Published on Oct 09, 2021 Updated 0 Hours ago

পরিচ্ছন্ন শক্তি উৎপাদনের নেতৃত্ব দিতে ভারতের সামনে সম্ভাব্য যে পথ খোলা আছে।

ডেটা যদি নতুন তেল হয়, তা হলে হাইড্রোজেন কি নতুন গ্যাস?‌

এই বছরের জুন মাসের শেষের দিকে হাইড্রোজেন (H2) উৎপাদন ও ব্যবহারের জন্য রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ১০০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। হাইড্রোজেন অস্তিত্বগত ভাবে একটা বর্ণহীন গ্যাস। কিন্তু শূন্য কার্বন–এ পৌঁছনোর দৌড়ে এটি নানা রঙ নিয়ে অবতীর্ণ হয়, এবং প্রতিটি রঙ হল এক একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতির পরিচায়ক।

হাইড্রোজেনএর নানা রঙ

ধূসর হাইড্রোজেন হল সবচেয়ে শস্তা; এক কেজি–র দাম ১ থেকে ১.‌৫ মার্কিন ডলার (২০২০)। কিন্তু এটা সবচেয়ে কম পরিবেশবান্ধব, কারণ এটিকে প্রাকৃতিক গ্যাস (CH4) থেকে আলাদা করা হয় কার্বন ডাইঅক্সাইডের নির্গমন ঘটিয়ে। নীল রঙের হাইড্রোজেন তুলনায় পরিচ্ছন্ন। এক্ষেত্রে কার্বন ডাইঅক্সাইডকে বেঁধে ফেলে সংরক্ষণ করা হয়, যদিও পাকাপাকি ভাবে নয়। এর দাম কেজিপ্রতি ৪.‌৫৫ মার্কিন ডলার (‌২০২০)‌। ফিরোজা রঙের হাইড্রোজেন কিন্তু কার্বনকে কঠিন আকার দিয়ে দেয়। তবে এতে প্রযুক্তিগত সমস্যা আছে। লাল হাইড্রোজেনকে জল থেকে পৃথক করতে ব্যবহার করা হয় পারমাণবিক শক্তি, যা কিনা ফুকুসিমা–উত্তর সময়ে হয়ে গেছে কলঙ্কিত জ্বালানি। সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় হল সবুজ হাইড্রোজেন, যার মধ্যে কার্বন থাকে না। এক্ষেত্রে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে ইলেকট্রোলিসিসের মাধ্যমে হাইড্রোজেনকে জল থেকে পৃথক করা হয়। এর এখনকার দাম হল কেজিপ্রতি ৬ মার্কিন ডলার, আর শিল্পমহলের অনুমান ২০৩০ সালে এর দাম কমে হয়ে যাবে কেজিপ্রতি ২.‌৫ মার্কিন ডলার।

হাইড্রোজেন অস্তিত্বগত ভাবে একটা বর্ণহীন গ্যাস। কিন্তু শূন্য কার্বন–এ পৌঁছনোর দৌড়ে এটি নানা রঙ নিয়ে অবতীর্ণ হয়, এবং প্রতিটি রঙ হল এক একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতির পরিচায়ক। ধূসর হাইড্রোজেন হল সবচেয়ে শস্তা; এক কেজি–র দাম ১ থেকে ১.‌৫ মার্কিন ডলার (২০২০)। কিন্তু এটা সবচেয়ে কম পরিবেশবান্ধব।

হাইড্রোজেনের জন্য ৩,৮০০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুত বিনিয়োগ

সবুজ হাইড্রোজেন এখন বাস্তবায়নের পর্যায়ে আছে। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭০ সালের লরেন্স ডব্লিউ জোন্‌সের টেকনিক্যাল রিপোর্টে যাকে বলা হয়েছিল ‘‌হাইড্রোজেন অর্থনীতি’, এখন সেই দিকে চলার লক্ষ্যে প্রায় ৩০টি দেশ (এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড–সহ)‌ ও ক্যালিফর্নিয়া নানা কৌশল, ভিশন ডকুমেন্ট বা পথনকশা তৈরি করেছে। নিজের ভিন্ন চরিত্রের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে চিন ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে গবেষণা চালাচ্ছে এবং আমেরিকার মতোই সেখানেও পাইলট এইচডিভি (‌হাইড্রোজেন–চালিত বড় গাড়ি)‌ চলতে শুরু করেছে। ২০১৭ সালে হাইড্রোজেন কাউন্সিল নামক শিল্পসত্তা তৈরির পর, যার সদস্য রিলায়েন্স ও ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন উভয়েই, ২৬২টি প্রকল্প ঘোষিত হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এতে ৩০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হওয়ার কথা, যার মধ্যে ৩,৮০০ কোটি মার্কিন ডলার আসবে ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিনিয়োগের অনুমোদনের মাধ্যমে।

রিলায়েন্স সবুজ হাইড্রোজেনের ক্ষেত্রে আবার টেলিকমে ঢোকার কৌশল প্রয়োগ করছে — ২০৩০–এর জন্য ১–১–১ লক্ষ্যমাত্রা

প্রশ্ন হল রিলায়েন্সের আকস্মিক তৎপরতার মধ্যে নতুন কী আছে। প্রথমত, এক দশকের মধ্যে কেজিপ্রতি ১ মার্কিন ডলারে হাইড্রোজেন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা যথেষ্ট উচ্চাকাঙ্ক্ষী, কারণ তা বাকি বিশ্বের শিল্পের অনুমিত দাম কিলোপ্রতি ২.‌৫ মার্কিন ডলারের থেকে ৬০ শতাংশ কম। দ্বিতীয়ত তার বিশাল পরিমাণ অর্থ — ১ হাজার কোটি মার্কিন ডলার — ঢালার প্রতিশ্রুতি, যা কিনা গোটা বিশ্বের প্রকল্পগুলির পরিপ্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট দায়বদ্ধতার ২৫ শতাংশ। তৃতীয়ত, তার সুসংহত, শুরু–থেকে–শেষ পর্যন্ত কার্যকর ব্যবসায়িক কৌশল, যার লক্ষ্য প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ক্ষমতায় ১০০ গিগাওয়াট সৌর ও বায়ুশক্তি উৎপাদনের ব্যবস্থা করা (২০৩০–এর মধ্যে দেশের সামগ্রিক পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার ২২ শতাংশ)‌, ইলেকট্রোলাইজার তৈরির সক্ষমতা অর্জন করা, এবং বাড়ি বা কারখানা ও পরিবহণ ক্ষেত্রের চাহিদা মেটাতে জ্বালানি কোষ (‌fuel cell) তৈরি করা।

এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ‌এবং রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ–এর চেয়ারম্যান ও এমডি ৬৪ বছর বয়সী মুকেশ আম্বানি বড় স্বপ্ন দেখতেই পারেন। কিন্তু এটা কি নিছক নভেম্বরের সিওপি২৬ (২০২১ রাষ্ট্রপুঞ্জ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন)‌–এর কথা মাথায় রেখে নেট জিরো প্রত্যাশার ফানুস?‌ কারণ ঘটনা হল, গ্লাসগো যাওয়ার পথে এখন বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে ‘‌সবুজ প্রেম’‌। কিন্তু দায়বদ্ধতার সঙ্গে নিজে ঝুঁকি নিয়ে যখন কেউ নেমে পড়েন, তখন বোঝা যায় এটা নিছক পরিবেশগত প্রশ্নে নিজের ভাবমূর্তি ভাল করার খেলা নয়, এ হল বড় ধরনের পরিবর্তনকামী দূরদর্শিতার পরিচায়ক।

২০১৭ সালে হাইড্রোজেন কাউন্সিল নামক শিল্পসত্তা তৈরির পর, যার সদস্য রিলায়েন্স ও ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন উভয়েই, ২৬২টি প্রকল্প ঘোষিত হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এতে ৩০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হওয়ার কথা, যার মধ্যে ৩৮০০ কোটি মার্কিন ডলার আসবে ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিনিয়োগের অনুমোদনের মাধ্যমে।

সবুজ হাইড্রোজেনের দাম কমানোর বিষয়টা নির্ভর করে দুটো অতি–গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের উপর শস্তা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ও বৃহদাকার ইলেকট্রোলাইজার, এই দুটোই পাওয়া গেলে হাইড্রোজেনের দাম ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। এর সঙ্গে যোগ করতে হবে গ্রিন বন্ডের মাধ্যমে শস্তা অর্থের জোগানের সম্ভাবনা। এই বছরে এই গ্রিন বন্ড ইস্যু করা হবে ২ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের। কিন্তু তা বাড়তে বাড়তে ২০৩০–এ গিয়ে ৫০ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়াবে বলে আশা করা যায়। তার পাশাপাশি থাকছে সরকারের থেকে ভর্তুকি পাওয়ার সম্ভাবনা। এই সবগুলো মেলালে স্বপ্ন কিন্তু হয়ে যায় অর্জনযোগ্য প্রযুক্তিগত খেলা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২১–এর ১৫ আগস্ট জাতীয় হাইড্রোজেন মিশনের কথা ঘোষণা করেছেন। এর লক্ষ্য ২০৪৭–এর মধ্যে, অর্থাৎ স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপনের সময়, ভারতকে সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদন ও রফতানির বিশ্বজনীন কেন্দ্র করে তোলা।

প্রাকৃতিক গ্যাস কখনওই ‘‌পরের স্টপ’‌ হবে না

কিন্তু হাইড্রোজেন এখনও সরাসরি ব্যবহৃত পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, অথবা কয়লার থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বা প্রাকৃতিক গ্যাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামার জায়গায় পৌঁছয়নি। তা সত্ত্বেও ইতিমধ্যেই তা দেশের মানুষের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। এদিকে একটা পরিণত কম–কার্বন শক্তির উৎস হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস এখন দেশের মোট প্রাথমিক শক্তি ব্যবহারের মাত্র ৭ শতাংশে পৌঁছেছে, যদিও সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ শতাংশ। প্রাকৃতিক গ্যাস আটকে গেল দুটি খামতির জন্য। একটা হল তরল প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করলে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় কমে যাবে বলে ভয়, যা আমাদের রফতানি সম্পর্কে নিরাশাবাদী বৃদ্ধির কৌশলের একটা বদ্ধমূল সংস্কার। দ্বিতীয়ত, সহজলভ্য কয়লা বা সম্ভবত পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির সঙ্গেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রতিযোগিতায় প্রাকৃতিক গ্যাস পেরে উঠবে না, বিশেষ করে যদি স্টোরেজের খরচ প্রত্যাশিত ভাবে কমে যায়।

গ্যাস ইন্ডাস্ট্রির প্রবীণ ব্যক্তিত্ব বিক্রম সিং মেহতা সম্পাদিত ‘‌দ্য নেক্স্ট স্টপ’‌ নামে একটি নতুন বইতে কয়লার থেকে বেশি পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক গ্যাসকে অবহেলা করার প্রহেলিকাটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বিক্রম সিং মেহতা আগে শেল ইন্ডিয়ার সিইও এবং ব্রুকিংস ইন্ডিয়ার এগজিকিউটিভ চেয়ারপার্সন ছিলেন, এবং এখন সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যান্ড ইকনমিক প্রোগ্রেস–এর চেয়ারপার্সন। তা ছাড়া বহু বিশেষজ্ঞ এই বইয়ের লেখক তালিকায় আছেন। কিন্তু যে কথাটা বলা হয়নি তা হল একটা ভয় আছে। ভয়টা হল ঠিক যে ভাবে স্বল্পমেয়াদি, রাজনৈতিক অর্থনীতি চালিত, নিয়ামকজালে আবদ্ধ গোটা ব্যবস্থাটি প্রাকৃতিক গ্যাসকে শ্বাসরুদ্ধ করল, সেই ভাবেই উচ্চ–প্রযুক্তিনির্ভর হাইড্রোজেন উৎপাদন সংক্রান্ত বাণিজ্যিক আশাও মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।

সৌর ও বায়ুশক্তি থেকে উৎপাদিত সবুজ হাইড্রোজেন, যার প্রযুক্তি এখনও প্রাথমিক স্তরে আছে, তা কিন্তু স্বনির্ভরতা ও প্রতিযোগিতামূলক দামের মাপকাঠিতে উতরে যায়।

ভারত হল একটা অনিচ্ছুক ‘‌মুক্ত অর্থনীতি’‌। এখানে সহজাত প্রথম বিকল্প হল ‘‌স্বনির্ভরতা’‌। আমাদের বিশ্ব বাণিজ্য সংক্রান্ত ভাবনার বৈপরীত্যের কথাটাই ধরা যাক:‌ আমরা আরও রফতানি করতে চাই, কিন্তু আমদানি করতে চাই না। আমরা বিদ্যুতের অভাবে ভুগেছি, কিন্তু আন্তঃসীমান্ত শক্তি বাণিজ্যের পথে যাওয়ার তেমন কোনও চেষ্টা করিনি। কোনও বিকল্প নেই বলে আমাদের তেল আমদানি করতে হয়। কিন্তু যে ক্ষেত্রটিতে লৌহ আকরিক বা প্রশিক্ষিত শ্রমের মতোই আমাদের প্রচুর সম্ভাবনা আছে সেই সৌরশক্তি যখন সাবালকত্ব পেল, তখনই ভারত লবি করতে থাকল ইন্টারন্যাশনাল সোলার অ্যালায়েন্স–কে ভারতে নিয়ে আসার জন্য, আর চেষ্টা চলল পশ্চিম এশিয়া থেকে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া হয়ে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত ব্যাপ্ত সোলার গ্রিডের কেন্দ্র হয়ে ওঠার।

সৌর ও বায়ুশক্তি থেকে উৎপাদিত সবুজ হাইড্রোজেন, যার প্রযুক্তি এখনও প্রাথমিক স্তরে আছে, তা কিন্তু স্বনির্ভরতা ও প্রতিযোগিতামূলক দামের মাপকাঠিতে উতরে যায়। তাই আমরা এ ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বের চক্রকেন্দ্রে আসতে চাইছি। অন্যদিকে পৃথিবী কিন্তু রফতানির উৎস হিসেবে দেখছে চিলি, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়াকে, যাদের সব চেয়ে শস্তা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎপাদক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে।

নীলসবুজ সেতু

মেহতা ও তাঁর সহকর্মী লেখকেরা যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন কেন এখন সামনে–থাকা সুযোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের আশু প্রয়োজনের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের প্রতিক্রিয়া হতে হবে সময়ভিত্তিক। সবুজ হাইড্রোজেনের বাণিজ্যিকীকরণের প্রতীক্ষা যা ভাবা হচ্ছে তার থেকে দীর্ঘতর হতে পারে। আয়তনের কারণে দাম কমার সম্ভাবনা থাকলেও সামনে যে বাধাগুলো আছে—শস্তায় টাকা জোগাড় করা, আন্তর্জাতিক প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং নিরাপদ স্টোরেজ ও পরিবহণ—সেগুলো যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

ভারত অনেক ভাল জায়গায় থাকবে যদি দেশ ‘‌পরিবেশবান্ধব’‌ হাইড্রোজেন উৎপাদনের মাধ্যমে আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার প্রতীক্ষায় থাকার পাশাপাশি এখন থেকেই সেই সব ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বাড়াতে থাকে যেখানে তা সাশ্রয়কর এবং লাভদায়ক, যেমন রান্নার জ্বালানি হিসেবে, শহরের ও দূরগামী ট্রাকের জন্য, শহরের বিদ্যুতের ব্যাক–আপ হিসেবে, বা নতুন ট্রাইজেনারেশন (ঠান্ডা করা, তাপ সৃষ্টি করা ও বিদ্যুৎ উৎপাদন) ‌হিসেবে। ব্রুকিংসের রাহুল টোঙ্গিয়া এগুলোকেই বর্ণনা করেছেন প্রান্তিক সর্বোচ্চ সরবরাহ হিসেবে।

প্রযুক্তিগত উন্নতির দুনিয়াটা অনিশ্চয়তায় ভরা। কিন্তু তাই বলে ভবিষ্যতে শস্তায় পাওয়ার আশায় জীবনদায়ী অত্যাবশ্যক সামগ্রী কেনা তো আর অনির্দিষ্ট কালের জন্য মুলতুবি রাখা যায় না। কোভিড-১৯ টিকা পাওয়ার মতো করেই শক্তির কথা ভাবতে হবে। সামর্থ্যে যতটা কুলোয়, তার মধ্যেই সেরা প্রযুক্তি কিনতে হবে, তাকে কাজে লাগিয়ে অর্থনীতির বৃদ্ধি ঘটাতে হবে এবং আয় বাড়াতে হবে যাতে নবতম পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি কেনা যায়।

যদি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ক্ষতি পূরণ করে দিতে না–পারে, তা হলে রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং বৃদ্ধি ও আয়ের উপর প্রভাব ঠিক ততটাই মারাত্মক হবে যতটা শেষ পর্যন্ত হবে পরিবেশগত বিপর্যয়।

অন্তর্বর্তী কৌশল হিসেবে এখনই প্রাকৃতিক গ্যাসের সঙ্গে হাইড্রোজেনের ১৫ শতাংশ মেলানো সম্ভব। কিন্তু আমাদের কি গ্যাস অর্থনীতিতে পৌঁছনোর জন্য পাইপলাইন তৈরি আছে?‌ ভারতে আছে মাত্র ১৬,০০০ কিমি গ্যাস পাইপলাইন, আর আরও ১৫,০০০ কিমি তৈরি করা হচ্ছে। আইসিএফ–এর গুরপ্রিত চুঘ দেখিয়েছেন একই ধরনের জনসংখ্যার দেশ চিনে পাইপলাইন আছে ৭৬,০০০ কিমি, আর ভূখণ্ড হিসেবে ভারতের দুই–তৃতীয়াংশ হওয়া সত্ত্বেও আর্জেন্টিনায় আছে ৩০,০০০ কিমি।

প্রাকৃতিক গ্যাসকে প্রতিযোগিতামূলক করতে হবে

আত্মনির্ভরতাকে প্রসারিত করা উচিত গ্যাস উৎপাদনের সহায়ক নীতি নির্ধারণ থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনের ক্ষেত্রে ভাড়াটে–বসানো মনোবৃত্তির অবসান ঘটানো পর্যন্ত। দেশে গ্যাসের ক্ষেত্রটিতে পঙ্গুত্ব নিয়ে এসেছে রেশনিং ব্যবস্থা, যার সঙ্গে জুড়ে আছে দ্বৈত দামের জমানা। এই বিষয়টি উৎপাদকের লাভ ও সরকারের রাজস্বের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং সেই সঙ্গেই উৎপাদকের লাভের সম্ভাবনাকে নিয়ামকজনিত অনিশ্চয়তার সম্মুখীন করেছে।

গ্যাস মূল্যযুক্ত জিএসটি জমানার বাইরে রয়েছে, এবং তার ফলে উপাদানের উপর আগে–দিয়ে–দেওয়া কর থেকে রেহাইয়ের লাভ পাওয়া যাচ্ছে না। তেলের পরিবর্ত হিসেবে গ্যাসকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সরকারের যে গা–ছাড়া মনোভাব আছে, তার মূলে থাকতে পারে এখনকার লাভজনক কর–রাজস্ব ব্যবস্থায় কোনও রকম ঘাটতি নিয়ে আসার অনীহা। মনে রাখতে হবে কেন্দ্রের মোট কর–রাজস্বের ২৪ শতাংশ এবং রাজ্য সরকারগুলোর রাজস্বের ১৪ শতাংশ আসে তেল থেকে। আবার এই ফসিল জ্বালানির দামে কোনও ছাড় না–দেওয়াটাকেই চালানো হয় পরিবেশরক্ষায় দায়িত্বশীল ব্যবস্থা হিসেবে।

দেশের ভেতরে গ্যাসের দামের ঊর্ধ্বসীমা আছে, আর তা আন্তর্জাতিক আমদানি সমতা–মূল্যের চেয়ে কম। এর লক্ষ্য হল দেশে তৈরি ইউরিয়ার দাম কম রাখা। আইসিআরআইইআর (ICRIER)‌–এর অশোক গুলাটি ও পৃথা ব্যানার্জির বক্তব্য, সরকারের উচিত অর্থনৈতিক যুক্তি মেনে চলা। গ্যাসের দ্বৈত দামের জমানা ভেঙে দিয়ে এবং সারের উৎপাদন ও আমদানি বি–নিয়ন্ত্রণ করে তিন ধরনের লাভ হতে পারে:‌ অভ্যন্তরীণ গ্যাসের উৎপাদন আরও আকর্ষণীয় করে তোলা, সারশিল্পকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তোলা, এবং জল–দূষণকারী সারের ব্যবহার আরও যুক্তিসঙ্গত করা। বাড়তি দামের জন্য চাষিদের ক্ষতি পূরণ করতে সরাসরি তাঁদের কাছে ভর্তুকির টাকা পৌঁছে দেওয়া যায়। তবে এই অর্থনৈতিক যুক্তি আদৌ খাদ্য সরবরাহ ও দামের একটি উপাদানের ক্ষেত্রে সর্বব্যাপী ও অযৌক্তিক আমদানি–নির্ভরতার ভয়কে প্রতিস্থাপিত করতে পারবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

চূড়ান্ত সংরক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিশ্বব্যাপী ফসিল জ্বালানির উৎপাদন ২০৫০ পর্যন্ত প্রতি বছর অন্তত ৩ শতাংশ করে কমাতে হবে যাতে ৫০ শতাংশ সম্ভাবনায় ১.‌৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকা যায়। যদি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ক্ষতি পূরণ করে দিতে না–পারে, তা হলে রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং বৃদ্ধি ও আয়ের উপর প্রভাব ঠিক ততটাই মারাত্মক হবে যতটা শেষ পর্যন্ত হবে পরিবেশগত বিপর্যয়।

হাইড্রোজেন হল প্রাকৃতিক গ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি, কার্বনমুক্ত পরিবর্ত। আমাদের শক্তির ব্যবহার ও কার্বন নিঃসরণের এমন একটা পথ বার করতে হবে যা রাজনৈতিক ভাবে গ্রহণযোগ্য, সবচেয়ে কম অর্থনৈতিক বিঘ্ন সৃষ্টিকারী, এবং যা মিলে যাবে যথার্থ ও সময়ানুসারী সম্পূর্ণ শূন্য কার্বন ভবিষ্যতের সঙ্গে। গ্লাসগো এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে, যদি তা সবথেকে অপব্যয়ী ব্যবহারকারীদের জন্য ন্যায়সঙ্গত ও অর্থবহ প্রশমনের বিকল্পগুলিকে অগ্রাধিকার হিসেবে তুলে ধরতে পারে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.