Author : Gurjit Singh

Published on Apr 29, 2022 Updated 0 Hours ago

ইউক্রেনীয় সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে জার্মানি দীর্ঘকালীন নীতিগুলির পরিবর্তন করে এক নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের প্রবর্তন করেছে।

জার্মানির নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল

রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ ইউরোপে এক অযাচিত এবং অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এই আগ্রাসী পদক্ষেপের ফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছে জার্মানি। জার্মানি এবং ইউরোপ উভয়েই রাশিয়ার ইউক্রেনকে হুমকি দেওয়া সম্পর্কে অবগত ছিল। কিন্তু তারা আশা করেছিল সুলভ মূল্যে প্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ক্রয়-বিক্রয়ভিত্তিক তাদের পারস্পরিক সহযোগিতা শৃঙ্খল এর ফলে প্রভাবিত হবে না। রাশিয়ার জ্বালানি বিক্রির জন্য নিজেদের দেশের বাজার খুলে দেওয়ার মাধ্যমে রাশিয়াকে ফাঁদে ফেলা এবং রাশিয়াকে এক নিরাপত্তা অংশীদারিত্বে অংশ নিতে বাধ্য করার প্রচেষ্টা বর্তমানে জার্মানি এবং ইউরোপের জন্য এক রুশ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।

জার্মানির নীতি

২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর জার্মানিতে এস পি ডি নেতা ওলাফ স্কোলজের নেতৃত্বে একটি ত্রিদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসে এবং অ্যাঞ্জেলা মার্কেল যুগের পরিসমাপ্তি ঘটায়। স্কোলজ আরও আধুনিক এক সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করতে চান যা আগামী প্রজন্মের জন্য এক নব্য জার্মানির নির্মাণ করবে। এমনটা করার জন্য রাশিয়া থেকে জ্বালানির স্থিতিশীল আমদানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

নতুন জোট সরকারের হাত ধরেই মার্কেল যুগ পেরিয়ে জার্মানির রূপান্তর ঘটার কথা। স্থিতিশীল এবং অর্থনৈতিক ভাবে সফল জার্মানি তার জনসাধারণের জন্য এক উন্নততর জীবনযাত্রা সুনিশ্চিত করতে চাওয়ার পাশাপাশি ইউরোপীয় আত্মবিশ্বাস, একটি কমন ফরেন অ্যান্ড সিকিউরিটি পলিসি (সি এফ এস পি) বা অভিন্ন বৈদেশিক এবং নিরাপত্তানীতি ও সামগ্রিক উন্নয়নের মতো বিষয়গুলিতে সক্রিয় অবদান রাখতে তৎপর হয়েছিল। কিন্তু ইউক্রেনের উপরে রুশ হামলা জার্মানির মূল নীতিগুলির দ্রুত পরিবর্তন ঘটাতে বাধ্য করে। ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর জার্মান চ্যান্সেলরের অ্যাকসেপ্টেন্স স্পিচ এবং ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বুন্ডেস্ট্যাগে তাঁরই ঘোষিত নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা গিয়েছে।

স্থিতিশীল এবং অর্থনৈতিক ভাবে সফল জার্মানি তার জনসাধারণের জন্য এক উন্নততর জীবনযাত্রা সুনিশ্চিত করতে চাওয়ার পাশাপাশি ইউরোপীয় আত্মবিশ্বাস, একটি কমন ফরেন অ্যান্ড সিকিউরিটি পলিসি (সি এফ এস পি) বা অভিন্ন বৈদেশিক এবং নিরাপত্তানীতি ও সামগ্রিক উন্নয়নের মতো বিষয়গুলিতে সক্রিয় অবদান রাখতে তৎপর হয়েছিল।

জার্মান চ্যান্সেলর এ কথা স্পষ্ট করে দেন যে, ইউরোপ যে নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার উপরে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল, তার উপরে বর্তমানে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন যে, রুশ আগ্রাসনের ফলে ইউরোপীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে যা হেলসিঙ্কি ফাইনাল অ্যাক্টের পর থেকে বিগত প্রায় ৫০ বছর যাবৎ অক্ষুণ্ণ ছিল। তিনি রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের কথা বললেও এ কথা লক্ষ্যণীয় যে, তাঁর বক্তব্যে তিনি কোথাও ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা উল্লেখ করেননি। ইউরোপীয় পরিকাঠামোই কর্মসূচির কেন্দ্রে থাকবে। রাশিয়ার সঙ্গে কথাবার্তা চালানোর দরজা বন্ধ করা হবে না এবং পারস্পরিক আলোচনার রাস্তা খোলা রাখার জন্য কূটনীতিকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে। কারণ, ইউরোপে শান্তি বজায় রাখাই তাঁদের প্রধান লক্ষ্য।

পুতিন এই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সঙ্কটের মুখে ফেলেছেন এমন দাবি করলেও, স্কোলজ এ-ও জানান যে, ‘দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে রাশিয়ার বিরোধিতা করে ইউরোপের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা যাবে না।’ বিদ্যমান টানাপড়েনের প্রেক্ষিতে তিনি পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন। প্রথমত, ইউক্রেনকে তার স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র অটুট রাখতে দৃঢ় ভাবে সাহায্য করে যাওয়া। ইউক্রেনকে অস্ত্রের জোগান দেওয়াও এর অন্তর্ভুক্ত, যা জার্মানির নীতি পরিবর্তনের এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। দ্বিতীয়ত, রাশিয়াকে যুদ্ধের পথ থেকে সরিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে জোরদার করা। অর্থাৎ রাশিয়াকে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে, নতুন প্রযুক্তি থেকে ছেঁটে ফেলার জন্য তার উপরে কড়া আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা, রাশিয়ার অলিগার্কস বা অত্যন্ত ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করা এবং ই ইউ-তে রুশ বিনিয়োগ রদ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। এ ক্ষেত্রে জ্বালানির কথা উল্লেখ না করা হলেও সুইফট পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়া জার্মানির জন্যও এক বড় ধাক্কা।

তৃতীয়ত, ইউরোপের অন্যান্য দেশে যুদ্ধের ছড়িয়ে পড়া নিবারণ করা। আশ্চর্যজনক ভাবে এপ্রিল মাসের শীর্ষ সম্মেলনে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ই ইউ নেতাদের এ হেন কথাই জানিয়েছিলেন

স্কোলজ ন্যাটোর একজোট হওয়া এবং কী ভাবে এর ফলে বুন্দেশভের লিথুয়ানিয়া, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া এবং বাল্টিক দেশগুলি-সহ তার পূর্ব দিকের মিত্র শক্তিগুলিকে আরও সুদৃঢ় সহায়তা প্রদানে সক্ষম হবে, সে বিষয়েরও উল্লেখ করেন। ন্যাটোর প্রচেষ্টার সঙ্গে সংহতির নিরিখে তিনি জার্মান প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার কথা বলেন যা তাঁর নির্বাচনপূর্ব প্রতিশ্রুতি এবং জোট সংক্রান্ত বক্তব্যের তুলনায় অনেকটাই আলাদা।

জ্বালানি আমদানির ক্ষেত্রে রাশিয়ার উপরে নির্ভরতা কমাতে কয়লা এবং গ্যাসের একটি সঞ্চয় তৈরি করা প্রয়োজনীয়। জার্মানি-সহ সমগ্র ই ইউ বর্তমানে বিকল্প উৎসের সন্ধান করছে। পূর্বে খারিজ হয়ে যাওয়া দু’টি এল এন জি টার্মিনাল পুনরায় ব্রুনসবুটল এবং ভিলহেলমসহাফেনে নির্মাণ করা হবে। পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির কথা মাথায় রেখে এল এন জি টার্মিনালগুলিকে দূষণমুক্ত বা গ্রিন হাইড্রোজেন সঞ্চয়ের জন্য উপযুক্ত ভাবে বানানো হবে।

জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল

ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি (এন এস এস) নির্ধারণের ঘোষণাও করা হয়েছে। জার্মানি বর্তমানে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে তার বিদ্যমান নীতিগুলি থেকে সরে আসার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং জোটশক্তির আশার তুলনায় এই সরণের পরিমাণ অনেকটাই বেশি।

জাতীয় সুরক্ষা খাতে বর্ধিত বিনিয়োগের ফলে জলবায়ু, অভ্যন্তরীণ পরিকাঠামো নির্মাণ এবং উন্নয়নমূলক আন্তঃসহযোগিতা, জীবিকা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত পুঁজির উপরে প্রভাব পড়তে পারে। এবং একই সঙ্গে রাশিয়া থেকে জ্বালানির আমদানি ব্যাহত ফলে জ্বালানির উচ্চ মূল্যের সম্ভাবনার সঙ্গেও জার্মানিকে যুঝতে হতে পারে।

প্রস্তাবিত এন এস এস-টিতে তিনটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। প্রথমত, জার্মানি্র অর্থনৈতিক ক্ষমতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে জার্মানির প্রতিরক্ষা ক্ষমতাও বৃদ্ধি করা হবে। জার্মান প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্য ১০০ বিলিয়ন ইউরো (যা প্রায় ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান) বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, জার্মানির জি ডি পি-র ২% প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করার প্রস্তাবটি আইনে পরিণত করার জার্মান চ্যান্সেলরের প্রতিশ্রুতি। ন্যাটো ইতিপূর্বে এমনটা করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে থাকলেও জার্মানি সে কথায় কর্ণপাত করেনি এবং এই প্রস্তাবকে কোয়ালিশন কমপ্যাক্ট বা জোটশক্তির কর্মসূচিতে অন্তর্গত করেনি। ইউক্রেনের পরিস্থিতি তাদের দ্রুততার সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করেছে। উল্লিখিত দু’টি কারণের পাশাপাশি জ্বালানি নিরাপত্তা প্রদান করাই নতুন এন এস এস-টির ভিত্তি স্থাপন করেছে।

দীর্ঘ দিন যাবৎ একটি সুদক্ষ নাগরিক সমাজ হওয়া সত্ত্বেও এখনও জার্মানি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অপরাধবোধ বহন করে চলেছে। দেশটি এত দিন তার প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত প্রস্তুতির উপরে বিশেষ জোর দেয়নি এবং জলবায়ু  পরিবর্তন ও ইউরোপীয় মূল্যবোধের মতো বিষয়গুলির উপরে গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। ইউরোপের প্রথম সারির অর্থনৈতিক শক্তিগুলির একটি হওয়া সত্ত্বেও জার্মানি কখনওই ন্যাটোর কার্যকর সামরিক অংশীদার ছিল না। জার্মানির এন এস এস-টি বর্তমানে ন্যাটোর সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা উদ্যোগ এবং দুই পক্ষের মধ্যে বর্ধিত আন্তঃসহযোগিতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। জার্মানির মতে পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর উপস্থিতি যথেষ্ট নয় এবং এই অপ্রতুলতা সম্পূরণের জন্য তার সদর্থক ভূমিকা পালন করা উচিত। এন এস এস-টি শুধু মাত্র প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি সংক্রান্তই হবে না, এটির মাধ্যমে কূটনৈতিক উদ্যোগ, একটি বৃহত্তর উন্নয়নের অঙ্গীকার এবং জলবায়ু কর্মসূচিতে নিরবচ্ছিন্ন সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিও পালন করা হবে। এগুলির সব কটিই জার্মানির প্রধান লক্ষ্য হলেও আপাতত প্রতিরক্ষা খাতেই সর্বাধিক বিনিয়োগ করা হবে। এখন চ্যালেঞ্জ হল জার্মানি কী ভাবে অন্য লক্ষ্যগুলির বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি বরাদ্দ করবে। জাতীয় সুরক্ষা খাতে বর্ধিত বিনিয়োগের ফলে জলবায়ু, অভ্যন্তরীণ পরিকাঠামো নির্মাণ এবং উন্নয়নমূলক আন্তঃসহযোগিতা, জীবিকা ও স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত পুঁজির উপরে প্রভাব পড়তে পারে। এবং একই সঙ্গে রাশিয়া থেকে জ্বালানির আমদানি ব্যাহত হওয়ার ফলে জ্বালানির উচ্চ মূল্যের সম্ভাবনার সঙ্গেও জার্মানিকে যুঝতে হতে পারে।

বর্ধিত প্রতিরক্ষা

ইউক্রেন সঙ্কটের প্রেক্ষিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার জার্মান ক্ষমতা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি সমস্যা রয়েছে। জার্মানির ক্ষমতা বহুলাংশে সীমাবদ্ধ। ইউক্রেনের প্রয়োজন অস্ত্র এবং যুদ্ধ সরঞ্জাম ও ব্যবস্থা সংক্রান্ত সহায়তা প্রদানের প্রত্যক্ষ প্রতিশ্রুতি। অন্য ন্যাটো দেশগুলিতে মজুত অস্ত্রভাণ্ডার থেকে কিছু পরিমাণ যুদ্ধ সরঞ্জামের জোগান দিতে জার্মানি রাজি হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে অব্যবহিত প্রয়োজন পূরণে বুন্দশভের থেকে আরও যুদ্ধ সরঞ্জাম জোগান দেওয়া জার্মানির পক্ষে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জার্মান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ক্রিস্টিন ল্যামব্রেখট এ কথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, নিজের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ভাণ্ডার শূন্য করে জার্মানির পক্ষে তার সরঞ্জাম এবং অস্ত্রশস্ত্র ইউক্রেনের সাহায্যার্থে দান করা সম্ভব নয়।

প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সরঞ্জাম প্রস্তুতিতে জার্মানি এখনও সক্রিয় অবস্থান গ্রহণে সমর্থ নয় এবং এই ভূমিকায় দক্ষ হয়ে ওঠার জন্য বিনিয়োগ ও পরিকল্পনা সংক্রান্ত নতুন প্রতিশ্রুতির প্রস্তুতিতে তার সময় লাগবে। ২০২১ সালের ৪৭ বিলিয়ন ইউরোর প্রতিরক্ষা বাজেট চলমান বর্ষে বেড়ে হয়েছে ১০০ বিলিয়ন ইউরো। প্রতিরক্ষা বাজেটের পরিমাণ জি ডি পি-র ২ শতাংশের সমান ২০২১ সালে বরাদ্দ ১.৫৩ শতাংশের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধিকেই দর্শায়। জার্মানিই একমাত্র দেশ নয় যে, ন্যাটোর ২% বিনিয়োগ সংক্রান্ত অনুরোধ উপেক্ষা করেছে। ২৭টি ন্যাটো দেশের মধ্যে ২০২১ সালে ইউরোপের মাত্র ৯টি দেশ ২% বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমর্থ হয়েছে সামরিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করা কেবল মাত্র বাজেট বা অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার উপরেই নির্ভর করে না। নিঃসন্দেহে বিনিয়োগে এই নতুন বৃদ্ধি জার্মানিকে আমেরিকা এবং চিনের পরেই পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম প্রতিরক্ষা বাজেট বিশিষ্ট দেশে পরিণত করবে। কিন্তু খরচ প্রক্রিয়া শুরু করা, অস্ত্র সংগ্রহ প্রক্রিয়ার সূচনা করা, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের নির্ধারণ করা এবং সেনাবাহিনীকে নতুন ব্যবস্থা বা সিস্টেম ব্যবহারের জন্য সুদক্ষ করে তুলতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে।

এই প্রেক্ষিতে জ্বালানির জোগান বহাল রাখা, জোটের বিভিন্ন অংশীদারদের ভিন্ন অগ্রাধিকারের সহাবস্থান এবং বুন্দেশভের জার্মান রাজনীতি ও নীতির নেপথ্যে চালিকাশক্তি হয়ে ওঠার ক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এ সবের সঙ্গে জার্মানি অভ্যস্ত নয় এবং আগামী দিনগুলিতে দেশের অভ্যন্তরে ও ইউরোপে এ হেন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে হবে তাকে।

জার্মান প্রতিরক্ষার বর্ধিত বাজেট কোন খাতে খরচ করা হবে? বিশ্লেষকদের মতে যে সকল বিষয় বহু বছর যাবৎ অবহেলিত হয়েছে, যেমন সামরিক প্রস্তুতি, সামরিক গোলাবারুদের গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ, অস্ত্র, সহায়তা এবং পরিবহণ ব্যবস্থা ইত্যাদি ক্ষেত্রে দ্রুততার সঙ্গে নতুন প্রেরণার সঞ্চার হবে। যে হেতু অনেক বছর ধরেই তারা তাদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম পরিমাণ বরাদ্দতেই অভ্যস্ত ছিল, তাই এর অনেকটাই নির্ভর করবে বুন্দেশভের কৌশলগত প্রস্তুতির উপরে।

মুখ্য আমদানিগুলি সম্পন্ন হতে আরও বেশি সময় লাগবে এবং নতুন অস্ত্র ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্তিকরণ, পুরনো অস্ত্রের প্রতিস্থাপন এবং ইউরোপীয় বিকল্প হিসেবে আমদানির মাধ্যমে নতুন অস্ত্র সঞ্চয়ের জন্য পরিকল্পনা প্রয়োজন। এটি আশ্চর্যজনক যে, জার্মানি নিজে সর্বদাই ইউরোপীয় বিকল্পের পক্ষে মত দিয়ে থাকলেও সে টর্নেডো ফাইটারস কিনেছে এবং এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৩৫টি এফ-৩৫ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সুতরাং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জার্মানির বর্ধিত ব্যয়ের অব্যবহিত সুবিধাভোগী হতে চলেছে। সঙ্কটের আগে জার্মানির ১৫টি টাইফুন কেনার কথা ছিল এবং তারা ২০১৮ ও ২০২০ সালে এফ-৩৫ প্রত্যাখ্যান করেছিল৷ স্পেন এবং ফ্রান্সের সঙ্গে জার্মানির যৌথ ভাবে গড়ে তোলা ফিউচার কমব্যাট এয়ার সিস্টেম (এফ সি এ এস) জেট প্রোগ্রাম বর্তমানে বিলম্বিত হতে পারে৷ জার্মানির তরফে হেভি লিফট হেলিকপ্টার, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, ডুবোজাহাজ, ফ্রিগেট এবং মাইনসুইপারের মতো সামরিক সরঞ্জাম আমদানি করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি, যেমনটা জাপানের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কেনা হবে।

একাধিক বিষয়ে ইউক্রেন অব্যবহিত ভাবে জার্মানির কাছে আরও বেশি সাহায্য চাইলেও জার্মানির পক্ষে ইউক্রেনের সকল দাবি পূরণ করা সম্ভব নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনপ্রিয় মতামতও বদলেছে। এক মাস আগেও প্রায় সংখ্যাগরিষ্ঠ জার্মান মনে করতেন, সরকারের সিদ্ধান্ত সঠিক। কিন্তু বর্তমানে দেশের মাত্র ৩৭% মানুষ সহমত পোষণ করছেন। বরং ৪৫% মানুষ এমনটা মনে করেন যে, সরকার যথেষ্ট পরিমাণে উদ্যোগী নয়। জনমতের ‘ইউক্রেনীয়করণ’ জার্মান জোট সরকারের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করছে। রাশিয়ার সঙ্গে অংশীদারিত্ব বহু দশক যাবৎ জার্মান নীতির অংশ। জার্মানির উচিত অবিলম্বে তাদের এন এস এস নির্ধারণ করা এবং সেই অনুযায়ী দৃঢ় ভাবে প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

এই প্রেক্ষিতে জ্বালানির জোগান বহাল রাখা, জোটের বিভিন্ন অংশীদারদের ভিন্ন অগ্রাধিকারের সহাবস্থান এবং বুন্দেশভের জার্মান রাজনীতি ও নীতির নেপথ্যে চালিকাশক্তি হয়ে ওঠার ক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এ সবের সঙ্গে জার্মানি অভ্যস্ত নয় এবং আগামী দিনগুলিতে দেশের অভ্যন্তরে ও ইউরোপে এ হেন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে হবে তাকে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.