যুদ্ধোত্তর ইউরোপে প্রথমবার, ২০০০ সালে, একটি অতিদক্ষিণ দল অস্ট্রিয়ায় শাসক জোটের অংশ হয়ে ওঠে। এটি ইউরোপ জুড়ে ব্যাপক নাড়া দিয়েছিল। আজ, দুই দশকেরও বেশি সময় পরে, ইউরোপীয় রাজনীতিতে অতিদক্ষিণপন্থীরা আর কোনও প্রান্তিক শক্তি নয়: পপুলিস্ট প্রতিষ্ঠানবিরোধী দলগুলি মহাদেশ জুড়ে জায়গা পাচ্ছে।
সর্বশেষ উদাহরণ হল গিয়ার্ট ওয়াইল্ডার্স ও তাঁর অতিদক্ষিণ পার্টি ফর ফ্রিডম (পিভিভি)। সাম্প্রতিক নির্বাচনে এটি ডাচ পার্লামেন্টে ১৫০টি আসনের মধ্যে ৩৭টি জিতে এবং ভোট শেয়ারের ২৩% নিয়ে একক বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিদায়ী মধ্যপন্থী প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের জোটের পতনের পর ডাকা একটি নির্বাচনে এই ফলাফলগুলি এসেছে। ওয়াইল্ডার্সের অবশ্যই নেদারল্যান্ডসের প্রথম অতিদক্ষিণ প্রধানমন্ত্রী হতে ৭৬ জন পারলামেন্টেরিয়ানের সমর্থন প্রয়োজন। যদিও একটি নতুন শাসক জোট গঠনের আগে সামনের পথটি নিয়ে কয়েক মাস ধরে আলোচনা চলবে, নেদারল্যান্ডস একটি দেশ হিসাবে গভীর পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে পারে। ওয়াইল্ডার্স ‘নেক্সিট’ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে নেদারল্যান্ডস-এর প্রস্থান), ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা বন্ধ করা, এবং কোরান নিষিদ্ধ করার পক্ষে।
হাঙ্গেরির ভিক্টর অরবান থেকে ফ্রান্সের মেরিন লে পেন পর্যন্ত, অতিদক্ষিণ নেতাদের কাছ থেকে ওয়াইল্ডার্সের জন্য অভিনন্দনমূলক শুভেচ্ছা বর্ষিত হয়েছে, যা ইউরোপ জুড়ে ব্যাপক জোয়ারের কথাই তুলে ধরছে। ইতালিতে জর্জিয়া মেলোনি এবং তাঁর ব্রাদার্স অফ ইতালি পার্টি যুদ্ধপরবর্তী পশ্চিম ইউরোপে প্রথম অতিদক্ষিণ সরকারের নেতৃত্ব দেন; ফিনল্যান্ডে অতিদক্ষিণপন্থী ফিনরা ক্ষমতায় রয়েছে, এবং ফিডেজ ২০১০ সাল থেকে হাঙ্গেরিতে ক্ষমতায় রয়েছেন। অস্ট্রিয়ান ফ্রিডম পার্টি (এফপিও) আগামী বছরের আসন্ন নির্বাচনের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে রয়েছে, এবং জার্মানিতে অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (অ্যাফডি) চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলসের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। গ্রিসে তিনটি অতিদক্ষিণ দল পার্লামেন্টে জায়গা করে নিয়েছে, এবং ফ্রান্সের সাম্প্রতিক ভোটে মেরিন লে পেনের ন্যাশনাল র্যালিকে (আরএন) সবচেয়ে বিশ্বস্ত দল হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নপন্থী স্পেনেও আঞ্চলিক নির্বাচনে অতিদক্ষিণ ভক্স ভাল ফল করেছে, আর রক্ষণশীল সুইডিশ সরকার অতিদক্ষিণ সুইডেন ডেমোক্র্যাটদের দ্বারা সমর্থিত। ব্রিটেনে টোরিরা অভিবাসন নিয়ে তাঁদের কথাবার্তায় আগের চেয়ে বেশি করে ডান দিকে ঝুঁকছেন।
অতিদক্ষিণদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য ২০০৮ সালের আর্থিক সঙ্কট এবং ২০১৫ সালের অভিবাসন সংকটকে দায়ী করা যেতে পারে। বহুসংস্কৃতিবাদের বিরুদ্ধে একটি প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার পাশাপাশি প্রথাগত খ্রিস্টান ‘শ্বেত’ মূল্যবোধের সমর্থন বাড়তে থাকে। অতি সম্প্রতি কোভিড–১৯ অতিমারির সময়কার অর্থনৈতিক পতনের সঙ্গে মূল্যস্ফীতি এবং ইউক্রেন যুদ্ধ দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠীগুলির সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিয়েছে: এই দলগুলো কখনও নির্বাচনে জয়লাভ করেছে, আবার কখনও জুনিয়র কোয়ালিশন পার্টনার হিসাবে থাকছে। ইউরোপের রাস্তায় ইজরায়েল–হামাস সংঘাত ছড়িয়ে পড়া ইউরোপীয় দেশগুলিতে অনেক বিভাজন ও নিরাপত্তা ঝুঁকি প্রকাশ করেছে।
আকর্ষণীয় ঘটনা হল, দক্ষিণপন্থী কথোপকথন কিছু মূল প্রবণতাকে চিত্রিত করে। মধ্যদক্ষিণ ক্রমশ অভিবাসন ও পরিচয় সংক্রান্ত বিষয়ে আরও ডানদিকে ঝুঁকছে, এবং কিছু অতিদক্ষিণ অ্যাজেন্ডাকে গ্রহণ করেছে। এর প্রমাণ ইসলাম সম্পর্কে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর কট্টরপন্থী বক্তব্য। যদিও মূলধারা অতিদক্ষিণকে বৈধতা দিতে সাহায্য করে, অতিদক্ষিণ তার কিছু জ্বালাময়ী কথোপকথন নিয়ন্ত্রণ করছে। ইতিমধ্যে, ইউরোস্কেপটিকরা ব্রেক্সিট–পরবর্তী ব্রিটেন থেকে সতর্কতামূলক পাঠ শিখেছেন, এবং এখন ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে এর ভেতর থেকে সংস্কার করতে চান। একটি উদাহরণ হলেন মেলোনি, যিনি ইইউ–র সঙ্গে কাজ করছেন এবং ইউক্রেন নিয়ে মূল ইইউ নীতিকে সমর্থন করছেন।
যাই হোক, ব্রাসেলসে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দক্ষিণীদের উত্থানের প্রভাব রয়েছে, কারণ ইইউ ঐকমত্যের মাধ্যমে কাজ করে। বিভিন্ন ভোটে অতিদক্ষিণপন্থীরা হিসাব ওলোটপালোট করে দিতে থাকায় সম্ভাব্যভাবে অভিবাসন, ইউক্রেন যুদ্ধ, চিনের সঙ্গে সম্পর্ক ও সবুজ পরিবর্তনের মতো ইস্যুতে ইইউ–এর অবস্থান জটিল হয়ে উঠছে। ইইউ নির্বাচন ২০২৪–এর জন্য নির্ধারিত। যদি অতিদক্ষিণরা কিংমেকার হয়ে ওঠে, তবে এটি ইইউ এবং উদার গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ভবিষ্যতের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। তারপরে ধাক্কাগুলি এত বেশি হতে পারে যে তার মোকাবিলা করা কঠিন হবে।
ভোটারদের নিরাপত্তাহীনতা, বিশেষ করে যা তৈরি হয়েছে অভিবাসনের উত্তপ্ত ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া জানাতে মূলধারার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ব্যর্থতার ফলে, তা দক্ষিণীদের সাফল্যের পিছনে একটা বড় কারণ। এ কথাও সত্য যে অতিদক্ষিণ–পন্থীদেরও কিছু ধাক্কা লেগেছে। ল অ্যান্ড জাস্টিস (পিআইএস) দল পোল্যান্ডে পিছিয়ে পড়েছে, আর স্পেনের ভক্স পার্লামেন্টে তাদের আসনগুলির একটি বড় অংশ হারিয়েছে। তবুও, ইউরোপের রাজনৈতিক ভূচিত্র ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে, এবং দক্ষিণপন্থী পপুলিজমের চাকচিক্য আপাতত বজায় থাকবে বলে মনে হচ্ছে।
এই ভাষ্যটি প্রথমে ‘হিন্দুস্তান টাইমস’–এ প্রকাশিত হয়েছিল।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.