Published on Dec 19, 2023 Updated 7 Days ago

একটি ন্যায্য ও সবুজ পরিবর্তনকে অবশ্যই গ্লোবাল সাউথের অর্থনৈতিক ও শ্রম ব্যবস্থায় সাড়া দিতে হবে, যা সবুজ কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রকৃত সম্ভাবনাকে উন্মুক্ত করতে পারে।

শ্রম বাজারের সবুজায়ন: গ্লোবাল সাউথে স্থিতিশীল কর্মসংস্থান

সবুজ চাকরি স্থিতিশীল উন্নয়ন অর্জনের একটি প্রক্রিয়া, এবং একটি ন্যায্য সবুজ পরিবর্তনের জন্য তৈরি করা নীতির ফলাফল, এই দুই হিসাবেই কাজ করে। সেগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলির অনুঘটক হিসাবেও কাজ করে। জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর কোনও বিমূর্ত ধারণা নয়, বরং বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি ও সমাজকে পুনর্নির্মাণকারী একটি বাস্তব শক্তি। এর উল্লেখযোগ্য প্রভাবের মধ্যে রয়েছে শ্রম বাজারের রূপান্তর।

জলবায়ু পরিবর্তন নীতি এবং কর্মসংস্থান গতিশীলতার ছেদবিন্দু একটি নিরবচ্ছিন্ন উদ্বেগের বিষয়, বিশেষ করে এর অনন্য চ্যালেঞ্জগুলিসহ গ্লোবাল সাউথের প্রেক্ষাপটে। ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) হিসাব করেছে যে সবুজ পরিবর্তন ২০৩০ সালের মধ্যে
১০০ মিলিয়নেরও বেশি এমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে ‘‌যা সেগুলির সামাজিক মাত্রাগুলিকে সম্পূর্ণরূপে বিবেচনা করে’‌। স্কিল কাউন্সিল ফর গ্রিন জবস দাবি করেছে যে ভারতের ২০৪৭ সালের মধ্যে ৩৫ মিলিয়ন সবুজ চাকরি তৈরি করার সম্ভাবনা রয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর একটি বিমূর্ত ধারণা নয়, বরং বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি ও সমাজকে পুনর্নির্মাণকারী একটি বাস্তব শক্তি।



শ্রম বাজারে জলবায়ু পরিবর্তন নীতির প্রভাব  ‘‌সবুজ চাকরি’‌ সংজ্ঞায়িত করার জটিল প্রকৃতি খতিয়ে দেখা এবং গ্লোবাল সাউথে স্থিতিশীল কর্মসংস্থানের জন্য একটি উপযুক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করা অপরিহার্য।



‘‌সবুজ চাকরি’‌ সংজ্ঞায়িত করা



পরিবেশগত স্থিতিশীলতা প্রসারে জড়িত বিভিন্ন কার্যক্রমের কারণে সবুজ কাজের সংজ্ঞা নির্ধারণ একটি জটিল চ্যালেঞ্জ। এই ক্রিয়াগুলি দূষণ হ্রাস ‌ও সম্পদ সংরক্ষণ থেকে শক্তি দক্ষতার উন্নতি পর্যন্ত বিস্তৃত। আইএলও সবুজ চাকরিকে ‘‌শালীন’‌ এবং পরিবেশগতভাবে দায়িত্বশীল ভূমিকা হিসাবে
সংজ্ঞায়িত করে , যা পরিবেশ সংরক্ষণ বা পুনরুদ্ধারে অবদান রাখে। রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) অন্য একটি পদ্ধতি গ্রহণের পক্ষপাতী, যেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির মতো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে পরিবেশ সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের জন্য নির্দিষ্ট কাজের প্রত্যক্ষ অবদান পরিমাপের জন্য একটি ক্ষেত্রগত ও পেশাগত পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়

আইএলও সবুজ চাকরিকে ‘‌শালীন’‌ এবং পরিবেশগতভাবে দায়িত্বশীল ভূমিকা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে, যা পরিবেশ সংরক্ষণ বা পুনরুদ্ধারে অবদান রাখে।



আরেকটি দৃষ্টিকোণ উৎপাদন ও উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখে। যেমন,
ইউরোপীয় ইউনিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সৌরশক্তি ব্যবস্থা, জৈব জ্বালানি বা বৈদ্যুতিক যানবাহন উৎপাদনকারী শ্রমিকদের সবুজ শ্রমিক হিসাবে চিহ্নিত করে। এই দৃষ্টিভঙ্গি চূড়ান্ত পণ্যের পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন করে, যা ক্ষেত্রনির্দিষ্ট বিবেচনার বাইরে চলে যায়।

গৃহীত পদ্ধতি নির্বিশেষে, সবুজ চাকরি সংজ্ঞায়িত করার সময় সমতা, নিরাপত্তা ও মজুরির মতো বিষয়গুলি বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উদ্দেশ্য শুধু পরিবেশবান্ধব কর্মসংস্থান নয়, শ্রমিকদের কাজের ন্যায্য ও উপযুক্ত অবস্থা সৃষ্টি করা। চাকরি তৈরিতে এই দিকগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা শালীন কাজ, ন্যায্যতা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নীতির উপর ভিত্তি করে পরিবেশগত স্থায়িত্বকে উৎসাহিত করে।



শ্রম বাজারে তাৎপর্য



সবুজ রূপান্তর নীতি শ্রমবাজারকে তিনটি মাত্রার মাধ্যমে প্রভাবিত করবে। প্রথমত, পরিচ্ছন্নতর পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে
ভোক্তাদের অভ্যাস পরিবর্তনের ফলে ক্ষেত্রগত সম্প্রসারণ বা সংকোচন হতে পারে। দ্বিতীয়ত, এটি সরাসরি প্রাকৃতিক ও নির্মিত পরিবেশকে প্রভাবিত করে, বিশেষ করে কৃষিনির্ভর অঞ্চলে কর্মশক্তির প্রাপ্যতাকে, এবং পর্যটন, বিমা, বনায়ন, মৎস্য, পরিকাঠামো ও শক্তির মতো শিল্পের দুর্বলতা বাড়ায়। তৃতীয়ত, জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবিলা করার নিয়ামক কাঠামো জলবায়ু অভিযোজন সম্পর্কিত ক্ষেত্রে চাকরি তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে, যেমন দুর্যোগপ্রতিরোধী পরিকাঠামো এবং উপকূলীয় প্রতিরক্ষায় বিনিয়োগ। যাই হোক, নেট চাকরি সৃষ্টির প্রভাব জটিল, যা জনসাধারণের ব্যয় ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ট্রেড অফের মতো বিষয়গুলির উপর নির্ভর করে। যেহেতু বিশ্ব সবুজ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, তাই উপরের তিনটি মাত্রা উচ্চ নির্গমনকারী কাজের প্রতিস্থাপন করবে, এবং পরিবেশগতভাবে অস্থিতিশীল কাজগুলির ক্ষতির দিকে চালিত করবে। শ্রমবাজারের উপর এই প্রভাবগুলি অবশ্য প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতার অন্য সব পরিবর্তনীয়তাকে (‌ভেরিয়েবল)‌ ধ্রুবক করে রাখবে বলে অনুমান করা হয়।

যেহেতু বিশ্ব সবুজ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, তাই উপরের তিনটি মাত্রা উচ্চ নির্গমনকারী কাজের প্রতিস্থাপন করবে, এবং পরিবেশগতভাবে অস্থিতিশীল কাজগুলির ক্ষতির দিকে চালিত করবে।



অতিক্রমণের সময় কর্মসংস্থানের হার
০.৫২.০ শতাংশ হবে বলে তুলে ধরা হয়েছে, আর চাকরি হারানোর হার ১ শতাংশএই অনুমানগুলি আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে, যা থেকে বাদ পড়েন বিশ্বের জনসংখ্যার  ৬০ শতাংশ  যাঁরা বিচ্ছিন্ন উৎপাদন লাইন, কাজের অবস্থার অবনতি এবং ক্রমবর্ধমান বেতন বৈষম্য সহ অনানুষ্ঠানিক ক্ষেত্রে নিযুক্ত। এই ধরনের বর্জন চাকুরি সৃষ্টি ও কর্মসংস্থানের উপর প্রকৃত প্রভাব নিয়ে উল্লেখযোগ্য উদ্বেগ উত্থাপন করে। গ্লোবাল সাউথ প্রধানত চিহ্নিত শ্রমবাজারে ব্যাপক অনানুষ্ঠানিকতা দিয়ে, যা অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। অতএব, স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধির জন্য অনানুষ্ঠানিকতার প্রকৃতি ও চালিকাশক্তি বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।



সুপারিশ কৌশলগত পথ



সবুজ চাকরি সংজ্ঞায়িত করার সংকীর্ণ সুযোগ ও সংবদ্ধতা গ্লোবাল সাউথের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সবুজ পরিবর্তনের প্রকৃত সম্ভাবনা উপলব্ধি করার জন্য, ‘‌সবুজ’‌কে গ্লোবাল সাউথএর শ্রমনিবিও বিচ্ছিন্ন শ্রমবাজারের বাস্তবতার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক করা প্রয়োজন। বিবেচনা করার জন্য কিছু কৌশলগত পথ হল:

বৈশ্বিক দক্ষিণনির্দিষ্ট শ্রেণিবিন্যাস: জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার জন্য প্রশমন নীতিগুলিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে, তার সঙ্গে কর্মসংস্থানের সামাজিক মাত্রা মোকাবিলার জন্য অভিযোজন প্রয়োজন। এই  অভিযোজন অর্জন করা যেতে পারে সবুজ কাজের জন্য শ্রমশক্তিকে দক্ষ করে তুলে এবং 
গ্লোবাল সাউথের জন্য সবুজ শ্রেণিবিন্যাস পুনঃসংজ্ঞায়িত করেএকটি বৈশ্বিক দক্ষিণনির্দিষ্ট সবুজ শ্রেণিবিন্যাস হ্রাস নির্গমনের জন্য কার্যকর সম্পদ ব্যবহারে অবদান রাখবে। এটি টেকসই সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং সুরক্ষার উপর ভিত্তি করে ক্ষেত্রগুলিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করবে। এটি আনুষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে সবুজ ক্ষেত্র এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিনিয়োগকে নির্দিষ্ট পথে চালিত করবে।

একটি ন্যায্য স্থানান্তরের পরিকল্পনা:
একটি ন্যায়সঙ্গত পরিবর্তন নির্ভর করে বিশ্বজুড়ে অর্থনীতির ডিকার্বনাইজিংয়ের কারণে কর্মহীন শ্রমিকদের পুনঃএকত্রীকরণের উপর।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডার বলছে উচ্চদক্ষ ও শহুরে কর্মীদের নিম্নদক্ষ গ্রামীণ কর্মীদের তুলনায় বেশি সবুজনিবিড় পেশা রয়েছে। নীতির সঙ্গতি অর্জনের জন্য তাই প্রয়োজন উন্নয়ন ক্ষেত্রের সংস্থা ও সরকারের মধ্যে সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্ব, যা স্থানীয়ভাবে একীকরণ প্রক্রিয়া সহজতর করবে। ন্যায্য রূপান্তরের জন্য প্রয়োজন ভবিষ্যৎমুখী দক্ষতা উন্নয়ন, প্রতিষ্ঠান নির্মাণ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করা।


আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডার বলছে উচ্চদক্ষ ও শহুরে কর্মীদের নিম্নদক্ষ গ্রামীণ কর্মীদের তুলনায় বেশি সবুজনিবিড় পেশা রয়েছে।


দক্ষিণদক্ষিণ সহযোগিতা: দক্ষিণদক্ষিণ সহযোগিতা সবুজ শ্রমবাজারের লালনপালন এবং সবুজ কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য একটি গতিশীল উপায় সরবরাহ করে, যা বাস্তব বিশ্বের অসংখ্য ঘটনা দ্বারা চিত্রিত হয়েছে।
ভারত, ব্রাজিল ও চিনের মতো দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, স্থিতিশীল কৃষি ও ইকোট্যুরিজমে দক্ষতা বিনিময়কে সহজতর করেছে। যদিও অনেক বর্তমান সংলাপের পরিধি সবুজ পুনরুদ্ধার ও অর্থায়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ, এই পারস্পরিক ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়াগুলি শুধু পরিবেশগতভাবে শিল্পগুলিকে রূপান্তরিত করার জন্য নয়, বরং সবুজ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করার জন্য জ্ঞান ভাগ করার সম্ভাবনার উদাহরণ। এই ধরনের সহযোগিতামূলক উদ্যোগগুলি ভাগ করা অভিজ্ঞতা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে পুঁজি করে আরও টেকসই শ্রম বাজারের গতিপথকে শক্তিশালী করে।


উপসংহার



সবুজ অর্থনীতি অর্জন স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্তর্ভুক্তি বা সামাজিক স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে না, বিশেষ করে বৈশ্বিক দক্ষিণের দৃষ্টিকোণ থেকে। ঝুঁকি হ্রাস ও অর্থপূর্ণ রূপান্তর অর্জনের জন্য সম্পূরক শ্রমবাজার নীতি ও অনন্য স্থানীয় আর্থসামাজিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। গ্লোবাল সাউথকে সবুজ অর্থনীতিতে সফলভাবে একীভূত করার জন্য
নীতি সমন্বয়, সক্রিয় পরিকল্পনা ও লক্ষ্যযুক্ত দক্ষতা উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্লোবাল সাউথের অর্থনৈতিক ও শ্রম ব্যবস্থায় সাড়া দেয় এমন একটি সবুজ কাঠামোর উপকরণ তৈরি করা হলে তা সবুজ কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রকৃত সম্ভাবনাকে উন্মুক্ত করতে পারে, যার ফলে উদ্বৃত্ত শ্রমকে কার্যকরভাবে পুনঃসংহত করা সম্ভব হবে



রাধিকা পুরোহিত অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের মুম্বই সেন্টারের একজন ইন্টার্ন

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.