি পণ্যগুলির সহজ প্রবেশাধিকার চেয়েছে। ব্রিটেনের জন্য ভারতের সঙ্গে একটি সফল এফ টি এ সম্পন্ন করতে পারা তার ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে উত্সাহিত করবে। কারণ ব্রিটেন ব্রেক্সিটের পর থেকে ইউরোপের বাইরে তার বাজার প্রসারিত করতে চেয়েছে। বিশ্বস্তরে নিজেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বশক্তি হিসেবে মজবুত করতে ব্রিটেন ইন্দো-প্যাসিফিকের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির সুযোগগুলিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।

পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র

ভারত-ইউ কে-এর সম্পর্কের পথে একটি নব উদ্দীপনার সঞ্চারের মধ্যে সম্প্রতি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ভারত সফরে এসেছিলেন। বরিস জনসন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শেষ বার ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে গ্লাসগোতে কপ ২৬ চলাকালীন সাক্ষাৎ করেছিলেন যেখানে উভয় নেতাই ভারত-ইউ কে জলবায়ু অংশীদারিত্বের উপরে জোর দিয়েছিলেন। তাঁর সফর চলাকালীন এফ টি এ নিয়ে আলোচনা আরও জোরদার হয়েছে। কারণ ২০৩০ রোড ম্যাপের লক্ষ্য হল ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ করা।

ব্রিটেনের জন্য ভারতের সঙ্গে একটি সফল এফ টি এ সম্পন্ন করতে পারা তার ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে উত্সাহিত করবে। কারণ ব্রিটেন ব্রেক্সিটের পর থেকে ইউরোপের বাইরে তার বাজার প্রসারিত করতে চেয়েছে।

ভারত এবং ব্রিটেন উভয়ই উত্তরাধিকার সমস্যাগুলি কাটিয়ে উঠতে এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্তরে কৌশলগত ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক সহযোগিতার প্রচারের জন্য ফলপ্রসূ আলোচনা চালাতে আগ্রহী। ফিনটেক, বাজার নিয়ন্ত্রণ, স্থিতিশীল ও দূষণমুক্ত ক্ষেত্রে বিনিয়োগ এবং সাইবার নিরাপত্তার মতো ক্ষেত্রগুলি আন্তঃসহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র রূপে উঠে এসেছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রা জেনেকা এবং সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার যৌথ উদ্যোগে ভারতে কোভিশিল্ড টিকা তৈরির উল্লেখযোগ্য সাফল্য দুই দেশের সম্ভাব্য সফল সহযোগিতার অনেক উদাহরণের মধ্যে একটি মাত্র। নয়াদিল্লিতে বরিস জনসনের সফর ক্রমপরিবর্তনশীল বিশ্বক্রমে ভারতের ভূমিকার গুরুত্বকেই দর্শায়। কারণ নয়াদিল্লি আগামী মাসগুলিতে একাধিক বৈদেশিক নেতাকে অভ্যর্থনা জানানোর পাশাপাশি ২০২৩ সালে জি২০ প্রেসিডেন্সির জন্য আয়োজক হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করছে৷

এক অনন্য মুহূর্ত

যে হেতু ভারত একটি ‘নেতৃস্থানীয় শক্তি’ হিসেবে উদীয়মান বিশ্বক্রমে নিজের ভূমিকা সুনিশ্চিত করতে চায় এবং ব্রিটেন ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে তার কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির পুনঃপরিমাপ করতে আগ্রহী, তাই এটি ভারত-ব্রিটেন সম্পর্কের জন্য এক অনন্য মুহূর্ত। দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব একটি দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এই প্রক্রিয়ায় পাকিস্তানের মতো পুরনো বিষয়গুলি দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ক্ষেত্রে প্রান্তিক হয়ে পড়েছে। নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা লন্ডন এবং নয়াদিল্লি উভয়ের তরফেই এক নতুন কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গির দাবি রাখে। এই মুহূর্তকে কাজে লাগানোর এবং একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত ভাবে সাড়া দিতে পারে এমন একটি অংশীদারিত্বের ভিত্তি স্থাপন করার সময় এসেছে।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দি হিন্দুতে

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.