Author : Kiran Yellupula

Published on May 01, 2022 Updated 0 Hours ago

বিগ টেক ফার্মগুলির একচেটিয়া দখলদারি জাতীয় সার্বভৌমত্ব, ন্যায্য প্রতিযোগিতা, উদ্ভাবন–বিস্তার, উপভোক্তা অধিকার, গোপনীয়তা, বাজারি দক্ষতা, অর্থনীতি ও মানব প্রগতির উপর প্রভাব ফেলে। ভারতকে তার প্রযুক্তি নীতি সুরক্ষিত করতে এখনই কাজ শুরু করতে হবে।

ভারত কী ভাবে তার প্রযুক্তি নীতিকে শক্তিশালী, উদ্ভাবনী ও সুরক্ষিত করতে পারে?

দেশীয় উদ্ভাবনের পথ তৈরি করতে, সুষম বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করতে এবং জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য আমরা কি কখনও বিগ টেক সংস্থাগুলিতে লাগাম পরাতে পারব? বৃহত্তর জনস্বার্থ রক্ষার জন্য আমাদের কি একটি সুষম নিয়মবিধি ও একটি সুস্পষ্ট কাঠামো থাকতে পারে? ইন্টারনেটের সশস্ত্রীকরণ রোধে আমরা কি সুষম সাইবার নিরাপত্তা ও নিরাপদ ডেটা গভর্নেন্স কাঠামো তৈরি করতে সক্ষম, যা গুগল (অ্যালফাবেট),অ্যাপ্‌ল, ফেসবুক (মেটা),  অ্যামাজন, মাইক্রোসফ্‌ট ও অন্যদের আরও দায়িত্বশীল ও প্রাণবন্ত করে তুলতে পারে?

চারপাশে দেখুন, আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য ও সর্বব্যাপী ডিজিটাল পরিষেবার    প্রায় সবগুলিই চালায় বিগ টেক। আমাদের মন, অর্থনীতি, জাতীয় নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও অগ্রগতি অদৃশ্য ভাবে কয়েকটি প্রযুক্তি সংস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। সরকারের চেয়ে বেশি শক্তিশালী এই সংস্থাগুলি অপরিমেয় ক্ষমতার অধিকারী। যেমন বলা যায়, অ্যালফাবেট (‌গুগল), মেটা (ফেসবুক)‌‌, ও অ্যামাজন ৭৪ শতাংশ মাইন্ডশেয়ার ও প্রভাবের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল বিজ্ঞাপনে আধিপত্য বিস্তার করেছে।

অনুসন্ধান, বিজ্ঞাপন-মধ্যস্থতা, মোবাইল ওএস (অ্যাপল এবং গুগল)–এর দ্বৈত আধিপত্য এবং নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এই ধরনের একচেটিয়া দখল সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করে। ডেটা ও পরিষেবাগুলির উপর বিগ টেক–এর আধিপত্য অত্যধিক শক্তির ঘনীভবন ঘটাতে থাকে, এবং তার ফলে অর্থনীতি ব্যাপক ভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, আর সেই সঙ্গেই আর্থিক ব্যবস্থা, অর্থনীতি ও ভূ-রাজনীতি বিঘ্নিত হতে থাকে। প্রায়শই এই ভাবে ন্যায্য ব্যবসায়িক আচরণ, প্রতিযোগিতা, ডেটা সুরক্ষা ও ডেটা আদান-প্রদানে বাধা দেওয়া হয়।

একটি আকর্ষণীয় ঘটনা হল রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষের সময় ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞা, ভয় দেখানো এবং বিগ টেক সংস্থাগুলির স্প্লিন্টারনেট–এর উত্থান। নিশ্চিত ভাবেই বিশ্বায়ন পিছু হটছে, কারণ জাতি, ধর্ম, জাতীয়তা বা ভাষাগত সম্বন্ধের চারপাশে ডিজিটাল দেওয়াল তৈরি করা হচ্ছে, ইন্টারনেটকে খণ্ডিত করে প্রযুক্তি-মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য ও সর্বব্যাপী ডিজিটাল পরিষেবার প্রায় সবগুলিই চালায় বিগ টেক। আমাদের মন, অর্থনীতি, জাতীয় নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও অগ্রগতি অদৃশ্য ভাবে কয়েকটি প্রযুক্তি সংস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। 

ক্রমবর্ধমান আস্থার ঘাটতি স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায় যখন একদিকে আমেরিকা-ভিত্তিক বিগ টেক সংস্থাগুলি রাশিয়ার সার্বভৌম ইন্টারনেট (রুনেট)–কে  মানুষ, নির্বাচন ও সমাজ নিয়ন্ত্রণের দায়ে অভিযুক্ত করে, আর উল্টোদিকে রাশিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ করে তার আক্রমণাত্মক, জাতীয় স্বার্থে পরিচালিত সাইবার নিরাপত্তা কৌশলের জন্য,  এবং নিজেকে দুর্ভেদ্য করে তোলার চেষ্টা করে৷ এই পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়া ব্লক করেছে মেটার ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টুইটারে অ্যাক্সেস;‌ আবার অ্যাপ্‌ল, মাইক্রোসফ্‌ট ও নেটফ্লিক্সও সে দেশে তাদের উপস্থিতি সীমিত করেছে।

এই সব ঘটনা প্রমাণ করে কী ভাবে আ্যাপ্‌ল বা গুগল বাজারের আধিপত্য সহ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বাস্তুতন্ত্রে লোকেদের বদ্ধ করে রাখে। এটি বিভিন্ন ক্ষেত্র ও ডিভাইস জুড়ে উপভোক্তাদের জন্য প্রতিযোগিতার প্রশ্নে এবং উদ্ভাবনগত ক্ষেত্রে ক্ষতিকর। ইন্টারনেট প্রহরীদের অবশ্যই উন্মুক্ত, ন্যায্য ও সহযোগিতামূলক ডিজিটাল বাজার ও নাগরিক-কেন্দ্রিক উদ্যোগ লালন করতে হবে।

এই বিষয়টির উপর লক্ষ রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে নিয়ামক ব্যবস্থার ছিদ্রগুলি যেন ডিজিটাল বাজারের শিথিল শাসনের বা ব্যক্তিগত ডেটা আন্তঃদেশীয় ভাবে লেনদেনের অনুমতি না–দেয়, কারণ তা হলে নাগরিকদের অধিকার ও পছন্দগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিগ টেক–এর বাজারি ক্ষমতা সীমিত করার জন্য দেশীয় বিকল্প প্রয়োজন। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের পরিষেবাগুলিকে প্রভাবিত করে এমন পদ্ধতিগত সমস্যাগুলির সমাধান করা সম্ভব হলে, তা আমাদের ব্রাউজার, ভার্চুয়াল সহকারী ও মেসেজিং বা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলিকে নিরপেক্ষ রাখতে সাহায্য করতে পারে৷

ডেটা সুরক্ষা বিধি

বৃহত্তম উন্মুক্ত ইন্টারনেট বাজারগুলির মধ্যে একটি হিসেবে ভারত ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষিত  রাখার পাশাপাশি ডিজিটাল অর্থনীতিকে উৎসাহিত করার জন্য একটি সর্বাত্মক ডেটা গোপনীয়তা কাঠামো নিয়ে কাজ করছে৷ ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১-এ ব্যক্তিগত ডেটা সুরক্ষা বিলের উপর দুই বছর ধরে আলোচনার পরে যৌথ সংসদীয় কমিটি তাদের রিপোর্ট জমা দেয়। আসন্ন নিয়মবিধিগুলির লক্ষ্য কঠোর নিরাপত্তা সুরক্ষা বাস্তবায়ন। এটি একটি স্বাগত পদক্ষেপ, কারণ জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশন (জিডিপিআর)-এর মতো ‘গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড’ ডেটা সুরক্ষা আইনের তুলনায় ভারতের নিয়মকানুন দুর্বল। ডেটা যে মূল্য তৈরি করছে   তা বরাদ্দের ক্ষেত্রে বৃহত্তর ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য বিদেশী সরকারগুলি যাতে অবৈধ ভাবে ভারতীয় ডেটার নাগাল না–পায়, তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য৷ ভারতকে স্মার্ট গ্যাজেট, পণ্য এবং যন্ত্রপাতিতে যে উপভোক্তা ও কর্পোরেট ডেটা তৈরি হচ্ছে তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিকার ও দায়িত্ব নির্ধারণ করতে হবে। স্মার্ট, সংযুক্ত ডিভাইসের ব্যবহারকারীদের অবশ্যই তাঁদের দেওয়া ডেটা অ্যাক্সেস করার এবং তাঁরা চাইলে অন্য সংস্থাগুলির সঙ্গে তা শেয়ার করার অধিকার থাকতে হবে।

আমাদের কাছে স্থিতাবস্থা উপভোগ করা ও বাগাড়ম্বরের বিকল্প হিসেবে আছে বিশ্বব্যাপী সর্বোত্তম অনুশীলনগুলি গ্রহণ করা, যাতে করে একটি সাধারণ, স্বাধীন, অরাজনৈতিক ও নিরপেক্ষ ডিজিটাল সাইবার পরিকাঠামো, শক্তিশালী অ্যালগরিদম–ভিত্তিক অডিট কাঠামো ও অনুবর্তিতার মান বিকশিত হয়। যে হেতু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও অ্যানালিটিক্স আমাদের সমাজে মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রতিস্থাপন করে চলেছে, তাই মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম, নিয়ম ও প্রবিধানের উন্মুক্ততা, নৈতিকতা, উদ্দেশ্য ও দায়বহন ব্যবস্থা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। স্বয়ংক্রিয় সিদ্ধান্ত গ্রহণকে নিরপেক্ষ রাখতে ও বৈষম্যমূলক ফলাফল থেকে মুক্ত করতে অ্যালগরিদমগুলিকে স্বচ্ছ করতে হবে।

বিগ টেক প্ল্যাটফর্মগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে অ্যালগরিদমিক স্বচ্ছতা আবশ্যক। তারা যে র‍্যাঙ্কিং তৈরি করে, যেমন শীর্ষে থাকা সংবাদ বা প্রস্তাবিত পণ্যগুলি সম্পর্কিত, তা অবশ্যই ব্যাখ্যাযোগ্য হতে হবে। ডেটা ভাগ করে নেওয়ার বাধাগুলি অপসারণ করা এবং ডেটার জন্য ক্রস-সেক্টর ইন্টারঅপারেবিলিটি স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করাও অত্যাবশ্যক৷

যে হেতু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও অ্যানালিটিক্স আমাদের সমাজে মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রতিস্থাপন করে চলেছে, তাই মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম, নিয়ম ও প্রবিধানের উন্মুক্ততা, নৈতিকতা, উদ্দেশ্য ও দায়বহন ব্যবস্থা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ইতিমধ্যেই পৃথিবীতে বুদ্ধিমত্তার প্রভাবশালী রূপ হয়ে উঠেছে, এবং মানবজাতির ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করছে। অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা বা জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিশ্বে আধিপত্য বিস্তারের যুদ্ধে জয়ী হতে গেলে প্রয়োজন এআই আধিপত্যের। প্রযুক্তিতে একটি প্রভাবশালী, আত্মনির্ভরশীল, বৈশ্বিক শক্তি হয়ে উঠতে হলে ভারতকে ২০২৫ সালের মধ্যে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে জাতীয় চ্যাম্পিয়নদের একটি দল তৈরি করতে হবে, যারা এআই ক্ষেত্রে আমাদের নেতৃত্ব দেবে, এবং তার জন্য একটি জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে  কাজ করতে হবে। স্বনির্ভর হওয়ার জন্য সরকারের উচিত এআই–এর অত্যাধুনিক অ্যাপগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এই সংস্থাগুলিকে অর্থ ও সহায়তা দেওয়া। চিনের বাইডু, আলিবাবা, টেনসেন্ট, আইফ্লাইটেক ও উইচ্যাট থেকে, অথবা রাশিয়ার ইয়ানডেক্স (রাশিয়ান গুগল), ভিকে (রাশিয়ান ফেসবুক) বা রুনেট (রাশিয়ান ইন্টারনেট) থেকে, আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।

বিশ্বের সেরাদের সঙ্গে তুলনামূলক মূল্যায়নই উৎকর্ষ অর্জনের একমাত্র উপায়। যেমন, নতুন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডিজিটাল মার্কেটস অ্যাক্ট ভারতে অনুরূপ আইন তৈরির জন্য গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। রাজনৈতিক মতৈক্য ছাড়া এটা করা সম্ভব হবে না। যে হেতু প্ল্যাটফর্মগুলি ইন্টারনেটে যাওয়া–আসা নিয়ন্ত্রণ করে (‌তা সে একচেটিয়া সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমেই হোক, অ্যাপ স্টোরগুলির ডুয়োপলির মাধ্যমেই হোক বা ডিভাইসগুলির মাধ্যমে)‌, তাই ভারতকে অবশ্যই স্টার্ট-আপ দ্বারা দেশীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে হবে, এবং সেই সঙ্গেই স্থিতিস্থাপক স্থাপত্য, ওপেন-এপিআই এবং একটি সাইবার নিরাপত্তা কমান্ড সেন্টার তৈরি করতে হবে।

সাইবারস্পেসের আইনবিধি  নিয়ে নতুন করে ভাবার জন্য আমাদের এখনই কাজ শুরু করতে হবে। সেই সঙ্গেই এই আইনগুলি কী ভাবে ভারতকে সাইবারস্পেসে বৈধতা পেতে সাহায্য করতে পারে, এবং এই ক্ষেত্রের আইনি ত্রুটিগুলিকে বন্ধ করতে পারে, তা দ্রুত দেখতে হবে। এই বিষয়টি নিয়ে বাগাড়ম্বর আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্নে জাতীয় বিপদ তৈরি করবে, এবং তা আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করবে। এখনই ভারতের কাছে সুযোগ এসেছে তার প্রযুক্তি নীতি শক্তিশালী, উদ্ভাবনী ও সুরক্ষিত করে তোলার, যাতে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, ন্যায্য প্রতিযোগিতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্ভাবনের বিস্তার, উপভোক্তা অধিকার, গোপনীয়তা, বাজার সংক্রান্ত দক্ষতা, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও মানব প্রগতি রক্ষা করা যায়।

কাজেই প্রশ্ন থেকে যায়: আমরা কি একটি আত্মনির্ভর ইন্টারনেটের জন্য প্রস্তুত?

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.