Author : Harsh V. Pant

Published on Jun 30, 2023 Updated 0 Hours ago
নতুন ডেপুটি বাছাই করে ঋষি সুনাক সরকারের উপর নিজের ছাপ রেখেছেন

১০৬৬ সাল থেকে একাদিক্রমে তার ৪০তম শাসক রাজা তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেকের জন্য ব্রিটেন যখন রীতিমাফিক ব্যাপক জাঁকজমক ও আড়ম্বর সহকারে প্রস্তুত হচ্ছিল, দেশটির রাজনৈতিক চাকাগুলি তখনও ধীর গতিতে ঘুরেই চলেছিল। সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক অবশেষে তার দীর্ঘদিনের মিত্র ও ডেপুটি ডমিনিক রাবকে হারান, কিন্তু তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সরকারের উচ্চপদে নিয়োগ করে ক্ষমতার উপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ সংহত করতেও সক্ষম হন। সুনাক ক্রমশ বেশি করে স্পষ্ট করে দিচ্ছেন যে তিনি একটি দীর্ঘ খেলা খেলছেন, এবং বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তাঁর সহজে হাল ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা নেই।

রাব তাঁর উৎপীড়নমূলক আচরণের জন্য বেশ কিছুদিন ধরে রীতিমতো ঝড়ের মধ্যে পড়েছিলেন। বরিস জনসনের অধীনে বিচারমন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রী এবং টেরেসা মে-র অধীনে ব্রেক্সিট মন্ত্রী হিসাবে তাঁর মেয়াদকালে কমপক্ষে ২৪ জন তাঁর সম্পর্কে অভিযোগ করেছিলেন। সুনাক, যিনি তাঁর রক্ষণশীল নেতৃত্ব প্রচারের সময় রাবের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য সমর্থন পেয়েছিলেন, তিনি গত বছরের অক্টোবরে রাবকে তাঁর ডেপুটি হিসাবে নিযুক্ত করেন। সেই সময় এই অভিযোগগুলি সম্পর্কে তিনি জানতেন কি না তা প্রকাশ করার জন্য সুনাক চাপের মধ্যে ছিলেন। এক মাস পর রাবের  বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য প্রধানমন্ত্রী একজন প্রবীণ আইনজীবীকে নিয়োগ করেন, এবং তিনি এপ্রিলে উপসংহারে এসেছিলেন যে রাব বিদেশমন্ত্রী হিসাবে তাঁর কার্যকালের সময় ‘‌ক্ষমতার অপব্যবহার’ ‌করেছিলেন, এবং বিচারমন্ত্রকের কর্মকর্তাদের প্রতি ‘‌এমন আচরণ করেছিলেন যা ভয়ঙ্কর’‌। যদিও রাব দৃঢ়ভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছিলেন, তা হলেও তাঁকে কিন্তু পদত্যাগ করতে হয়। তাঁর এই পদক্ষেপকে সুনাক প্রশংসা  করেছিলেন, এবং বলেছিলেন যে তাঁর প্রাক্তন ডেপুটি রিপোর্টে উৎপীড়নমূলক কাজ করার কোনও প্রমাণ সামনে এলে পদত্যাগ করার ‘‌সঠিক’‌ প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরে তাঁর সেই কথা রেখেছেন।

রাব একজন প্রতিভাবান ও শক্তিশালী রাজনীতিবিদ। খুব শীঘ্রই তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে ফিরে আসবেন। তবে সুনাকের জন্য স্বল্পমেয়াদে তাঁর দুই নম্বরকে হারানো একটি বড় ধাক্কা। যাই হোক, তিনি দ্রুত তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ মিত্রকে সরকারের দুই গুরুত্বপূর্ণ পদে — অলিভার ডাউডেনকে উপ–প্রধানমন্ত্রী এবং অ্যালেক্স চাককে বিচারসচিব হিসাবে — নিয়োগ করে তাঁর হাতে আসা সুযোগটি কাজে লাগান। আরও আকর্ষণীয় বিষয় হল যে তাঁরা দুজনেই সুনাকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও ব্রেক্সিট গণভোটে ইইউ–তে থাকার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। এইভাবে সুনাক এখন ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে তিনি ভিন্নমত পোষণকারীদের সঙ্গে কাজ করতেও বিমুখ নন, যার ফলে দলের মধ্যে তাঁর ভিত্তি প্রসারিত হচ্ছে। তিনি এ কথাও বুঝতে পারছেন যে এখনই সরকারের উপর তাঁর আরও জোরালোভাবে ছাপ ফেলার সময়, কারণ কনজারভেটিভ পার্টি গত শরৎকালের বিপর্যয়ের পরে আর অভ্যন্তরীণ উত্থান–পতনের মুখোমুখি হওয়ার মেজাজে নেই। সুনাক রক্ষণশীলদের জন্য অতি–প্রয়োজনীয় প্রশান্তি নিয়ে এসেছেন, এবং টোরিদের মধ্যে সেই কারণে তাঁর জন্য সত্যিকারের প্রশংসা রয়েছে।

সুনাক এখন ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে তিনি ভিন্নমত পোষণকারীদের সঙ্গে কাজ করতেও বিমুখ নন, যার ফলে দলের মধ্যে তাঁর ভিত্তি প্রসারিত হচ্ছে।

এদিকে, লেবার পার্টি জনমত সমীক্ষায় এগিয়ে থাকলেও তাদের নিজস্ব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, কারণ তাদের একজন সিনিয়র পার্লামেন্টেরিয়ান ডায়ান অ্যাবটকে লেবার নেতা কেয়ার স্টারমার এমন মন্তব্যের জন্য সাসপেন্ড করেছেন যা তাঁর মতে ‘অ্যান্টি–সেমিটিক’‌। লেবার পার্টিকে দলের মধ্যে ইহুদি–বিদ্বেষীদের থেকে মুক্তি পেতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে, এবং দলের প্রাক্তন নেতা জেরেমি করবিনকে এই পরামর্শ দেওয়ার জন্য দল থেকে সাসপেন্ড করে রাখা হয়েছে যে সমস্যাটি বাস্তবের চেয়ে বেশি বড় করে তুলে ধরা হচ্ছে।

তবুও, সুনাকের সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক ধরনের, এবং সেগুলি শীঘ্রই অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পার হওয়া থেকে মানুষকে বিরত রাখার লক্ষ্যে তাঁর অবৈধ অভিবাসন বিলটিকে দেশটির সমতা ও মানবাধিকার কমিশন মনে করছে ব্রিটেনের মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতার লঙ্ঘন। তবে আরও  উল্লেখযোগ্যভাবে সুনাক এমপি–দের আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন কি না, তা নিয়ে এপ্রিল মাসের গোড়ায় একটি তদন্ত শুরু করা হয়েছে। আচরণবিধিতে বলা আছে যে পার্লামেন্ট সদস্যদের ‘হাউস বা কমিটিগুলির যে কোনও কার্যধারায়, এবং মন্ত্রী, সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা বা সরকারি পদাধিকারীদের সঙ্গে যে কোনও যোগাযোগের সময় প্রাসঙ্গিক স্বার্থের বিষয়ে সর্বদা খোলামেলা এবং অকপট হতে হবে’‌। এটি ছিল একটি চাইল্ড কেয়ার এজেন্সিতে তাঁর স্ত্রীর শেয়ারের বিষয় সংক্রান্ত, তবে সুনাক বলে চলেছেন যে ‘‌প্রধানমন্ত্রী সব কিছু ঘোষণা করার জন্য তাঁর বাধ্যবাধকতাটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেছেন, এবং তিনি কয়েক বছর ধরেই তা করে চলেছেন’‌। এই বিষয়টি দেখতে গিয়ে পার্লামেন্টারি কমিশনার ফর স্ট্যান্ডার্ডস আবার আর একটি চলতি তদন্তে বিশদ তথ্য না–দেওয়া সম্পর্কিত প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি সম্ভাব্য লঙ্ঘনকেও তাঁদের কাজের আওতায় নিয়ে এসেছিলেন।।

তবে ব্রিটিশ এমপি-দের আচরণবিধি লঙ্ঘন কোনও নতুন সমস্যা নয়। লেবার নেতা কিয়ার স্টারমার নিজেই প্রায় আটবার এটি লঙ্ঘন করেছেন। কিন্তু বিরোধী দলগুলি সুনাকের বিরুদ্ধে এই তদন্তকে যুক্ত করেছে কনজারভেটিভ পার্টি সম্পর্কে ধারণা সংক্রান্ত একটি বৃহত্তর সমস্যার সঙ্গে। তাঁরা একে যুক্ত করেছেন এমন এক সময়ে টোরিদের অনৈতিক কাজকর্ম ও দুর্নীতির সঙ্গে যখন এমনকি সাধারণ ব্রিটিশরা জীবনযাত্রার মান নিয়ে গুরুতর সংকটের মুখোমুখি।

সুনাকের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল তাঁর বিপজ্জনক পূর্বসূরি বরিস জনসনের থেকে টোরি ব্র্যান্ডকে আলাদা করা। যদিও তিনি আপাতত কনজারভেটিভ পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সফল হয়েছেন, দেশ শাসনের জন্য স্বাভাবিক দল হিসেবে ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনার দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা জন্য সময় লাগবে। নিজের সমস্যা নিয়ে তিনি যত বেশি বিভ্রান্ত হবেন, জয় এনে দেবে এমন রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডার জন্য মরিয়া একটি দলকে তাঁর কার্যকরভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা তত কমে যাবে।


এই ভাষ্যটি মূলত এনডিটিভি তে প্রকাশিত হয়েছিল।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.