আফগানিস্তানে তালিবানের শাসন হল একটি নতুন ভূ–রাজনৈতিক বাস্তবতা, যার ধাক্কা সামলাতে বিশ্ব এখনও হিমসিম খাচ্ছে। গত এক বছরে, তালিবান বিভিন্ন মাত্রার সাফল্যের সঙ্গে কূটনৈতিক স্বীকৃতির জন্য তার প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। অধিকাংশ দেশ গোষ্ঠীটিকে রাজনৈতিক স্বাভাবিকতার সঙ্গে সম্পর্কিত কোনও মর্যাদা দেওয়া থেকে দূরে সরে থাকলেও ইরান, রাশিয়া ও চিনের মতো কেউ কেউ বৈশ্বিক ব্যবস্থায় নতুন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় বাড়তি উৎসাহ ও বাস্তববাদ–সহ এই গোষ্ঠীটির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে, কারণ ইতিমধ্যে ইউক্রেন সঙ্কট ঐতিহ্যগত কূটনৈতিক ব্যবস্থাকে আড়াআড়িভাবে বিভক্ত করেছে।
ইউক্রেন সঙ্কট এমন এক সময়ে এসেছে যখন বিশ্ব আফগানিস্তানে সংঘটিত ঘটনাবলি বোঝার উপায় খুঁজছিল। ১৯৯০–এর দশকের বিপরীতে তালিবানের এইবারের দখলদারিকে সারা বিশ্বের কেবল নিউজ ও সোশ্যাল মিডিয়া সরাসরি সম্প্রচার করেছিল। যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাড়াহুড়ো করে বিশৃঙ্খলার মধ্যে প্রস্থান করেছে, তখন কাবুলে একটি অপ্রতিদ্বন্দ্বী তালিবানের সরকারের ক্ষমতা দখল করার চিত্রগুলি প্রাসঙ্গিক। তালিবানের নতুন শাসন বাস্তব, এবং ৯/১১–পরবর্তী মার্কিন নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ক্লান্ত হয়ে পড়া বর্ণনের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এখন একটি দেশের নিয়ন্ত্রণ ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের হাতে চলে যাওয়ার প্রতিক্রিয়া ঠিক করতে হচ্ছে।
ইউরোপের সংঘাত তর্কাতীতভাবে তালিবানের জন্য, যারা কিনা আবারও বিশ্বব্যাপী অচ্ছুৎ হয়ে পড়েছিল, একটি আশীর্বাদ হিসাবে এসেছে। কিয়েভের বিরুদ্ধে রাশিয়ার পদক্ষেপ যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটিয়েছে, এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঠান্ডাযুদ্ধ–যুগের মতো বিভাজন তৈরি করেছে। ইউরোপে দ্বন্দ্ব মোটেই পশ্চিমের কাছে প্রত্যাশিত ছিল না। যখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মধ্যে নতুন মহাশক্তি প্রতিযোগিতা, সেই সময় মস্কোর সঙ্গে ওয়াশিংটনের পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার পুনর্নবীকরণ জটিলতাগুলিকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে। যাই হোক, তালিবানের জন্য এই ফাটলটি ছিল শুভ ইঙ্গিত, যা তাকে একটি বৈধ রাজনৈতিক সত্তা হিসাবে নিজেকে আরও দৃঢ়ভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। তালিবান মধ্য এশিয়া, ইরান, কাতার, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, রাশিয়া ও চিনে গত দেড় বছরে আফগানিস্তানের কয়েকটি দূতাবাসের নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে। অতি সম্প্রতি তালিবান দুবাইতে একজন নতুন ‘তত্ত্বাবধায়ক’ কনসাল জেনারেল নিযুক্ত করেছে, যা সংযুক্ত আরব আমিরশাহির পছন্দের পদ্ধতিতে ধীরগতির পরিবর্তনকেও তুলে ধরে। আপাতদৃষ্টিতে, ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তার বেশিরভাগ প্রতিবেশীর সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ গড়ে তোলা একটি খারাপ ট্র্যাক রেকর্ড নয়। সামগ্রিকভাবে, নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির কাছে এই ভূ–রাজনৈতিক ফাটলগুলি তাদের সক্রিয়তার উপযোগী সুদিন এনে দিয়েছে। তালিবানের কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত রেখে চলা থেকে শুরু করে হামাসের মস্কো সফর, বিদেশমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে কথা, এবং ঘটনাটিকে বৈশ্বিক শক্তির মধ্যে তার ওজনের প্রতিফলন হিসেবে দাবি করা—এ সব থেকে বোঝা যায় বাস্তব রাজনৈতিক শূন্যতা সকলের জন্য নতুন নতুন কৌশল অবলম্বনের সুযোগ এনে দেয়।
বেজিংয়ের ইরানের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক ও চিনা অর্থনীতির উপর মস্কোর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা কাবুলে সবচেয়ে সক্রিয় এই তিনটি দেশকে তালিবান শাসনের সঙ্গে মৌলিক পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও বিস্তৃত সহযোগিতার পথে নিয়ে গিয়েছে।
পশ্চিমের ভুলে যাওয়া আফগানিস্তানকে অন্যরা একটি উন্মুক্ত সুযোগ হিসাবে দেখেছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমের একত্রীকরণ চিনের জন্য কাজ করার আরও জায়গা উন্মুক্ত করেছে। বেজিংয়ের ইরানের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক ও চিনা অর্থনীতির উপর মস্কোর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা কাবুলে সবচেয়ে সক্রিয় এই তিনটি দেশকে তালিবান শাসনের সঙ্গে মৌলিক পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও বিস্তৃত সহযোগিতার পথে নিয়ে গিয়েছে। যাই হোক, এই পার্থক্যগুলিকে একটি দ্রুতবিকাশশীল ‘পশ্চিম বনাম পূর্ব’ আখ্যানের বিস্তৃত কাঠামোতে বড় ধরনের বিরক্তির বিষয় হিসাবে দেখা হয়। ইরান তালিবান শাসনের সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে উভয় রাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের নিয়মিত সফরের মাধ্যমে, আর রাশিয়াও তার উপস্থিতি জোরদার করেছে।
এদিকে, চিন ভবিষ্যতের জন্য আফগানিস্তানের প্রধান অর্থনৈতিক অংশীদার হিসাবে নিজেকে বাজারে উপস্থাপিত করছে। এই সমস্ত কৌশলে রাশিয়া, চিন ও ইরানের জন্য কেন্দ্রীয় ধারণাটি হল মধ্য এশিয়া–সহ এই অঞ্চল থেকে আমেরিকা ও ইউরোপকে দীর্ঘ সময়ের জন্য দূরে সরিয়ে রাখা। এখানে মনে রাখা আবশ্যক যে তেহরান ও মস্কো উভয়ই অতীতে ভারত ও তাজিকিস্তানের সঙ্গে তালিবান–বিরোধী নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল, যার ডিএনএ থেকে ২০০১–এর পরে প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ও আশরাফ গনির আফগান সরকারগুলি তৈরি হয়েছিল।
যাই হোক, আন্তর্জাতিক কূটনীতির খেলা খেলতে তালিবানের বুদ্ধিমত্তার জন্য উপরে উল্লিখিত ঘটনা একটি লিটমাস পরীক্ষাও বটে। যদিও এই আন্দোলনটির বাস্তব রাজনীতির নাটকে গভীর অভিজ্ঞতা নেই, তবে তারা এই ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নতুন নয়। তালিবানের তরফের আলোচনাকারীরা ২০১৩ সাল থেকে কাতারের দোহাতে তাদের রাজনৈতিক কার্যালয় পরিচালনা করছে, এবং সবচেয়ে বড় কথা হল তারা ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের জন্য অনুকূল একটি চুক্তি নিয়ে সফলভাবে আলোচনা করেছে। এমনকি তারও আগে, ১৯৯০–এর দশকে, তাদের শাসনের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের সময় তালিবান একটি হাইজ্যাকিং সঙ্কটের মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করতে চেয়েছিল; এবং এইভাবে নিজের স্বাধীন কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক ওজন তৈরি করার চেষ্টা করেছিল। ১৯৯৯ সালে ভারতীয় এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট আইসি ৮১৪ হাইজ্যাকিং সঙ্কট কান্দাহারে প্রায় সমস্ত যাত্রীর নিরাপদ মুক্তি (১ জন নিহত হয়েছিলেন) এবং নয়াদিল্লিতে কাশ্মীরের জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পর্কিত বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে আট দিন পর শেষ হয়েছিল। জইশ–উল–মুসলিমিনের প্রাক্তন প্রধান এবং সেই আমলে তালিবানের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত সৈয়দ আকবর আগা বলেছিলেন, ‘‘এটি তালিবানের একটি দুর্দান্ত ও ইতিবাচক কাজ ছিল… [এছাড়াও] তালিবানের একটি স্বাধীন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, তা পাকিস্তান যাই বলুক না কেন।”
আজকের তালিবান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কালে, যা অন্তত ধারণাগতভাবে একটি আধা–রাষ্ট্র কাঠামোর মতো কাজ করছে, অনেক কিছু পরিবর্তিত হয়েছে। তবে অন্তর্বর্তিকালীন সরকারটি নিজেই তীব্র অভ্যন্তরীণ মতভেদ নিয়ে হিমসিম খাচ্ছে। কাবুলের সরকারি রাজনৈতিক ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক কুশীলবদের সঙ্গে নারী শিক্ষার মতো কিছু বিষয় নিয়ে, যা উভয় পক্ষের জন্য একটি সহজ সমাধানসূত্র, কাজ করার মাধ্যমে সহযোগিতা করতে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু তাদের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা দ্বারা কান্দাহার থেকে পরিচালিত গোষ্ঠীটির আদর্শগত ভিতটি আন্তর্জাতিক বৈধতার বিনিময়ে ধর্মীয় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নে অনড় রয়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞ মোহম্মদ ইশান জিয়া ও সানা তারিক দ্বারা প্রকাশিত তালিবানের কূটনীতির প্রচেষ্টা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নতুন গবেষণা এই সত্যটি তুলে ধরে যে একটি ব্যর্থ আন্তঃআফগান সংলাপের অভিজ্ঞতার পর বিশেষ করে এর অতি–রক্ষণশীল ভিত্তির শীর্ষস্থানীয়দের মধ্যে সংলাপ যে সত্যিই কাজ করে (যদিও সময় লাগে) এমন বিশ্বাসকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এটি সরলীকরণ মনে হতে পারে; তবে, এ কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে তালিবান প্রথমত একটি আদর্শগত আন্দোলন, এবং তারপর আন্তর্জাতিক শাসনের অনুধাবনের প্রেক্ষিতে একটি ‘রাষ্ট্র’। প্রথমটি তার অস্তিত্বের নোঙ্গর, এবং পরেরটি শুধুমাত্র ব্যবহারিক উদ্দেশ্যে একটি হাতিয়ার।
এ কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে তালিবান প্রথমত একটি আদর্শগত আন্দোলন, এবং তারপর আন্তর্জাতিক শাসনের অনুধাবনের প্রেক্ষিতে একটি ‘রাষ্ট্র’। প্রথমটি তার অস্তিত্বের নোঙ্গর, এবং পরেরটি শুধুমাত্র ব্যবহারিক উদ্দেশ্যে একটি হাতিয়ার।
তালিবান বদলায়নি, কিন্তু আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে পশ্চিমীদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। বিশ্বব্যাপী ভূ–রাজনৈতিক দ্বন্দ্বজনিত সংঘাতগুলির দ্রুত পরিবর্তনের মধ্যে তালিবান প্রকৃতপক্ষে পশ্চিমের আফগানিস্তান সম্পর্কে সামগ্রিক অনাগ্রহকে, এবং সেইসঙ্গে তার আঞ্চলিক ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে এই ইস্যুতে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির অভাবকে অস্ত্র করে রাজনৈতিকভাবে জমিয়ে বসার জন্য একটি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে৷ তালিবানের জন্য এখন সবচেয়ে বড় বাধা হিসাবে রয়ে গেছে তাদের নিজেদের দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ জাতিগত ও রাজনৈতিক বিভাজন।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.