Author : Abhijit Singh

Published on Feb 06, 2024 Updated 4 Hours ago

ভারত এবং অন্যান্য ভারত মহাসাগরীয় শক্তির জন্য সক্ষমতর ইচ্ছুক অংশীদারদের সঙ্গে একত্রে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে কাজ করাএকমাত্র বাস্তবসম্মত বিকল্প।

জাহাজ চলাচলের উপর হুতিদের আক্রমণ ড্রোন সংক্রান্ত সংশয়কেই প্রকাশ্যে এনেছে

২৩ ডিসেম্বর আরব সাগরে এমভি কেম প্লুটো লাইবেরিয়াপতাকাযুক্ত রাসায়নিক ট্যাঙ্কারে সন্দেহভাজন ড্রোন হামলার এক দিন পরে ইয়েমেনভিত্তিক হুতি জঙ্গিরা গ্যাবনের পতাকাযুক্ত অপরিশোধিত তেলের ট্যাঙ্কারে হামলা চালিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কেম প্লুটোর মতো সাই বাবা জাহাজটি যখন ভারতের দিকে আসছিল, তখন একটি সশস্ত্র ড্রোন সেই জাহাজের উপর আঘাত হানে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে বাণিজ্যিক জাহাজের উপর হুতি জঙ্গিদের এটি ১৫তম আক্রমণ বলে খবর।

জোড়া আক্রমণের ঘটনা আঞ্চলিক দেশগুলির মধ্যে গভীর অস্থিরতা জন্ম দিয়েছে। জলদস্যুদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মোটামুটি পারদর্শী হলেও ভারত মহাসাগরে সামুদ্রিক বাহিনীবেসামরিক জাহাজে ড্রোন হামলা মোকাবিলা করার অভিজ্ঞতা কম। হুতি দ্বারা নিযুক্ত প্রধান কৌশল, বিশেষ করে ড্রোন হামলা সঙ্গে অনেকেই অপরিচিতড্রোন হামলার অস্বীকৃতির কারণ আরও উদ্বেগজনক। কেম প্লুটোতে হামলার জন্য হুতি বা অন্য কোন গোষ্ঠী দায় স্বীকার করেনি। অনেকের মতে, এই হামলা ভারতের নিকটবর্তী জলসীমায় আরও দাবিহীন ড্রোন হামলার একটি উদ্বেগজনক নিদর্শন।

 

কেম প্লুটোতে হামলার জন্য হুতি বা অন্য কোন গোষ্ঠী দায় স্বীকার করেনি। অনেকের মতে, এই হামলা ভারতের নিকটবর্তী জলসীমায় আরও দাবিহীন ড্রোন হামলার একটি উদ্বেগজনক নিদর্শন।

 

ভারতীয় নৌবাহিনী (আইএন) ড্রোন হামলার উত্স শনাক্ত করার দিকে মনোনিবেশ করছে। কেম প্লুটো থেকে উদ্ধার করা ধ্বংসাবশেষের প্রাথমিক তদন্তে ইরানের শাহেদ ১৩৬ লয়েটারিং গোলাবারুদের সম্ভাব্য ব্যবহারের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। শাহেদ ১৩৬ হল রুশ জেরান- এক্সপ্যান্ডেবল ড্রোনের একটি ধরন, যার পরিসর ২৫০০ কিমি পর্যন্ত এবং যার একটি ৫০ কেজি ওজনের ওয়ারহেড রয়েছে২০২০ সালে ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে হুতিরা এই ড্রোনটি ব্যবহার করেছিল বলে জানা গিয়েছে। অবশ্য এ হেন তথ্যটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ইউএস) মোটেও সন্তুষ্ট হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাবি হল এই যে, কেম প্লুটোতে হামলা ইরানের তরফেই ঘটেছে। ওয়াশিংটন দাবি করে যে, ইরান তার উপকূলরেখা থেকে কয়েকশো মাইল দূরে বাণিজ্যিক জাহাজে নিয়মিত হামলা চালায়কিন্তু সেই মূল্যায়ন অন্য বিশেষজ্ঞদের মতামতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ কথা একাধিক ভারতীয় পর্যবেক্ষকের কাছে স্পষ্ট নয় যে, ইরানের সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও তেহরান ভারতের কাছাকাছি জলসীমায় কেম প্লুটোর উপর হামলা চালিয়ে ঠিক কী অর্জন করতে চায়।

ভারতের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব হামলার উৎস খুঁজে বের করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং খুব স্বাভাবিক ভাবেই সতর্ক রয়েছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহের শুরুতে ভারতের সর্বশেষ নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী আইএনএস ইম্ফলের কমিশনিংয়ের সময় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং সম্ভাব্য অপরাধীদের নাম না নিয়ে অপরাধীদের খুঁজে বের করার জন্য সরকারের সংকল্পের উপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, আমরা সমুদ্রের গভীর থেকে হলেও তাদের খুঁজে বের করব এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’

মন্ত্রীর বিবৃতি ভারতীয় জাহাজচালকদের কিছুটা আত্মবিশ্বাস জোগালেও তা সমুদ্রে ড্রোন মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে প্রধান জটিলতা হল কৌশলগত পাল্টা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা। এরিয়াল ড্রোন হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার জন্য একমাত্র কার্যকর প্রযুক্তি অর্থাৎ জ্যামিং এবং স্পুফিং বাণিজ্যিক জাহাজগুলিতে অনুপলব্ধ। সমস্যাটি এই কারণে আরও বেড়ে যায় যে, অনেকগুলি অ্যান্টি-ড্রোন কৌশল নির্দিষ্ট আবহাওয়ার পরিস্থিতিতে ভাল ভাবে কাজ করার জন্য যথেষ্ট নয়। বিশেষত জ্যামিং যথেষ্ট সমস্যার। এতে বন্ধুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্য দিকে স্পুফিং ড্রোন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করার জন্য উপযোগী হলেও কখনও কখনও লক্ষ্যবস্তুতে অনিয়মিত আচরণ করতে পারে। লেজার সিস্টেম এবং উচ্চ-শক্তি মাইক্রোওয়েভ অস্ত্রের মতো নির্দেশিত শক্তি অস্ত্র সশস্ত্র ড্রোন মোকাবিলায় আরও কার্যকরতবে এই প্রযুক্তিগুলি ব্যয়বহুল এবং অনেক আঞ্চলিক নৌবাহিনীর কাছে উপলব্ধ নয়।

কেউ কেউ এ-ও লক্ষ করেছেন যে, ভারত এবং অন্য আঞ্চলিক দেশগুলির জন্য একমাত্র কার্যকর বিকল্প হল মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট কম্বাইন্ড মেরিটাইম ফোর্সেস-এ (সিএমএফ) যোগদান করা। আইএন সম্প্রতি সিএমএফ-এর পূর্ণ সদস্য হয়েছে এবং পশ্চিম ভারত মহাসাগরে জোট নৌবাহিনীর সঙ্গে অনুশীলন করেছে। সিএমএফ পরিচালিত পাঁচটি টাস্ক ফোর্সের মধ্যে কম্বাইন্ড টাস্ক ফোর্স ১৫৩ – যার লক্ষ্য হল লোহিত সাগরে নিরাপত্তা রক্ষা - সম্ভবত অপারেশন প্রসপারিটি গার্ডিয়ানের নেতৃত্ব দেয়। পর্যবেক্ষকরা বলছেন যে, আইএন জোট বাহিনীকে স্বাধীন টহলরত যুদ্ধজাহাজ প্রদান করে একটি নিরাপদ ট্রানজিট করিডোর তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে এবং সেই অঞ্চলের জলসীমাকে রক্ষা করবে। এ হেন প্রচেষ্টার সাফল্য দক্ষিণ লোহিত সাগর থেকে এডেন উপসাগর এবং তার বাইরে প্রসারিত একটি নিরাপদ অঞ্চল তৈরি করার ক্ষমতার উপর নির্ভর করবে।

হুতিরা অবশ্যই তাদের বিরোধিতা মোকাবিলায় ইজরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের জটিল ভূ-রাজনীতিকে কাজে লাগাতে চায়। জঙ্গিরা সম্ভবত আরব সাগরের মতো ভারত মহাসাগরের অরক্ষিত অঞ্চলে আরও এগিয়ে যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক শক্তিগুলির মধ্যকার মতপার্থক্যের সুযোগ নিতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ ভাবে, হুতি হামলা আর ইজরায়েল-সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বাণিজ্যিক জাহাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। লোহিত সাগরে জঙ্গিদের দ্বারা লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠা এমভি সাই বাবার সঙ্গে কোন আপাত ইরায়েলি সংযোগ ছিল না।

আন্তর্জাতিক শক্তিগুলি হুতি হুমকির একটি কার্যকর প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজনীয়তার গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেয়। জঙ্গি হামলা বিশ্ব বাণিজ্যকে রীতিমতো পঙ্গু করে দিয়েছে। হ্যাপাগ-লয়েড, মারস্ক, সিএমএ সিএমজি এবং এমএসসি-সহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দশটি শিপিং কম্পানি বা জাহাজ সংস্থা লোহিত সাগরে তাদের পরিষেবা স্থগিত করেছে এবং একাধিক সংস্থা তা অনুসরণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আঞ্চলিক জাহাজ চলাচল রক্ষার জন্য একটি নৌ জোট গঠনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জাহাজচালকদের আশ্বস্ত করার মার্কিন প্রচেষ্টা এখনও সঠিক ভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। অপারেশন প্রসপারিটি গার্ডিয়ান প্রাথমিকভাবে ২০টিরও বেশি দেশ দ্বারা সমর্থিত হয়েছে এবং সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রান্স, ইতালি এবং স্পেন নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ায় জোটের জন্য তা একটি উল্লেখযোগ্য ধাক্কা

প্রধান সামুদ্রিক শক্তিগুলির মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও, একটি বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে: হুতি হুমকির সম্মুখীন হওয়ার জন্য আঞ্চলিক দেশগুলির সম্মিলিত প্রস্তুতহীনতা। নৌ বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে সম্মত যে, সমুদ্রে ড্রোন-বিরোধী যুদ্ধের কৌশল এবং পন্থা এখনও বিকশিত হচ্ছে এবং ড্রোনকে লক্ষ্যবস্তু করার কিছু পদ্ধতি যতটা মনে করা হয় ততটাও কার্যকর নয়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ১৪টি সশস্ত্র ড্রোন নামানোর দাবি করেছেতবে সে ক্ষেত্রে কী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল তা এখনও অজানাতবে সম্ভবত ক্ষেপণাস্ত্রের সংমিশ্রণে একটি দূরপাল্লার বন্দুক ব্যবহার করা হয়েছিল। আঞ্চলিক নৌবাহিনী স্বীকার করে নিয়েছে যে, হুতিদের কার্যকর ভাবে মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যকরী সমন্বয় এবং আন্তঃকার্যকারিতার অভাব রয়েছে।

 

প্রধান সামুদ্রিক শক্তিগুলির মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য সত্ত্বেও, একটি বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে: হুতি হুমকির সম্মুখীন হওয়ার জন্য আঞ্চলিক দেশগুলির সম্মিলিত প্রস্তুতহীনতা

 

এবং এখনও পশ্চিম ভারত মহাসাগরে ড্রোন হুমকির সম্ভাব্য উত্তর রয়েছে। উন্নত পরিস্থিতিগত সচেতনতা এবং আরও ভাল সরঞ্জামের সাহায্যে সামুদ্রিক বাহিনী হুতি ড্রোন মোকাবিলা করতে পারে। আঞ্চলিক নৌবাহিনীকে নিদেনপক্ষে নিজেদের চিরাচরিত অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে এবং সক্রিয়তা বৃদ্ধি করতে হবে। ভারত এবং অন্যান্য ভারত মহাসাগরীয় শক্তির জন্য সক্ষমতর ও ইচ্ছুক অংশীদারদের সঙ্গে একত্রে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে কাজ করাই একমাত্র বাস্তবসম্মত বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।


অভিজিৎ সিং অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.