Author : Ramanath Jha

Published on Jul 02, 2022 Updated 0 Hours ago

শহুরে ভারতে অবৈধ নির্মাণের পরিণতি কী?

ভারতের শহরগুলিতে অবৈধ নির্মাণ: আমরা কি কার্যকর ভাবে এর মোকাবিলা করতে পারি?

২০২২ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝি দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরীতে কাঠামো ভেঙে ফেলা, পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারা আরও ধ্বংস বন্ধ করার বিরুদ্ধে ‘‌স্থিতাবস্থা’‌ বজায় রাখার নির্দেশ, এবং তারপর রাজনৈতিক ক্ষোভ বেআইনি নির্মাণের বিতর্ককে জাতীয় আলোচ্যসূচির শীর্ষে তুলে এনেছে। পৌরসভার পদক্ষেপের পক্ষে বা বিপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বৈদ্যুতিন ও মুদ্রণ-মাধ্যমে বিষয়টির প্রতি অভূতপূর্ব মনোযোগ দেওয়া হয়েছিল। যে ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যে বিশদ বিশ্লেষণ করা হয়েছে এই নিবন্ধে তা নিয়ে  আলোচনা করার কোনও উদ্দেশ্য নেই। যে হেতু বিষয়টি বিচারাধীন, তাই এটি সুপ্রিম কোর্টের নিবিড় পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাবে, এবং সর্বোচ্চ আদালতের একটি আদেশ অবশেষে বৈচারিক ভাবে বিষয়টির নিষ্পত্তি করবে।

এখানে উদ্দেশ্য হল শহুরে অবৈধ নির্মাণকে তার পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থাপন করা। সারা দেশে পৌর বিধি বেআইনি নির্মাণের বিষয়ে কমবেশি একই ধরনের পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেয়। বেশ কয়েকটি হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টও এই বিষয়ে মোটামুটি বড় সংখ্যক রায় দিয়েছে।  সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের বিচারবিভাগ শহরগুলিতে অবৈধ নির্মাণের বিষয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ দেখিয়েছে, এবং রাজ্য জুড়ে প্রচুর সংখ্যক মামলায় বিভিন্ন ধরনের কাঠামো ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, সত্যি বলতে, তারপরেও শহরগুলিতে অবৈধ নির্মাণের বিস্তার বন্ধ হয়নি। এগুলির ক্রমাগত বৃদ্ধির জন্য অনেকগুলি কারণ রয়েছে। তাদের সবগুলো অনুধাবন করা সহজ নয়, এবং সমস্যাটিতে এমন সমস্ত জটিলতা রয়েছে যা শহরগুলির বেড়ে ওঠার সময়েই তৈরি হয়।

পৌরসভার পদক্ষেপের পক্ষে বা বিপক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বৈদ্যুতিন ও মুদ্রণ-মাধ্যমে বিষয়টির প্রতি অভূতপূর্ব মনোযোগ দেওয়া হয়েছিল।

শহরে অবৈধ নির্মাণের পরিধি বিশাল। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরগুলি ক্ষুধার্ত হয়ে ওঠে আরও নির্মাণের জন্য, যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হয়ে দাঁড়ায় অবৈধ। এগুলি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অ–বৈধতা আকর্ষণ করতে পারে। এগুলি পৌরসভার আইন লঙ্ঘন করতে পারে সরকারি জায়গায় নির্মাণের কারণে, বা নগর পরিকল্পনা আইন লঙ্ঘন করতে পারে পরিকল্পনা যতটা অনুমোদন করে তার চেয়ে বেশি নির্মাণ করে। এগুলি সমুদ্র ও নদীর পাশের এলাকা, নালা জমি বা অন্য কোথাও জলাশয়ের পাশে নির্মাণের বিরুদ্ধে শহরগুলির উপকূলীয় অঞ্চলের প্রবিধানের মতো পরিবেশগত আইন লঙ্ঘনের কারণেও বেআইনি হতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি, অগ্নি প্রবিধান, পার্কিং প্রবিধান, উচ্চতা–সীমাবদ্ধতা, সিঁড়ি তৈরির নিয়ম এবং আরও অনেক কিছু এগুলি লঙ্ঘন করতে পারে। যাই হোক, লঙ্ঘনের বিশাল বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও, সেগুলিকে বিস্তৃত ভাবে দুটি সাধারণ প্রকারে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে:‌  সরকারি জমিতে অবৈধ নির্মাণ ও ব্যক্তিগত জমিতে অবৈধ নির্মাণ।

সরকারি জমি, বিশেষ করে রাস্তা ও ফুটপাথের উপর নির্মাণের (যা রাস্তার অংশ হিসেবে পৌরসভার আইনে সংজ্ঞায়িত) ক্ষেত্রে পৌর কমিশনারের অপরাধীকে উচ্ছেদ করার এবং নোটিস ছাড়াই সেই কাঠামো ভেঙে ফেলার ক্ষমতা আছে। তবে ব্যক্তিগত সম্পত্তির উপর অবৈধ নির্মাণের বিষয়ে নিয়ম হল নোটিস প্রদান করতে হবে, এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। কার্যত, পৌর আইন যা বলে তা হল কেউ যদি সরকারি সম্পত্তি দখল করেন বা তাঁর ব্যক্তিগত জমির উপরকার কাঠামোকে সরকারি জায়গায় প্রসারিত করেন, তবে সেই ব্যক্তিকে বিনা নোটিসে তাৎক্ষণিক উচ্ছেদ করার যোগ্য একজন দখলদার হিসেবে গণ্য করা হবে। যাই হোক, যদি ব্যক্তি জমি বা সম্পত্তির মালিক হন, এবং অনুমতি ছাড়াই বা যা অনুমতি দেওয়া হয়েছিল তার চেয়ে বেশি নির্মাণ করে থাকেন, তবে সেই ব্যক্তির শুনানির অধিকার থাকবে, এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করার পরেই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এখানে বিল্ডিং আইন অনুমতির পরিধির মধ্যে বিশেষ বিবেচনার মাধ্যমে কিছু পরিমাণ নিয়মিতকরণের সুযোগও রয়েছে। তবে পুরো বিষয়টি জটিল হয়ে দাঁড়ায় এই কারণে যে অর্থ ও পেশীবল, প্রভাব ও সমর্থন উপভোগ করার ক্ষমতার ভিত্তিতে লঙ্ঘনকারী নানা ভাবে পার পেয়ে যেতে পারে।

গরিবদের দিকে তাকিয়ে শুরু করা যাক। তাঁদের মধ্যে একটি বড় সংখ্যকই অভিবাসী, যাঁরা জীবিকা ও বেঁচে থাকার সন্ধানে তাঁদের আসল বাড়ি ছেড়ে এসেছেন। এই ধরনের পুরুষ ও মহিলারা জমি কেনার, বাড়ি তৈরি করার বা অনুমোদিত নির্মিত ফ্ল্যাট কেনার সামর্থ্য রাখেন না, কারণ এই সব বিকল্প তাঁদের সাধ্যের বাইরে। তাঁরা বাড়ি ভাড়াও নিতে পারেন না, কারণ শহুরে ভাড়াবাড়ি আইন আবাসনে সাশ্রয়ী মূল্যের ভাড়াবাড়ি গড়ে তোলায় উৎসাহ দেয় না। যদিও অভিবাসীরা বৈধ ভাবে বাড়ি পেতে পারেন না, শহরের অর্থনীতি কিন্তু তাঁদের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। শহরগুলি তাঁদের শ্রম ছাড়া বাঁচতে পারে না।

অভিবাসীরা নাগরিকদের কাছে সহজেই গ্রহণযোগ্য হয়ে যান তাঁদের শ্রমের সস্তা দামের কারণে, আর রাজনৈতিক শ্রেণির কাছে গ্রহণযোগ্য হন তাঁদের ভোটের জন্য।

এই ধরনের সব পরিস্থিতিতে, কিছু মানুষ সুযোগের গন্ধ পেয়ে যায়। যদিও আইন দরিদ্রদের  শহরের বাইরে আটকে দেয়, স্থানীয় কাউন্সিলররা তাঁদের জন্য জায়গা খুঁজে দিতে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বস্তিতে পরিণত হওয়া যে কোনও উপলব্ধ জমিতে বসতির ব্যবস্থা করে দিতে ইচ্ছুক থাকেন। এই সব অবৈধ বসতিতে শুরুতে নাগরিক পরিষেবা না–ও থাকতে পারে; কিন্তু ধীরে ধীরে সেখানে জল, বিদ্যুৎ, রাস্তার আলো ও অন্যান্য পরিকাঠামো তৈরি হয়ে যায়। এই ধরনের অবৈধ নির্মাণের সঙ্গে দারিদ্র্য ও উচ্চ মানবিক বিষয়বস্তুর আবরণ আছে। অভিবাসীরা নাগরিকদের কাছে সহজেই গ্রহণযোগ্য হয়ে যান তাঁদের শ্রমের সস্তা দামের কারণে, আর রাজনৈতিক শ্রেণির কাছে গ্রহণযোগ্য হন তাঁদের ভোটের জন্য। কিন্তু এতে অবৈধ নির্মাণের দৃশ্যকল্পটি ক্রমশ জটিল হয়ে ওঠে। সেগুলি এমন এক শ্রেণির নির্মাণ তৈরি করে যা বেআইনি,অথচ রাজনৈতিক সমর্থনের দৌলতে নিয়মিতকরণের পুরো প্রক্রিয়া সক্রিয়  আকার নিতে শুরু করে, এবং তা অবৈধ নির্মাণের সংজ্ঞাকে জটিল করে তোলে।

এই অভিবাসীদের অনেকেই জীবিকার সন্ধানে অপ্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রের চাকরিতে যোগ দেন বা তাঁদের নিজস্ব ছোট ব্যবসা শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েন রাস্তার  বিক্রেতারা। ২০১৪ সালে সংসদ ‘‌দ্য স্ট্রিট ভেন্ডরস (প্রোটেকশন অফ লাইভলিহুড অ্যান্ড রেগুলেশন অফ স্ট্রিট ভেন্ডিং) অ্যাক্ট’‌ পাস করেছে, যার আওতায় স্থানীয় প্রশাসনকে অবশ্যই ভেন্ডিং জোন নির্ধারণ করতে হবে এবং ভেন্ডিং লাইসেন্স ইস্যু করতে হবে। যে হেতু শহরগুলি তাদের জমি ব্যবহারের পরিকল্পনায় এই কার্যকলাপের জন্য ব্যবস্থা রাখেনি, তাই ভেন্ডিং কার্যকলাপ রাস্তায়, রেল স্টেশনের বাইরে, বাস স্ট্যান্ড এবং এমন সব জায়গায়  ছড়িয়ে পড়ে যেখানে তারা তৈরি ক্রেতা খুঁজে পাবে। তারা পথচারীদের এবং শহরের গতিশীলতার জন্য বিশাল অসুবিধার কারণ হয়। কিন্তু এরা সেই একই শহরবাসী যারা তাদের কাছ থেকে তাদের দৈনন্দিন চাহিদার পণ্য কিনতে পছন্দ করে কেনাকাটার সুবিধার কারণে। এই ভেন্ডাররা নগর পরিকল্পনা আইনের অধীনে দখলকারী হলেও পথ–বিক্রেতা আইনের অধীনে তাঁদের সাময়িক ভাবে নিয়মিত করা হয়েছে৷ বিক্রেতাদের আধিক্য এবং স্থানের অভাব চোর–পুলিশ খেলার জন্ম দেয়। পৌর প্রশাসন পর্যায়ক্রমে তাঁদের তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এটি বিক্ষোভ, উত্তেজনা, ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের দিকে নিয়ে যায়, এবং কিছু সময় পরে বিক্রেতাদের যে জায়গা থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল সেখানে তাঁরা পুনরায় আবির্ভূত হন। সামগ্রিক ভাবে, ভেন্ডিং শহরগুলিতে একটি সমৃদ্ধ ও ক্রমবর্ধমান কার্যকলাপ। বস্তিবাসী এবং রাস্তার বিক্রেতাদের জন্য আমলাতান্ত্রিক খড়গকে ভোঁতা করে দেয় এমন ঢাল হল স্থানীয় রাজনীতিকেরা। তাঁরা পালাক্রমে স্থানীয় রাজনীতিকের ঝুলিতে ভোট ঢেলে দেন, এবং তাঁর নির্বাচনী জয় নিশ্চিত করেন। একজন জুনিয়র মিউনিসিপ্যাল অফিসার এই সংমিশ্রণে হাত ছোঁয়ালে তাঁর হাত পুড়বে। তিনি দরিদ্রদের বাড়ি ও দোকানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস করলে তাঁদের ক্রোধের মুখোমুখি হন, আর যদি তিনি স্থানীয় রাজনীতিকের ভোটব্যাঙ্ককে আঘাত করার পরিকল্পনা করেন তবে তাঁর ক্রোধের সম্মুখীন হন।

যে নিম্নমধ্যবিত্তরা নিজেদের জন্য ছোট ঘর তৈরি করতে পেরেছেন, ভারতীয় শহরগুলিতে উচ্চ জনঘনত্ব এবং জমির উচ্চ মূল্য তাঁদের অতিরিক্ত নির্মাণের পথে নিয়ে যায়। পরিবারগুলি বড় হয়ে উঠতে থাকলে তাঁরা একটি অতিরিক্ত ঘর তৈরি করেন মূল বাড়ির প্রসারণ ঘটিয়ে বা একটি বারান্দা ঘিরে নিয়ে। এই ধরনের সমস্ত নির্মাণ পরিকল্পনা আইনবিরোধী হয়। তাঁরা স্থানীয় সংস্থার কাছ থেকে নোটিস পান ঠিকই, তবে স্থানীয় ব্যবস্থাগুলি সাধারণত বিষয়টি উপেক্ষা করে। ধনীদের অনেকের জন্য অবশ্য আইন কোনও ব্যাপারই না। তাঁদের অনেকেই নির্লজ্জ ভাবে অননুমোদিত নির্মাণে লিপ্ত থাকেন, এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা বা অর্থের জোরে  যে কোনও বিরোধিতা নির্মূল করেন।

স্পষ্টতই, অবৈধ নির্মাণের বিষয়টি ঘোলাটে। পৌর প্রশাসনের কি তা সামলানোর ক্ষমতা আছে? তাত্ত্বিক ভাবে, হ্যাঁ; কিন্তু আমরা দেখেছি, কাজটি অনেক বড় এবং খুব জটিল। স্থানীয় প্রভাবশালীদের একটি সম্পূর্ণ অংশ আইনের বিরুদ্ধে সক্রিয় থাকে, এবং বেশিরভাগ পৌর প্রশাসন সব সময় তাদের মোকাবিলা করার সাহস দেখাতে পারে না। ফলাফল আমরা সকলেই দেখতে পাই।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.