Author : Shashank Mattoo

Published on Jul 05, 2022 Updated 0 Hours ago

ভারতকে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যৌথ ভূ-রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা স্বার্থে সহযোগিতা করতে হবে, যাতে চিনের সঙ্গে ভারত সমভারসম্পন্ন হয়ে উঠতে পারে এবং নতুন এশীয় ব্যবস্থায় তার প্রভাব প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

ভারত ও একটি নতুন এশীয় ব্যবস্থা

এশিয়ায় মার্কিন শক্তি ম্লান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিত্র ও প্রতিপক্ষরা একটি নতুন এশীয় ব্যবস্থার সংজ্ঞা তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। জাপান এগিয়ে এসেছে অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেনের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করতে, আর দক্ষিণ কোরিয়া কোয়াড–এ যোগদানের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে। ইতিমধ্যে সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে তার একটি গোপন নিরাপত্তা–চুক্তির খবর আসার পর সমস্যাসঙ্কুল আবহাওয়ায় নতুন করে ঝড় তুলেছে বেজিং।

প্রথমেই বলতে হয়, টোকিও পুরো অঞ্চল জুড়ে আগেই কূটনৈতিক ঝড় তুলছে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ–প্রতীক্ষিত প্রতিরক্ষা চুক্তির কথা ঘোষণার চার মাস পরেই জাপান ব্রিটেনকে আরেকটি ইচ্ছুক অংশীদার হি্সেবে খুঁজে পেয়েছে। এক সঙ্গে ধরলে এই দুটি রেসিপ্রোকাল  অ্যাক্সেস এগ্রিমেন্টস (আরএএ)–এর লক্ষ্য, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের কথা অনুযায়ী, তিনটি দেশের সামরিক বাহিনীকে ‘‌সম্পূর্ণ আন্তঃকার্যক্ষমতাযোগ্য’‌ বা ইন্টারঅপারেবল করে তোলা। মূল বিষয়টি হল, এই চুক্তিগুলি প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলিকে একে অপরের ঘাঁটিতে প্রবেশ করতে, যৌথ মহড়া চালাতে, একে অপরকে পুনরায় সরবরাহ দিতে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সম্মিলিত প্রতিক্রিয়ার অনুমতি দেবে।

একই ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল সদ্য সমাপ্ত কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট ইউন সিওক-ইওল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করার এবং জাপানের সঙ্গে তাঁর দেশের দ্বন্দ্ব শেষ করার ইচ্ছার ইঙ্গিত দিয়েছেন। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে প্রেসিডেন্ট ইউন স্পষ্ট করেছেন যে তাঁর প্রশাসন কোয়াড–এ যোগদানের আমন্ত্রণ পেলে বিষয়টি ‘‌ইতিবাচক ভাবে পর্যালোচনা করবে ’‌। এমনকি যদি আনুষ্ঠানিক সদস্যপদের দাবি খুব দূরের বিষয় বলে প্রমাণিত হয়, সিওলের নতুন জমানা জলবায়ু  পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে, বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত জলপথ সুরক্ষিত করতে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা দিতে কোয়াড–এর প্রচেষ্টায় যোগ দিতে পারে।

একই ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল সদ্য সমাপ্ত কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট ইউন সিওক-ইওল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করার এবং জাপানের সঙ্গে তাঁর দেশের দ্বন্দ্ব শেষ করার ইচ্ছার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সবটা মিলিয়ে এই পরিবর্তনগুলি একটি নতুন এশীয় ব্যবস্থা প্রতিফলিত করে। অঞ্চলটি শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সংজ্ঞায়িত করেছিল যে পুরনো ‘‌হাব অ্যান্ড স্পোক’‌ মডেল, তা থেকে এগিয়ে গিয়েছে। অতীতে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো প্রধান খেলোয়াড়রা একে অপরের সঙ্গে অনুরূপ সম্পর্ক গড়ে না–তুলে আমেরিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক উপভোগ করছিল। এর ফলে একটি কৌশলগত নির্ভরতা তৈরি হয়েছিল, যা ওয়াশিংটনকে নিজের স্বার্থ পূরণের জন্য এশিয়ায় একটি জোট সংগঠিত করতে সক্ষম একমাত্র শক্তি হিসেবে একটি অনন্য ও অত্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থানে রেখেছিল।

যাই হোক, ওয়াশিংটন এখনও এই অঞ্চলের নেতৃস্থানীয় শক্তি হিসেবে থেকে গেলেও চিনের তুলনায় এর আপেক্ষিক পতন একে স্বীকার করতে বাধ্য করেছে যে মার্কিন নেতৃত্বকে সত্যিকারের বহুপাক্ষিক শক্তির জোট দিয়ে আগের ব্যবস্থা প্রতিস্থাপিত করতে হবে। জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেনের মধ্যে সাম্প্রতিক চুক্তির পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়ার কোয়াড–এ যোগদানের ইচ্ছা একটি নতুন এবং নেটওয়ার্কযুক্ত এশিয়াকে প্রতিফলিত করছে, যেখানে দেশগুলি ধীরে ধীরে কিন্তু নিশ্চিত ভাবে মার্কিন শক্তির উপর তাদের নির্ভরতা পেরিয়ে এসেছে।

নয়াদিল্লির ভূ-রাজনৈতিক ইচ্ছার তালিকার শীর্ষে দীর্ঘকাল ধরেই ছিল তার প্রতিবেশে এক সত্যিকারের বহুমুখী এশিয়া তৈরি হোক। মস্কোর ট্যাঙ্কগুলি ইউক্রেনে গর্জন করতে শুরু করার পরেও ভারতের রুশ অস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তীব্র জাতীয় বিতর্ক কিন্তু কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের জন্য ভারতের অগ্রাধিকারের বিষয়টিকেই সামনে নিয়ে এসেছে। স্বায়ত্তশাসন অর্জনের যৌক্তিকতা অনেকটাই একই রয়ে গেলেও তা অর্জনের উপায়গুলো পরিবর্তিত হয়েছে। স্বাধীনতার পরের দশকগুলিতে অভ্যন্তরীণ রূপান্তর অর্জনের বিশাল কর্মকাণ্ডের উপর ভারতের ফোকাস এটিকে এমন একটি বৈদেশিক নীতির পথে নিয়ে যায় যা প্রকাশ্য জোটবদ্ধতা এড়িয়ে চলে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখে, এবং মহাশক্তিগুলির সংঘাতের বাইরে থাকে। যে হেতু দেশটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিল আবর্তের মধ্যে দিয়ে এগনোর চেষ্টা করেছিল, তাই ভারতের নীতিগত পছন্দ ছিল মহাশক্তি প্রতিযোগিতার ফলে সৃষ্ট পরিবর্তন এবং মন্থন থেকে দূরে সরে থাকা।

মস্কোর ট্যাঙ্কগুলি ইউক্রেনে গর্জন করতে শুরু করার পরেও ভারতের রুশ অস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তীব্র জাতীয় বিতর্ক কিন্তু কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের জন্য ভারতের অগ্রাধিকারের বিষয়টিকেই সামনে নিয়ে এসেছে।

যাই হোক, ৭৫ বছর বয়সী ভারত এই নতুন এশীয় ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ ভিন্ন সুযোগের মুখোমুখি হয়েছে: কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের জন্য নয়াদিল্লিকে বিশ্বাসযোগ্য এবং সক্ষম অংশীদারিত্বের আকারে বিকল্পগুলি অর্জন করতে হবে। ভারতকে তার অর্থনীতিকে রূপান্তরিত করতে, তার সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণ করতে, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো অস্তিত্বের চ্যালেঞ্জগুলির সঙ্গে লড়াই করতে আরও ঘনিষ্ঠ জোটবদ্ধতা তৈরি করতে হবে। সেই সঙ্গেই ভারতকে কোয়াড–এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলির মাধ্যমে খেলার নিয়মগুলিকে আকার দিতে হবে, এবং মার্কিন শক্তি ম্লান হয়ে আসার পর নিজেকে একটি নেতৃস্থানীয় রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরতে হবে৷ ভারত যদি নতুন ব্যবস্থায় একটি নেতৃস্থানীয় রাষ্ট্র হয়ে উঠতে সফল হয়, কয়েকটি শক্তি সম্ভবত তাদের উপর নির্ভরতাকে কাজে লাগিয়ে নয়াদিল্লিকে কিছু নির্দিষ্ট নীতিগত অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার জন্য চাপ দিতে পারে। আমেরিকার এই পতনের সময় ভারতও একটি নতুন এশীয় ব্যবস্থায় প্রকৃত স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে পারে, যদি শুধু গা–বাঁচিয়ে চলার পরিবর্তে সে আন্তর্জাতিক রাজনীতির জোয়ারকে নতুন রূপ দিয়ে এই বিরল সুযোগকে কাজে লাগায়।

যেমন, এশিয়ার প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি এই নতুন ব্যবস্থার সুবাদে তৈরি–হওয়া সুযোগের একটি দৃষ্টিকোণ সামনে নিয়ে এসেছে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া উভয়েই যখন ওয়াশিংটনের থেকে স্বাধীন জাতীয় শক্তির বিভিন্ন ঘাঁটি তৈরির লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়িয়েছে, সেই সময় নয়াদিল্লি এই অঞ্চলে প্রতিরক্ষা অংশীদারদের একটি পরিসর খুঁজে পাবে। প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির উন্নয়নে সহযোগিতা সম্প্রসারিত করে এবং প্রতিটি পক্ষের প্রতিরক্ষা চাহিদার বোঝাপড়া গড়ে তুলে নয়াদিল্লি অনেক নতুন প্রতিরক্ষা অংশীদার পেতে পারে, রাশিয়ার মতো শক্তির উপর তার বহু দিনের নির্ভরতা কমাতে পারে, এবং একটি শীর্ষস্থানীয় এশীয় রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। ভারত যদি এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় দুটি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে প্রতিরক্ষা আন্তঃকার্যক্ষমতা বাড়াতে পারে, তা হলে সে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা কর্মকর্তা হয়ে উঠবে। তার এই অবস্থান একটি নতুন এশীয় ব্যবস্থায় নয়াদিল্লির প্রতিপত্তি, শক্তি ও অবস্থান নিশ্চিত করবে।

প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির উন্নয়নে সহযোগিতা সম্প্রসারিত করে এবং প্রতিটি পক্ষের প্রতিরক্ষা চাহিদার বোঝাপড়া গড়ে তুলে নয়াদিল্লি অনেক নতুন প্রতিরক্ষা অংশীদার পেতে পারে, রাশিয়ার মতো শক্তির উপর তার বহু দিনের নির্ভরতা কমাতে পারে, এবং একটি শীর্ষস্থানীয় এশীয় রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।

সর্বব্যাপী চিনা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলার একটি পথ গড়ে তোলার জন্যও ভারতের একটি নতুন এশীয় ব্যবস্থার প্রয়োজন। আঞ্চলিক নিরাপত্তা থেকে শুরু করে উদীয়মান প্রযুক্তি, সব কিছুতে আধিপত্য বিস্তার করার জন্য বেজিং-এর প্রয়াসের কারণে অসংখ্য ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন হবে। নয়াদিল্লি যদি এমন একটি জোটের অংশ হয় যা তার সদস্যদের অনন্য শক্তিকে কাজে লাগাবে, তা হলে হয়তো ভারত দেখতে পাবে যে তার পথ চলা আরও সহজ হবে। সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে চিনের সাম্প্রতিক প্রতিরক্ষা চুক্তি এই বাস্তবতাকে স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরে। চুক্তির কালি শুকিয়ে যেতে যেতেই এর সম্ভাব্য প্রভাবের নানা ধরনের বিশ্লেষণ সামনে আসছে। যদিও এই চুক্তির বেশির ভাগটাই হল  দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি স্থায়ী চিনা ঘাঁটির সম্ভাব্য প্রতিষ্ঠা, তা হলেও চুক্তিটির তাৎপর্য অনস্বীকার্য। বেজিংয়ের কূটনৈতিক অভ্যুত্থান একে শুধু অস্ট্রেলিয়ার উঠোনে পা রাখার অনুমতিই দেয়নি, এমন একটি জায়গাও দিয়েছে যেখান থেকে সে কোয়াড–এর সামরিক কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করতে পারে। চিন এখন বিশ্বের বৃহত্তম নৌবহরের অধিকারী হওয়ায় আপাতদৃষ্টিতে চিনের অভিপ্রায় হল তা দূরবর্তী কোণে কোণে মোতায়েন করা। কাজেই কোয়াড–এর অভিন্ন লক্ষ্য যে অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক গড়ে তোলা তা এই নতুন এশীয় ব্যবস্থার উপর নির্ভর করবে। জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সম্প্রতি সম্পাদিত প্রতিরক্ষা চুক্তিগুলি তাদের সামরিক বাহিনীর যৌথ ভাবে টহল দেওয়ার এবং প্রয়োজনে প্রশান্ত মহাসাগরীয় জলসীমা রক্ষা করার ক্ষমতা বাড়াবে। ভারত মহাসাগরে নয়াদিল্লির নিজস্ব ক্ষেত্র থেকে দেখলে এই আরও–মজবুত নিরাপত্তা ব্যবস্থা শুধু ভালই করবে।

যে হেতু ইউরোপে রুশ কর্মকাণ্ড এবং এশিয়ায় চিনের সম্প্রসারণ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পুরনো নিশ্চয়তাকে উল্টে দিয়েছে, ভারতের কাছে এখন শুধু জোয়ারে গা না–ভাসিয়ে ভূ-রাজনীতির জোয়ারকে রূপ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এটি এমন এক সুযোগ যা নয়াদিল্লির হাতছাড়া না–করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.