Author : Tanvi Nair

Published on Mar 25, 2023 Updated 0 Hours ago

বিশেষ করে ডিপিজি-র ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান ব্যাপক জনোপযোগিতা এবং তাদের উপর নির্ভরতার কারণে প্রযুক্তিবিদ এবং প্রযুক্তি-প্রশাসকদের উপর নিয়ন্ত্রণ এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে

ডিজিটাল গণপণ্য নিয়ন্ত্রণের সুবর্ণ বিধি

এই প্রতিবেদনটি রাইসিনা এডিট ২০২৩ সিরিজের অংশ


কীভাবে প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা নিয়ে সারা বিশ্বের সরকারগুলি মতানৈক্যে জড়িয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে প্রযুক্তি নীতি, আইন, প্রবিধান এবং কৌশল আরও প্রসারিত হয়েছে, যেমনটা অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টেক পলিসি অ্যাটলাসে দেখা গিয়েছে। সরকারের বর্ধিত মনোনিবেশ তাই স্বাগত এবং জরুরিও বটে।

সরকার যখন প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ করে, তখন তারা তাদের সমাজের ভবিষ্যৎও গঠন করে। কারিগরি নিয়ন্ত্রণ শুধু প্রযুক্তিগতই নয়, এর সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, নিরাপত্তা, সমতা, মানবাধিকার এবং সংস্থার মৌলিক প্রশ্নও জড়িত। ডিজিটাল পাবলিক গুডস (ডিপিজি) নিয়ন্ত্রণ করার সময় তাদের যে দায়িত্বের বোঝা বহন করতে হয়, সেই নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা সরকারগুলির জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যুৎ এবং জলের মতো ডিপিজি হল এমন গণ-পরিকাঠামো, যার উপর সমাজ উত্তরোত্তর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।

কারিগরি নিয়ন্ত্রণ শুধু প্রযুক্তিগতই নয়, এর সঙ্গে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, নিরাপত্তা, সমতা, মানবাধিকার এবং সংস্থার মৌলিক প্রশ্নও জড়িত।

সবচেয়ে বিস্তৃত দু’টি ডিপিজি-র কথাই বিবেচনা করা যাক: ডিজিটাল আইডেন্টিটি (ডিজিটাল পরিচয়) এবং ডিজিটাল পেমেন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার (ডিজিটাল লেনদেন পরিকাঠামো)। মৌলিকভাবে এই সাধনীগুলি আমাদের নিজস্ব পরিচয় প্রমাণে এবং আমাদের দ্বারা কৃত পণ্যের অর্থ চোকাতে সাহায্য করে। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রে যে জটিল প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, তা হল কীভাবে তথ্যের সম্পূর্ণ সংগ্রহ সংরক্ষণ করা যায় এবং সরকার ও বেসরকারি খাতের কাছে উপলব্ধ করা হয়।

ডিপিজি-র প্রযুক্তিগত নকশা এবং তাদের জন্য প্রযোজ্য আইনি পরিকাঠামোর উপর নির্ভর করে গণতান্ত্রিক শাসনের মূল নীতিগুলিকে শক্তিশালী বা তার অবমূল্যায়ন করা যেতে পারে, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বাড়ানো বা বাধাগ্রস্ত করা যেতে পারে এবং মানবাধিকার বৃদ্ধি বা তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। অনলাইন এবং অফলাইন উভয় ক্ষেত্রেই আমাদের বাস্তবিক অভিজ্ঞতা অব্যবহিতভাবে প্রযুক্তিবিদদের দ্বারা তৈরি করা ডিপিজি-র ডিজাইন এবং সরকার কীভাবে সেগুলি নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তার দ্বারা প্রভাবিত হয়।

রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব-সহ অনেকেই ডিপিজিকে বৈশ্বিক উন্নয়নের প্রচার এবং স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করেন।

ডিপিজি দেশগুলিকে উন্নয়নের মাইলফলকে পৌঁছনোর সুযোগ করে দেয়। ডিজিটাল আইডেন্টিটি এবং ইউনিভার্সাল পেমেন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচারের সম্মিলিত ব্যবস্থা এ ক্ষেত্রে একটি আলোচ্য বিষয়। ভারতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টসম্পন্ন জনসংখ্যার শতাংশ মাত্র নয় বছরে (২০০৮-২০১৭) ২৭ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে৷ এটি এমন একটি প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে, যেটি ব্যাঙ্ক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টের মতে প্রথাগত পদ্ধতিতে করলে ৪৭ বছর সময় লাগতে পারত।

অনলাইন এবং অফলাইন উভয় ক্ষেত্রেই আমাদের বাস্তবিক অভিজ্ঞতা অব্যবহিতভাবে প্রযুক্তিবিদদের দ্বারা তৈরি করা ডিপিজি-র ডিজাইন এবং সরকার কীভাবে সেগুলি নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তার দ্বারা প্রভাবিত হয়।

এই প্রেক্ষিতে বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথে ডিপিজি-র ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়া আশ্চর্যের নয়। এই বিস্তারের কারণে শুরু থেকেই ডিপিজি-র প্রযুক্তিগত নকশা এবং নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট হওয়া অত্যাবশ্যক। এই বিষয়ে সঠিক পথে চালিত হওয়া আমাদের কল্পনামাফিক ভবিষ্যৎ বিশ্বের বাস্তবতা ও প্রিয় কোনও কাল্পনিক উপন্যাসের মাঝের ফারাক হয়ে উঠতে পারে।

আমরা কীভাবে নিশ্চিত করব যে একুশ শতকের ভিত্তিস্বরূপ গুরুত্বপূর্ণ   পরিকাঠামো ডিপিজি-র বিন্যাস সঠিক এবং তা ভালভাবে নিয়ন্ত্রিত?

শরদ শর্মা এবং হেনরি ভার্ডিয়ার পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভাল প্রযুক্তি তৈরির জন্য নিয়ন্ত্রণের উপর নির্ভর করে, যখন ভারতের মতো অন্য দেশগুলি উন্নততর প্রযুক্তি তৈরির জন্য ডিপিজি-র উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। আমাদের মতে, উভয়ই দরকার।

নব্বইয়ের দশকে টেকনো-ইউটোপিয়ানিজমের প্রথম প্রবাহ আমাদের শিখিয়েছিল যে ,আমরা প্রযুক্তির নকশাকে পুরোপুরি প্রযুক্তিবিদদের হাতে ছেড়ে দিতে পারি না। কিন্তু একইভাবে ইতিহাস দর্শিয়েছে যে, নিয়ন্ত্রণবিধিগুলি প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে ডিপিজি-র ক্ষেত্রে ভাল পরিকল্পিত প্রযুক্তি এবং ভাল পরিকল্পিত প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।

প্রথমটির প্রেক্ষিতে ডিজিটাল পাবলিক গুডস অ্যালায়েন্স – রাষ্ট্রপুঞ্জের উন্নয়ন কর্মসূচি, রাষ্ট্রপুঞ্জের শিশু তহবিল এবং অন্যদের সঙ্গে জড়িত একটি বহু অংশীদারিত্বের উদ্যোগ – এমন একটি ডিপিজি-র মান তৈরি করেছে, যা ডিপিজি-র নকশা এবং বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রযুক্তিগত মানদণ্ডের কাজ করে। এই মানটি ‘ওপেন সোর্স সফটওয়্যার, ওপেন ডেটা, ওপেন এআই মডেল, ওপেন স্ট্যান্ডার্ড এবং ওপেন কন্টেন্ট’ প্রদান করে।

ডিপিজি-র নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে যদিও সামান্য নির্দেশনাই বিদ্যমান। অনুমান করা যায়, নিয়ন্ত্রক নকশার বিদ্যমান নীতি এর উপরেও প্রযোজ্য। কিন্তু প্রায়শই যখন প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ তৈরি করা হয়, তখন জোর দেওয়া হয় ‘জরুরি ভিত্তিতে’ ‘কিছু করা’র উপর এবং উদার গণতন্ত্রের ভিত্তিপ্রস্তরগুলি ফলস্বরূপ আইনে অনুপস্থিত রয়ে যায়। আমরা যদি একটি ইতিবাচক ভবিষ্যৎ গঠনের ব্যাপারে আন্তরিকভাবে চিন্তাভাবনা করি, তা হলে আমাদের অবশ্যই এই প্রবণতা সংশোধন করতে হবে। এই নিবন্ধটি জনস্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ডিপিজি নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার জন্য তিনটি সুবর্ণ বিধির প্রস্তাবনা দেয়।

ডিপিজি-র জন্য প্রযোজ্য আইন বা প্রবিধান দ্বারা অনুমোদিত যে কোনও ক্ষমতার প্রয়োগ স্বাধীন আবেদন প্রক্রিয়ার অধীনে হওয়া উচিত যেখানে সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টি যাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়েছে, তাঁরা ক্ষমতা প্রয়োগের পর্যালোচনা চাইতে পারেন।

১. স্বচ্ছতা: ডিপিজি পরিচালনাকারী সমস্ত আইন ও প্রবিধান সর্বজনীন হওয়া উচিত। যখন আইন ডিপিজি-র তত্ত্বাবধানের সঙ্গে সম্পর্কিত ক্ষমতা প্রদান করে, তখন সরকারের উচিত বার্ষিক তথ্য প্রকাশ করা, যাতে সেই ক্ষমতাগুলি কীভাবে, কত ঘন ঘন এবং কার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল, তা বোঝা সম্ভব হয়।

২. পর্যালোচনা করার অধিকার: ডিপিজি-র জন্য প্রযোজ্য আইন বা প্রবিধান দ্বারা অনুমোদিত যে কোনও ক্ষমতার প্রয়োগ স্বাধীন আবেদন প্রক্রিয়ার অধীনে হওয়া উচিত যেখানে সেই ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টি যাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়েছে, তাঁরা সেই ক্ষমতা প্রয়োগের পর্যালোচনা চাইতে পারেন। ‘স্বাধীন’ বলতে এমন একটি সংস্থাকে বোঝায়, যেটি ক্ষমতা প্রয়োগকারী সত্তা এবং সেই সময়ের সরকারের আওতা থেকে মুক্ত, বিশেষভাবে বিচারবিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

৩. দায়বদ্ধতা: ডিপিজি-র জন্য প্রযোজ্য যে কোনও আইনি বা নিয়ন্ত্রক ক্ষমতার দৈনিক অনুশীলনের স্বাধীন তত্ত্বাবধান থাকা উচিত। স্বাধীন তদারকি সংস্থাকে তার তত্ত্বাবধানের কার্য সম্পাদনের জন্য পর্যাপ্ত সংস্থান করা জরুরি।

এই সুবর্ণ বিধির পাশাপাশি, আনুপাতিকতা, আন্তঃকার্যযোগ্যতা এবং তত্পরতা-সহ আটটি টেক পলিসি ডিজাইন প্রিন্সিপলের নকশা নীতি প্রক্রিয়ার দিকগুলির সুনির্দিষ্ট পরিসরকে পূর্ণাঙ্গ প্রাসঙ্গিকতা প্রদানে সাহায্য করে৷ প্রযুক্তি নীতি নির্ধারকরা সেরা অনুশীলন প্রযুক্তি নীতি ডিজাইন প্রক্রিয়ার জন্য ধন্যবাদার্হ।

রাজনীতিবিদদের উপর যেমন নজরদারি রয়েছে, তেমনই আমাদের প্রযুক্তিবিদ এবং তাঁদের তৈরি করা প্রযুক্তির উপরও নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। তাদের ক্রমবর্ধমান বৃহত্তর জনসাধারণের উপযোগিতা এবং নির্ভরতার কারণে ডিপিজি-র ক্ষেত্রে এটি বিশেষ করে সত্যি। ডিজিটাল যুগে সরকার, শিল্প এবং প্রযুক্তিবিদদের হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা পুঞ্জীভূত হয়। মুক্ত ডিপিজি এবং কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উভয়কেই দায়বদ্ধ করে। এই সরঞ্জামগুলিকে আমাদের স্বার্থে সক্রিয়ভাবে চালিত করার দাবি তোলার দায় আমাদের সকলের উপরেই বর্তায়।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.