৩ ডিসেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল ১৯৮৭ সালে দেশটি একটি উদার গণতন্ত্র হওয়ার পর থেকে প্রথম বারের মতো সামরিক আইন জারির কথা ঘোষণা করেন। এই ঘটনা পদ্ধতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ত্রুটিকে দর্শায় এবং বিশেষ করে প্রেসিডেন্টের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণকেও তুলে ধরে। এই পদক্ষেপ নাগরিক-সামরিক সম্পর্কের ভঙ্গুরতার পাশাপাশি ১৯৬১-১৯৮৭ সাল পর্যন্ত চলা সামরিক একনায়কত্বের অন্ধকার স্মৃতিকেই ফিরিয়ে আনে। এক দিকে, সামরিক আইন ঘোষণায় তাঁর ভূমিকার জন্য প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং-হিউনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্য দিকে, ইউন প্রশাসনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে সেনাবাহিনীর ভূমিকা ও চুক্তি দেশের রক্ষণশীল রাজনৈতিক উপদলের সঙ্গে তাঁর পক্ষপাতমূলক সাযুজ্যকে দর্শিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি করেছে।
সামরিক আইন তুলে নেওয়ার পর, দেশের বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এই ঘোষণার নেপথ্যে থাকা কারণ অনুসন্ধান করেছিল, যা দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল এবং নাগরিক ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মনে আতঙ্কের জন্ম দিয়েছিল।
সামরিক আইন তুলে নেওয়ার পর, দেশের বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি এই ঘোষণার নেপথ্যে থাকা কারণ অনুসন্ধান করেছিল, যা দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল এবং নাগরিক ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মনে আতঙ্কের জন্ম দিয়েছিল। বর্ষীয়ান সামরিক এবং পুলিশ কর্মকর্তা-সহ যে সকল ব্যক্তি এই পর্বের সঙ্গে পরোক্ষ ভাবে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের ভূমিকার জন্য আইন প্রণেতারা তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তদন্তের সময় উদ্ভূত বিপদসঙ্কেতগুলির জন্যই এই পদক্ষেপ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির শুনানির সময় আর্মি ওয়ারফেয়ার স্পেশ্যাল কম্যান্ডের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল কোয়াক ইয়ং-গেউন জানান যে, বিরোধী আইন প্রণেতাদের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে প্রবেশ এবং তাঁদের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করা থেকে বিরত রাখতেই প্রেসিডেন্ট বিশেষ বাহিনীকে এই নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাঁর উদ্দেশ্য ছিল একেবারেই রাজনৈতিক।
বিরোধীরা প্রেসিডেন্ট ইউনের বিরুদ্ধে একটি আইনি-সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার অভিযোগ করেছে, যেখানে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করা হয়েছে। বিরোধী দল দাবি করে যে, তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় ইউন মুখ্য ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের নিয়ে একটি দল গঠন করেছিলেন, যা চুংগাম উপদল নামেও পরিচিত। কারণ তাঁরা বেশির ভাগই চুংগাম উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। এই দলটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হলেন প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং-হিউন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লি সাং-মিন এবং ডিফেন্স কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স কম্যান্ডের কম্যান্ডার ইয়ো ইন-হাইয়ং। চুংগাম উপদল হানাহো-র (অ্যাসোসিয়েশন অফ ওয়ান) স্মৃতি ফিরিয়ে আনে, যা ছিল ১৯৬৩ সালে গঠিত সামরিক আধিকারিকদের একটি বেসরকারি সংস্থা এবং যেটি প্রেসিডেন্ট পার্ক চুং-হি-এর ১৯৭৯ সালের হত্যার পরে অভ্যুত্থানের জন্য দায়ী।
চুংগাম উপদলের মধ্যে কিম ইয়ং-হিউনের ভূমিকা তাঁর পদ এবং অতীতের কারণে বিরোধীদের মধ্যে কৌতূহলের উদ্রেক করেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসাবে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা – যেখানে তিনি সামরিক আইনের প্রস্তাব করেছিলেন এবং তার বাস্তবায়ন করেন – খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়াও তিনি প্রাক্তন সামরিক নেতাদের মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার বিষয়কে ঘিরে বিতর্ককেও উস্কে দিয়েছেন।
তদন্তে জানা গিয়েছে যে, কিম ইয়ং-হিউন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের নির্বাচনী জালিয়াতির অভিযোগের বিষয়ে প্রমাণ সংগ্রহের জন্য জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সুবিধা গ্রহণ করতে বলেছিলেন।
এই সমস্যাটি সামরিক বাহিনীর উপর বেসামরিক নিয়ন্ত্রণের অভাব সম্পর্কে উদ্বেগ উত্থাপন করেছে, যা শক্তিশালী নাগরিক-সামরিক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিতর্ক ইতিমধ্যেই এই পদের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। উদাহরণস্বরূপ, এমনকি পার্ক চুং হি-এর রাষ্ট্রপতিত্বের মেয়াদকালে (২০১৩-২০১৭) প্রতিরক্ষামন্ত্রী তাঁর অভিশংসনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করা হলে সামরিক আইন প্রয়োগ করার জন্য নিরাপত্তা কম্যান্ডকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। নাগরিক-সামরিক সম্পর্কের আর একটি উদ্বেগ মূলত সামরিক বাহিনীর রাজনীতিকরণের বিষয়কেন্দ্রিক। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ইউন প্রশাসনের সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।
তদন্তে জানা গিয়েছে যে, কিম ইয়ং-হিউন ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের নির্বাচনী জালিয়াতি অভিযোগের বিষয়ে প্রমাণ সংগ্রহের জন্য জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সুবিধা গ্রহণ করতে বলেছিলেন। একই ভাবে, দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী সামরিক আইনের আহ্বানকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য একটি ড্রোন উৎক্ষেপণ করেন এবং তা ব্যবহার করে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংঘাত উস্কে দিতে চেয়েছিলেন। সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বে উঠে তদন্তের পরিধি প্রসারিত হওয়ায় ন্যাশনাল পুলিশ এজেন্সি ও সিওল মেট্রোপলিটন পুলিশ এজেন্সির বর্ষীয়ান পুলিশ কর্মকর্তাদের ভূমিকা আরও বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.