বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল ঘোষিত ভারতের নতুন বৈদেশিক বাণিজ্য নীতি (এফটিপি) ১ এপ্রিল ২০২৩ থেকে কার্যকর হয়েছে। এটি ভারতকে বিশ্বব্যাপী মূল্যশৃঙ্খলে আরও দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত করতে এবং ভারতকে একটি রপ্তানি কেন্দ্রে পরিণত করতে চায়৷
কোভিড–১৯ অতিমারি এবং ‘৩১/০৩/২০২৩ পর্যন্ত অস্থিতিশীল ভূ–রাজনৈতিক পরিস্থিতি’–র আলোকে পূর্ববর্তী বৈদেশিক বাণিজ্য নীতিটির (২০১৫–২০) মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। নতুন এফটিপি হল প্রণোদনা–ভিত্তিক পদ্ধতি থেকে একটি পরিবর্তন, এবং তা রপ্তানিকারীদের জন্য এমন একটি সক্ষম বাস্তুতন্ত্র তৈরি করে যা ‘আত্মনির্ভর’ ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটি পদক্ষেপ।
নতুন এফটিপি মোটের উপর প্রযুক্তি ও ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে বাণিজ্যিক সুযোগসুবিধার উপর বেশি জোর দিয়েছে, ই–কমার্সকে উন্নীত করতে চেয়েছে, এবং বিভিন্ন প্রকল্প ও ব্যবস্থার মাধ্যমে রপ্তানি সহজতর করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। যদিও এই এফটিপি সাধারণভাবে রপ্তানি কেন্দ্র হওয়া এবং বৈশ্বিক মূল্যশৃঙ্খলে ভারতের অংশীদারি বাড়ানোর উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে, তবে ই–কমার্স এবং ‘স্থানীয় থেকে বৈশ্বিক’ ধারণাটির উপর গুরুত্ব আরোপ বর্তমান নীতির অন্তর্ভুক্তিমূলক দিকটিকেও তুলে ধরে।
নতুন এফটিপি হল উতসাহ–ভিত্তিক (ইনসেনটিভ- বেসড) পদ্ধতিরপরিবর্তে রপ্তানিকারীদের জন্য এমন একটি সক্ষম ব্যাবস্থা তৈরি করা যা ‘আত্মনির্ভর’ ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ একটি পদক্ষেপ।
‘ডিজিটাল অর্থনীতিতে আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যের প্রসার’ সংক্রান্ত নতুন বিভাগটি ই–কমার্স রপ্তানিকে উৎসাহিত করে। এটি ই–কমার্স রপ্তানিতে এফটিপি–র সমস্ত সুবিধা প্রসারিত করা, কুরিয়ারগুলির মাধ্যমে রপ্তানির মূল্যসীমা চালানপ্রতি ভারতীয় মুদ্রায় ১,০০০,০০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা, ডাকপথে ই–কমার্সের প্রসার, এবং ই–কমার্সের প্রসারের জন্য হ্যান্ডহোল্ডিং অ্যান্ড আউটরিচ স্কিম–সহ বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে তা করেছে।
ভারতের ই–কমার্স বাজার বিশ্বের বৃহত্তম বাজারগুলির মধ্যে একটি, এবং আগামী বছরগুলিতে তা আরও বড় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি ইন্টারনেট ও স্মার্টফোনের বর্ধিত অনুপ্রবেশ এবং সরলীকৃত অর্থপ্রদান ব্যবস্থা–সহ বিভিন্ন কারণের সংমিশ্রণের ফল। যদিও ই–কমার্স রপ্তানি এখনও ভারতের মোট পণ্য রপ্তানির একটি ভগ্নাংশ মাত্র, এফটিপি ২০২৩ এর পরিবর্তন করতে এবং বিক্রেতাদের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশে সক্ষম করে ভারতের ই–কমার্স রপ্তানি বাড়াতে চায়।
এই নীতিতে ই–কমার্স এক্সপোর্ট হাব (ইসিইএইচ) তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আন্তঃসীমান্ত ই–কমার্স কার্যক্রমের জন্য অনুকূল ব্যবসায়িক পরিকাঠামো ও সুবিধাদান কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। এই হাবগুলি রপ্তানির জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো প্রদান করবে, এবং নিকটতম লজিস্টিক হাবের পরিষেবাগুলির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে লাভবান হবে৷
এই সুযোগ–সুবিধাগুলি সুলভ করা এবং এই উদ্যোগগুলি থেকে উপকৃত হওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের লক্ষ্য হল আউটরিচ কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, এবং অন্যান্য সরকারি কর্তৃপক্ষ ও জ্ঞান–অংশীদারদের সঙ্গে মিলে দক্ষতা বিকাশ ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, এফটিপি–র লক্ষ্য পোস্টাল রুটের মাধ্যমে ই–কমার্স-এর প্রসার ঘটানো। এর জন্য ‘ডাক নির্যাত কেন্দ্র’কে এমনভাবে গড়ে তোলা হবে যাতে তা ‘বিদেশি পোস্ট অফিসের (এফপিও) সঙ্গে হাব–অ্যান্ড–স্পোক মডেলে কাজ করে আন্তঃসীমান্ত ই–কমার্স সহজতর করবে, এবং কারিগর, তাঁতি, এমএসএমই–কে দূরবর্তী বা ভূবেষ্টিত অঞ্চল থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছনোর’ ব্যবস্থা করবে। এই মডেলটি বিক্রেতাদের এমন এলাকা থেকে রপ্তানি করার সুযোগ দেবে যা সাধারণত রসদ শৃঙ্খল থেকে বাদ পড়ে যায়।
এই নীতিতে ই–কমার্স এক্সপোর্ট হাব (ইসিইএইচ) তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে, যা আন্তঃসীমান্ত ই–কমার্স কার্যক্রমের জন্য অনুকূল ব্যবসায়িক পরিকাঠামো ও সুবিধাদান কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে।
রপ্তানির জন্য ই–কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলি একটি গণতান্ত্রিক বাজার হিসাবে কাজ করতে পারে, যা ছোট বিক্রেতা, এমএসএমই ও স্থানীয় কারিগরদের আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকার এবং উচ্চ লাভের মার্জিন ধরে রাখতে দেয়। এফটিপি ২০২৩ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতিতে ডিজিটালভাবে সক্ষম আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যের ব্যবস্থা করে দিতে চায়, এবং ছোট ব্যবসায়ীদের ভারতের রপ্তানির অংশ করে তোলার চেষ্টা করে।
দ্বিতীয়ত, ‘স্থানীয় থেকে বৈশ্বিক’ এবং ‘স্থানীয়ের জন্য আওয়াজ তোলা’র চেতনায় ‘রপ্তানি হাব হিসাবে জেলাগুলির উন্নয়ন’ বিভাগের লক্ষ্য হল ‘দেশের জেলাগুলির রপ্তানি সম্ভাবনা–সহ পণ্য ও পরিষেবাগুলিকে চিহ্নিত করে রপ্তানি কেন্দ্রে পরিণত করা’।
নীতিটি প্রতিটি জেলার জন্য ডিস্ট্রিক্ট এক্সপোর্ট প্রমোশন কমিটি (ডিইপিসি) ও ডিস্ট্রিক্ট এক্সপোর্ট অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করার প্রস্তাব করেছে, যা অনলাইনে পর্যবেক্ষণ করা যাবে।
জেলা পর্যায়ে পণ্য/পরিষেবার রপ্তানি চিহ্নিতকরণের, এবং ক্রেতা–বিক্রেতা সম্মেলন, বাণিজ্য মেলা, ও কর্মশালার মতো আউটরিচ কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে অনেক বেশি সংখ্যক রপ্তানিকারীকে তুলে আনা যেতে পারে। জেলাগুলি থেকে দুই থেকে তিনটি উচ্চ সম্ভাবনাময় পণ্য/পরিষেবার চিহ্নিতকরণ ও অগ্রাধিকার প্রক্রিয়াটি কিন্তু প্রতিযোগিতা ও উদ্ভাবন বাড়াতে পারে।
জেলা পর্যায়ে এই হস্তক্ষেপগুলি সচেতনতা তৈরি করতে পারে, এবং ছোট বিক্রেতাদের বড় বাজারগুলিতে প্রবেশ করতে সহায়তা করতে পারে। যদিও ভারতের কিছু জেলা ইতিমধ্যেই তাদের রপ্তানির জন্য পরিচিত, নতুন পদক্ষেপগুলি আউটরিচের সুযোগকে আরও প্রশস্ত করবে এবং পূর্বে অনুপস্থিত সম্ভাব্য রপ্তানিকারীদের তুলে নিয়ে আসবে।
শেষত, এফটিপি মূল্যশৃঙ্খলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং নতুন বাজারে প্রবেশের লক্ষ্যে চারটি নতুন ‘টাউন অফ এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স’ (টিইই) তৈরির কথা ঘোষণা করেছে। এই চারটি নতুন টিইই রপ্তানি উৎকর্ষের শহর ইতিমধ্যে বিদ্যমান ৩৯টি শহরের অতিরিক্ত হবে। নতুন শহরগুলো হল:
এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স শহর |
পণ্য বিভাগ |
ফরিদাবাদ |
পোশাক |
মোরাদাবাদ |
হস্তশিল্প |
মির্জাপুর |
হস্তনির্মিত কার্পেট ও দারি |
বারাণসী |
তাঁত ও হস্তশিল্প |
এই স্কিমের অধীনে, (১) ইউনিটগুলির স্বীকৃত অ্যাসোসিয়েশনগুলিকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে মার্কেট অ্যাক্সেস ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের অধীনে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে, যাতে প্রযুক্তিগত পরিষেবাগুলির ক্ষেত্রে রপ্তানি প্রসার প্রকল্পের জন্য বিপণন, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আরও বাজার অন্বেষণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বাণিজ্য প্রদর্শনী/মেলা পরিদর্শন সম্ভব হয়; এবং (২) এই এলাকার সাধারণ পরিষেবা প্রদানকারীরা ইপিসিজি প্রকল্পের অধীনে অনুমোদনের যোগ্য হবেন৷ এই অতিরিক্ত সুবিধাগুলি স্থানীয় হস্তশিল্প ও শিল্পকে আরও উন্নীত করবে, এবং ফলস্বরূপ কারিগরদের জীবিকাকে সমর্থন করবে।
উপরের নীতিগুলি ছোট বিক্রেতা, ব্যবসা ও স্থানীয় কারিগরদের কাছে পৌঁছনোর জন্য সরকারের প্রচেষ্টাকে তুলে ধরে। যেহেতু ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক এক ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য ও পরিষেবা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে, ছোট বিক্রেতা এবং প্রত্যন্ত জেলাগুলি থেকে রপ্তানিও এই বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে। ছোট ব্যবসা ও কারিগরদের থেকে রপ্তানিকে উন্নীত করা শুধু অর্থনীতিতেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে না, সেইসঙ্গে মানুষের জীবিকার উপরেও প্রভাব ফেলবে।
সামগ্রিকভাবে, ভারতকে একটি নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়িক অংশীদার করে তোলার জন্য এফটিপি–র লক্ষ্য রফতানিতে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে দেশের অংশীদারি বাড়ানো। একে এগিয়ে নিয়ে যাবে ছোট বিক্রেতা ও ব্যবসার জন্য ইতিবাচক হস্তক্ষেপের সঙ্গে বৃহত্তর রপ্তানির জন্য সরকারি পরিকল্পনা। স্থানীয় বিক্রেতাদের অন্তর্ভুক্ত করা এবং ক্ষমতায়নের মাধ্যমে এফটিপি প্রতিটি বিক্রেতাকে ভারতের রপ্তানি কাহিনির একটি অংশ করে তুলতে চায়।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.