-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
কোনও দেশই আর দূরবর্তী ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা থেকে সুরক্ষিত নয়। ভারত যেমনটা প্রত্যক্ষ করেছে, বাণিজ্য এবং সরবরাহ শৃঙ্খল সংযোগগুলি আদতে জড়িত নয় এমন দেশগুলিকেও যে কোনও দ্বন্দ্বে টেনে আনতে পারে
হুতি বিদ্রোহীরা লোয়ার রেড সি বা নিম্ন লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজের উপর আক্রমণ চালানোর ফলে ২০২০-এর দশকের আরও একটি বছর সামুদ্রিক অবরোধ এবং বাণিজ্য বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা দিয়েই শুরু হয়েছে। লোহিত সাগর বিশ্ব বাণিজ্য এবং মালবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জলপথ।
গাজার যুদ্ধের দরুন লোহিত সাগরে বর্তমান অচলাবস্থা প্রভাবিত হয়েছে এবং ভারত প্রথমে তার ভূ-রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া থেকে দূরে রয়েছে বলে মনে হতে পারে। কিন্তু সত্যিটা দেখলে, হুতি বিদ্রোহীরা বন্দরের জন্য নির্ধারিত বাণিজ্যিক জাহাজের উপর আক্রমণ চালানোর ফলে নয়াদিল্লি সরাসরি এবং উল্লেখযোগ্য প্রভাবের সম্মুখীন হয়েছে। ম্যাঙ্গালোর বন্দরে ডকিং করা বাণিজ্যিক জাহাজ এম ভি কেম প্লুটোতে ২৩ ডিসেম্বর হুতি বিদ্রোহীরা একটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে হামলা চালালে ঘটনার গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।
মূলত, লোহিত সাগরের এই ঘটনাগুলি এখন বিশ্বায়িত পৃথিবীতে মাত্রা এবং সম্প্রসারিত দ্বন্দ্বেরই প্রতিফলন। কোনও দেশই আর দূরবর্তী ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা থেকে সুরক্ষিত নয়। ভারত যেমনটা প্রত্যক্ষ করেছে, বাণিজ্য এবং সরবরাহ শৃঙ্খল সংযোগগুলি আদতে জড়িত নয় এমন দেশগুলিকেও প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ ভাবে যে কোনও দ্বন্দ্বের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলতে পারে।
নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে হুতি বিদ্রোহীরা - যারা ইয়েমেনের সুবিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করে - গাজার প্রতি নিজেদের সংহতি প্রদর্শন করতে এবং এই অঞ্চলে ইজরায়েলের শক্তি প্রক্ষেপণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে নিম্ন লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করে তুলছে। ইরান সমর্থিত বিদ্রোহীরা প্রাথমিক ভাবে ইজরায়েলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত জাহাজগুলিকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করেছিল। ইউনাইটেড স্টেটস সেন্ট্রাল কম্যান্ড-এর (সেন্টকম) মতে, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে বিদ্রোহীরা নিম্ন লোহিত সাগর দিয়ে যাতায়াতকারী ২৩টি বাণিজ্যিক জাহাজের উপর ইতিমধ্যেই আক্রমণ চালিয়েছে। হুতিরা বর্তমানে এমন জাহাজগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করছে, যেগুলির সঙ্গে ইজরায়েলের সরাসরি কোনও সংযোগ নেই। যেমনটা ভারতের ক্ষেত্রে ঘটেছে অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রতি বাধার মাত্রা বৃদ্ধি করার জন্যই হুতি বিদ্রোহীরা এমনটা করছে।
বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলকারী জলপথগুলির মধ্যে অন্যতম হল লোহিত সাগর। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় ১২ শতাংশ এবং পণ্যবাহী জাহাজের ৩০ শতাংশ এই পথ দিয়ে চলাচল করে। সুয়েজ খালের নৈকট্যের দরুন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিরিখে লোহিত সাগরের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। লোহিত সাগর সুয়েজ খালের দক্ষিণে অবস্থিত, যা ইউরোপকে এশিয়া ও আফ্রিকার সঙ্গে সংযোগকারী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জলপথে একটি অপরিহার্য বিকল্পপথ হিসাবে কাজ করে। ইয়েমেনের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণের পরিপ্রেক্ষিতে হুতিরা ইয়েমেনের পাশে সমুদ্রের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত বাব-এল-মান্দেব প্রণালীতে জাহাজগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য নিজেদের প্রভাব খাটিয়েছে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে লোহিত সাগরের তাৎপর্য এবং বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলকে বিনষ্ট করার জন্য হুতিদের এই কৌশলের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হুতি আক্রমণের প্রভাব কমানোর উদ্দেশ্যে একগুচ্ছ পদক্ষেপ শুরু করেছে। লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে চলাচলকারী জাহাজ এবং নাবিকদের বিনামূল্যে ও নিরাপদ পথ প্রদানের বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে ইতালি, ফ্রান্স, ব্রিটেন, বাহরাইন এবং সেশেলসের মতো দেশগুলিকে একত্র করে অপারেশন প্রসপারিটি গার্ডিয়ানের সূচনা করা হয়েছে। মার্কিন নৌবাহিনী জানিয়েছে যে, এই ঘোষণা করার পর থেকে ১২০০টিরও বেশি জাহাজ লোহিত সাগর অতিক্রম করেছে। জাহাজ চলাচলে সুরক্ষা প্রদানের জন্য অপারেশন প্রসপারিটি গার্ডিয়ানের অংশীদার দেশগুলি একসঙ্গে একাধিক হুতি অ্যান্টি-শিপ মিসাইল এবং ড্রোনকে ধ্বংস করেছে।
যাই হোক, এ হেন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও হুতিরা লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে চলাচলকারী জাহাজগুলিতে আক্রমণ করার নিজস্ব কৌশল অব্যাহত রেখেছে। পশ্চিমি ডেস্ট্রয়ার এবং ফ্রিগেটগুলির অতিরিক্ত উপস্থিতি হুতিদের প্রচেষ্টায় খানিক জল ঢেলে দিলেও তাদের কার্যক্রমকে সম্পূর্ণ ভাবে ব্যর্থ করার সম্ভাবনা নেই। মার্কিন নেতৃত্বাধীন উদ্যোগের একটি বড় ঘাটতি হল আরব রাষ্ট্রগুলির অনুপস্থিতি। গাজা যুদ্ধকে ঘিরে রাজনীতি, ইজরায়েলে তার আগ্রাসী প্রচার প্রশমনে অনিচ্ছা এবং হুতি-বিরোধী অবস্থান নেওয়ার আশঙ্কা সৌদি আরবের মতো আরব শক্তিগুলিকে এই উদ্যোগ থেকে দূরে থাকতে বাধ্য করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্য পশ্চিমী দেশগুলির জন্য লোহিত সাগরে হুতি অভিযান প্রশমন করার ক্ষমতা আরও বেশি করে আরব দেশগুলির সমর্থন কুড়োনোর প্রচেষ্টার নিরিখে লোহিত সাগরে স্বাভাবিকতা পুনরুদ্ধারের জন্য মার্কিন প্রচেষ্টার সাফল্যকে নির্ধারণ করবে, যা বিশ্বব্যাপী জাহাজের চলাচল ও আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলগুলিকে যে কোনও রকম বাধা থেকে সুরক্ষা জোগাবে।
ভারতের জন্য এমভি কেম প্লুটোর ঘটনা বিচ্ছিন্ন ভাবে ঘটেনি। আর একটি জাহাজ এম ভি সাই বাবা ২৩ ডিসেম্বর ভারতের দিকে আসার সময়ে লোহিত সাগরে ড্রোন হামলার সম্মুখীন হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে, ভারতীয় নৌবাহিনী ভারতের জাহাজ চলাচলের স্বার্থ রক্ষা এবং ক্রু, নৌবহর ও মালবাহী জাহাজের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য এই অঞ্চলে পর্যায়ক্রমিক ভাবে নজরদারি এবং উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছে। এই কাজে নৌবাহিনী ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি প্রশমিত করতে প্রজেক্ট ১৫এ এবং ১৫বি শ্রেণির চারটি ডেস্ট্রয়ার মোতায়েন করেছে। এর পাশাপাশি ভারতীয় নৌবাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, বোয়িং পি৮আই দূরপাল্লার অ্যান্টি-সাবমেরিন বিমান, ডর্নিয়ার এবং হেলিকপ্টারগুলি পুনঃনিরীক্ষণের জন্য উপলব্ধ থাকবে।
ভারতীয় নৌবাহিনী নৌচলাচলের পথ বরাবর নিজের স্বার্থের নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করার জন্য এই অঞ্চলে সময়মাফিক উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে। দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্য অংশীদার দেশগুলির মধ্যে একটি বৃহত্তর সমন্বয়ের প্রয়োজন। ভারতকে অবশ্যই লোহিত সাগর অঞ্চলে হুতি বিদ্রোহীদের গতিবিধি ক্রমাগত মূল্যায়ন করার পাশাপাশি সম্ভাব্য ক্ষেত্রে তাদের পরিকল্পনা দমন করতে এবং তথ্যের দ্বিমুখী রিয়েল টাইম প্রবাহ সুনিশ্চিত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করতে হবে। গাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের সময় এই পদক্ষেপগুলিও গ্রহণ করা উচিত। মোট কথা, ভারতকে তার নৌবাহিনীর দক্ষতা এবং কূটনৈতিক সক্ষমতা সর্বোচ্চ বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে পরিস্থিতি তার এবং বিশ্বের, উভয়েরই স্বার্থের অনুকূল হয়। এ হেন ঘটনাপ্রবাহ দর্শিয়েছে যে, ভবিষ্যতে বিভিন্ন মঞ্চে উদ্ভূত ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা সুদূরপ্রসারী প্রভাবের সম্মুখীন হতে পারে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...
Read More +Suchet Vir Singh is an Associate Fellow with the Strategic Studies Programme. His research interests include India’s defence services, military technology, and military history. He ...
Read More +