পশ্চিম এশিয়া (এই প্রবন্ধে যেটিকে ‘মধ্যপ্রাচ্য’ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে) এমন এক দশকের মধ্য দিয়ে গিয়েছে যেটিকে ইয়েমেন, ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়ায় প্রক্সি দ্বন্দ্ব ও নাগরিক অভ্যুত্থান এবং লোহিত সাগর, আরব উপসাগর ও পূর্ব ভূমধ্যসাগরের সামুদ্রিক পরিসরে আঞ্চলিক প্রতিযোগিতার তীব্র চক্র দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্তমানে আঞ্চলিক রাজধানীগুলি সম্ভাব্য দ্বন্দ্ব নিবারণের পথ অনুসরণ করছে বলে করা মনে হচ্ছে। বেশ কয়েক জন বিশ্লেষক এবং নীতিনির্ধারক ইরান ও সৌদি আরব, তুর্কিয়ে ও মিশর, মিশর ও কাতার, তুর্কিয়ে ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি (ইউএই), তুর্কিয়ে ও সৌদি আরবের মধ্যে সাম্প্রতিক সমঝোতা এবং সম্ভাব্য দ্বন্দ্ব নিবারণের পথের জন্য অন্য আঞ্চলিক উদ্যোগগুলিকে এমন কৌশলগত সমন্বয় রূপে দর্শাতে ইচ্ছুক, যা বৃহত্তর অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্রে পরিবর্তন আনতে পারে। এই চরিত্রায়ণটি নির্ভুল নয় এবং কৌশলগত সমন্বয়ের সঙ্গে কৌশলী দ্বন্দ্ব নিবারণের পন্থাকে সংমিশ্রিত করে। মধ্যপ্রাচ্য যখন এক দিকে ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক বিশৃঙ্খলা, ইউক্রেনের সংঘাত, এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান চাপানউতোর এবং এই অঞ্চলের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতির পরিবর্তন দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত, তখন যে মৌলিক বিষয়টি অঞ্চলটিকে প্রাথমিকভাবে একটি সংঘর্ষের দিকে চালিত করতে পারে, তা এখনও অক্ষুণ্ণ রয়েছে এবং এর ফলে প্রতিযোগিতা ও প্রক্সি সংঘর্ষের চক্রটি অপরিবর্তিতই থাকে, যা অতীতেও অঞ্চলটিকে গ্রাস করেছিল।
বিশ্বব্যাপী বিশৃঙ্খলা
বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যে যা ঘটছে, তা হল একটি ট্যাকটিকাল ডি-এস্কেলেশন বা কৌশলী দ্বন্দ্ব নিবারণের পন্থা, যার অর্থ হল আঞ্চলিক শক্তিগুলি কেবল পশ্চিম এশিয়ার রাজনৈতিক বাস্তবতার নিরিখেই নয়, বরং কোভিড-১৯ অতিমারি, ইউক্রেন সঙ্কট এবং সংশ্লিষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মতবিরোধ, এমনকি তাইওয়ান এবং বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে ঘিরে ক্রমবর্ধমান চাপানউতোরের ফলে তীব্রতর হওয়া বৈশ্বিক বিশৃঙ্খলার আলোকেও তাদের অবস্থানকে পুনর্বিবেচনা করতে চাইছে। আঞ্চলিক অর্থনীতিকে শ্লথ করে দেওয়ার পাশাপাশি সরবরাহ শৃঙ্খলকে ব্যাহত করে এবং ঋণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে অতিমারি এক ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। সৃষ্ট ব্যাঘাতের পরিসর এবং তীব্রতা সত্ত্বেও এটি নিবিড় প্রক্সি দ্বন্দ্ব এবং ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের চক্রকে ভাঙতে ব্যর্থ হয়। যদিও এর ফলে এটি আঞ্চলিক রাজধানীগুলিকে ইউক্রেন সঙ্কট পরবর্তী চাপানউতোর বৃদ্ধি এবং তাইওয়ান প্রণালীতে সম্ভাব্য সংঘাতের মতো ভবিষ্যতের বৃহৎ বিপর্যয়গুলির সামনে অরক্ষিত করে তোলে।
মধ্যপ্রাচ্য যখন এক দিকে ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক বিশৃঙ্খলা, ইউক্রেনের সংঘাত, এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান চাপানউতোর এবং এই অঞ্চলের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতির পরিবর্তন দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত, তখন যে মৌলিক বিষয়টি অঞ্চলটিকে প্রাথমিকভাবে একটি সংঘর্ষের দিকে চালিত করতে পারে, তা এখনও অক্ষুণ্ণ রয়েছে এবং এর ফলে প্রতিযোগিতা ও প্রক্সি সংঘর্ষের চক্রটি অপরিবর্তিতই থাকে, যা অতীতেও অঞ্চলটিকে গ্রাস করেছিল।
পশ্চিম এশীয় দৃষ্টিকোণ
উচ্চ জ্বালানি মূল্য, খাদ্য নিরাপত্তায় ব্যাঘাত এবং প্রথম ও দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হওয়ার মতো যুদ্ধের অর্থনৈতিক পরিণতির মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক প্রতিযোগিতার উপর মনোনিবেশ করা থেকে দেশগুলির কৌশলগত অভিপ্রায়গুলিকে লক্ষ্যচ্যুত করার মাধ্যমে ইউক্রেন দ্বন্দ্ব পশ্চিম এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্রে রদবদল ঘটিয়েছে। অধিগ্রহণের ফলে যে অশান্তির সৃষ্টি হয়েছে, তা মিশরের মতো উদীয়মান বাজারগুলিতেও অনুভূত হতে পারে। বিশ্বের বৃহত্তম গম আমদানিকারক হওয়ার দরুন এবং রাশিয়া ও ইউক্রেন সেই দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি বাজার হওয়ার ফলে মিশর একটি খাদ্য নিরাপত্তা সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে। বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বৃহত্তর ব্যাঘাতের আর একটি উদাহরণ হল উদীয়মান বাজারগুলিতে তার তীব্র প্রভাব এবং এ ক্ষেত্রে মিশর এবং তুর্কিয়ে উল্লেখযোগ্য। আরও পূর্বের দিকে এগোলে ইরান ব্যাপক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং ইসলামি প্রজাতন্ত্রের কেন্দ্রে আঘাতকারী এক অবিরাম বিক্ষোভ আবর্তের মধ্যে পড়েছে। আরব উপসাগরীয় দেশগুলি আর্থিকভাবে সুরক্ষিত হলেও বর্তমানে একটি জটিল ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্রের অংশ হয়ে উঠেছে, যা তাদের সামুদ্রিক নিরাপত্তা, এশীয় বাজারে জ্বালানির প্রবাহ এবং উপসাগরীয় অঞ্চলে ইয়েমেন ও ইরানের কার্যকলাপের দরুন সৃষ্ট অশান্তি ছড়িয়ে পড়ার ফলে তাদের নিজস্ব সুরক্ষা ও নিরাপত্তাকে সঙ্কটের মুখে ফেলেছে।
ওয়াশিংটনের অবস্থান কী?
এই অঞ্চল জুড়ে বর্তমান কৌশলগত দ্বন্দ্ব নিবারণের পন্থার আর একটি উপাদান হল বিশেষত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল তার অগ্রাধিকারের তালিকায় উঠে আসার ফলে পশ্চিম এশিয়া সম্পর্কে আগ্রহ হারিয়ে ফেলার প্রেক্ষিতে অঞ্চলটি সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান। মার্কিন বিদেশনীতির মনোযোগের প্রেক্ষিতে এ কথা স্পষ্ট যে, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলটি ইউরোপীয় দেশগুলির নিবিড় পর্যবেক্ষণের আওতাভুক্ত এবং যেখানে ওয়াশিংটন সংশ্লিষ্ট সংঘাতে ইউক্রেনকে সমর্থন জুগিয়ে চলেছে। দীর্ঘমেয়াদি সামরিক উপস্থিতি হ্রাস করেও পশ্চিম এশিয়ায় তার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাবকে রক্ষা করার ওয়াশিংটনের আকাঙ্ক্ষাকে একাধিক আঞ্চলিক রাজধানীগুলিই স্বীকৃতি দিয়েছে। বাস্তবে অঞ্চলটিতে ওয়াশিংটন যে অতুলনীয় নিরাপত্তা এবং সামরিক পদচিহ্ন বজায় রেখেছে, তা আঞ্চলিক দেশগুলির কৌশলগত সমীকরণকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে।
বিশ্বের বৃহত্তম গম আমদানিকারক হওয়ার দরুন এবং রাশিয়া ও ইউক্রেন সেই দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি বাজার হওয়ার ফলে মিশর একটি খাদ্য নিরাপত্তা সঙ্কটের সম্মুখীন হয়েছে।
এই আঞ্চলিক কৌশলগত দ্বন্দ্ব নিবারণের পন্থা কি স্থায়ী হবে?
গঠনগত অজুহাত যা পশ্চিম এশিয়ার প্রতিযোগিতা এবং প্রক্সি সংঘর্ষের চক্রকে চালিত করেছিল, সে বিষয়ে এখনও কোনও সুস্পষ্ট সমাধান মেলেনি। ইরাকে প্রধানত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন এবং সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের কারণে ক্ষমতার ভারসাম্যের অনুপস্থিতি তুর্কিয়ে ও ইরানকে ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন, লেবানন, লিবিয়া এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগর, লোহিত সাগর এবং আরব সাগরের সামুদ্রিক পরিসরে প্রভাব বিস্তারে সক্ষম আন্তঃআঞ্চলিক শক্তিতে রূপান্তরিত করেছে। এই পরিকাঠামোগত অবস্থার পরিবর্তন হয়নি এবং আঞ্চলিক কৌশলগত দ্বন্দ্ব নিবারণের পন্থা – তার স্থায়িত্ব এবং সম্ভাবনা যা-ই হোক না কেন – আঞ্চলিক দেশগুলির মধ্যে কৌশলগত ভিন্নতাগুলিকে সামাল দিতে সক্ষম হবে না। যদি ভবিষ্যতে অঞ্চলটি প্রক্সি সংঘর্ষ এবং প্রতিযোগিতার পরিচিত স্থিতিতে ফিরে আসে, তা হলে পর্যবেক্ষকদের আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.