Author : Sushant Sareen

Published on Sep 30, 2023 Updated 0 Hours ago

ইমরানকে দমন করার সবরকম চেষ্টা সত্ত্বেও তিনি যে আগের চেয়েও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তা বলাই যায়

ইমরান জেলে থাকলেও রাজনীতির বাইরে নন

তোশাখানা মামলায় ইমরান খানকে দুর্নীতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা আশ্চর্যের ঘটনা নয়, ৯ মে-র ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক ছিল। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে ক্ষমতাচ্যুত করার পরে ইমরানকে সামরিক প্রতিষ্ঠানের তরফে দেওয়া দ্বিতীয় সুযোগ বরং বেশি আশ্চর্যের বিষয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ইমরান খানকে পাকিস্তানের রাস্তায় হিংসাত্মক ঘটনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় এবং এর মধ্যে ক্ষমতাসীন সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ তোলাও অন্তর্ভুক্ত। তাঁর সমর্থকরা বর্তমানে সামাজিক গণমাধ্যম ব্যবহার করে ক্ষমতাসীন আধিকারিকদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিম্ন রুচির আক্রমণ চালিয়েছেন। কিন্তু ৯ মে-র পর সেনার তরফে এই প্রচ্ছন্ন সমর্থনের অবসান ঘটে। এবং এ কথা প্রকাশ্য দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আসিম মুনির এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে তাঁর অনুগতরা ইমরান খানকে শেষ করার জন্য কোনও চেষ্টাই বাকি রাখবেন না। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুশোরও বেশি মামলা রুজু করা হয়েছে। সেগুলি দুর্নীতি থেকে শুরু করে অভ্যুত্থান এবং খুন থেকে শুরু করে সন্ত্রাসবাদ পর্যন্ত বিস্তৃত। তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং সর্বোচ্চ নেতাদের অধিকারচ্যুত করা হয়েছে। ইমরানকে টিভির পর্দায় নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং পাকিস্তানের ‘স্বাধীন ও মুক্ত গণমাধ্যম’-এ তাঁর নাম নেওয়াও যাবে না। যে নেতারা এখনও তাঁর সঙ্গ ছেড়ে যাননি, তাঁরা হয় নির্বাসনে রয়েছেন, নয়তো আত্মগোপনে বা কারাগারে রয়েছেন। এই অনুগতদের কেউ যদি জামিন পেতে সক্ষম হন, তা হলে তাঁদের জেল থেকে বের হওয়ার পর পুনরায় গ্রেফতার করা হবে। তাঁদের ব্যবসা এবং জীবিকা প্রভাবিত হয়েছে এবং তাঁদের পরিবারের উপর হামলা চালানোর পাশাপাশি তাঁদের হয়রান করা হয়েছে। কিন্তু ইমরানের সমর্থকদের উপর নির্মম দমন-পীড়ন সত্ত্বেও, তিনিই এখনও পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা।

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ইমরান খানকে পাকিস্তানের রাস্তায় হিংসাত্মক ঘটনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় এবং এর মধ্যে ক্ষমতাসীন সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ তোলাও অন্তর্ভুক্ত।

তোশাখানা মামলায় ইমরানের দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং কারাদণ্ডের দু’টি প্রেক্ষিত রয়েছে – আইনি ও রাজনৈতিক। আইনগত ভাবে ইমরানকে দোষী সাব্যস্ত করার এ এক অবশ্যম্ভাবী পরিকল্পনা ছিল যাঁকে ‘তোশাখানা থেকে উপহারের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের বিষয়ে মিথ্যা বিবৃতি/ঘোষণা নির্মাণ এবং প্রকাশ করে দুর্নীতিমূলক আচরণের অপরাধে’ অভিযুক্ত করা হয়েছিল। ইমরানকে গ্রেফতার করে তিন বছরের জন্য কারাগারে পাঠানো হলেও তিনি প্রায় নিশ্চিত ভাবেই উচ্চ আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন, যেখানে তিনি সাহায্য পাওয়ার আশা করছেন। ইমরানের আইনজীবীরা যে আবেদনগুলি পেশ করবেন, তার মধ্যে একটি হল ট্রায়াল কোর্টের রায় তাড়াহুড়ো করে দেওয়া হয়েছিল এবং তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি বলে তিনি ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তিনি এই সত্যের উপরই নির্ভর করছেন যে, উচ্চতর বিচার বিভাগের বিচারপতিরা তাঁর পক্ষাবলম্বন করবেন। তবে এ ক্ষেত্রেও যে সত্যটি উঠে আসছে, তা বেশ জটিল। ঘটনাটি হল, ইমরান মামলা এড়াতে ফাঁকিবাজি ও কৌশল অবলম্বন করেছেন। ট্রায়াল কোর্টের বিচারক হুমায়ুন দিলাওয়ার অবশ্য ইমরানকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য মামলাটি বিলম্বিত করতে দিতে রাজি নন। অবশ্যই সেই বিচারপতির বিরুদ্ধেও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে, যাঁর ফেসবুক পেজে কয়েকটি ইমরান-বিরোধী পোস্ট পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু শুধু মাত্র মামলার যোগ্যতার ভিত্তিতে ইমরানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যপ্রমাণ ছিল প্রশ্নাতীত।

ইমরানের আইনজীবীরা যে আবেদনগুলি পেশ করবেন, তার মধ্যে একটি হল ট্রায়াল কোর্টের রায় তাড়াহুড়ো করে দেওয়া হয়েছিল এবং তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি বলে তিনি ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

যদিও তোশাখানা মামলায় ইমরান যা করেছিলেন, তা নৈতিক ভাবে ঘৃণ্যই ছিল — ব্যক্তিগত লাভ ও সমৃদ্ধির জন্য তিনি অন্যান্য রাষ্ট্রপ্রধানের কাছ থেকে পাওয়া উপহার বিক্রি করেছিলেন — এবং আইনগত ভাবে ইমরান এই মূল্যবান জিনিসপত্র বিক্রির আয় গোপন করার অভিযোগে দোষী হলেও রাজনৈতিক ভাবে তিনি পাকিস্তানের রাজনীতির কেন্দ্রেই রয়ে গিয়েছেন। এই রায় তাঁর জনপ্রিয়তায় সত্যিই কোনও প্রভাব ফেলেনি। কিন্তু তাঁর দোষী সাব্যস্ত হওয়া তাঁকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য রাজনীতির বাইরে রাখবে, এই বাস্তবতা ইমরানকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। আবার তিনি এবং তাঁর সমর্থকরা এই রায় অনুমান করেছিলেন এবং তারা নিশ্চিত যে, এটি ইমরান খানকে অদূর ভবিষ্যতে রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ থেকে বিরত রাখার প্রক্রিয়ার সূচনা মাত্র, অন্তত যত দিন না জেনারেল আসিম মুনির সেনাপ্রধান হিসাবে থাকবেন। এমনটা ২০২৫ বা মেয়াদ দীর্ঘায়িত হলে এমনকি ২০২৮ সাল পর্যন্ত হতে পারে, যেমনটা পাকিস্তানে নিয়ম হয়ে উঠেছে। ইমরানের জন্য এই আইনি ধাক্কা অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে পরবর্তী নির্বাচনে ইমরানের বিষয়ে অধিক দুশ্চিন্তা ছাড়াই লড়তে সাহায্য করবে। সব মিলিয়ে তাঁর দল একটা সারবত্তাহীন খোলসে পরিণত হয়েছে। সব উল্লেখযোগ্য এবং নির্বাচিত নেতা ইমরানকে পরিত্যাগ করেছেন এবং জাহাঙ্গীর তারিনের নেতৃত্বে ইস্তেকাম পাকিস্তান পার্টি (আইপিপি) ইমরানের স্কুলের বন্ধু ও খাইবার-পাখতুনখোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর নেতৃত্বে পিটিআই-পার্লামেন্টারিয়ানদের মতো নিজ নিজ দল গঠন করেছেন।

ইমরানের মূল সমর্থনের ভিত্তি এখনও অক্ষত রয়েছে, যখন তাঁর প্রতিপক্ষরা ইমরান-বিরোধী ভোট ভাগাভাগিতে ব্যস্ত রয়েছেন।

তবে সমস্যা হলটি ইমরানের বিরুদ্ধে সব ধরনের দমন-পীড়ন সত্ত্বেও তিনি বর্তমানে আগের চেয়েও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। তিনটি জিনিস তাঁর পক্ষে কাজ করেছে: ১) তাঁর নাছোড় মনোভাব: পাকিস্তানিরা সব সময়ই এমন নেতাকে পছন্দ করেন, যিনি উচ্চতর ক্ষমতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান এবং পিছপা হন না; ২) অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার কর্তৃক অর্থনীতির অব্যবস্থাপনা যা জনগণের ব্যাপক দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে এবং তাঁদের জীবনযাত্রাকে অসম্ভব করে তুলেছে; ৩) এই সত্য যে, ইমরানের মূল সমর্থনের ভিত্তি এখনও অক্ষত রয়েছে, যখন তাঁর প্রতিপক্ষরা ইমরান-বিরোধী ভোট ভাগাভাগিতে ব্যস্ত রয়েছেন। মজার বিষয় হল, এমনকি ইমরানের দল থেকে সরে যাওয়াও তাঁর সমর্থনের ভিত্তিকে সত্যিই ক্ষুণ্ণ করেনি। প্রকৃতপক্ষে, আইপিপি বা পিটিআই-পি বাস্তবের মাটিতে কোনও ঢেউ তুলেছে বলে মনে হয় না। তাঁরা অনুপ্রেরণা জাগাতে এবং নির্বাচকদের আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। যাঁরা ইমরানকে ত্যাগ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে আস্থার অভাব এক  শীর্ষস্থানীয় আইপিপি নেতার টুইট থেকেই স্পষ্ট। সেখানে তিনি বলেছিলেন যে, নির্বাচন কোনও সমস্যার সমাধান করবে না। কারণ ইমরান যদি পরাজিত হন, তা হলে তিনি ফলাফল মেনে নেবেন না এবং যদি তিনি জয়ী হন (যা তাঁর মতে, তীব্র ভাবে বাস্তব হতে পারে) তিনি কেবল তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের উপরেই নয়, বরং একই সঙ্গে সামরিক সংস্থা (যেখানে তিনি এখনও সমর্থন পান), গণমাধ্যম, বিচার বিভাগ এবং আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধেও দমন-পীড়ন চালাবেন। ইমরান-বিরোধী দলের মধ্যে আশঙ্কা এই যে, ইমরান নির্বাচনে অযোগ্য বলে ঘোষিত হলে সব হিসেব-নিকেশ ভেস্তে দিতে পারেন। অন্য কথায় বললে, ১৯৭০ সালে যখন জুলফিকার আলি ভুট্টোর দলের সম্পূর্ণ অপরিচিত প্রার্থীরা সুপ্রতিষ্ঠিত চিরাচরিত রাজনীতিবিদদের পরাজিত করে চমক দেখিয়েছিলেন, ইমরানও সে হেন কিছু ঘটাতে পারেন। এর অর্থ হল, ইমরান যে এই রাজনীতির খেলার বাইরে, এখনই এমনটা মনে করা সমীচীন হবে না। কারণ হয় তিনি রাজনৈতিক ভাবে সম্পূর্ণ শক্তিহীন অথবা নির্বাচনের ফলাফল পূর্ব-নির্ধারিত এবং সকলে শুধুমাত্র একটি ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ’ নির্বাচনের (যা ১৯৭০ সালের পর কখনও হয়নি) মোড়কের আড়ালেই রয়ে যাবেন। অবশ্য যদি ধরে নেওয়া হয় যে, সত্যিই নির্বাচন হবে এবং কোনও অবস্থাতেই দীর্ঘমেয়াদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসীন থাকবে না।

ইমরান-বিরোধী দলের মধ্যে আশঙ্কা এই যে, ইমরান নির্বাচনে অযোগ্য বলে ঘোষিত হলে সব হিসেব-নিকেশ ভেস্তে দিতে পারেন।

একটি স্পষ্ট কারচুপির নির্বাচন অবশ্যই পাকিস্তানের রাজনীতিতে তার নিজস্ব প্রভাব ফেলবে। নিন্দুকেরা অবশ্য যুক্তি দেবেন যে পাকিস্তানে কিছুই পরিবর্তন হয়নি এবং আগের নির্বাচনগুলি যে ভাবে একটি বা অন্য দলের পক্ষে পূর্ব-নির্ধারিত হয়েছিল, এ বারও তেমনটাই ঘটবে। এর অর্থ হল ইমরান খান এখন অতীত। কিন্তু পাকিস্তানে যদি সত্যিই কিছু পরিবর্তন ঘটে থাকে, তখন কী হবে? সর্বোপরি, গত ৭৫ বছরে কেউই কখনও কোনও রাজনীতিবিদকে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে দেখেননি। এবং কেবল সেনাবাহিনীই নয়, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকেও বিশ্লেষণ করে ইমরান নিজের সমর্থন ঘাঁটি তৈরি করেছেন, যা আসলে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যাবে। আপাত দৃষ্টিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার যে আভাস স্পষ্টতর হয়ে উঠছে, তা খুব খারাপ ভাবে বিঘ্নিত হতে পারে যদি একটি কারচুপির নির্বাচনের দরুন জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এবং যদি নির্বাচন কয়েক সপ্তাহের বেশি বিলম্বিত হয়, তা হলে সামরিক সেনা এমনকি সেই সব রাজনীতিবিদের তরফে প্রতিরোধের সম্মুখীন হবে, যারা বর্তমানে জেনারেলদের সমর্থনের প্রত্যাশায় রয়েছে।


সুশান্ত সারিন অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.