একবিংশ শতাব্দী এমন সব অনুমানের উপর ভিত্তি করে গঠিত অর্থনৈতিক তত্ত্ব দ্বারা পরিচালিত হয় যা সবসময় বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে না। এরকম একটি অনুমান হল হোমো ইকনমিকাস — একজন পুরোপুরি যুক্তিবাদী ব্যক্তি যিনি সর্বদা উপযোগিতাকে সর্বোচ্চ স্থান দেন। যদিও র্যাশনাল চয়েস থিওরি সমস্ত ব্যক্তিকে সমজাতীয় অর্থনীতিবাদী বলে মনে করে, মানুষ শুধুমাত্র আংশিকভাবে যুক্তিবাদী। আচরণগত অর্থনীতি, যা আচরণগত বিজ্ঞানের একটি উপক্ষেত্র, তা এমন একটি আন্তঃবিষয়ক ক্ষেত্র যা মনোবিজ্ঞান, স্নায়ুবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান-সহ বিভিন্ন শাখা থেকে উপাদান নেয়, এবং প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও অর্থনৈতিক আচরণের মনস্তাত্ত্বিক কারণগুলির প্রভাবের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
একটি জটিল ও দ্রুত-গতির বিশ্বে, হিউরিস্টিকস (সাধারণ অভিজ্ঞতালব্ধ পদ্ধতি) ও মেন্টাল মডেল (আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব দ্বারা আকৃতিপ্রাপ্ত) ব্যবহার করে সহজাত সিদ্ধান্তগ্রহণ, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বিকশিত হয়েছে, তা দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে এবং কগনিটিভ লোড হ্রাস করে। একই সঙ্গে অবশ্য বিবেচনাপ্রসূত চিন্তাভাবনার অভাব প্রায়শই পদ্ধতিগতভাবে পুরোপুরি আদর্শ নয় এমন সিদ্ধান্তের দিকে চালিত করে। অর্থনৈতিক কাঠামোতে মনস্তাত্ত্বিক মডেলগুলি অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে উন্নয়ন চ্যালেঞ্জগুলি আরও ভালভাবে মোকাবিলা করা যেতে পারে।
আচরণগত অর্থনীতি, যা আচরণগত বিজ্ঞানের একটি উপক্ষেত্র, তা এমন একটি আন্তঃবিষয়ক ক্ষেত্র যা মনোবিজ্ঞান, স্নায়ুবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান-সহ বিভিন্ন শাখার থেকে উপাদান নেয়, এবং প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও অর্থনৈতিক আচরণের মনস্তাত্ত্বিক কারণগুলির প্রভাবের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
আচরণগত অন্তর্দৃষ্টির প্রয়োগ
মানুষের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে আচরণগত বিজ্ঞানীরা ‘নাজেস’ (হালকা ধাক্কা) ব্যবহার করেন, যা নোবেল বিজয়ী রিচার্ড থ্যালার পছন্দের স্থাপত্যের (যে প্রেক্ষাপটে ব্যক্তিরা সিদ্ধান্ত নেয়) এমন সূক্ষ্ম পরিবর্তন হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন, যা পছন্দকে সীমাবদ্ধ না করে, বা উল্লেখযোগ্যভাবে অর্থনৈতিক প্রণোদনা পরিবর্তন না দিয়েই, আচরণের অনুমানযোগ্য পরিবর্তন করে। শিকাগোতে তীক্ষ্ণ বাঁকের কাছে রাস্তাগুলিতে ক্রমান্বয়ে কাছাকাছি সাদা স্ট্রাইপ আঁকার ফলে দ্রুত গতির একটি বিভ্রম তৈরি হয়, যা দুর্ঘটনা ৩৬ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। ব্রাজিল লিড অ্যাকট্রেসদের নিয়ে সোপ অপেরাকে কাজে লাগিয়ে নারীশিক্ষাকে উৎসাহিত করেছে, যার ফলে প্রজনন হার ১১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। যেখানে ঐতিহ্যগত হস্তক্ষেপ ব্যর্থ হয়, এমন জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এই পদ্ধতি ছোট, ব্যয়-কার্যকর পরিবর্তনের সম্ভাবনা প্রদর্শন করে।
আমরা সবাই ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত এমন ছোট ছোট ধাক্কার দ্বারা বেষ্টিত। এগুলিকে কাজে লাগিয়ে, সামাজিক সুবিধার জন্য নীতিগুলি উন্নত করা যেতে পারে। বিশ্বব্যাপী ৬০০টিরও বেশি আচরণগত অন্তর্দৃষ্টি বা ‘নাজ’ ইউনিট সরকার, ব্যবসা, লাভরহিত সংস্থা, গবেষণা কেন্দ্র ও বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা নীতি উন্নয়নে তাদের ক্রমবর্ধমান প্রাসঙ্গিকতা প্রদর্শন করে৷
ভারতে জনস্বাস্থ্যের হস্তক্ষেপ
স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সমস্যাগুলি প্রায়শই চিকিৎসার পরিবর্তে আচরণগত হয়, যেমন যথাযথ প্রতিরোধমূলক যত্ন না নেওয়া এবং তামাক সেবনের মতো উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে লিপ্ত হওয়া। একে ‘হাইপারবোলিক ডিসকাউন্টিং’ দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যা এমন একটি হিউরিস্টিক যার মতে যখন পছন্দ ও ফলাফলগুলি সময়ের দ্বারা পৃথক করা হয়, তখন বর্তমান উপযোগিতায় পরিবর্তনের উপর ভবিষ্যতের উপযোগিতায় পরিবর্তনের তুলনায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। মানানসই আচরণ-কেন্দ্রিক নীতিগুলি বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলির জন্য একটি নতুন প্রেসক্রিপশন হিসাবে কাজ করতে পারে এবং স্বাস্থ্যের ফলাফলের উন্নতি করতে পারে।
বিহার ও উত্তর প্রদেশে রাজ্য বিআইইউ স্থাপন করা হয়েছিল বাস্তবের মাটিতে গবেষণা পরিচালনা করার জন্য এবং আচরণগতভাবে তৈরি করা হস্তক্ষেপগুলি পরীক্ষা করার জন্য।
২০১৯ সালে, নীতি আয়োগ বিহেভিয়েরাল ইনসাইটস ইউনিট (বিআইইউ) প্রতিষ্ঠা করেছে, যার লক্ষ্য বিশেষত কম-সম্পদ ক্ষেত্রগুলিতে প্রমাণ-ভিত্তিক সমাধান ব্যবহারের মাধ্যমে অনুপযোগী আচরণের বিরুদ্ধে লড়াই করা। অতিরিক্তভাবে, বিহার ও উত্তর প্রদেশে রাজ্য বিআইইউ স্থাপন করা হয়েছিল বাস্তবের মাটিতে গবেষণা পরিচালনা করার জন্য এবং আচরণগতভাবে তৈরি করা হস্তক্ষেপগুলি পরীক্ষা করার জন্য। বর্তমানে, উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতায়, ভারতে উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলা কর্মসূচিকে উৎসাহিত করতে আচরণগত অন্তর্দৃষ্টি প্রয়োগ করা হচ্ছে।
যদিও ভারত সরবরাহের দিকে (অর্থাৎ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো) উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, চাহিদার দিক থেকে (অর্থাৎ, ভোক্তাদের) আচরণগত সীমাবদ্ধতা বাধা সৃষ্টি করছে। উদাহরণস্বরূপ, সরকার কর্তৃক বিনামূল্যে আয়রন-ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেটের ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও, ভুল ধারণা ও অবিশ্বাসের মেন্টাল মডেলের কারণে সেগুলির গ্রহণ কম হয়। মধ্যপ্রদেশে গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিদিন ট্যাবলেট খেতে উৎসাহিত করার জন্য দাগ দেওয়া যায় এমন ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হয়েছিল, যা মেনে চলার পরে একটি সুস্থ শিশুর জন্ম হয়। গর্ভবতী মায়েদেরও তাদের উপর কগনিটিভ লোড কমানোর জন্য নতুন মায়েদের প্রয়োজনীয়তা-সমন্বিত একটি কিট সরবরাহ করা হয়েছিল।
মহারাষ্ট্রে শিশুরা যখন হ্যান্ড শেক করে তখন জীবাণুর বিস্তার বোঝানোর জন্য গ্লিটার ব্যবহার করা হয়েছিল, যা ধারণাটিকে তাদের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। এর ফলে হাত ধোয়ার প্রতি শিশুদের মনোভাবের ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছে। কোভিড-১৯-এর সময় গেমিং অ্যাপ্লিকেশন লুডো কিং ‘মাস্ক মোড’ এবং ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের মতো উপাদানগুলি ব্যবহার করে কোভিড-উপযুক্ত আচরণ প্রচার করা হয়েছিল, যা ২৭.৫ শতাংশ মানুষের মধ্যে মুখোশের কার্যকারিতা সম্পর্কিত বিশ্বাস পরিবর্তন করতে এবং নিরাপদ কোভিড আচরণে জড়িত হওয়ার অভিপ্রায় বাড়াতে সহায়তা করেছিল। এই হস্তক্ষেপগুলি বয়সের গোষ্ঠী এবং বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে আচরণগত অন্তর্দৃষ্টিগুলির ব্যাপক প্রয়োগযোগ্যতার প্রতিনিধিত্ব করে, এবং ভারতীয় প্রেক্ষাপটে এর বিশাল সুযোগ প্রদর্শন করে।
ভারতের জন্য এগিয়ে যাওয়ার পথ
ভারতে প্রতিষ্ঠার সঙ্গেসঙ্গে, যা দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম বিআইইউ, শুধুমাত্র মূলধারার ভারতীয় নীতির মধ্যেই নয়, বরং বিশ্বব্যাপী আচরণগত বিজ্ঞান সম্প্রদায়ে অবদান রাখার মতো প্রমাণভিত্তিক অন্তর্দৃষ্টি প্রবর্তন করার দ্বৈত দায়িত্ব এসে পড়েছে। কিছু উদ্ভাবনী হস্তক্ষেপ বাস্তবায়ন সত্ত্বেও, এখনও ফাঁক রয়ে গিয়েছে। এই বিষয়ে, কিছু সুপারিশ নীচে আলোচনা করা হল।
হস্তক্ষেপগুলির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য এবং দুর্বল গোষ্ঠীর প্রান্তিকতা এড়াতে সামাজিক নিয়ম ও মূল্যবোধের সঙ্গে এগুলিকে সারিবদ্ধ করা উচিত।
আচরণগত হস্তক্ষেপ, যদিও ব্যয়-কার্যকর, স্বায়ত্তশাসন ও সম্মতি সম্পর্কে নৈতিক প্রশ্ন উত্থাপন করে। নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই স্বতন্ত্র স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখতে এবং পছন্দের সুরক্ষার জন্য স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া, হস্তক্ষেপগুলির গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য এবং দুর্বল গোষ্ঠীর প্রান্তিকতা এড়াতে সামাজিক নিয়ম ও মূল্যবোধের সঙ্গে এগুলিকে সারিবদ্ধ করা উচিত। খারাপভাবে তৈরি করা পছন্দের স্থাপত্যের অপ্রত্যাশিত পরিণতি হতে পারে, এবং তা স্টিরিওটাইপকে শক্তিশালী করার ঝুঁকি বা অসমতাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা অন্তর্ভুক্তি ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। স্থিতিশীলতা আরেকটি চ্যালেঞ্জ। নাজ-গুলি প্রায়শই সময়ের সঙ্গে কার্যকারিতা হারায়, কারণ তাদের নতুনত্ব বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব মূল্যায়ন এবং হস্তক্ষেপগুলি পরিমার্জিত করার জন্য কঠোর পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন অপরিহার্য। নৈতিক কাঠামো ও চলতি গবেষণা কার্যকারিতা ও নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।
ভারতে, বিআইইউ-এর ২০২২ সালের মূল্যায়ন অনুসারে কেন্দ্রীয়ভাবে অর্থায়িত প্রকল্পগুলিতে আচরণগত উপাদানগুলির অন্তর্ভুক্তি সীমিত রয়ে গিয়েছে। অতিরিক্তভাবে, অর্গানাইজেশন ফর ইকনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) দ্বারা ২৩টি দেশের ৬০টি নাজ ইউনিট নিয়ে একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, আচরণগত অন্তর্দৃষ্টিগুলি প্রায়শই পরে নিয়ন্ত্রক প্রক্রিয়ায় ফাঁক পূরণের জন্য প্রয়োগ করা হয়। সামনের দিনে নীতি বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে একটি সক্রিয় দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে এবং আচরণগত অন্তর্দৃষ্টিকে অন্তর্ভুক্ত করে নীতির কার্যকারিতাকে দুর্বল করে এমন পক্ষপাতগুলিকে আরও ভালভাবে মোকাবিলা করা যেতে পারে।
ভারতীয় জনস্বাস্থ্যের পরিসরের মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে অর্থায়িত প্রকল্পগুলি প্রাথমিকভাবে তথ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগের কৌশলগুলিকে অবলম্বন করে, যেখানে আচরণগত চ্যানেলগুলির জন্য সীমিত তহবিল বরাদ্দ করা হয়। একটি পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে, শুধুমাত্র বিধবা পেনশন প্রকল্পের জন্য তথ্য প্রদান করা হলেই তা বর্ধিত প্রয়োগগুলিতে ব্যবহৃত হয় না, এবং সহগামী আচরণ পরিবর্তনের উপাদানগুলি তথ্যকে কর্মে পরিণত করার মূল চাবিকাঠি।
অনেক হস্তক্ষেপ আঞ্চলিক স্তরে সীমাবদ্ধ, যা রাজ্য ও জাতীয়-স্তরের নীতিগুলির জন্য উপযুক্ত সম্প্রসারণের সম্ভাবনা নির্দেশ করে।
অধিকন্তু, অনেক হস্তক্ষেপ আঞ্চলিক স্তরে সীমাবদ্ধ, যা রাজ্য ও জাতীয়-স্তরের নীতিগুলির জন্য উপযুক্ত সম্প্রসারণের সম্ভাবনা নির্দেশ করে। আরও, ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বিবেচনা করে বিহার ও উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি অন্যান্য রাজ্যেও বিআইইউ প্রতিষ্ঠা করা উচিত। উপরন্তু, এ সবের সীমিত পর্যবেক্ষণ বা মূল্যায়ন হচ্ছে। বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পরীক্ষিত হস্তক্ষেপগুলি কিন্তু ফাঁক সনাক্ত করতে, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব মূল্যায়ন করতে, এবং সেই অনুযায়ী সফল হস্তক্ষেপগুলিকে চালনা করতে সহায়তা করে। তাছাড়া, ‘নাজ’-গুলি সর্বদা আদর্শ নাও হতে পারে, এবং তাদের মোট কল্যাণের প্রভাব মূল্যায়নের জন্য সেগুলিকে বিশ্লেষণ করা উচিত।
যদিও স্বাস্থ্য, নারী ও শিশু উন্নয়ন এবং পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রগুলি ক্রমবর্ধমানভাবে আচরণগত অন্তর্দৃষ্টি ব্যবহার করছে, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি বা শ্রম বাজারের মতো পরিসরে তাদের প্রয়োগ সীমিত, যদিও উভয়ই স্বাস্থ্যের সামাজিক নির্ধারক। উপরন্তু, শুধু ‘নাজ’ সব সমস্যার সমাধান করতে পারে না। ‘কমিউনিটি-লেড টোটাল স্যানিটেশন’ নামে একটি হস্তক্ষেপ, যার লক্ষ্য ছিল উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ মুক্ত জনসম্প্রদায় তৈরি করা, তার আওতায় ২০০৭ সালে ভারত ও ইন্দোনেশিয়ায় ‘লজ্জার পথে হাঁটা’ হিসাবে খোলা মলত্যাগের জায়গায় পাবলিক গ্রুপ ডিসকাশান করা হয়েছিল, যা উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগে ইন্দোনেশিয়ায় ৭ শতাংশ এবং ভারতে ১১ শতাংশ হ্রাস ঘটায়৷ ভারতে, এটি টয়লেট নির্মাণের জন্য ভর্তুকির সঙ্গে সংযুক্ত ছিল, যার ফলে ইন্দোনেশিয়ার তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি টয়লেট তৈরি হয়। এটি পরামর্শ দেয় যে পর্যাপ্ত সংস্থান ও পরিকাঠামোও অপরিহার্য, এবং বিস্তৃত নীতিব্যবস্থার বিকল্পের পরিবর্তে আচরণগত সরঞ্জামগুলি পরিপূরক হিসাবে ব্যবহার করা উচিত।
সরবরাহের দিকটিও চিকিৎসকদের আচরণের মাধ্যমে প্রসারিত হয়, যেমন একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে এটি রোগীর নিরাপত্তা ও যত্নের গুণমানের উন্নতি নির্দেশ করে। ভারতে একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা হল যে জনসম্প্রদায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রায়ই অবমূল্যায়িত বোধ করেন। গবেষণা পরামর্শ দেয় যে, সামাজিক সংকেতের মাধ্যমে স্বীকৃতি মনোবল ও কর্মক্ষমতা বাড়াতে পারে, সামাজিক সংযোগকে শক্তিশালী করতে পারে, এবং সামাজিক অনুমোদনের অনুভূতিকে উস্কে দিতে পারে।
২০১০-এর ইনস্তিতুত পাবলিক দি সন্দেজ দ’ওপিনিয়ন সেকতিউর-এর একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে ভারত-সহ কম ধনী দেশগুলিতে ‘নাজ’-গুলির সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা বেশি; এবং, ধূমপানের মতো কিছু আচরণের উপর সরাসরি নিষেধাজ্ঞার জন্য সমর্থনও বেশি। জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা এবং এর অভিজ্ঞতার মাত্রা সম্পূর্ণরূপে বোঝার মাধ্যমে নীতিনির্ধারকরা এই ধরনের হস্তক্ষেপের মূল্য আরও ভালভাবে মূল্যায়ন করতে পারেন।
স্পেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলি, যারা অঙ্গ দান বাড়ানোর জন্য আচরণগত সরঞ্জামগুলি সফলভাবে ব্যবহার করছে, তাদের থেকে শেখার মাধ্যমে ভারত এই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে।
প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অপব্যবহারের মাধ্যমে ‘নাজ’গুলি যাতে কল্যাণে বিরূপ প্রভাব না ফেলে তা নিশ্চিত করার জন্য আইন ও নির্দেশিকাগুলির রূপরেখা উপকারী হতে পারে, যেমন ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দ্বারা পুনরাবৃত্ত লেনদেনের জন্য প্রমাণীকরণের প্রয়োজনীয়তা, যার লক্ষ্য স্থিতাবস্থার-পক্ষপাত-ভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় অর্থপ্রদান পুনর্নবীকরণের ডিফল্ট সেটিং, যার কারণে ব্যক্তিদের ডিফল্ট অপশনের দিকে চালিত হওয়ার প্রবণতা থাকে।
তার উপর, বিশ্বব্যাপী সর্বোত্তম অনুশীলন থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারত অনুরূপ নীতি বাস্তবায়নের কথা বিবেচনা করতে পারে। যেমন অঙ্গদানের ক্ষেত্রে ভারত চাহিদা ও দাতাদের মধ্যে বিস্তৃত ব্যবধানের সম্মুখীন। স্পেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলি থেকে শেখার মাধ্যমে, যারা অঙ্গ দান বাড়ানোর জন্য আচরণগত সরঞ্জামগুলি সফলভাবে ব্যবহার করছে, ভারত এই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে। ডোনেট লাইফ আমেরিকার সহযোগিতায় অ্যাপল দ্বারা অঙ্গদানের প্রচার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬ মিলিয়নেরও বেশি নিবন্ধন বাড়িয়েছে। এটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের সম্ভাবনাও প্রদর্শন করে। বৈশ্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে জ্ঞানের পণ্য ও সর্বোত্তম অনুশীলনের আদান-প্রদান সহজতর করা যেতে পারে, যা গবেষণাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায়।
উপসংহারে, যখন কগনিটিভ পক্ষপাতগুলি গভীরভাবে জমে আছে, সেগুলিকে প্রসঙ্গ-নির্দিষ্ট আচরণ-কেন্দ্রিক নীতির মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে, যেহেতু ভারত ঐতিহ্যগত নীতি পদ্ধতির পরিপূরণ করার জন্য আচরণগত সরঞ্জামগুলিকে একীভূত করে চলেছে, দেশটি এমন একটি স্থিতিস্থাপক, ন্যায়সঙ্গত ও কার্যকর জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে যা শুধু হোমো ইকনমিকাস নয়, মানুষের জন্য চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে৷
নিমিশা চাড্ডা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন গবেষণা সহকারী
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.