কোভিড-১৯ অতিমারি-পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য প্রশাসন ব্যবস্থাগুলির সংস্কার জি২০ এবং অন্যান্য বহুপাক্ষিক মঞ্চের জন্য উদ্বেগের এক প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। এটা ঘটেছে এমন এক সময়ে, যখন বিশ্ব আরও বেশি করে অস্থিতিশীল, অনিশ্চিত, জটিল এবং দ্ব্যর্থক হয়ে উঠছে। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির একটি গোষ্ঠী হিসেবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সূচকগুলিকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে জি২০কে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য প্রতিবন্ধকতাগুলির সমাধানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এই সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনটিতে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য প্রশাসন দ্বারা এই লক্ষ্যগুলি অর্জনের জন্য এক প্রস্তাবিত কাঠামো তুলে ধরা হয়েছে।
কোভিড-১৯ অতিমারি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সঙ্কটের মধ্যে বিশ্বব্যাপী দেশগুলির বিদেশনীতিতে জনস্বাস্থ্যের উপর বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার বিষয়টি ‘নিম্ন রাজনীতি’ (মানবিক প্রচেষ্টা) থেকে ‘উচ্চ রাজনীতি’তে (জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা উদ্বেগ) রূপান্তরিত হয়েছে।[১]এই রূপান্তরকে সঙ্গত দিয়েছে স্বাস্থ্যের সামাজিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক সূচকগুলিকে বিশ্লেষণের উদীয়মান প্রয়োজনীয়তা। এই সকল ঘটনা ‘স্বাস্থ্য’কে কোনও একটি একক দেশে সীমাবদ্ধ না রেখে সেটিকে এক বহুক্ষেত্রীয় বৈশ্বিক উদ্বেগ রূপে বিবেচনা করার প্রয়োজনীয়তা দর্শিয়েছে।
বাস্তবিকই ২০০৭ সালের মার্চ মাসে ব্রাজিল, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া, নরওয়ে, সেনেগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং তাইল্যান্ড দ্বারা স্বাক্ষরিত অসলো মিনিস্টেরিয়াল ডিক্লারেশনে স্বাস্থ্যকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বিদেশনীতির পরিসর বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। এটিতে বলা হয়েছে যে, ‘স্বাস্থ্য বিষয়টি পরিবেশ, বাণিজ্য, অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, সামাজিক উন্নয়ন, জাতীয় নিরাপত্তা, মানবাধিকার এবং মর্যাদার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। এক বিশ্বায়িত এবং পরস্পর নির্ভরশীল বিশ্বে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি উন্নত ও উন্নয়নশীল সকল দেশের উপরেই গভীর প্রভাব ফেলে। বৈশ্বিক স্তরে জনস্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করা সকল দেশের জন্যই লাভজনক হতে পারে।’[২]
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে স্বাস্থ্য-সহ কোনও ক্ষেত্রই ‘ভুকা সদৃশ (ভিইউসিএ)’ অবস্থার হাত থেকে রেহাই পায়নি। ভুকা হল অস্থিতিশীলতা, অনিশ্চয়তা, জটিলতা এবং অস্পষ্টতার সংক্ষিপ্তকরণ, যেটিকে প্রাথমিক ভাবে ব্যবসায়িক বিশ্বের অনিশ্চয়তাকে ব্যাখ্যা করার কাজে ব্যবহার করা হলেও পরবর্তী সময়ে বিবিধ ক্ষেত্রে অস্পষ্ট পরিস্থিতিকে আরও ভালভাবে ব্যাখ্যা করার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে।[৩]কোভিড-১৯ অতিমারি এ কথা দর্শিয়েছে যে, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি আর শুধুমাত্র স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সঙ্গে সংযুক্ত নয়।[৪]ফলে ভবিষ্যতের প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা, রোধ এবং প্রস্তুতির জন্য ভুকা পরিবেশের অন্তর্গত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রশাসন, স্বচ্ছতা, স্থায়িত্ব ও সহনশীলতার নিরিখে এক অভিন্ন বৈশ্বিক প্রস্তুতি প্রয়োজন। গ্রুপ অব টোয়েন্টি (জি২০) এমন একটি সংস্থা, যেটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির বিরুদ্ধে সমন্বিত ও সমষ্টিগত উদ্যোগ গ্রহণ করতে সক্ষম।
জি২০ এমন একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক মঞ্চ, যেখানে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলিকে নিয়ে আলোচনা ও সতর্কীকরণের পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও উন্নয়নের অগ্রাধিকারগুলিকে রূপ দেওয়া হয়। জি২০ সদস্য দেশগুলি বৈশ্বিক জিডিপি-র ৮০ শতাংশ, বৈশ্বিক বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশ এবং গ্রহের মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশের জন্য দায়ী।[৫]এটি ইতিপূর্বে বহুপাক্ষিক সহযোগিতা এবং আন্তঃসমন্বয়ের মাধ্যমে ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কট সমাধান করে একটি কার্যকর সঙ্কট ব্যবস্থাপনা গোষ্ঠী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গোষ্ঠীটির কর্মপরিসর বৃদ্ধি পেয়েছে এবং স্বাস্থ্য ও জলবায়ু পরিবর্তন-সহ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তারকারী বিবিধ বিষয় তার আওতাভুক্ত হয়েছে।
অতিমারি চলাকালীন ২০২১ সালে স্বাস্থ্য স্বভাবতই জি২০ গোষ্ঠীর মনোযোগের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হলেও (যেমনটা চিত্র ১-এ শব্দবন্ধটির ব্যবহারের আপেক্ষিক পৌনঃপুনিকতা থেকে স্পষ্ট) গোষ্ঠীটি জি২০ হেলথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের মাধ্যমে ২০১৭ সালে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য প্রশাসনকে সশক্ত করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিল।[ক]জলবায়ু পরিবর্তন, অন্যান্য সঙ্কট (খাদ্য, স্বাস্থ্য, জল, বায়ু এবং জ্বালানি), সংঘর্ষ, কার্বন নিঃসরণ, অতিমারির প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধার এবং জলবায়ু কর্মসূচির জন্য বৈশ্বিক তহবিলের ব্যবহার, প্রযুক্তি বিভ্রাট এবং তা ব্যবহারের অধিকারের মতো সমস্যাগুলির সমাধানে সচেষ্ট হওয়ার মাধ্যমে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে জি২০ পরোক্ষ প্রভাব ফেলেছে।[৬]এই প্রতিবেদনটিতে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য এবং সংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জগুলির সমাধান খুঁজে বের করা এবং সেই সংক্রান্ত পদক্ষেপ গ্রহণে জি২০-র গুরুত্ব বিশ্লেষণের চেষ্টা করা হয়েছে। একই সঙ্গে এটিতে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য প্রশাসনের জন্য একটি কাঠামোর প্রস্তাবনাও দেওয়া হয়েছে।
বৈশ্বিক প্রতিবন্ধকতা এবং জি২০-র ভূমিকা
বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতাগুলির বিস্তৃত প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির দরুন বিগত বছরগুলিতে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে জি২০-র মনোযোগ ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) মতে, অসংক্রামক ব্যাধিগুলি (এনএসডি) উচ্চ উপার্জনক্ষম দেশগুলিতে মৃত্যুর প্রধান কারণ এবং সংক্রামক ব্যাধিগুলি নিম্ন উপার্জনক্ষম দেশগুলিতে মৃত্যুর প্রধান কারণ।[৭]এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান, কারণ জি২০ গোষ্ঠীটি উচ্চ ও নিম্ন উপার্জনক্ষম উভয় ধরনের দেশের সমন্বয়ে গঠিত। ২০১৯ সালের একটি গবেষণায় গোষ্ঠীটির সদস্য দেশগুলির মধ্যে এনসিডি-জনিত প্রায় ৭০ শতাংশ উচ্চ মৃত্যুহার প্রধানত উন্নত দেশগুলিতে লক্ষ করা গিয়েছে।[৮]তবুও ভবিষ্যতে সংক্রামক ব্যাধি ও এনসিডি… উভয়েরই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রুখতে যৌথ পদক্ষেপ প্রয়োজন।
জাতীয় সরকারগুলি তাদের এক্তিয়ারভুক্ত সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত, অভিযোজনক্ষম, সাশ্রয়ী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধান প্রদানে দায়বদ্ধ। কিন্তু এই সকল লক্ষ্যপূরণে সরকারগুলিকে স্বাস্থ্যক্ষেত্রের প্রতি অগ্রাধিকার দর্শাতে হবে এবং সেটিতে বিনিয়োগ করতে হবে। স্বাস্থ্যখাতে একটি দেশের বরাদ্দ (জিডিপি-র শতাংশ হিসেবে) সঙ্কট মোকাবিলায় দেশটির প্রস্তুতির সম্পূর্ণ পরিচায়ক না হলেও তা স্বাস্থ্যের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতাকে দর্শায়। ২০১৯ সালে জি২০-র অধিকাংশ উন্নত সদস্য দেশই স্বাস্থ্যখাতে তাদের জিডিপি-র অন্তত ৬ শতাংশ খরচ করেছে (দ্রষ্টব্য চিত্র ২)। এর উলটো দিকে দাঁড়িয়ে ভারত জি২০-র বর্তমান সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্যখাতে সর্বনিম্ন খরচ করেছে, যা সরকারের তরফে স্বাস্থ্যকে কম অভ্যন্তরীণ গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টিকেই তুলে ধরে।
চিত্র ২:২০১৯ সালে স্বাস্থ্যখাতে জি২০ দেশগুলির খরচ (জিডিপি-র শতাংশ রূপে)
বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের প্রধান অর্থায়নকারী হওয়ার দরুন জি২০ দেশগুলির উপর অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক উভয় পরিসরেই একটি সুদৃঢ় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার দায়বদ্ধতা বর্তায়। গোষ্ঠীটি যৌথভাবে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বৈশ্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচির জন্য প্রদত্ত আনুষ্ঠানিক উন্নয়ন সহযোগিতার ৯০ শতাংশ প্রদান করে।[১০]এই সকল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও প্রায় অর্ধেক বিশ্বের কাছে জরুরি স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থাগুলি লভ্য নয় এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত খরচের দরুন প্রায় ১০ কোটি মানুষ দরিদ্রে পর্যবসিত হয়েছেন।[১১]অতএব স্বাস্থ্য পরিষেবাকে ন্যায্য, সুলভ এবং সাশ্রয়ী করে তোলা গোষ্ঠীটির অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। উল্লেখযোগ্য ভাবে গোষ্ঠীটির প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এই প্রথম বার তিনটি উন্নয়নশীল সদস্য দেশের জি২০ ট্রয়কা(খ)গোষ্ঠীটিকে স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য-প্রশাসন ঢেলে সাজার সুযোগ এনে দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্যের উপর তার প্রভাবের মতো অন্য বৈশ্বিক সঙ্কটগুলিতে গোষ্ঠীটির ভূমিকার বৃহত্তর গ্রহণযোগ্যতা এক নতুন আরম্ভের সূচনা করতে পারে।
জি২০ দেশগুলি বিশ্বব্যাপী মোট গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ৭৫ শতাংশের জন্য দায়ী হলেও[১২]এই নিঃসরণের প্রভাব অসামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে নিম্ন উপার্জনকারী দেশগুলিতে বেশি অনুভূত হয়। এই বাস্তবতা গোষ্ঠীটি দ্বারা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য এক কার্যকর ও দায়বদ্ধ যৌথ কর্মসূচি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তাকেই দর্শায়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি অকার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যক্ষ নির্ধারক (যেমন প্রাকৃতিক বিপর্যয়, চরম আবহাওয়া ও রোগের প্রাদুর্ভাব) এবং সামাজিক নির্ধারকের (যেমন জীবিকা, অভিবাসন এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার লভ্যতা ও সামর্থ্য) মাধ্যমে জলবায়ু সংবেদনশীল স্বাস্থ্য সঙ্কটের সূচনা করতে পারে।[১৩]জি২০ দেশগুলির মধ্যে কার্বন মূল্যের উন্নতি হলেও (২০১৮ সালের ৩৭ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১ সালের ৪৯ শতাংশ) সেটি জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবগুলিকেও খর্ব করতে যথেষ্ট নয়। কারণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের অর্ধেকেরও বেশির মূল্য এখনও নির্ধারিত হয়নি এবং সদস্য দেশগুলির মধ্যে এই ভারের বণ্টন অসম।[১৪]জি২০কে এই অবস্থার জন্য তার নিজ সদস্য-সহ অন্য উন্নত দেশগুলিকে দায়বদ্ধ করতে হবে।
একই সঙ্গে অধিকাংশ জি২০ দেশই বিশ্বব্যাপী অভিবাসনের জনপ্রিয় গন্তব্য। অতিমারি সত্ত্বেও ২০২০ সালে জি২০ দেশগুলিতে প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন অস্থায়ী ও স্থায়ী অভিবাসী প্রবেশ করেছে (যদিও এটি ২০১৯ সালের তুলনায় ৪০ শতাংশ হ্রাসকেই দর্শায়)।[১৫]অভিবাসনের নেপথ্যে একাধিক কারণ থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনাগুলি এক প্রধান কারণ হয়ে উঠেছে। বিশ্বের একাধিক অংশে খরা, তাপপ্রবাহ, সুনামি এবং ভূমিকম্পের মতো ঘন ঘন জলবায়ুজনিত সঙ্কটের দরুন ‘জলবায়ু শরণার্থী’র সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে।[১৬]যেহেতু মানব গতিশীলতা ব্যক্তি ও সম্প্রদায় স্তরে স্বাস্থ্যের একটি পরিচিত ও প্রধান সামাজিক নির্ধারক, তাই জি২০ দেশগুলিকে এই সকল অভিবাসীর চাহিদা মেটাতে সর্বাঙ্গীন প্রতিরোধমূলক এবং নিরাময়মূলক স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উপস্থিতি সুনিশ্চিত করতে হবে।[১৭]
ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশে পরিবর্তনগুলি দ্বারা প্রভাবিত জনবাস্তুচ্যুতি এবং অভিবাসন বৈশ্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ২০২১ সালে তালিবানের আফগানিস্তান দখলের পর থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৩.৪ মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং ২.১ মিলিয়ন মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলিতে আশ্রয় চেয়েছেন।[১৮]এর পাশাপাশি ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ১২ মিলিয়নেরও বেশ মানুষ গৃহত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ৭.৮ মিলিয়ন মানুষ শরণার্থী রূপে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলিতে প্রবেশ করেছেন এবং ৪.৭ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ অন্যত্র অস্থায়ী বাসস্থানের জন্য আবেদন জানিয়েছেন।[১৯]
ওষুধ প্রস্তুত ক্ষেত্র, স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সম্ভাবনার দরুন জি২০-কে অবশ্যই স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে তার অগ্রাধিকারগুলির শীর্ষে রাখতে হবে। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ৫০টি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার মধ্যে ৪৬টি জি২০ দেশগুলিতে অবস্থিত।[২০]ওষুধ প্রস্তুতির বৈশ্বিক বাজারের ৭৮ শতাংশেরও বেশি জি২০ দেশগুলির আওতায় থাকায় গোষ্ঠীটি নকল ও নিম্ন গুণমানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনের সম্ভাবনা হ্রাস করতে এবং সংক্রামক ও এনসিডি উভয় ধরনের রোগের জন্য সাশ্রয়ী ওষুধ উৎপাদনের দিকে শিল্পটিকে চালিত করতে পারে।[২১]যেমনটা কোভিড-১৯ অতিমারির সময়েও দেখা গিয়েছে যে, শক্তিশালী ওষুধ উৎপাদন ক্ষেত্রবিশিষ্ট দেশগুলি ওষুধ ও টিকার উৎপাদন এবং বণ্টনে প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারে। একই সঙ্গে অতিমারি ওষুধ ও টিকা উৎপাদনের বৈশ্বিক মূল্য ও সরবরাহ শৃঙ্খলগুলিকে সুদৃঢ় করার প্রয়োজনীয়তাকেই দর্শিয়েছে।[২২]জি২০ দেশগুলি টিকা সাম্যের আলোচনার কেন্দ্রে থেকেছে। কারণ দেশগুলি সাব-সাহারান আফ্রিকার তুলনায় ১৫ গুণ বেশি কোভিড-১৯ টিকা পেতে সমর্থ হয়েছে।[২৩]জি২০-র দায়িত্ব এমন একটি সুদৃঢ় মূল্যশৃঙ্খল গড়ে তোলা যেটি টিকা ও চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জামের সাশ্রয়ী উৎপাদন সুনিশ্চিত করে এবং সেগুলিকে বিশ্বব্যাপী মানুষের জন্য সুলভ ও সাশ্রয়ী করে তোলে।
এখনও পর্যন্ত জি২০-র কার্যকলাপ
বিগত বছরগুলিতে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির মোকাবিলা করার জন্য জি২০ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছে। এগুলির মধ্যে ২০১১ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে গোষ্ঠীটি দ্বারা ৭৫টি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি গ্রহণ উল্লেখযোগ্য।[২৪]এমনকি ২০০৮ থেকে ২০১২ সালের মধ্যেও, যখন জি২০-র অগ্রাধিকার ছিল বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করা, তখনও গোষ্ঠীটি এ বিষয়ে নজর দিয়েছিল, যাতে কঠোর পদক্ষেপের দরুন জনকল্যাণের দিকটি ব্যাহত না হয়। এই পর্যায়ে গোষ্ঠীটির স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কর্মসূচিটি জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং পেনশন পরিকল্পনার মতো সামাজিক সুরক্ষা বলয়গুলির সশক্তিকরণকেন্দ্রিক ছিল।[২৫]পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে (২০১৩-২০১৫) খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি এবং পরিবেশগত স্থিতিশীলতা সংক্রান্ত আলোচনার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে স্বাস্থ্যের বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[২৬]
২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বর্ধিত দায়বদ্ধতা লক্ষ করা যায়, যখন অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ (এএমআর) জনস্বাস্থ্য এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে। এই সময়ে গোষ্ঠীটি হু, ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন, ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর অ্যানিমেল হেলথ এবং অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের মতো অন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে কাজ করে এএমআর নিয়ন্ত্রণের জন্য গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেয়। ইবোলা এবং জিকা প্রাদুর্ভাবের সময়ে এ হেন বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সঙ্কটের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ ও মোকাবিলা করার ক্ষেত্রেও জি২০ তার ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন হয়।[২৭]স্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালী করার আলোচনায় পর্যাপ্ত এবং স্থিতিশীল অর্থায়ন পদক্ষেপ নির্ণয়ের উপরে জোর দেওয়া হয়, যার মধ্যে একটি দ্রুত অর্থায়ন পদ্ধতিও অন্তর্ভুক্ত। ২০১৭ সালে জি২০ হেলথ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রবর্তন বৈশ্বিক স্বাস্থ্য প্রশাসনে গোষ্ঠীটির ভূমিকাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে।
কোভিড-১৯ অতিমারি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সশক্তিকরণের উদ্দেশ্যে জি২০-র পূর্ববর্তী পদক্ষেপগুলির কার্যকারিতাকে পরীক্ষার মুখে ফেলেছে। তা সত্ত্বেও গোষ্ঠীটি একটি ‘জি২০ অ্যাকশন প্ল্যান’ প্রণয়নের মাধ্যমে সঙ্কটের প্রতি দ্রুত প্রতিক্রিয়া দর্শিয়েছে, যেখানে স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক ও আর্থিক ক্ষেত্রগুলির বিবিধ অংশীদারদের আন্তঃসহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।[২৮]জি২০ সদস্য দেশগুলি স্বাস্থ্য সঙ্কটের সীমিতকরণ এবং সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা রোধে বহুপাক্ষিক আন্তঃসহযোগিতা এবং কর্মসূচির উপরে জোর দেয়। এর পাশাপাশি গোষ্ঠীটি ডিজিটাল স্বাস্থ্যকেও অগ্রাধিকার দেয় এবং ডিজিটাল স্বাস্থ্য পদক্ষেপ ও সহায়ক নীতিগুলির প্রচার সহজতর করে তোলার জন্য ২০২০ সালে সৌদি আরবের সভাপতিত্বে জি২০ ডিজিটাল হেলথ টাস্ক ফোর্স গঠন করে।[২৯]২০২১ সালে অতিমারি রোধ, প্রস্তুতি এবং প্রতিক্রিয়ার শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে জি২০ একটি যৌথ আর্থিক ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্স গঠন করে।[৩০]ভারত ইতিমধ্যেই জানিয়েছে যে, কোভিড-১৯ বা সমগোত্রীয় অতিমারিগুলির পুনরুত্থানকে নিয়ন্ত্রণ করা তার জি২০ সভাপতিত্বে নীতিগত অগ্রাধিকার পাবে।[৩১]
জি২০ গোষ্ঠীটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতাগুলি মোকাবিলায় সম্ভাবনাময় প্রচেষ্টা চালালেও সদস্য দেশগুলির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ভূ-রাজনৈতিক সংঘাতগুলি এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত যে কোনও অগ্রগতিকে বিঘ্নিত করতে পারে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে জি২০ নিজে এক ‘সঙ্কট সমাধানকারী’র অবস্থান গ্রহণ করেছে।[৩২]যদিও অতিমারি চলাকালীন বাণিজ্য, অর্থনীতি এবং স্থিতিশীল উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতাগুলির সমাধানে গোষ্ঠীটির অপারগতা সাম্প্রতিক সময়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।[৩৩]গোষ্ঠীটি তার কমপ্লায়েন্স কমিটমেন্ট গ্যাপ (ঘোষিত প্রতিশ্রুতি ও পালিত প্রতিশ্রুতির সংখ্যার ফারাক)-এর জন্যও সমালোচিত হয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বছর প্রতি সামান্য ভিন্নতার সঙ্গে গোষ্ঠীটি গড়ে ৮৬ শতাংশ কমপ্লায়েন্স স্কোর অর্জনে সক্ষম হয়েছে।[৩৪]
এ ছাড়াও কোভিড-১৯ অতিমারির দরুন আনুমানিক আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১২.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার হলেও জি২০ গোষ্ঠীটি – বিশ্বের বেশ কয়েকটি সর্বাধিক উন্নত দেশ যার সদস্য – বিশ্ব ব্যাঙ্কের ‘অতিমারি তহবিল’-এ মাত্র ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সাহায্য প্রদানে সম্মত হয়েছে।[৩৫]অতিমারি থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য অর্থায়নের ক্ষেত্রে এই বিস্তৃত ফারাক অনেক সমালোচককেই এ কথা বলতে বাধ্য করেছে যে, গোষ্ঠীটির ‘বৈধতার প্রতিনিধিত্বকারী দেশগুলির সক্রিয়তা সমীচীন কার্যকারিতায় অনূদিত হয়নি।’[৩৬]এই ধরনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান করার জন্য জি২০-কে অবশ্যই কার্যকর আলাপ-আলোচনা ও সমাবেশের মাধ্যমে নিজের উপযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং অগ্রগতি পরিমাপ করার জন্য একটি সম্মতিমূলক ব্যবস্থার সূচনা করতে হবে।
ভারতের সভাপতিত্বে স্বাস্থ্য প্রশাসন: একটি প্রস্তাবিত কাঠামো
কোভিড-১৯ অতিমারির তুঙ্গে জি২০ আলাপ-আলোচনাগুলি প্রধানত রোগ ব্যবস্থাপনা, টিকা বণ্টন এবং ভবিষ্যৎ অতিমারির সঙ্গে লড়াই করতে সক্ষম হওয়ার জন্য জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাগুলির সশক্তিকরণের মতো বিষয়কেন্দ্রিক ছিল। ২০২২ সালে ইন্দোনেশিয়ার সভাপতিত্বে জি২০-র প্রধান অগ্রাধিকার ছিল বৈশ্বিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন ও সশক্তিকরণ এবং স্বাস্থ্য পরিষেবাকে ন্যায্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সংবেদী করে তোলা।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের ‘অতিমারি তহবিল’কে সমর্থন জোগানোর জন্য অর্থায়ন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের একত্রে কাজ করার উপরে জোর দিয়ে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য প্রশাসন এবং অতিমারির প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়ার উন্নতি সাধনে গোষ্ঠীটির ব্যাপকতর অংশগ্রহণের জন্য বালি লিডারস ডিক্লেয়ারেশন নথিতে একটি স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।[৩৭]পূর্ববর্তী শীর্ষ সম্মেলনগুলির তুলনায় জি২০-র স্বাস্থ্য অগ্রাধিকার হ্রাস পেলেও (দ্রষ্টব্য চিত্র ১) লিডারস ডিক্লেয়ারেশনটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য উদ্বেগগুলিকে পরোক্ষভাবে সম্বোধন করেছে। ভূ-রাজনৈতিক সংঘর্ষ, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব খাদ্য নিরাপত্তা শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরে। সুলভ মূল্যে পুষ্টিকর খাবার প্রাপ্তি সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও কল্যাণের উপর এক প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলে। ভারতকে ২০২৩ সালে এই উদ্যোগগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং এগুলিকে তার সভাপতিত্বের মূল সুর অর্থাৎ বসুধৈব কুটুম্বকম-এর (এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ) সঙ্গে সমন্বিত করতে হবে।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক এবং উন্নয়ন প্রতিশ্রুতির নিরিখে যে কোনও রকম অগ্রগতির জন্য ভারতের সভাপতিত্বে জি২০-র সংহতি বৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বৈশ্বিক স্বাস্থ্য প্রশাসনকে সশক্ত করার জন্য ভারতের প্রচেষ্টা এমন একটি কাঠামো দ্বারা পরিচালিত হতে পারে, যেটি সম্মিলিত আন্তঃসহযোগিতা এবং বাস্তবায়নের উপর বিশেষ জোর দেয় (দ্রষ্টব্য চিত্র ৩)। ভারত তার বিদেশনীতির ‘বহু সমন্বয়’ মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে গোষ্ঠীটির সদস্য দেশগুলির মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করতে পারে। জি২০-তে এ হেন আন্তঃসহযোগিতা একাধিক স্তরে যৌথ বাস্তবায়নের ভিত্তি রূপে কাজ করতে পারে। জি২০ দেশগুলির মধ্যে সম্মিলিত পদক্ষেপের বোঝাপড়া এবং অভিন্নতা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রবিধানগুলির সংস্কারকে সূচিত করে, যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য স্থিতিস্থাপকতাকে সহজতর করে তোলে। বৈশ্বিক স্তরে আন্তঃসহযোগিতা এবং প্রতিশ্রুতিগুলির কথা বলা হলেও পূর্ববর্তী স্তরগুলিতে প্রস্তাবিত নীতি ও লক্ষ্যমাত্রার কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রীয় ও উপ-রাষ্ট্রীয় স্তরে প্রতিশ্রুতিগুলি গুরুত্বপূর্ণ হবে।
কাঠামোটিতে বৈশ্বিক থেকে স্থানীয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার মনোভাবের উপর বিশেষ করে জোর দেওয়া হলেও প্রক্রিয়াটির সঙ্গে যুক্ত ক্ষেত্র এবং শক্তিগুলি বিভিন্ন স্তরে পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। স্বাস্থ্য পরিষেবার সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান এবং প্রেক্ষিত বৈশ্বিক, রাষ্ট্রীয় ও উপ-রাষ্ট্রীয় স্তরে পরিবর্তিত হওয়ার দরুন জি২০ পদক্ষেপগুলিকে প্রসঙ্গভিত্তিক ও ন্যায়সঙ্গত হতে হবে।[৩৯]এই কাঠামোটি ভারত সরকার দ্বারা প্রস্তাবিত লাইফ (লাইফস্টাইল ফর এনভায়রনমেন্ট বা পরিবেশের অনুকূল জীবনযাত্রা) কৌশলের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতাগুলির ক্ষেত্রে বৈশ্বিক উদ্যোগ ও সংস্কারগুলিকে ব্যক্তিগত আচার আচরণ এবং স্থানীয় সাংস্কৃতিক অনুশীলন থেকে শিক্ষাগ্রহণে উৎসাহ জোগায়।[৪০]
চিত্র ৩:বৈশ্বিক স্বাস্থ্য প্রশাসনের জন্য প্রস্তাবিত কাঠামো
সূত্র:লেখকের নিজস্ব
আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যনীতিগুলি সংস্কারের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের সময়ে এই কাঠামোটিকে ব্যবহার করা যেতে পারে। জি২০ দেশগুলি নিজেদের মধ্যে এবং হু-র সঙ্গে আলোচনা ও আন্তঃসহযোগিতার মাধ্যমে সংস্কারগুলিকে রূপ দিতে পারে। পরবর্তী ক্ষেত্রে, গোষ্ঠীটি বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিষদে আলাপ-আলোচনা ও প্রস্তাবনার সময়ে ন্যায়সঙ্গত এবং স্থিতিশীল সংস্কারের উপর জোর দিতে পারে। এই ধরনের সংস্কারগুলির বাস্তবায়ন রাষ্ট্রীয় ও উপ-রাষ্ট্রীয় সত্তাগুলির আশ্বাসের উপর ভিত্তি করেই হওয়া সম্ভব। ভারত ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য প্রবিধানের উপর জোর দিয়ে হু-র কাছে একটি নয় দফা সংস্কার পরিকল্পনা পেশ করেছে।[৪১]এটি জি২০ স্তরে এবং অন্যান্য বহুপাক্ষিক মঞ্চে স্বাস্থ্য প্রশাসন সংক্রান্ত ভারতের আলোচনাকে পথ দেখাবে। ভারতের অভ্যন্তরে, যেখানে একটি জাতীয় প্রতিশ্রুতির কথা প্রচার করা হয়েছে, সেখানেও রাজ্যগুলিকে নিয়ম ও প্রবিধানের মাধ্যমে এই সংস্কারগুলির সঙ্গে মানিয়ে চলতে হবে। অর্থাৎ বৃহত্তর সমন্বয় বৈশ্বিক স্বাস্থ্য প্রশাসনে রাষ্ট্রীয় এবং অরাষ্ট্রীয় শক্তিগুলিকে সংযুক্ত করার মাধ্যমে ইতিবাচক প্রভাবের জন্য স্বাধীন স্তরে সংস্কার ও কর্মসূচির বাস্তবায়নকে সক্ষম করবে।
উপসংহার
ভুকা-সদৃশ বৈশ্বিক পরিবেশ বজায় থাকলে জি২০ স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য সমস্যা মোকাবিলায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বর্ধিত সমন্বয় এবং যৌথ কর্মসূচির মাধ্যমে জি২০-র অগ্রাধিকারগুলি সম্পর্কে আন্তঃসহযোগিতা ও ধারাবাহিকতার সশক্তিকরণ ভবিষ্যতের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সঙ্কটগুলির জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করতে পারে। জি২০ প্রতিশ্রুতিগুলির কার্যকারিতা এবং অনুবর্তিতা সম্পর্কে গবেষণা গোষ্ঠীটির নিজের ও বিশ্বের কাছে দায়বদ্ধ হয়ে ওঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গোষ্ঠীটির দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য একটি কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি সদস্য দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতাকে উৎসাহিত করতে পারে এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার সময়ে কার্যকর কূটনৈতিক সংলাপের সূচনা করতে পারে। তার সভাপতিত্বের সময়ে ভারতের অবশ্যই উচিত স্থানীয়, জাতীয় ও বৈশ্বিক স্তরে অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়সঙ্গত এবং স্থিতিশীল বৃদ্ধির জন্য বহুপাক্ষিক সহযোগিতা ও সমন্বয়কে উৎসাহিত করা।
পাদটীকা
[ক]অপুষ্টি, স্বাস্থ্য সঙ্কট ব্যবস্থাপনা, জীবাণু প্রতিরোধী ব্যবস্থা, সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং স্থিতিস্থাপক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার মতো বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য একটি প্রতিশ্রুতি বিকাশের উদ্দেশ্যে জি২০ হেলথ ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
[খ]ট্রয়কা অতীত (ইন্দোনেশিয়া), বর্তমান (ভারত) এবং আগত (ব্রাজিল) সভাপতিত্ব নিয়ে গঠিত।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Prof. Dr.Helmut Brand is the founding director of Prasanna School of Public Health Manipal Academy of Higher Education (MAHE) Manipal Karnataka India. He is alsoJean ...
Aniruddha Inamdar is a Research Fellow at the Centre for Health Diplomacy, Department of Global Health Governance, Prasanna School of Public Health, Manipal Academy of ...
Dr. Sanjay M Pattanshetty is Head of theDepartment of Global Health Governance Prasanna School of Public Health Manipal Academy of Higher Education (MAHE) Manipal Karnataka ...