রাষ্ট্রপুঞ্জ সেপ্টেম্বর মাসে সাউথ-সাউথ কোঅপারেশন ডে বা দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতা দিবসের আর একটি বছর চিহ্নিত করলেও উন্নয়নশীল বিশ্ব বারবার সঙ্কটের মুখে পড়েছে। তা সে গাজা ও ইউক্রেনের সংঘাত থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সঙ্কট কিংবা বিশ্ব জুড়ে দুর্যোগ, বাস্তুচ্যুতি ও চরম আবহাওয়ার ঘটনাই হোক না কেন। তা হলে কি আদৌ দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার প্রয়োজন আছে?
গ্লোবাল সাউথের উত্থান সম্প্রতি গতিশীলতা অর্জন করেছে। ভারত, চিন, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলি উন্নয়নশীল অংশীদারদের সঙ্গে তাদের সর্বোত্তম অনুশীলন ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান ভাগ করে একটি নির্দিষ্ট দক্ষিণী আখ্যান তৈরি করছে। যাই হোক, একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে এসএসসি বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক ম্যাট্রিক্সে প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। চিন দক্ষিণ ব্লক থেকে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন পরিসরের একটি বিশেষ অবস্থান অধিষ্ঠিত। কিন্তু চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের দ্রুত সম্প্রসারণ শুধুমাত্র উন্নত দেশগুলিকেই পর্যুদস্ত করেনি, পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্যও ঋণের ফাঁদ তৈরি করেছে। চিনের ভূ-রাজনৈতিক আগ্রাসন দক্ষিণের অন্যান্য দেশকে, বিশেষ করে ভারতকে বিচলিত করেছে।
উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক মেরুকরণ দক্ষিণের দেশগুলির সুবিধার জন্য একটি বৃহত্তর সহযোগিতামূলক কাঠামো তৈরির প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়।
এসএসসির সারমর্ম গুরুত্বপূর্ণ ও আন্তরিক। তবে তা সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। ‘সাউথ’ বা ‘দক্ষিণ’ শব্দের ব্যবহার ঔপনিবেশিক অতীতকেই দর্শায়, যা উন্নয়নশীল দেশগুলি ত্যাগ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক মেরুকরণ দক্ষিণের দেশগুলির সুবিধার জন্য একটি বৃহত্তর সহযোগিতামূলক কাঠামো তৈরির প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়। বিশ্লেষকদের মতে, সম্ভবত সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হল এই দৃষ্টিভঙ্গি যে, এসএসসি উন্নত দেশগুলির জন্য তাদের প্রভাবকে কাজে লাগাতে, বৈধতা অর্জন করতে এবং দক্ষিণের দেশগুলির জন্য উন্নয়ন সহযোগিতার আখ্যানে নিজেদের ভূমিকা তৈরি করার জন্য একটি সাধারণ ভিত্তি হিসাবে কাজ করে।
তার পর একই ধরনের উদ্বেগ ও চ্যালেঞ্জ ভাগ করে নেওয়া সত্ত্বেও ভারত ও চিনের মতো বিশিষ্ট উন্নয়নশীল দেশগুলির ভূ-রাজনৈতিক ও উন্নয়নমূলক অগ্রাধিকারগুলি বিভিন্ন রকম। বৃহৎ শক্তি প্রতিযোগিতার আলোকে তাদের নিজ নিজ রাজনৈতিক ঝোঁক এসএসসি-কে একটি শক্তিশালী মঞ্চ হিসাবে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও বাধা সৃষ্টি করে। সর্বোপরি, উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও অন্যান্য সম্পদের প্রতিযোগিতার ফলে ইইউ-ইন্ডিয়া ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজি কাউন্সিল, কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়লগ এবং ভারত, ইজরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে আইটুইউটু এবং ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ অর্থনৈতিক করিডোরের মতো বিভিন্ন কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে উঠছে, যা এসএসসি-কে খানিকটা হলেও এগোতে সাহায্য করতে পারে।
ভয়েস অফ গ্লোবাল সাউথ সামিটের অধীনে উন্নয়নশীল ব্লকের প্রায় ১২৫টি দেশকে একত্রিত করতে ভারতের ক্ষমতা ও আগ্রহ এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। এটি বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন কাঠামোয় নয়াদিল্লির প্রধান অবস্থানকে প্রতিফলিত করে।
এসএসসি-র প্রাসঙ্গিকতা এমন এক সময়ে বৃদ্ধি পেয়েছে, যখন বিশ্ব তার স্থিতিশীল লক্ষ্য পূরণের জন্য সংগ্রাম করছে। ভয়েস অফ গ্লোবাল সাউথ সামিটের অধীনে উন্নয়নশীল ব্লকের প্রায় ১২৫টি দেশকে একত্রিত করতে ভারতের ক্ষমতা ও আগ্রহ এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। এটি বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন কাঠামোয় নয়াদিল্লির প্রধান অবস্থানকে প্রতিফলিত করে। নিজস্ব উন্নয়নের গতিপথকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি নয়াদিল্লির কাঁধে দক্ষিণের দেশগুলির চ্যালেঞ্জগুলি পরিচালনা করার অতিরিক্ত দায়িত্ব রয়েছে।
ভারত হল একটি বিনিময়মূলক অংশীদার এবং উত্তর ও দক্ষিণ উভয়েরই সমমনস্ক মিত্র হিসাবে বিবেচিত। এটি নয়াদিল্লিকে এসএসসি-কে পুনরুজ্জীবিত করা এবং সম্ভবত দু’টি ভৌগোলিক মেরুর মধ্যে ব্যবধান পূরণ করার সুযোগ করে দেয়। ভারতের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিতে স্থিতিশীলতার দরুন ২০৩০ সালের পরবর্তী বিশ্বে সহকর্মী উন্নয়নশীল দেশগুলিকে আন্দোলনে অংশ নিতে এবং টিকিয়ে রাখতে উত্সাহিত করে নয়াদিল্লির দ্বারা এসএসসি-কে একটি কার্যকর পদ্ধতিতে পরিণত করা যেতে পারে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য টেলিগ্রাফ-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.