Published on Nov 22, 2024 Updated 0 Hours ago

শি-র রাষ্ট্রচালিত পদ্ধতির কারণে এবং পশ্চিমীদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের কারণে চিনের প্রতি বাজারের আস্থা হ্রাস পেয়েছে এবং ভারতকে অবশ্যই চিনের বিকল্প হিসাবে নিজেকে তুলে ধরতে হবে।

মার্কিন-চিন বাণিজ্যের ঘাটতি থেকে লাভবান হতে পারে ভারত

Image Source: Getty

গত চার দশকে চিনের ‘অর্থনৈতিক অলৌকিক উত্থান’ এক দিকে চিনের কমিউনিস্ট পার্টির বাজারবান্ধব নীতি এবং উদ্যোক্তাদেরদ্‌যাপনের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছিল এবং অন্য দিকে পশ্চিমের পুঁজিপতিরা চিনের বিশাল বাজারের কারণে দীর্ঘমেয়াদি বাজি ধরেছিল। কিন্তু এখন এই দুটি স্তম্ভের মাটির ভিত্তিই নড়বড়ে হয়েছে বলে মনে করা যেতে পারে।

সম্প্রতি চিনের তৃতীয় ত্রৈমাসিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশ দর্শিয়েছে যে, তার জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৪.৬ শতাংশ এবং তা এ বছর সবচেয়ে মন্থর। চিনা পরিকল্পনাকারীরা প্রায় শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও প্রথম ত্রৈমাসিক (৫.১ শতাংশ) এবং দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের (৪.৭ শতাংশ) পরিসংখ্যান এই ধারণাকেই শক্তি জোগাচ্ছে যে চিন মোটেও তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না। গোল্ডম্যান স্যাকস এবং সিটিগ্রুপ এ বছর চিনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ৪.৭ শতাংশ দর্শিয়েছে। অন্য সূচকগুলিও উদ্বেগজনক। সামগ্রিক ভাবে, চাকরির নিরাপত্তার ভয় এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের কারণে ভোক্তাদের আস্থা হ্রাস পাচ্ছে। নির্মাণাধীন অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি নিয়ে রিয়েল-এস্টেট ক্ষেত্রেও সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নির্মাণকারীরা সময় মতো আবাসন প্রকল্পগুলি সম্পূর্ণ করতে না পারার কারণে তা প্রায় দুই দশকের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গিয়েছে। রিয়েল এস্টেটে প্রাক-বিক্রয় নির্মাণকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি তাদের বিনিয়োগকৃত মূলধন দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে এবং নগদ প্রবাহের কারণে নতুন প্রকল্পের পরিকল্পনার সঙ্গে এগিয়ে যেতে সক্ষম করে। সম্পত্তি বাজার গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি জিডিপি-র প্রায় ২৫ শতাংশ অবদান রাখে।

রিয়েল এস্টেটে প্রাক-বিক্রয় নির্মাণকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি তাদের বিনিয়োগকৃত মূলধন দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে এবং নগদ প্রবাহের কারণে নতুন প্রকল্পের পরিকল্পনার সঙ্গে এগিয়ে যেতে সক্ষম করে।

চিনে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে ২৮ শতাংশ কমেছে। এই সংক্রান্ত চিনের উপলব্ধির উপর প্রকাশিত দুটি সমীক্ষা মার্কিন এবং ইউরোপীয় কর্পোরেটদের চিন্তাধারার অন্তর্দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। সাংহাইতে আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্স দ্বারা সঙ্কলিত চায়না বিজনেস রিপোর্ট ২০২৪-এ প্রকাশ করা হয়েছে যে, শীতল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে চিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থাগুলির আস্থা রেকর্ড নিম্নে পৌঁছেছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে বিনিয়োগের ক্ষুধা হ্রাস করেছে। মাত্র ১৩ শতাংশ উত্তরদাতা চিনকে তাঁদের প্রথম বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে তুলে ধরেছেন, যা কিনা সমীক্ষার ইতিহাসে সর্বনিম্ন। শীর্ষ তিনটি বিনিয়োগ পছন্দের মধ্যে অন্যতম হিসাবে চিনের ক্রমাঙ্ক প্রায় চার বছর আগে ৫৩ শতাংশ থেকে ৩৪ শতাংশে নেমে এসেছে। সর্বোপরি, প্রায় ২৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন যে, চিতাঁদের ‘নিম্ন অগ্রাধিকার’।

বিকল্প ভাবে, চিনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন চেম্বার অফ কমার্স তার বার্ষিক পজিশন পেপারে বলেছে, এমন একটি ধারণা ছিল যে চিনে পরিচালিত বিদেশি ব্যবসাগুলি বিনিয়োগের জন্য হ্রাসপ্রাপ্ত লাভের সম্মুখীন হয়েছে, যা চিনে পরিচালনার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিকে সমর্থন করে না। বিনিয়োগকারীরা পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, চিনা বাজারে সমস্যাগুলি স্থায়ী প্রকৃতি, যা একটি উল্লেখযোগ্য কৌশলগত পুনর্বিবেচনা দাবি করে। সর্বোপরি, ইইউ চেম্বারের ৪৪ শতাংশ সদস্য ভবিষ্যতে লাভের তুলনায় লোকসানেরই সম্ভাবনা দেখেছেন। ইইউ সদস্যদের আস্থার অবনতি ঘটেছে মূলত নিয়ন্ত্রক সমস্যা, সরকারি সংগ্রহে পছন্দ, বাজারে প্রবেশাধিকার এবং অতিরিক্ত ক্ষমতার কারণে।

পশ্চিমের দৃষ্টিভঙ্গি অর্ধপরিবাহী প্রযুক্তির উপর রফতানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং চিনের উন্নত প্রযুক্তি খাতে বহির্মুখী বিনিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

এমন ধারণাও ছিল যে, জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে চিনা রাষ্ট্রের বাগাড়ম্বর এবং তার স্ব-নির্ভরতার রাজনৈতিক প্রচারের মতো রাজনৈতিক কারণগুলি চিনে পরিচালিত ইউরোপীয় সংস্থাগুলির জন্য বাধা তৈরি করেছে। বাইডেন প্রশাসনের অধীনে লক্ষ্য ছিচিন সংক্রান্ত ঝুঁকিমুক্ত’ পরিবেশ করা, যেটিকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান স্থিতিস্থাপক সরবরাহ শৃঙ্খলের’ নির্মাণ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। পশ্চিমের দৃষ্টিভঙ্গি অর্ধপরিবাহী প্রযুক্তির উপর রফতানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং চিনের উন্নত প্রযুক্তি খাতে বহির্মুখী বিনিয়োগের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বেজিংয়ের সর্বোচ্চ স্তরে রাজনৈতিক মূল্যায়ন হল এই যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা পরিচালিত পশ্চিম চিনকে ঘিরে ফেলা, মোকাবিলা করা এবং দমন করার জন্য এমন পদক্ষেপ নিয়েছে যা চিনের উন্নয়নের জন্য গুরুতর চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।

পশ্চিমের প্রচারেমোকাবিলা করার জন্য চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং চিনের আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং স্বাধীন গবেষণার ভিত্তিতে দেশীয় ভাবে মূল প্রযুক্তির বিকাশের ব্যবস্থা দ্বিগুণ করেছেন। পশ্চিমের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ার দরুন শি শিল্প, আর্থিক পুঁজি, উদ্ভাবন এবং প্রতিভা শৃঙ্খলকে সমন্বিতকরণের মাধ্যমে ‘চিনা শৈলীর আধুনিকীকরণঅর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন। অভ্যন্তরীণ ভাবে চিনের অর্থনৈতিক বিশ্বাস পরিবর্তিত হচ্ছে। ২০১৩ সালে চিনা নেতারা প্রকাশ করেছিলেন যে, বাজার গড়বে অর্থনীতিতে সিদ্ধান্তকারী শক্তি২০২৪ সালে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন খাতের উপর বৃহত্তর জোর দেওয়ার জন্য অর্থনৈতিক গতিপথের পরিবর্তন ঘটছে। প্লেনাম রেজোলিউশনে বলা হয়েছে যে, চিন তাদের প্রতিযোগিতার উন্নতির জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগের (এসওই) ব্যাপক সংস্কার করবে। চিন এই আশা করে যে, বেসরকারি সংস্থাগুলি গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করবে, যা প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে সাহায্য করবে এবং তা নিছক মুনাফা অর্জনের মধ্যেই সীমিত থাকবে না। চিন শিল্প যন্ত্রাংশ, স্বাস্থ্যসেবা সরঞ্জাম, ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট এবং শিল্প সফ্টওয়্যারের জন্য শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ শিল্প শৃঙ্খলগুলির মাধ্যমে স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এই ভাবে ভূ-রাজনৈতিক অবস্থার অর্থ হল এই যে, চিনা অর্থনীতি পশ্চিমী কর্পোরেটদের ক্ষতির জন্য তার প্রণোদনা কাঠামো পুনর্গঠন করছে।

বাণিজ্য ক্ষেত্রটির কথা মাথায় রাখলে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে উদ্ভূত বিতর্ক এবং চিনের বিষয়ে নীতিগত গতিপথ নিয়ে চিন্তার কারণ আছে বইকি। আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্স রিপোর্টের জন্য সমীক্ষা করা উত্তরদাতাদের প্রায় ৭০ শতাংশ শুল্কের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেপ্রেসিডেনশিয়াল ডিবেটের সময় উভয় প্রার্থীই একে অপরকে চিনের প্রতি নরম হওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছিলেনকমলা হ্যারিস ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দোষারোপ করেছেন প্রযুক্তি বিক্রির সুবিধার জন্য, যা চিনকে পিপলস লিবারেশন আর্মি আধুনিকীকরণে সহায়তা করেছিল। পালাক্রমে, ট্রাম্প প্রাক্তন ডেমোক্র্যাট প্রশাসনকে প্রতিবেশী মেক্সিকো চিনের কারখানা নির্মাণের দিকে বিন্দুমাত্র দৃষ্টিপাত না করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন, যার ফলে উত্পাদনের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক শ্রেণির অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। সুতরাং, এ কথা স্পষ্ট যে, মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরে চিনের বিরুদ্ধে মার্কিন অসহযোগিতা আরও দৃঢ় হবে।

প্রেসিডেনশিয়াল ডিবেটের সময় উভয় প্রার্থীই একে অপরকে চিনের প্রতি নরম হওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছিলেনকমলা হ্যারিস ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দোষারোপ করেছেন প্রযুক্তি বিক্রির সুবিধার জন্য, যা চিনকে পিপলস লিবারেশন আর্মি আধুনিকীকরণে সহায়তা করেছিল।

উপসংহারে বলা যায়, চিন তার জিডিপি-র লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে এখন সংশয় বাড়ছে। ১৯৭০-এর দশকে চিন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের শুরু থেকে উভয়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সমন্বিতকরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি পাশ্চাত্যে এই উপলব্ধি বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, পরিবর্তনশীল চিনের প্রতিক্রিয়ার দরুন তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। যে কোন ব্যবসার মূল বিষয় হল বিনিয়োগের উপর লাভের বর্তমান প্রত্যাশিত হার। শি-র রাষ্ট্রচালিত পদ্ধতির কারণে চিনের বাজারের উপর আস্থা হ্রাস পাচ্ছে এবং বেজিং সম্পর্কে মার্কিন অভিজাতদের ধারণা তিক্ততর হচ্ছে। এই তিক্ততার মধ্যে ভারতের জন্য লাভের সুযোগ লুকিয়ে রয়েছে। সম্প্রতি চিনে প্রায় ২৫ বছর ধরে কার্যক্রম চালানোর পর বৃহৎ প্রযুক্তি সংস্থা আইবিএম চিনের মাটি থেকে নিজেকে সরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেশোনা যাচ্ছে যে, এই প্রযুক্তি প্রধান ভারতীয় কার্যক্রম প্রসারিত করার পরিকল্পনা করছে। চিন থেকে যখন বৃহৎ সংস্থাগুলি একে একে দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে, তখন ভারতকে অবশ্যই বিগ টেকের জন্য চিনের বিকল্প হিসাবে নিজেকে তুলে ধরতে হবে।

 


কল্পিত এ মানকিকর অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.