এখনকার এসডিজি সূচকগুলো যে হেতু একটা অসম্পূর্ণ ছবি তুলে ধরে, তাই উন্নয়ন সহযোগিতা নিরূপণ করতে একগুচ্ছ ভিন্ন ধরনের মাপকাঠি প্রয়োজন।
অনেক উদীয়মান অর্থনীতি অনেকটা প্রচারের আলো টেনে নেওয়ায় উন্নয়ন–সহযোগিতার ভূচিত্র সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিরাট ভাবে বদলে গেছে। পুরনো দাতারা, যারা বেশি পরিচিত অরগানাইজেশন অফ ইকনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (ওইসিডি)–এর ডেভলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স কমিটি হিসেবে, তারা সহায়তা প্রদান, স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার প্রশ্নে ক্রমাগত সমালোচনার মুখে পড়ছে। আর সেই কারণেই উন্নয়ন–সহযোগিতা পরিমাপের জন্য কিছু সূচক (ইনডিকেটর) তৈরির ধারণাটি অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ভেবে দেখুন, আমরা এমন এক পৃথিবীতে বাস করি যেখানে স্থায়িত্বের (সাসটেনেবিলিটি) প্রশ্নটি সব আলোচনার মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে সুস্থিত উন্নয়ন বা সাসটেনেবল ডেভলপমেন্টের স্তর পরিমাপ করাটা আগামী বছরগুলোতে ন্যায়সঙ্গত বৃদ্ধির প্রবণতা ও সমস্যাগুলো খতিয়ে দেখার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার হয়ে উঠছে। প্রকৃতপক্ষে, ‘২০৩০ কর্মসূচি’র আওতায় সুস্থিত উন্নয়নের লক্ষ্যসমূহ বা সাসটেনেবল ডেভলপমেন্ট গোল্স (এসডিজি) তার নিজস্ব ১৭টি লক্ষ্য ও ২৪৪টি সূচক চিহ্নিত করেছে, যেগুলো চরিত্রগত ভাবে বিশ্বজনীন, এবং তার ফলে একটা বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য উন্নয়নের কাঠামো পাওয়া সম্ভব হয়েছে। সেখানে বিশ্ব–অংশীদারি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য (এসডিজি১৭) দেওয়া থাকলেও এই সূচকগুলো কিন্তু একটা দেশ অন্য দেশের জন্য কী করছে সেই সংক্রান্ত সহায়তা–গতিশীলতার উপর বিশেষ নজর দেয় না। ফলে এই সূচকগুলো উন্নয়ন সহযোগিতার এক অসম্পূর্ণ ছবি তুলে ধরে। তা ছাড়া এসডিজি সূচকগুলো মূলত একটা দেশের কর্মসম্পাদনের মাত্রা পরিমাপ করে, কিন্তু তার মধ্যে সীমান্তপারের বিষয়গুলো খুব একটা আসে না। সেই জন্যই শুধু উন্নয়ন–সহযোগিতার জন্য পৃথক একগুচ্ছ সূচক থাকা দরকার।
সূচক সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে বিভিন্ন ভাবে; কতকগুলো চরিত্রগত ভাবে সাধারণ, অন্য কতকগুলো বিশেষ কোনও প্রসঙ্গের উপযোগী। ১৯৯৩ সালেওইসিডি সূচকের সংজ্ঞা সূচিত করেছিল এই ভাবে: ‘‘একটি মাপকাঠি বা অনেকগুলি মাপকাঠির থেকে পাওয়া মূল্যমান যা বিভিন্ন ঘটনা, পরিবেশ বা ক্ষেত্রের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে, বা সে সম্পর্কে তথ্য দেয়, বা সেগুলো বর্ণনা করে, যেগুলোর তাৎপর্য প্রত্যক্ষ ভাবে ওই মাপকাঠির মূল্যমান ছাড়িয়ে যায়।’’ সহজ কথায় সূচক থেকে একটা জটিল দৃশ্যপট সম্পর্কে এমন সুবিন্যস্ত তথ্য পাওয়া যায় যা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের কাছে সহজেই তুলে ধরা সম্ভব। তাদের কার্যকারিতা অবশ্য মূল্যায়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তাই তারা একটা পরিস্থিতি কেন তৈরি হল বা একটা নির্দিষ্ট সময়ে কেন একটা পরিবর্তন ঘটল তা ব্যাখ্যা করতে পারে না। তার উপরওইসিডি ২০০৩ সালে বিশেষ ভাবে উন্নয়ন–সহযোগিতার পরিপ্রেক্ষিতে সূচককে সংজ্ঞায়িত করেছিলএই ভাবে যে তা ‘একটি পরিমাণগত বা গুণগত ফ্যাক্টর বা ভেরিয়েব্ল যা অর্জন পরিমাপের একটি সহজ ও নির্ভরযোগ্য উপায়, কোনও নির্দিষ্ট ধরনের হস্তক্ষেপের ফলে কী পরিবর্তন হল তার প্রতিফলক, অথবা যা উন্নয়নকর্তার সাফল্য পরিমাপে সাহায্য করে’।
উন্নয়ন–সহযোগিতা উদ্যোগের বড় অংশের কার্যকারিতা নির্ভর করে অনেকগুলি সূচকের উপর। প্রকৃতপক্ষে, এই ধরনের ‘উন্নয়ন সূচকগুলো’র প্রাসঙ্গিকতা আরও বেড়েছে এই কারণে যে সেগুলো দেশ–নির্দিষ্ট বা একটি দেশের নিজস্ব নীতি বা প্রতিষ্ঠানগুলি গড়ে তোলার সহায়ক। তা ছাড়া,ইউরোস্ট্যাটের মতে, সম্পদের পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত বণ্টন এবং দীর্ঘমেয়াদে উন্নয়নের জন্য প্রদত্ত সহায়তার উপর নজরদারির জন্যও সূচকগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ।
উন্নয়ন–সহযোগিতারসূচকগুলোরচিহ্নিতকরণ
সূচকগুলোর ধরন তাদের কী কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বা তারা কীসের নির্ণায়ক তার ভিত্তিতে বিভিন্ন রকম হয়। সারা হোলজাপফেলের মতো বিশেষজ্ঞরা বলেছেন নির্ণায়কগুলোর বিভিন্নতা আর একটা বিষয়ের উপরেও নির্ভরশীল: তা হল সেগুলো কোন পর্যায়ের জন্য কার্যকর — এজেন্সি, না রাষ্ট্র, না একটা কর্মসূচি বা প্রকল্প পর্যায়ের। কর্মদক্ষতা সূচক থেকে শুরু করে প্রাসঙ্গিকতা–নির্ভর সূচক, মানগত সূচক, ফলাফল শৃঙ্খল–ভিত্তিক সূচক থেকে সুস্থিতি (সাসটেনেবিলিটি) সূচক, এমন অনেক সমাপতিত বিভাগ আছে যাদের দৌলতে এই ধরনের অনেকগুলো উপাদান তৈরি হচ্ছে। যেমন কর্মদক্ষতা সূচক একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ের সাফল্য অর্জনের নির্দিষ্ট মাপকাঠিতে বা লক্ষ্যে পৌঁছনো সম্ভব হয়েছে না হয়নি সেই ধারণা দেয়। অন্য দিকে ইওরোপিয়ান কমিশন ইনপুট–আউটপুট–আউটকাম–ইমপ্যাক্ট–এর ভিত্তিতে তাদের সূচকগুলোর শ্রেণিবিন্যাস করে (চিত্র ১ দেখুন)।
তা ছাড়া সুস্থিতি সূচকগুলো দক্ষতা ও কার্যকারিতা সূচকগুলোর সঙ্গে একত্রে কাজ করে। এগুলো নির্দিষ্ট হস্তক্ষেপণের কার্যকারিতা পরিমাপ করে, উন্নয়নের নয়। সুস্থিতি সূচকগুলো দেখায় ফলাফল কী পাওয়া গেল; যেমন হস্তক্ষেপণ যদি হয় স্কুলের শিক্ষকদের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত, তা হলে সুস্থিতি সূচক দেখাবে শিক্ষার মানোন্নয়নে তা কতটা সফল হল।
তবে এটা বুঝে রাখা ভাল যে এমন কোনও পূর্ব–নির্দিষ্ট সূচক নেই যা প্রতিটি অংশীদার দেশের অগ্রাধিকার বা প্রত্যেক প্রকল্প রূপায়ণের প্রয়োজনগুলো নির্দেশিত করতে পারে। বরং সঠিক নির্দেশগুলোকে সূচিত করা নীতিনির্ধারকদের পক্ষে খুবই কঠিন একটা কাজে পরিণত হতে পারে। যেমন ওইসিডি ২০১৩ সালে বলেছিল ডিএসি সদস্যদের অনেকে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার ফলাফল পাওয়া গেল কি না তা পরিমাপের উপযোগী সূচকগুলোকে বেছে নিতে সমস্যায় পড়েছিল। গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা বা ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট (ইউএসএইড)–এর মতো অনেক সহায়তা–এজেন্সি নিজেদের সহায়তা কর্মসূচিগুলির নজরদারির জন্য নিজেদের তৈরি সূচক ব্যবহার করে। আয়ারল্যান্ডের মতো কিছু দেশ মনে করে সূচক তৈরির জন্য নিজেদের কর্মচারীদের এই বিষয় সংক্রান্ত যুক্তিসঙ্গতি, ধারণা, প্রক্রিয়া ও কাঠামো সম্পর্কে প্রশিক্ষিত করা জরুরি। সম্প্রতি২০১৮ সালে গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এফেকটিভ ডেভলপমেন্ট কোঅপারেশন (জিপিইডিসি) উন্নয়ন–সহযোগিতার কার্যকারিতা মাপার জন্য ১০টি সূচকের সাহায্যে একটি ড্যাশবোর্ড তৈরি করে। এগুলোর মধ্যে ছিল সংযুক্ত সহায়তা, নাগরিক সমাজের অন্তর্ভুক্তি, অর্থের নির্ভরযোগ্য বিতরণ, অংশীদার দেশের নিজস্ব প্রোফাইল–এর মতো বিষয়গুলি।
এর উপর, সূচকগুলো কতটা সঠিক হল তা নির্ভর করে তুলনামূলক, নির্ভরযোগ্য ও সময়োপযোগী তথ্যের প্রাপ্তির উপর। এই ঘটনা আবার এটাই স্পষ্ট করে যে সঠিক সূচক চিহ্নিত করা, আধুনিকতম পরিসংখ্যানগত ব্যবস্থায় প্রশিক্ষিত করা, এবং অন্য সহায়তা–গোষ্ঠী ও বহুপাক্ষিক মঞ্চের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান বিনিময়ের মাধ্যমে নিজেদের অবহিত রাখার জন্য এই সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলির সক্ষমতা তৈরি করা কতটা প্রয়োজন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মূল উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে নয়াদিল্লির সহায়তা উদ্যোগগুলো বিশ্বব্যাপী সহায়তা–স্থাপত্যের দিশা বদলে দেওয়ার ক্ষেত্রে একটা মুখ্য ভূমিকা নিচ্ছে। বিদেশমন্ত্রকের পারফরমেন্স ড্যাশবোর্ড উন্নয়ন–সহযোগিতাকে ভাগ করে তিনটি শ্রেণিতে — লাইনস অফ ক্রেডিট, গ্রান্টস অ্যান্ড লোনস, ও ক্যাপাসিটি বিল্ডিং — কিন্তু এই উদ্যোগগুলোর মূল্যায়নের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনে না। ইন্ডিয়ান ডেভলপমেন্ট পার্টনারশিপ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ডিপিএ) অন্য সহায়তা সংস্থাগুলোর পথ অনুসরণ করে এখনও অবধি নেওয়া উন্নয়ন কর্মোদ্যোগ খতিয়ে দেখতে অপরিহার্য সূচকগুলির নিজস্ব কাঠামো বা মডেল তৈরি করার কথা বিবেচনা করতে পারে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Dr Swati Prabhu is Associate Fellow with theCentre for New Economic Diplomacy (CNED). Her research explores the interlinkages between Indias development partnerships and the Sustainable ...