Author : Krishna Vohra

Published on Mar 21, 2025 Updated 0 Hours ago

জার্মানির ট্র্যাফিক-লাইট জোট ভেঙে যাওয়া রাজনৈতিক ভাঙন আরও গভীর করার ইঙ্গিত দিচ্ছে, কারণ আসন্ন অন্তর্বর্তী নির্বাচনে অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও জ্বালানি চ্যালেঞ্জ দেশের ভবিষ্যৎকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

জার্মানির জোট ভেঙে যাওয়া: রাজনীতি, অর্থনীতি ও জ্বালানির সংকট

জেইনএকটি অদ্ভুত জার্মান শব্দ, যা জা (হ্যাঁ) ও নেইন (না)-‌এর একটি চতুর সংমিশ্রণ। জার্মান রাজনীতি বিশ্লেষণের জন্য জেইনএকটি অত্যন্ত কার্যকর শব্দ হিসাবে প্রমাণিত হচ্ছে, এবং জ্বালানি সংকট জার্মান ট্র্যাফিক লাইটজোটের পথ অবরুদ্ধ করেছে কি না এটি তার একটি উপযুক্ত উত্তর।

জার্মানির তিনটি রাজনৈতিক দলের ট্র্যাফিক লাইটসরকারি জোট ২০২৪ সালের নভেম্বরে ভেঙে যায় এবং দেশটি ২৩ ফেব্রুয়ারি একটি নতুন সরকারের জন্য ভোট দেয়, যেখানে কেউই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও ফেডরিখ মেরজের সিডিইউ বৃহত্তম দল হয়। বিদায়ী জোটে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস (এসপিডি), ফ্রি ডেমোক্রেটিক পার্টি (এফডিপি) ও গ্রিনস ছিল - যারা ট্র্যাফিক লাইট জোটে লাল, হলুদ ও সবুজের প্রতিনিধিত্ব করছিল। এটি গভীর আদর্শগত মতবিরোধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, এবং জার্মান অর্থনীতির দুর্বলতা ও ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ-‌সহ বাহ্যিক ঘটনাগুলির দ্বারা আরও চাপে পড়েছিল।

জ্বালানির দাম এই কারণগুলিকে সংযুক্ত করে: আদর্শ, অর্থনীতি এবং আক্রমণের প্রভাব। রাশিয়ার আক্রমণ এবং আক্রমণ-পূর্ব জ্বালানি বাজারে অস্থিরতার ফলে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম আকাশচুম্বী হয়েছিল, যার ফলে জ্বালানি খরচ বেড়ে গিয়েছিল। জার্মান পরিবারগুলি শীতকালীন উচ্চ তাপ বিল নিয়ে আতঙ্কিত ছিল;‌ অন্যদিকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার প্রচেষ্টায় তাদের সংগ্রামের জন্য জ্বালানি খরচকে দায়ী করেছে। জার্মান সরকার এই প্রভাবগুলি কমাতে ভর্তুকিতে ২৫৫ বিলিয়ন ইউরো (অথবা ২৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ব্যয় করেছে। এটি জ্বালানি নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিনিয়োগের জন্য প্রদত্ত মার্কিন মূল্যস্ফীতি হ্রাস আইন  (আইআরএ)-‌এর মোট বাজেটের প্রায় ৮৫ শতাংশের সমান।

———————
জার্মান পরিবারগুলি শীতকালীন উচ্চ তাপ বিল নিয়ে আতঙ্কিত ছিল;‌ অন্যদিকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার প্রচেষ্টায় তাদের সংগ্রামের জন্য জ্বালানি খরচকে দায়ী করেছে।।
———————

তবুও, জার্মানির গল্পটি এত সহজ নয়। সফটওয়্যার, পরিকাঠামো ও বৈদ্যুতিক যানবাহনের মতো নতুন পণ্যগুলিতে বিনিয়োগের অভাবের কারণে অর্থনীতি বহু বছর ধরে ধীরগতিতে রয়েছে। ভূ-রাজনীতিও একটি ভূমিকা পালন করে: উল্লেখযোগ্যভাবে, ৬ নভেম্বর বার্লিনে সকাল হওয়ার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল, এবং সেই সন্ধ্যায় জোট সরকারের ভেঙে যাওয়ার খবর এসেছিল। তারপর থেকে, রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং অবাঞ্ছিত বহিরাগত ‘‌হস্তক্ষেপ’‌ নিয়ে উদ্বেগ অন্তর্বর্তী নির্বাচনকে আরও জটিল করে তুলেছিল।

ট্র্যাফিক লাইট জোটের বিকাশের মূলে ছিল ২০২১ সালের শরৎকালের নিজস্ব গঠন। সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস (এসপিডি), ফ্রি ডেমোক্রেটিক পার্টি (এফডিপি) ও গ্রিনস-‌এর জোট কখনই স্বাভাবিক ছিল না। এসপিডি চ্যান্সেলরশিপ গ্রহণ করার সময় এফডিপি অর্থ মন্ত্রক নেয়, এবং যদিও গ্রিনস অর্থ মন্ত্রক চেয়েছিল, তারা অর্থনীতি মন্ত্রক ও বিদেশ মন্ত্রক গ্রহণ করেছিল। এর ফলে একটি 'জোট চুক্তি' প্রয়োজন হয়ে পড়ে, যার মধ্যে একদিকে ছিল এফডিপি-র জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জার্মানির 'ডেট ব্রেক' সাংবিধানিক নিয়মকে চ্যালেঞ্জ না করার প্রতিশ্রুতি, যা বার্ষিক জনসাধারণের ঘাটতি ০.৩৫ শতাংশ জিডিপিতে সীমাবদ্ধ করে, এবং অন্যদিকে গ্রিন পার্টির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সবুজ বিনিয়োগে ৬০ বিলিয়ন ইউরোর কোভিড-১৯ তহবিল পুনর্বণ্টনের একটি 'অফ-বাজেট' পরিকল্পনা।

২০২৩ সালের নভেম্বরে জার্মানির সাংবিধানিক আদালত এই অফ-বাজেট ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়সেই মুহূর্ত থেকে জোট চুক্তিটি কঠিন অবস্থায় ছিল, যদিও আরও এক বছর ধরে অভ্যন্তরীণ লড়াই, গভীর রাতের সংকট আলোচনা, এবং আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে চলার পর চ্যান্সেলর স্কোলজ অবশেষে এফডিপি অর্থমন্ত্রী ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডনারকে বরখাস্ত করেন। তারপর এটি প্রকাশ পেয়েছে যে এফডিপি অনেক আগেই জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল, এবং প্রথম সুযোগের জন্য অপেক্ষা করছিল।

জলবায়ু নীতি স্থবিরতা: এটি কি অবশেষে 'সবুজ' সংকেত পাবে?

রাশিয়ার আক্রমণ সস্তা রাশিয়ান পাইপলাইন গ্যাসের উপর জার্মানি ও ইউরোপের অতি-‌নির্ভরতা উন্মোচিত করেছিল। তবে জ্বালানি দক্ষতা ও পুনর্নবীকরণযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে এক দশক ধরে বিনিয়োগের কারণে দেশটির দুর্বলতা যতটা হতে পারত তার চেয়ে কম ছিল। তবুও, ২০২২ সালের জ্বালানি সংকটের প্রতি জার্মানির প্রতিক্রিয়া কাঠামোগত সমাধান নয়, বরং স্বল্পমেয়াদি 'ব্যান্ড-এড' পদক্ষেপের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। যদিও ইউরোপ বাইডেন সরকারের মূল্যস্ফীতি হ্রাস আইন (আইআরএ)-‌এর পরিচ্ছন্ন শক্তি ট্যাক্স ক্রেডিটের প্যাকেজকে ঈর্ষা করেছে, তবুও মহাদেশটি মূল্যবাবদ ভর্তুকিতে একই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে।

ট্র্যাফিক লাইট জোটের জলবায়ু এবং সবুজ শক্তির অ্যাজেন্ডা বারবার রাজনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। বেশ কয়েকটি প্রকল্প এখনও স্থগিত রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে পাওয়ার প্ল্যান্ট সুরক্ষা আইন যা হাইড্রোজেন-রেডি গ্যাস বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির 'পার্থক্যের জন্য চুক্তি'তে সহায়তা প্রদান করবে  যা কোম্পানিগুলিকে ট্রানজিশনাল প্রযুক্তির অতিরিক্ত পরিচালন খরচের প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা দেবে, এবং একটি আইনত বাধ্যতামূলক জলবায়ু অভিযোজন কৌশল। এছাড়াও, ইতিমধ্যেই সংসদীয় চুক্তি পর্যায়ে থাকা গুরুত্বপূর্ণ জিওথার্মাল অ্যাক্সিলারেশন আইন, যা নতুন প্রকল্পের লাইসেন্স প্রদান এবং খনি আইন, জল আইন ও প্রকৃতি সংরক্ষণ আইনে পরিবর্তন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সহজ করত, স্থগিত করা হয়েছে। সর্বোত্তমভাবে, ফলাফলগুলিকে নিষ্প্রভ ও অসঙ্গত বলা যেতে পারে। প্রস্তাবিত ২৭টি নীতিগত পদক্ষেপের মধ্যে মাত্র ৯টি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়েছে।

———————
ইতিমধ্যেই সংসদীয় চুক্তি পর্যায়ে থাকা গুরুত্বপূর্ণ জিওথার্মাল অ্যাক্সিলারেশন আইন, যা নতুন প্রকল্পের লাইসেন্স প্রদান এবং খনি আইন, জল আইন ও প্রকৃতি সংরক্ষণ আইনে পরিবর্তন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সহজ করত, স্থগিত করা হয়েছে।
———————

এই পরিস্থিতি ইউরোপীয় স্তরেও প্রতিফলিত হয়, যেখানে জলবায়ু-সক্রিয়তামুখী 'সবুজ চুক্তি' নীতিগুলিকে এখন একটি অর্থনৈতিক 'পরিচ্ছন্ন প্রতিযোগিতামূলক' অ্যাজেন্ডা হিসাবে ফের প্যাকেজিং করা হচ্ছে।

জার্মানি ও ইইউ উভয় ক্ষেত্রেই শক্তি উত্তরণের সম্ভাবনা নির্বাচনের ফলাফলের উপর নির্ভর করছিল। সমীক্ষাগুলি ইঙ্গিত দেখিয়েছিল যে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক  ইউনিয়ন/ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিডিইউ/সিএসইউ) জোট ক্ষমতা ফিরে পেতে চলেছে, যা জার্মানির জলবায়ু কৌশলকে বদলে দিতে পারে। যদিও রক্ষণশীল  সিডিইউ অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের আমলে যুগান্তকারী জলবায়ু আইন প্রণয়ন করেছিল, তবুও তারা এসপিডি ও গ্রিনস প্রস্তাবিত বেশ কয়েকটি উচ্চাভিলাষী জলবায়ু ব্যবস্থার বিরোধিতা করেছে। প্রকৃতপক্ষে, ২০২৫ সালের সিডিইউ-এর রূপ উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত। প্রস্তাবিত অভিবাসন আইনে অতি-দক্ষিণপন্থী অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)-‌র সঙ্গে ভোট দেওয়ার ফ্রেডরিখ মের্জের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনেককে অবাক করে দিয়েছে, কারণ এটি ‘‌যুদ্ধোত্তর নিষেধাজ্ঞা’‌ ভেঙে দিয়েছে। মের্জ তখন থেকে অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের সমালোচনার মুখে পড়েছেন, যিনি জার্মানির রাস্তাঘাটে বিক্ষোভের কারণে এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে ‘‌চুপ থাকতে’‌ পারেননি। সিডিইউ ও মের্জও শেষ দিকে সমীক্ষায় পিছিয়ে পড়েছেন, যা নির্বাচনকে আরও জটিল করে তুলেছিল। সমীক্ষাগুলি যেমন পরামর্শ দিয়েছিল, সেভাবেই এখন পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য সিডিইউ/সিএসইউ-এর জোট অংশীদারের প্রয়োজন হবে।

সেই অংশীদার কি এসপিডি হবে জার্মান রাজনীতির ঐতিহ্যবাহী 'মহাজোট' — যাদের সঙ্গে মের্জের আলোচনা চলছে, নাকি সিডিইউ নেতা তাঁর দলের জার্মানির জনপ্রিয়তাবাদী এবং নব্য-ফ্যাসিবাদী অতি-দক্ষিণপন্থী অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)-‌র সঙ্গে কাজ না করার দীর্ঘদিনের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন?

যদি এই বিকল্পগুলির কোনওটিই কার্যকর না-‌হয়, তাহলে সিডিইউ/সিএসইউকে গ্রিনস এবং তাদের নেতা রবার্ট হ্যাবেকের সাথে একটি চুক্তিতে পৌঁছতে হবে এমন সম্ভাবনাও রয়েছে। এবার, হ্যাবেক সম্ভবত অর্থ মন্ত্রকের পোর্টফোলিও সুরক্ষিত করার এবং ডেট-ব্রেক সংস্কারের উপর জোর দেবেন।

গ্রিনস এবার ‘‌ধনী ও গভীর রক্ষণশীল’‌ শহর মিউনিখে একটি নির্বাচনী সমাবেশ করেছিল। হ্যাবেকের তরফে স্থানের অস্বাভাবিক পছন্দ ইঙ্গিত দেয় যে তিনি ‘‘‌‌বাস্তববাদী হয়ে উঠেছেন এবং নতুন ভোটারদের কাছে পৌঁছতে প্রস্তুত, এবং একই সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধীরা যেভাবে গ্রিনসের হস্তক্ষেপকারী ও গোঁড়ামিপূর্ণ ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছে তার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চান।’‌’‌

জার্মানির প্রেসিডেন্ট স্টাইনমায়ার যখন ফেব্রুয়ারিতে আগাম নির্বাচনের পথে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, "জনগণ জার্মানির জন্য কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, কারণ আমাদের দেশকে কঠিন সময়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।" যদিও তিনি ‌জ্বালানি শক্তির কথা উল্লেখ করেননি, কিন্তু জার্মানির কারও সংশয় নেই যে এই কঠিন সময়ে শক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।



কৃষ্ণা ভোরা অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সেন্টার ফর ইকনমি অ্যান্ড গ্রোথ-‌এর একজন গবেষণা সহকারী।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.