Author : Aditya Bhan

Published on May 01, 2022 Updated 0 Hours ago

ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার লক্ষ্যে চালানো চিনের প্রচার প্রতিরোধে ভারতের উচিত তার দক্ষিণী প্রতিবেশীকে সহায়তা করা এবং সংশ্লিষ্ট উদ্যোগের প্রচার করা।

শ্রীলঙ্কায় ভারতের মন্ত্র হওয়া উচিত ‘সহায়তা এবং প্রচার’

২৫ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট পরিবর্তনের সাধারণ অবস্থার তুলনায় শ্রীলঙ্কার সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের রেপো এবং রিভার্স রেপো হারগুলিতে ৭ শতাংশ বৃদ্ধি অভূতপূর্ব বলে মনে হলেও দ্বীপ দেশটি বর্তমানে যে গুণক হারে মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হচ্ছে, তার প্রেক্ষিতে এই ঘটনা অকিঞ্চিৎকর এবং অসময়োচিত বলে প্রমাণিত হচ্ছে। (দ্রষ্টব্য চিত্র ১) জ্বালানির তীব্র ঘাটতি সমস্যাকে জটিলতর করে তুলেছে, যার খরচের বেশির ভাগই জেলেদেরকে বহন করতে হবে।

চিত্র১: শ্রীলঙ্কার মুদ্রাস্ফীতির হার (মার্চ, ২০২২-এর তথ্য)  – ১৯৮৬-২০২১ ঐতিহাসিক – এপ্রিলের পূর্বাভাস (tradingeconomics.com)

আক্ষরিক ভাবে দেখলে শ্রীলঙ্কার বর্তমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের মূলে রয়েছে অর্থ প্রদানের ভারসাম্যের সংকটের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ের অবক্ষয় (চিত্র ২ দ্রষ্টব্য)। তবুও শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির ভেঙে পড়ার প্রান্তে পৌঁছনোর নেপথ্যে থাকা কারণ এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে নিখুঁত পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। ধারাবাহিক শাসনব্যবস্থার অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাই সমালোচনার মূল কারণ হিসেবে উঠে এলেও দেশটির তীব্র আর্থিক মন্দার নির্দিষ্ট কারণগুলি খুঁজে পাওয়া যেতে পারে বৈদেশিক ঋণচালিত পপুলিজম বা জনতাবাদ, বিদ্যমান কোভিড-১৯ অতিমারি এবং রাজাপক্ষ গোষ্ঠীর রাজনৈতিক নির্বুদ্ধিতার মধ্যে।

চিত্র ২: শ্রীলঙ্কাফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভস, ১৯৫৬-২০২২, সি ই আই সি পরিসংখ্যান

দেশের অর্থমন্ত্রী আলি সাবরির মতে, আগামী ছ’মাসের মধ্যে খাদ্য ও ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সরবরাহ পুনরায় চালু করতে শ্রীলঙ্কার অন্তত পক্ষে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক অর্থ সহায়তার প্রয়োজন। আর একটি দৃষ্টিকোণ থেকে জে পি মরগ্যানের বিশ্লেষকরা অনুমান করেছেন যে, এ বছর শ্রীলঙ্কার মোট ঋণশোধের পরিমাণ সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে চলতি অর্থবর্ষে রাজকোষের আর্থিক ঘাটতির পরিমাণ তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পরিস্থিতি এমনই আশ্চর্যজনক যে, ভারত শ্রীলঙ্কাকে তার অর্থনৈতিক অচলাবস্থা থেকে বার করে আনার চেষ্টা চালালেও শ্রীলঙ্কা চিনের কাছে আরও এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সাহায্যের অনুরোধ জানিয়েছে, যে দেশের ঋণভিত্তিক কূটনীতির জালে শ্রীলঙ্কা নিজেই জড়িয়ে পড়েছে

চিন এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কাকে তার বর্তমান দুর্দশার প্রেক্ষিতে সহায়তা জোগানোর প্রতি কোনও আগ্রহ প্রকাশ করেনি। চিন ঋণ পরিশোধ বা ব্যবস্থার পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে আপসহীন মনোভাব দেখানোর পাশাপাশি চিনের রাষ্ট্রচালিত মিডিয়া শ্রীলঙ্কার দুর্দশার জন্য ডলার নির্ভরতা এবং ভারতপন্থী নীতিকেই দায়ী করে উপহাস করেছে। চিনের কমিউনিকেশন ইউনিভার্সিটির একজন গবেষক ফেলো ঝাং জিয়াওয়ুর মতে, শ্রীলঙ্কার সরকার ‘দেশটির অর্থনীতির পুনর্গঠন এবং বৃহৎ আকারের সংস্কার করার সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে। শ্রীলঙ্কার বৃদ্ধি মূলত পরিকাঠামো নির্মাণ এবং অভ্যন্তরীণ রিটেলের ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়েছে, যার কোনওটিই বিশ্ববাজারে বাণিজ্যক্ষম নয়।’

অন্য দিকে ভারত তার দক্ষিণী সামুদ্রিক প্রতিবেশীর প্রতি উদার মনোভাব এবং ভ্রাতৃত্বপূর্ণ ব্যবহার দেখিয়েছে। শ্রীলঙ্কাকে চিনের নাগপাশ থেকে মুক্ত করার জন্য ঋণ, সাহায্য বা সহায়তার যে কোনও নিয়মের সঙ্গে ‘বন্ধু নয় এমন তৃতীয় পক্ষ’ যুক্ত শর্তাদি সংযুক্ত করার জন্য নয়াদিল্লির যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও নয়াদিল্লি শ্রীলঙ্কার মানুষদের তাঁদের প্রয়োজনের সময়ে নিঃশর্ত ভাবে নিরবচ্ছিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর কোনও অসৎ উদ্দেশ্য ছাড়াই খাদ্য রফতানি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন। এই পদক্ষেপের বাস্তবায়নে আমলাতান্ত্রিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও, দেশটির ভারতীয় হাইকমিশনার গোপাল বাগলে বলেছেন যে, ভারত ইতিমধ্যেই শ্রীলঙ্কাকে ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্য করেছে যার প্রধান লক্ষ্য হল মুদ্রা বিনিময় এবং খাদ্য, জ্বালানি ও শক্তির জন্য ঋণ প্রদান।

ভারত সদর্থক ভূমিকা সত্ত্বেও তার মানবিক সহায়তা শ্রীলঙ্কাকে বর্তমান সঙ্কট থেকে বার করে আনার জন্য পর্যাপ্ত নয়। সুতরাং ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ডের (আই এম এফ) কাছে শ্রীলঙ্কার সাহায্য চাওয়া অযৌক্তিক নয়। এ কথা আশাব্যঞ্জক যে আই এম এফ শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উপরে বিশেষ নজর রাখছে

যদিও শ্রীলঙ্কার সঙ্কটের জন্য অবশ্যই ভারত দায়ী নয়, তবুও শ্রীলঙ্কা ভারতের প্রতিবেশী এবং দেশটির পুনরুত্থানে সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা জোগানোর ক্ষেত্রে কোনও দ্বিধা থাকা উচিত নয়। কিন্তু একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক স্তরে এবং শ্রীলঙ্কার জনমানসে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করা চিনা অপপ্রচার রুখতে ভারতের সক্রিয় হতে হবে এবং ভারতের তরফে শ্রীলঙ্কাকে জোগানো মানবিক সাহায্যের কথা সে দেশে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে প্রচার করতে হবে। অর্থাৎ চিরাচরিত ‘নেকি কর, দরিয়া মে ডাল’ (ভাল কর এবং ভুলে যাও) নীতির বদলে ভারতের মন্ত্র হওয়া উচিত ‘নেকি কর, ডঙ্কা বাজা’ (ভাল কর এবং তার প্রচারও চালাও)।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.