Author : Kabir Taneja

Published on Oct 25, 2024 Updated 0 Hours ago

হিজবুল্লাহর প্রধান নাসরাল্লাহ-র মৃত্যু একটি গভীর প্রভাব ফেলতে বাধ্য, যা গোষ্ঠীটির ভবিষ্য সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করে

হাসান নাসরাল্লাহ: মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি, সন্ত্রাসবাদ এবং ধূসরাঞ্চলের মাঝে

২৭ সেপ্টেম্বর হিজবুল্লাহ-র দীর্ঘদিনের প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ-কে লক্ষ্য করে লেবাননের রাজধানী বেইরুটের শহরতলি দাহিয়ে-র ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় একটি ইরায়েলি বিমান হামলা করা হয় এবং তাঁকে হত্যা করা হয় নাসরাল্লাহ-র মৃত্যুর প্রভাব অবশ্যই গভীর। কারণ তিনি শুধুমাত্র হিজবুল্লাহ-র নেতৃত্ব দেননি, বরং তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে লেবাননের রাজনীতিতে এক শীর্ষ তাত্ত্বিক নেতা ও ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তবে এই মুহূর্তে তাঁর মৃত্যু উত্তরের চেয়ে অনেক বেশি প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।

১৯৯৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশ দ্বারা একটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিসাবে চিহ্নিত হিজবুল্লাহ-কে লেবাননেই একটি রাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্র হিসাবে দেখা হয়। ইরায়েলিদের জন্য গত কয়েক মাস ধরে হিজবুল্লাহ-র শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের অধিকাংশকেই নির্মূল করা কোনও কৌশলগত নয়, বরং প্রাথমিক ভাবে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল এই কার্যকলাপগুলি পরিচালনা করার ক্ষমতা দক্ষতা স্বল্পমেয়াদে তৈরি করা সম্ভব নয়, দীর্ঘ দিন ধরে তাকে নিখুঁত করা হয়েছে। সর্বোপরি, প্রায় এক বছর আগে হামাসের সন্ত্রাসবাদী হামলার পর দেশটি যে নিরাপত্তাবোধের জন্য এত পরিচিত ছিল, তা পুনর্নির্মাণের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টাও বটে। কারণ ইজরায়েলের নিরাপত্তাবোধ হামাসের আক্রমণের ফলে কেবল ক্ষতিগ্রস্তই হয়নি, বরং তা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

নাসরাল্লাহ-র মৃত্যুর প্রভাব অবশ্যই গভীর। কারণ তিনি শুধুমাত্র হিজবুল্লাহ-র নেতৃত্ব দেননি, বরং তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে লেবাননের রাজনীতিতে এক শীর্ষ তাত্ত্বিক নেতা ও ব্যক্তিত্ব ছিলেন

নাসরাল্লাহ শুধু কোন আন্দোলনের নেতা ছিলেন না এবং হিজবুল্লাহ নেহাতই আল কায়েদার মতো কোনও গোষ্ঠী নয়, যারা গুহায় লুকিয়ে থেকে গেরিলা যুদ্ধে লিপ্ত হয়। নাসরাল্লাহ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং তাঁর অধীনেই হিজবুল্লাহ একটি জঙ্গি আন্দোলন থেকে রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছিল। অনেকের জন্য ভাল হোক অথবা খারাপ… হিজবুল্লাহ-র এই পরিবর্তন লেবাননের সত্তার  একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। আর নেতা-সহ হিজবুল্লাহ দলটি ইরানের নিজস্ব আঞ্চলিক নকশার কেন্দ্রে উঠে এসেছে। সুন্নি ইসলামপন্থী দল হামাসের বিপরীতে দাঁড়িয়ে হিজবুল্লাহ শিয়া স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করেছিল। অক্টোবরের হামলার পর নাসরাল্লাহ সত্যি সত্যিই সতর্ক ভূমিকা নেন এবং তিনি ইরায়েলের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করতে মোটেও আগ্রহী ছিলেন না

এই দ্বিধাদ্বন্দ্বের কারণগুলি আজও বিতর্কিত। ইজরায়েল এর আগে হিজবুল্লাহ ও হামাসের বেশ কয়েকজন নেতাকে হত্যা করেছে। কিন্তু দলটির সামরিক ও রাজনৈতিক অভিপ্রায় উন্মোচন করার ক্ষেত্রে এটি বিপত্তি ও শিক্ষার সম্মুখীন হয়েছে। এই একই কথা রায়েলের সামরিক সক্ষমতা ও তার ভৌগোলিক বাস্তবতা সম্পর্কেও প্রযোজ্য। অতীতে দুবার ইরায়েল ১৯৮২ এবং ২০০৬ সালে সীমিত সাফল্যের সঙ্গেই দক্ষিণ লেবাননে অঞ্চলগুলি ধরে রাখা এবং বাফার জোন তৈরি করার চেষ্টা করেছে। তার পর থেকে হিজবুল্লাহ ইরানের সাহায্যে তার অস্ত্রাগারকে উল্লেখযোগ্য ভাবে উন্নত করেছে এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন অন্যান্য অনুরূপ সরঞ্জাম যোগ করেছে। বিদ্যমান অস্ত্র বিনিময়ের সময় লেবানিজ গোষ্ঠী দ্বারা প্রথম ব্যবহৃত কাদের-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তেল আভিভে রায়েলি গোয়েন্দা সদর দফতরকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা হয় এবং এই ক্ষেপণাস্ত্র ইরানের সামরিক বাহিনীতে ব্যবহৃত শাহাদ-ক্ষেপণাস্ত্রের একটি প্রকারভেদ।

নাসরাল্লাহ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং তাঁর অধীনেই হিজবুল্লাহ একটি জঙ্গি আন্দোলন থেকে রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছিল।

রায়েলের জন্য, এবং আরও বিশেষ করে প্রাইম মিনিস্টার বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর জন্য হিজবুল্লাহর সমগ্র বর্তমান নেতৃত্বকে নির্মূল করার সুযোগ নিতান্তই লোভনীয়রায়েলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিতকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই তাদের কী করা উচিত এবং ইরায়েল কী করতে চায়… তার মধ্যে দ্বিধাবিভক্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বছরের শুরুতে সৌদি-ইরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের আলোচনা থেকে শুরু করে এখন এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার প্রধান মিত্র ইজরায়েলকে সমর্থন করতে বাধ্য হয়েছে। আর এমনটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু ইরায়েলের স্বার্থের জন্য নয়, নিরাপত্তা গ্যারান্টার হিসেবে তার নিজের ক্ষয়িষ্ণু ভাবমূর্তি রক্ষা করার জন্যও করেছেভুল সংশোধনের পথে হেঁটে এবং বিশেষ করে এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান মার্কিন-চিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার নিরিখে মার্কিন শক্তি ও রাজনীতিকে সমুন্নত রাখাই তার লক্ষ্য এবং এই সময়ে মূল মিত্রদেশগুলিকে পরিত্যাগ করা ভুল বার্তাই প্রেরণ করবে। এর পাশাপাশি চিহ্নিত সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ-র বিরুদ্ধে জরায়েলের অবস্থান নেওয়ার ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য রায়েলের উপর প্রকৃত চাপ প্রয়োগের বিষয়টিকে কঠিন করে তুলেছে। এর ফলে কখনও কখনও ইরায়েল ওয়াশিংটন ডি.সি. থেকে তার প্রাপ্যের চেয়ে অধিক সুবিধা নিয়েছে, যখন নাগরিক মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কথা বলাও জরুরি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নাসরাল্লাহ-কে আক্রমণ করা সংক্রান্ত রায়েলি পরিকল্পনার বিষয়ে কোনও আগাম খবরও ছিল না।

পরবর্তী সময়ে কী হবে’ তা নিয়ে ইরায়েলের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলে, রানেও মধ্যেও যে দ্বিধা নেই, এমনটা নয়। নাসরাল্লাহর অধীনে হিজবুল্লাহ ‘প্রতিরোধের অক্ষ’-তে একটি মূল শক্তি ছিল তথাকথিত প্রতিরোধের অক্ষ’-কে উত্সাহিত করার জন্য ইরানের প্রধান কারণগুলির মধ্যে অন্যতম হল প্রত্যক্ষ ভাবে রায়েলের সঙ্গে মুখোমুখি না হওয়া এবং একটি প্রচলিত যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়া। ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ পেজেশকিয়ানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের সময় মধ্য তেহরানে হামাস প্রধানের হত্যা এবং এখন বেইরুটে হিজবুল্লাহ প্রধানের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ইরান নীরব থেকেছে, যা তার প্রকৃতিবিরুদ্ধ। হিজবুল্লাহ ইরানের আদর্শ এবং রাজনীতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত এবং তারা তাদের সঙ্গ ছাড়বে না। তা সত্ত্বেও হিজবুল্লাহ ইরানের অভিভাবকত্ব এবং তাদের মধ্যপন্থী আরও চরম দৃষ্টিভঙ্গির মাঝে এগিয়ে চলার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। এটি পেজেশকিয়ানের জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ, কারণ আয়াতুল্লাহ বা শক্তিশালী ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর-এর (আইআরজিসি) উপর তাঁর খুব বেশি প্রভাব নেই এবং নতুন নেতার মতাদেশ ইরানের জনসাধারণের জন্য সমৃদ্ধি এবং পেজেশকিয়ানের কথায় ন্যায়বিচার নিয়ে আসা, মানুষকে সরাসরি সংঘর্ষে ঠেলে দেওয়া নয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বছরের শুরুতে সৌদি-ইরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের আলোচনা থেকে শুরু করে এখন এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার প্রধান মিত্র ইজরায়েলকে সমর্থন করতে বাধ্য হয়েছে।

রানের তরফে পদক্ষেপ না নেওয়ার পরিণতি কী হবে, তা অবশ্যই সময় বলবে। যদিও সিরিয়ায় ইরায়েলের একটি ইরানি কূটনৈতিক মিশনের উপর সরাসরি আক্রমণের পর ইয়েমেনে হিজবুল্লাহ হুতি-সহ প্রতিরোধের অক্ষের সঙ্গে একযোগে তেহরান বছরের শুরুতে গতিশীল ভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। এ কথা সত্য যে, যখন নিজের প্রত্যক্ষ স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছিল, ইরান তখন সক্রিয় হয়েছিল। কিন্তু হানিয়ে এবং বর্তমানে নাসরাল্লাহ-র হত্যার সময় এমনটা না করায় প্রতিরোধের নেতৃত্বের মধ্যে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে আসতে পারে এবং হয়তো আরও প্রত্যক্ষ ভাবে সামনের সারিতে থাকা নিম্ন ও মধ্যস্তরের কর্মীরা এই বাক্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়তে পারে।

সামগ্রিক ভাবে, আগামী মাসগুলি সংঘাতের বর্তমান সন্ধিক্ষণে একটি শান্তি চুক্তি বা এমনকি একটি যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা কম বলে মনে হচ্ছে। নাসরাল্লাহর খুড়তুতো ভাই হাশেম সাফেদ্দিতাঁর স্থলাভিষিক্ত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ানো এবং সর্বাধিক লক্ষ্য অর্জনের বিষয়ে ইরায়েলের সিদ্ধান্ত ইরান এবং হিজবুল্লাহ আপাতদৃষ্টিতে আশা করেনি। এমনটা হয়তো হয়েছে অনুরূপ পরিস্থিতিতে তাদের আগেকার অভিজ্ঞতার কারণে। কিন্তু আগামিদিনে ভবিষ্যদ্বাণীর কঠিন খেলায় ঝাঁপানোর আগে এ কথা মনে রাখতে হবে যে, মধ্যপ্রাচ্যের জন্য সাধারণ নিয়ম হল রাষ্ট্র ক্ষমতাধররা কী বলছেন, তা নয়; বরং কী করছেন, তার দিকে নজর রাখা। 

 


কবীর তানেজা অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ডেপুটি ডিরেক্টর।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.