Author : Amitendu Palit

Published on Jan 30, 2022 Updated 0 Hours ago

অভিন্ন পরিবেশবান্ধব বাণিজ্যবিধির প্রয়োগ উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে এবং ভবিষ্যতের পারস্পরিক সহযোগিতার উদ্যোগগুলিকেও বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে।

পরিবেশবান্ধব বাণিজ্য কর্মসূচি: ধৈর্যচ্যুতি বিপদের কারণ হতে পারে

এই প্রতিবেদনটি গভর্ন্যান্স প্রোপোজিশনস অফ ২০২২ সিরিজের অংশ।


গত দশকে মুক্ত বাণিজ্য যথেষ্ট সমালোচনার মুখে পড়েছে। এবং এই সমালোচনার প্রধান কারণ প্রক্রিয়াটির আর্থ-সামাজিক সমতাবিধানের অক্ষমতা। এই বাণিজ্যিক পন্থাকে শ্রমিকদের অর্থনৈতিক ক্ষতির জন্য দায়ী করা হয়েছে, যে হেতু এটিতে বাণিজ্যিক উৎপাদন প্রক্রিয়াকে নতুন জায়গায় নিয়ে যাওয়া এবং প্রয়োজনে পুনরায় পুরনো স্থানে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে উৎসাহ জোগানো হয়। প্রক্রিয়াটিকে ধনীদের, বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী উৎপাদন নিয়ন্ত্রণকারী পুঁজি এবং জ্ঞানের মালিকদের ধন বৃদ্ধিতে সাহায্য করার জন্য যথেষ্ট নিন্দার মুখে পড়তে হয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ‘অন্ধকার’ দিকটি কোভিড-১৯ অতিমারির প্রেক্ষিতে আরও স্পষ্ট হয়েছে যখন জীবনধারণের জন্য সাধারণ মানুষের স্থানান্তরণের প্রক্রিয়াকে জাতীয় সরকারগুলির তরফে সংক্রমণের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ উৎস বলে চিহ্নিত করা হয়।

বিশ্ব বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ‘অন্ধকার’ দিকটি কোভিড-১৯ অতিমারির প্রেক্ষিতে আরও স্পষ্ট হয়েছে যখন জীবনধারণের জন্য সাধারণ মানুষের স্থানান্তরণের প্রক্রিয়াকে জাতীয় সরকারগুলির তরফে সংক্রমণের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ উৎস বলে চিহ্নিত করা হয়।

বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য প্রক্রিয়াকে তার ক্ষতবিক্ষত প্রতিচ্ছবির বদলে এক ফলপ্রদ ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে হবে। এবং এই প্রয়োজনীয়তা বাণিজ্যনীতির নির্ধারকদের এমন বাণিজ্যনীতি নিরূপণে বাধ্য করছে যেগুলি উন্নয়নমূলক বাস্তবোপযোগী ফলাফল প্রদানে সক্ষম। ‘গ্রিন ট্রেড’ বা ‘পরিবেশবান্ধব বাণিজ্য’ কর্মসূচির বৃদ্ধি এই সব প্রয়াসের কেন্দ্রে রয়েছে। ২০২২ সালে এবং আগামী বছরগুলিতে বিশ্ব জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে বাণিজ্যনীতিকে সংযুক্ত করা অগ্রাধিকারের শীর্ষে থাকবে। কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ হ্রাস এবং দূষণমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে অভিযোজনের মাধ্যমে স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী ও আঞ্চলিক বাণিজ্যনীতি নির্ধারণে উল্লেখযোগ্য শ্রম ব্যয় করতে হবে।

২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউ টি ও) যে দ্বাদশতম মন্ত্রিপর্যায়ের সম্মেলন (এম সি ১২) অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, নতুন করে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য সেটি পিছিয়ে না গেলে সারা বিশ্ব এমন একটি বহুপক্ষ সমর্থিত কর্মপরিকল্পনার সাক্ষী থাকত, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় বিশ্ববাণিজ্যকে কার্যকর ভাবে ব্যবহার করা হত। ২০২১ সালের জি৭ এবং জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে পরপর দু’বার পরিবেশবান্ধব বাণিজ্যের কথা তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা আলোচিত হওয়ার পরে এ রকম এক কর্মপরিকল্পনা অবশ্যম্ভাবী ছিল। এবং কপ২৬ সম্মেলনের দ্বারা অর্জিত বাস্তব ফলাফলের প্রেক্ষিতে জলবায়ু প্রসঙ্গে বাণিজ্যিক ইতিবাচক প্রভাব সুনিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে।

পরিবেশবান্ধব বাণিজ্যনীতি প্রণয়নের মাধ্যমে বাণিজ্যকে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা বিশ্ববাণিজ্যকে তার ঘাড় থেকে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বৈষম্যের দায় ঝেড়ে ফেলতে সাহায্য করতে পারে।

ডব্লিউ টি ও— এম সি ১২-এর অনির্দিষ্ট কালের জন্য বাতিল হয়ে যাওয়া এবং পরিবেশবান্ধব এক বিশ্ব বাণিজ্য নীতি ঘোষণা করার সুযোগ হারানো সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী পরিবেশবান্ধব বাণিজ্য নীতি প্রণয়নে বদ্ধপরিকর। এবং তার অংশীদার দেশগুলির মধ্যে গঠনগত আলোচনা চালানোর মাধ্যমে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য সম্মেলনের কর্মসূচির কেন্দ্রে পরিবেশকে রাখা এবং একই সঙ্গে প্লাস্টিক দূষণ, জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার বহুপাক্ষিক উদ্যোগের মধ্যে দিয়ে তার এই মনোভাব ফুটে উঠেছে।

গোটা বিশ্ব জুড়ে আরও বেশি করে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফ টি ও) আলোচিত হচ্ছে এবং এই সব আলোচনার আওতায় পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের লক্ষ্য এবং অভিযোজনকে সহজতর করে তোলার মতো কপ২৬এর অর্জিত লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে বাণিজ্যের সাযুজ্য বজায় রাখার বহুপাক্ষিক প্রচেষ্টা আরও বিশদে বাণিজ্য নীতি আলোচনাকে প্রভাবিত করবে। গোটা বিশ্ব জুড়ে আরও বেশি করে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফ টি ও) আলোচিত হচ্ছে এবং এই সব আলোচনার আওতায় পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

জলবায়ুকে বাণিজ্য আলোচনার কেন্দ্রে রাখা এবং পরিবেশবান্ধব কর্মসূচি সুনিশ্চিত করা এক নতুন ধরনের বাণিজ্য নীতি সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চলেছে। এমনটা হওয়া অবশ্যম্ভাবী ছিল কারণ প্রথাগত ভাবে বাণিজ্যনীতি এবং জলবায়ু কর্মসূচিকে এত দিন আলাদা আলাদা ভাবে বিবেচনা করা হত। এই দুইয়ের মধ্যে ফারাক ক্রমশ মুছে যাওয়ার ফলে বাণিজ্যনীতির নিয়ন্ত্রক ধারাগুলিকেও সামঞ্জস্য রেখে বদলাতে হবে, যা নীতি নির্ধারণে আরও বেশি করে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করবে।

ভারতের মতো বৃহৎ উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য এই দ্বিধা তীব্রতর হবে। ভারত এমন একটি দেশ যে একাধিক অংশীদার দেশের সঙ্গে একাধিক বিষয়ে এফ টি এ সংক্রান্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছে, যাদের মধ্যে অনেকেই এফ টি এ-গুলিতে আরও দৃঢ় ভাবে ‘পরিবেশবান্ধব’ বাণিজ্যিক নীতির বীজ বপনে আগ্রহী। যদিও এমনটা মেনে চলা ভারতের পক্ষে কঠিন হতে পারে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ই ইউ) সঙ্গে ভারতের চলমান এফ টি এ আলোচনা এই সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাবিত কার্বন সীমার নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি (সি বি এ এম) অনুযায়ী ভারত এবং অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলির পক্ষে কার্বনের মূল্য বা কার্বনভিত্তিক রফতানির উপর উচ্চতর শুল্ককে মেনে নেওয়া কঠিন হবে। রাষ্ট্রপুঞ্জের গবেষণায় উঠে এসেছে যে, সি বি এ এম-এর বাস্তবায়নের পরে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ভারত, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলি থেকে লোহা, ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামের মতো ধাতুগুলির রফতানিতে বড় ধরনের ঘাটতি লক্ষ করা যাবে।

পরিবেশবান্ধব বাণিজ্য কর্মসূচিগুলির জন্য অত্যাবশ্যকীয় ভাবেই কার্বনের সঙ্গে সংযুক্ত পণ্যগুলির আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য কমাতে হবে এবং আরও বেশি করে পরিবেশবান্ধব পণ্যগুলির প্রবাহে জোর দিতে হবে। কিন্তু এই কর্মসূচিগুলির অন্তর্নিহিত আবেদন সত্ত্বেও বাণিজ্যিক পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে সেগুলির কথা সতর্কতা সহকারে প্রচার করা দরকার। জোরপূর্বক বাস্তবায়ন বাণিজ্যের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে এবং সামগ্রিক ফলাফলের উপরে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।

সর্বোপরি, বাণিজ্য এবং জলবায়ু সংক্রান্ত আলোচনায় যথেষ্ট স্থিতিস্থাপক নয় এমন এক নিয়ন্ত্রক দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন অংশীদার দেশগুলির মধ্যে অবিশ্বাস বৃদ্ধি এবং বিশ্বব্যাপী জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে অন্তরায় হয়ে উঠতে পারে।

ভারত এবং অন্যান্য অনেক উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব বাণিজ্যিক কর্মসূচিতে যোগদানের ব্যাপারটি কাজ হারানোর আনুমানিক মূল্য, আয় হ্রাস এবং ইস্পাত ও পরিশোধিত পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য উৎপাদনকারী কার্বননির্ভর ক্ষেত্রগুলির উৎপাদক এবং কর্মীদের স্থানচ্যুতির মতো বিষয়গুলির সঙ্গে তুল্যমূল্য বিচারের উপর নির্ভরশীল। কারণ পরিবেশবান্ধব বাণিজ্যিক কর্মসূচি গ্রহণের ফলে এগুলির রফতানি নিশ্চিত ভাবে হ্রাস পাবে।

এই ধরনের ঘটনায় যেমনটা আগেও বহু বার দেখা গিয়েছে যে ‘সকলের জন্য অভিন্ন’ নিয়ন্ত্রক পন্থা ব্যাপক ভাবে অফলপ্রসূ হতে পারে। যতক্ষণ পর্যন্ত আলোচনারত সব দেশ এবং ব্যবসায়িক সংস্থা এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছে যে পরিবেশবান্ধব বাণিজ্যিক নীতিগুলি সকলের জন্য উপকারী হবে এবং সেগুলি কারও জন্য ক্ষতিকারক হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত বাণিজ্যিক দরাদরিতে সকলের সহমতযুক্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছনো কঠিন হবে। সর্বোপরি, বাণিজ্য এবং জলবায়ু সংক্রান্ত আলোচনায় যথেষ্ট স্থিতিস্থাপক নয় এমন এক নিয়ন্ত্রক দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন অংশীদার দেশগুলির মধ্যে অবিশ্বাস বৃদ্ধি এবং বিশ্বব্যাপী জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে অন্তরায় হয়ে উঠতে পারে।

যখন পৃথিবী এক দিকে ২০২২ সালকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে এবং বাণিজ্যের ধারা আরও বেশি করে মানবিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়ে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে, এগুলি বিশ্ব জলবায়ু কর্মসূচির বাস্তবায়নের জন্য একটি মহান সুযোগ সৃষ্টি করবে। দ্রুত ফল লাভের প্রলোভন সম্ভাবনাগুলির পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে। পরিবেশবান্ধব বাণিজ্যিক কর্মসূচির সংবেদনশীল এবং পরিমাপযোগ্য কৌশলের বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ। কিন্তু এই অপেক্ষা করা নিঃসন্দেহে ফলপ্রসূ হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.