Author : Prithvi Gupta

Published on Mar 07, 2024 Updated 0 Hours ago

আফ্রিকার গ্লোবাল গেটওয়ে হল গ্লোবাল কানেক্টিভিটি উদ্যোগের শৃঙ্খলের আর কটি এমন শাখা, যা ইইউ বাহ্যিক ধাক্কা থেকে জ্বালানি মূল্য শৃঙ্খলগুলিকে রক্ষা করার জন্য নির্মাণে আগ্রহী।

গ্লোবাল গেটওয়ে: ইইউ-এর ‘জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অবকাঠামো’মূলক বাজি

সম্প্রতি সমাপ্ত গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরাম ২০২৩-এ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং ইকোনমিক কমিউনিটি অফ ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস-এর (ইকোওয়াস) সহযোগিতায় ১১টি বাণিজ্য করিডোর উন্মোচিত হয়েছে, যেগুলি ইউরোপীয় ইউনিয়ন-আফ্রিকা অর্থনৈতিক সহযোগিতাকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি মহাদেশে আঞ্চলিক সমন্বিতকরণের লক্ষ্য সাধন করবে।

 

চিত্র ১: আফ্রিকার প্রস্তাবিত গ্লোবাল গেটওয়ে করিডোর

সূত্র: গ্লোবাল গেটওয়ে ইইউ/আফ্রিকা ইনভেস্টমেন্ট প্যাকেজ ২০২৩

 

নর্থ-সেন্ট্রাল-ইস্ট আফ্রিকা (এনসিইএ) স্ট্র্যাটেজিক করিডোর, ওয়েস্ট আফ্রিকা স্ট্র্যাটেজিক করিডোর এবং সাউথ আফ্রিকা স্ট্র্যাটেজিক করিডোর… এই তিনটি মেগা-করিডোর জুড়ে বিস্তৃত ১৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের অবকাঠামোমূলক বিনিয়োগের লক্ষ্য হল মহাদেশটিতে গভীর ভাবে প্রোথিত চিনা উপস্থিতির মোকাবিলা করা এবং বেজিং-কে পিছনে ফেলে আফ্রিকা বাজারের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েক দশকের সীমিত সম্পৃক্ততা ঘুচিয়ে সম্পর্ক নিবিড়তর করে তোলা।

এই মেগা-করিডোরগুলি শুধুমাত্র পরিবহণ অর্থনৈতিক করিডোর তৈরি করেই নয়, বরং আফ্রিকা জনগণকে এই করিডোর বরাবর স্বল্প-সুদ/সুদ- মুক্ত ঋণ প্রদানের মাধ্যমে আরও অর্থনৈতিক সমন্বিতকরণের জন্য ইইউ-এর বাজি বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। পূর্ব, মধ্য এবং উত্তর আফ্রিকার মতো তিনটি অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত এই এনসিইএ করিডোর। অবশিষ্ট দুটি করিডোরের লক্ষ্য হল পশ্চিম এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বন্দর-নিবিড় অঞ্চলে অঞ্চল-নির্দিষ্ট সংযোগ বৃদ্ধি করা। এই নিবন্ধটিতে পশ্চিম দক্ষিণ আফ্রিকা স্ট্র্যাটেজিক করিডোর বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং এই প্রস্তাবিত করিডোরগুলির ভূ-অর্থনৈতিক কৌশলগত প্রভাব আলোচনা করা হয়েছে।

 

পশ্চিম এবং দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্র্যাটেজিক করিডোর — সব রাস্তাই বন্দর অভিমুখী

পশ্চিম আফ্রিকার গ্লোবাল গেটওয়ে করিডোরগুলি গ্লোবাল গেটওয়ে ডিজিটাল কানেক্টিভিটি অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনিশিয়েটিভ’-এর মাধ্যমে ডিজিটাল সংযোগ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি রাস্তা, সেতু, মহাসড়ক, দূষণহীন জ্বালানি প্রকল্প, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ খন এবং বন্দর অবকাঠামোর ক্ষেত্রে চিত্তাকর্ষক বিনিয়োগ করেছে ১৩টি দেশ জুড়ে এই চারটি করিডোরের মাধ্যমে (দ্রষ্টব্য সারণি ১) ইইউ পশ্চিম আফ্রিকা জুড়ে আঞ্চলিক বন্দর এবং উত্তর নাইজেরিয়া, নাইজার, মালি বুরকিনা ফাসোর মতো সম্পদ সমৃদ্ধ অথচ ভূখণ্ড দ্বারা বেষ্টিত অন্তর্বর্তী অঞ্চলগুলির মধ্যে লজিস্টিক সংযোগকে জোরদার করতে চায় (দ্রষ্টব্য চিত্র )। এর ফলস্বরূপ, এই অঞ্চলের চারটি করিডোর দক্ষিণে নাইজেরিয়ার লেকি বন্দর থেকে উত্তর-পশ্চিমে সেনেগালের এনডায়ানে বন্দর পর্যন্ত বিস্তৃত। এই সংযোগমূলক উদ্যোগগুলি একটি আঞ্চলিক শক্তি পরিবহণ কেন্দ্র হিসাবে আবির্ভূত হওয়ার ইকোওয়াস-এর বিবৃত লক্ষ্যের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণও বটে। লজিস্টিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি জিজি-লক্ষ্য স্থিতিশীল জ্বালানি এবং দূষণহীন অবকাঠামো বিনিয়োগের সঙ্গে যোগাযোগের পরিকাঠামোর পাশাপাশি বিনিয়োগের মাধ্যমে খনন, জ্বালানি অন্বেষণ, রেলপথ, খনিজ প্রক্রিয়াকরণ এবং সামাজিক অবকাঠামোর মতো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলিকে ইতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করা।

 

সারণি ১- পশ্চিম ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ইইউ-ওডিএ দ্বারা প্রস্তাবিত জিজি বিনিয়োগ

করিডোর

অঞ্চল

সম্ভাব্য সুবিধাপ্রাপক

যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলি সবচেয়ে লাভবান

আবিদজান-লাগোস

পশ্চিম আফ্রিকা

আইভরি কোস্ট, ঘানা, তোগো, বেনিন, নাইজেরিয়া

দূষণহীন জ্বালানি অবকাঠামো, রেলপথ, স্থিতিশীল খনন, সংযোগ অবকাঠামো

আবিদজান-ওউয়াগাদৌগো

পশ্চিম আফ্রিকা

আইভরি কোস্ট, বুরকিনা ফাসো

পরিবহণ অবকাঠামো, সংযোগ অবকাঠামো

প্রাইয়া/দাকার-আবিদজান

পশ্চিম আফ্রিকা

সেনেগাল, গাম্বিয়া, গিনি-বিসাউ, গিনি, সিয়েরা-লিওনে, লাইবেরিয়া, আইভরি কোস্ট, কাবো ভের্দে

মূল্যবান ধাতু নিষ্কাশন, খনিক প্রক্রিয়াকরণ, জ্বালানি অবকাঠামো, পরিবহণ অবকাঠামো, সংযোগ হার্ডওয়্যার

কোতোনৌ-নিমায়ে

পশ্চিম আফ্রিকা

বেনিন, নাইজার

সোনা খনন, খনিজ প্রক্রিয়াকরণ, স্থিতিশীল খনন, পরিবহণ অবকাঠামো

মাপুটো-গাবোরোন-ওয়ালভিস বে

দক্ষিণ আফ্রিকা

মোজাম্বিক, দক্ষিণ আফ্রিকা, এসোয়াতিনি, বতসোয়ানা, নামিবিয়া

গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, খনন, ডিজিটাল অবকাঠামো , সামাজিক অবকাঠামো 

ডার্বান-লুসাকা

দক্ষিণ আফ্রিকা

দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, জিম্বাবোয়ে, জাম্বিয়া

গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, স্থিতিশীল খনন, খনিজ প্রক্রিয়াকরণ, ডিজিটাল অবকাঠামো

মোট করিডোরের সংখ্যা- ৬

অঞ্চল সম্পৃক্ত- ২

দেশ সম্পৃক্ত- ১৯

মোট উপকৃত ক্ষেত্রের সংখ্যা- ১৩

সূত্র: গ্লোবাল গেটওয়ে ইনভেস্টমেন্ট ডসিয়ার

 

এক দিকে যখন পশ্চিম আফ্রিকা এবং এনসিইএ করিডোর দেশগুলিতে ইউরোপের লক্ষ্য উদ্যোগগুলি প্রসারিত হয়েছে, তখন দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলে জিজি সতর্কতার সঙ্গে এবং কৌশলগত ভাবে এগিয়ে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ইইউ ওয়ালভিস বে, মাপুটো ডারবান বন্দর এবং এর মাঝখানে অবস্থিত অঞ্চল উন্নয়নের লক্ষ্যে শুধু মাত্র দুটি করিডোর নির্মাণের কাজ শুরু করেছে (দ্রষ্টব্য সারণি ১, অতঃপর চিত্র )। ওয়ালভিস বে নামিবিয়ার একমাত্র গভীর-সমুদ্র বন্দর এবং সেখানে একটি বহুমুখী বন্দর নির্মাণের জন্য অতীতে চিন আগ্রহী থেকেছেডারবান মাপুটো বন্দর ছাড়াও ওয়ালভিস বে মধ্য আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ভূখণ্ড বেষ্টিত দেশগুলির জন্য আন্তর্জাতিক বাজারের সংযোগকারী হিসাবে কাজ করে। এই বন্দরগুলি প্রশান্ত মহাসাগর আটলান্টিক মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ শিপিং লেন বা জাহাজ চলাচলের পথগুলিকেও নিয়ন্ত্রণ করে এবং গভীর সমুদ্রের খনি, তেল অনুসন্ধান বাণিজ্যিক মাছ ধরার মতো নীল অর্থনীতির ক্ষেত্রগুলির জন্য অনাবিষ্কৃত অঞ্চল। এই অঞ্চলে অবকাঠামোগত কূটনীতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিযানের লক্ষ্য হল ইউরোপীয় বাজারের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ চলাচলের পথ, বন্দর এবং নীল অর্থনীতির ক্ষেত্রগুলিকে সুরক্ষিত করা।

 

গ্লোবাল গেটওয়ের জন্য ইইউ-এর কৌশলগত আবশ্যিকতা

অঞ্চল জুড়ে সংযোগ পরিকাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্য ছাড়াও গ্লোবাল গেটওয়ের এই ১৯টি দেশের সঙ্গে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-এর (বিআরআই) স্থির অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা থেকে ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি প্রশমিত করার বিবৃত উদ্দেশ্য রয়েছে (দ্রষ্টব্য সারণি ১)। ইইউ চিনকে একটি ‘ব্যবস্থাগত প্রতিদ্বন্দ্বীতথা এক গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার হিসাবে মনে করে কয়েক দশক ধরে, ইইউ এবং তার পশ্চিমী মিত্ররা চিনকে তাদের সমস্ত বিদেশি উত্পাদন ঘাঁটি এবং শিল্প আমদানির জন্য ওয়ান-স্টপ ডেস্টিনেশন বলে মনে করেছিল, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমকে চিনের উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল করে তোলে। ২০২২ সালে ইইউ এবং চিনের মধ্যে দৈনিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২.৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে ইইউ ক্রমাগত ভাবে ৪৪১.৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য বাণিজ্য ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে এবং চিনের উদ্দেশ্যে ইইউ-র রাষ্ট্রদূত এটিকে মানবজাতির ইতিহাসে সর্বকালের সর্ববৃহৎবলে উল্লেখ করেছেন। গ্লোবাল গেটওয়ে হল ইইউ-এর সরবরাহ শৃঙ্খলকে বৈচিত্র্যময় করে তোলার বাজি এবং চিনা অর্থনীতির সঙ্গে ক্রমান্বয়ে ডিকাপলিং বা ঝুঁকিমুক্তিকরণের মাধ্যমে নিজের অর্থনীতিকে বাহ্যিক ধাক্কা থেকে ঝুঁকিমুক্ত করে তোলা। কারণ আন্তর্জাতিক মঞ্চে বেজিংয়ের অবস্থান ক্রমশ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে।

২০১৩ সালে বিআরআই চালু করার সময় চিন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অবকাঠামোগত উন্নয়নের ভূ-কৌশলগত প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। কয়েক দশক ধরে বিকেন্দ্রীভূত সহায়তা বণ্টনের পর গ্লোবাল গেটওয়ে উন্নয়নশীল বিশ্বে আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে উন্নয়নমূলক অবকাঠামোগত কূটনীতিতে ব্রাসেলসের বাজি হয়ে ওঠে। সমগ্র আফ্রিকা জুড়ে উন্নয়ন প্রচারের লক্ষ্যে স্বচ্ছ আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে নির্মিত অভিজ্ঞতামূলক ভাবে গবেষণা করা করিডোর বেজিংয়ের ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড’-এর একটি আকর্ষণীয় বিকল্প হয়ে ওঠে। ব্রাসেলস অংশীদার দেশগুলির সঙ্গে অবকাঠামোগত সহযোগিতাকে আরও গভীর করেছে এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সুশাসন, স্থিতিশীলতা এবং সমান অংশীদারিত্বের উপর ভিত্তি করে একটি উন্নয়নমূলক বিশ্বদর্শন প্রচার করার মাধ্যমে উন্নয়নমূলক প্রভাব তৈরি করার এক অনন্য সুযোগ উপস্থাপন করেছে। এই ধরনের বড় আকারের উদ্যোগের জন্যও সমমনস্ক গণতন্ত্রকে এক লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। ব্রাসেলস আশা করে যে, এই উদ্যোগটি উন্নয়নশীল বিশ্বের অবকাঠামো উন্নয়নের ব্যবধান ঘোচানোর জন্য এবং গ্লোবাল সাউথ জুড়ে চিনের অনিয়মিত, বাণিজ্যিক এবং শোষণমূলক ঋণের প্রবণতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক গণতন্ত্রকে একত্র করার একটি সমন্বিত বিন্দু হিসাবে কাজ করবে।

 

উপসংহার

অবকাঠামোগত কূটনীতির নিরিখে ব্রাসেলস অনন্য এক অবস্থান গ্রহণ করেছে। এটি সম্প্রতি ভারত, জাপান অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সংযোগমূলক অংশীদারিত্ব সম্পন্ন করেছে।
২০২০ সালের মন্ত্রী পর্যায়ের ঘোষণার উপর ভিত্তি করে ব্রাসেলস অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনের সঙ্গে একটি সংযোগমূলক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে আগ্রহী। আফ্রিকার গ্লোবাল গেটওয়ে হল গ্লোবাল কানেক্টিভিটি উদ্যোগ শৃঙ্খলের আর একটি এমন শাখা, যা ইইউ বাহ্যিক ধাক্কা থেকে জ্বালানি মূল্যশৃঙ্খলগুলিকে রক্ষা করার জন্য নির্মাণে আগ্রহী।

 


পৃথ্বী গুপ্তা অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের জুনিয়র ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.