Author : M. Manjula

Published on Dec 16, 2021 Updated 0 Hours ago

কৃষির উন্নতিতে পুরুষ ও মহিলাদের লিঙ্গ সমতা অর্জন করার জন্য প্রয়ােজন কৃষিনীতি ও পরিকল্পনার ভাবনা, বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়নের স্তরে মহিলাদের মতামত নেওয়া এবং তাঁদের সমস্যাগুলিকে প্রাধান্য দেওয়া।

কৃষিক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য এবং ‘দক্ষিণ এশীয় প্রহেলিকা’

বর্তমান পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে যে, বিশ্বের সব কটি দেশ একত্রে মিলেও ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধা, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এবং অপুষ্টি দূরীকরণের কর্মসূচিকে বাস্তবায়িত করতে পারবে না। ২০১৯ সাল শেষ হওয়া পর্যন্ত পৃথিবী জুড়ে ৬৫ কোটি মানুষ দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধা এবং ১৩ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ তীব্র খাদ্যাভাবে জর্জরিত হয়েছে। যদিও সব অঞ্চলেই ছবিটা এ রকম নয়: গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স(জি এইচ আই) বা বিশ্ব ক্ষুধা সূচক ২০২০ অনুযায়ী কোনও কোনও অঞ্চলের মানুষ অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের তুলনায় খাদ্যাভাবের তীব্রতা অপেক্ষাকৃত কম অনুভব করেছে। ক্ষুধার পরিস্থিতি সব থেকে মারাত্মক সাব-সাহারান আফ্রিকা (অর্থাৎ সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে অবস্থিত আফ্রিকার দেশগুলি)। এবং দক্ষিণ এশিয়ায়। এই সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনটিতে দক্ষিণ এশিয়ার উপরে আলােকপাত করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে তথাকথিত ‘সাউথ এশিয়ান এনিগমা’ বা দক্ষিণ এশীয় প্রহেলিকার বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলি বিশ্লেষণ করা হয়েছে — অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মাঝেই ক্ষুধা এবং অপুষ্টির আপাতবিরােধী সহাবস্থানের পাশাপাশি মহিলাদের উপর এই সব কিছুর বিষম প্রভাবের ফলাফলও খতিয়ে দেখা হয়েছে।

এম মঞজুলা, “জেন্ডার গ্যাপ ইন এগ্রিকালচার অ্যান্ড দ্য ‘সাউথ এশিয়ান এনিগমা”, ও আর এফ ইস্যু ব্রিফ নম্বর ৪৯৮, অক্টোবর ২০২১, অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন।


অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দক্ষিণ এশিয়ায় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং মলদ্বীপ-সহ সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলটিই বিগত কয়েক দশকে উল্লেখযােগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাক্ষী থেকেছে। ২০১০ থেকে শুরু হওয়া দশকটিতে এই অঞ্চলের অর্থনীতি গড়ে বার্ষিক ৬.৭% হারে বৃদ্ধি পেয়েছে যা বিশ্বের বার্ষিক গড় অর্থাৎ ৩%-এর দ্বিগুণ। অঞ্চলটিতে মাথা পিছু মােট জাতীয় আয় (জি এন আই) ২০০০। সালের শুরু থেকেই বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। শুধু মাত্র ২০২০ সালে এই বৃদ্ধির হারে সামান্য চ্যুতি লক্ষ করা গেছে। ২০২১ সালে হওয়া ৭.২% বৃদ্ধির হার দেখাচ্ছে যে, এই হারে চলতে থাকলে অঞ্চলটি ২০২২ সালের মধ্যে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে।[১] এই অঞ্চলটি নিদারুণ দারিদ্র দূরীকরণেও সাফল্যের মুখ দেখেছে: ১৯৯০ সালে দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা যেখানে ছিল ৫০ কোটি, ২০১৫ সালে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ২১ কোটি ৬০ লক্ষে।[২] জোরালাে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং দারিদ্র দূরীকরণ সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়া পুষ্টিজনিত কারণে একাধিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়ে চলেছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, সাব-সাহারান আফ্রিকার মতাে অঞ্চল, যেখানে কিছু দিন আগে পর্যন্তও অপুষ্টির হার পৃথিবীতে সর্বোচ্চ ছিল, বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার তুলনায় ভাল ফল করছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাসকারী প্রায় ২৫কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ অপুষ্টিতে ভােগেন, যা । প্রকৃত সংখ্যার নিরিখে পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। পৃথিবীতে এই অঞ্চলেই শিশুদের মধ্যে সর্বাধিক অপুষ্টিজনিত প্রভাব দেখা গেছে এবং অঞ্চলটিতে ২০১৯ সালে চাইল্ড ওয়েস্টিং রেট বা শিশুদের

অপুষ্টিজনিত স্বাস্থ্যক্ষয়ের হার ১৪.৯%, যেখানে সাব-সাহারান আফ্রিকায় এই হার ৬.৯%। ৩৩.২% হারে অঞ্চলটিতে সর্বোচ্চ অনুপাতে খর্বাকার এবং তীব্র অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা শিশুরা বসবাস করে।[৩] [৪] এই অঞ্চলটিতে কম ওজনসম্পন্ন শিশুদের জন্মের হারও সর্বাধিক। দক্ষিণ এশিয়ায় খর্বাকৃতি শিশুসংখ্যার হার অত্যন্ত বেশি হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল শিশুজন্মের পূর্বে এবং পরবর্তী সময়ে গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টিকর খাবারের অভাব।[৫] অঞ্চলটিতে প্রজননক্ষম মেয়েদের মধ্যে সর্বাধিক পরিমাণে রক্তাল্পতার প্রভাব লক্ষ করা গেছে। এখানে রক্তাল্পতায় ভােগা মেয়েদের গড় ৪৯%, যেখানে ভারত, পাকিস্তান, মলদ্বীপ এবং আফগানিস্তানের মতাে দেশগুলিতে এই পরিমাণ ৪০%-এরও বেশি। সর্বোপরি, দক্ষিণ এশিয়ায় ৪.১% হারে শিশুমৃত্যুর ঘটনাও অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

ফুড ইনসিকিউরিটি এক্সপেরিয়েন্স স্কেল (এফ আই ই এস)-এর ভিত্তিতে করা মূল্যায়ন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাসকারী ৩৮ কোটি ৬৮ লক্ষ মানুষ খাদ্য সুরক্ষার তীব্র অভাবে ধুকছে এবং ৮৪ কোটি ৯৮ লক্ষ মানুষ মাঝারি থেকে তীব্র ভাবে খাদ্য সংক্রান্ত নিরাপত্তার অভাব বােধ করে।[৬] অর্থাৎ, এশিয়ার তীব্র ভাবে খাদ্য সুরক্ষার অভাবে ভােগা মানুষের ৮২% এবং মাঝারি থেকে তীব্র ভাবে খাদ্য। সুরক্ষার অভাবে ভােগা মানুষের ৭১% এই অঞ্চলের অধিবাসী। পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে যে, এ ক্ষেত্রেও লিঙ্গ বৈষম্যের প্রভাবটি স্পষ্ট: দক্ষিণ এশিয়ায় ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মহিলাদের খাদ্য সুরক্ষার অভাবে বিপন্নতা ৩৪.২% হলেও পুরুষদের মধ্যে তা ছিল ২৯.৮%। (দ্রষ্টব্য চিত্র ১)

চিত্র ১: এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ব্যাপকতা (২০১৭২০১৯ সালের গড়), লিঙ্গ এবং উপআঞ্চলিক ভিত্তিতে

সূত্র: এফ এ ও, ইউনিসেফ, ডব্লিউ এফ পি এবং হু, ২০২১

দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং দীর্ঘমেয়াদি পুষ্টির অভাব ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার এক আপাতবিরােধী সহাবস্থান লক্ষ করা যায়। এই পরিস্থিতিই ‘সাউথ এশিয়ান এনিগমা’ বা ‘দক্ষিণ এশীয় প্রহেলিকা’ নামে পরিচিত। এবং এই পরিস্থিতির সর্বাধিক প্রভাব পড়েছে মহিলাদের উপরে।

দক্ষিণ এশীয় প্রহেলিকার লিঙ্গভিত্তিক মাত্রা

দক্ষিণ এশিয়ায় দারিদ্রের প্রেক্ষিতে লিঙ্গ বৈষম্যের পরিসংখ্যান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বে দরিদ্র পরিবারে গড়ে ১০০ জন পুরুষ প্রতি মহিলার সংখ্যা ১০৪ জন। দক্ষিণ এশিয়ায় এই অনুপাত ১০০ জন পুরুষ প্রতি ১০৯ জন মহিলা। দারিদ্র্যের ক্ষেত্রে এই লিঙ্গ বৈষম্য কর্মক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে। দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় খেটে খাওয়া মানুষদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার মহিলাদের ক্ষেত্রে ৩০.৯% এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে ২৫.৪%, যা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সর্বোচ্চ।[৭] দক্ষিণ এশিয়ায় মহিলাদের কাজ পাওয়ার পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত দেশগুলির শ্রমিক শক্তি থেকে মহিলাদের বাইরে রাখার প্রবণতা উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহিলা। শ্রমিকদের সংখ্যা কমতে থাকা এবং পুরুষ ও মহিলাদের কর্মসংস্থানের হারের পার্থক্যের উপরে লিঙ্গ বৈষম্যের তীব্র প্রভাব এই প্রবণতার পরিচায়ক।[৮] যে সব মহিলা শ্রমিকের কাজ করেন, তাঁদের জীবিকার মান অত্যন্ত খারাপ। শ্রমশক্তির সঙ্গে যুক্ত একটি উল্লেখযােগ্য অংশের মহিলারা ঠিকা কাজ এবং স্বনির্ভর কাজের সঙ্গে জড়িত, যেগুলি সম্পূর্ণ রূপে অপ্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রের আওতাভুক্ত। (দ্রষ্টব্য চিত্র ২ এবং ৩)

চিত্র ২ লিঙ্গভিত্তিক স্বনির্ভর কর্মসংস্থান (২০১৯)

সূত্র: বিশ্ব ব্যাঙ্ক, ২০২০

চিত্র ৩ লিঙ্গভিত্তিক দিনমজুরের পরিসংখ্যান (২০১৯)

সূত্র: বিশ্ব ব্যাঙ্ক, ২০২০

দক্ষিণ এশিয়ায় মহিলাদের জন্য কৃষি ও কৃষিক্ষেত্র সংক্রান্ত অঞ্চলই একক সর্ববৃহৎ নিয়ােগক্ষেত্র। দেশভেদে অনুপাতের সামান্য পার্থক্য মাথায় রেখেই বলা যায় যে, অঞ্চলটির ৬৯% মহিলা কৃষিক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। (দ্রষ্টব্য চিত্র ৪) এ ছাড়াও পরিষেবা ক্ষেত্রগুলিতে যথেষ্ট সংখ্যক মহিলাকে নিযুক্ত করা হয়। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই অবস্থার সামান্য বদল লক্ষ করা যাচ্ছে এবং দেশভেদে মহিলা কর্মীদের সংখ্যারও তারতম্য চোখে পড়েছে। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলিতে মহিলারা। তাঁদের পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় অনেক কম পারিশ্রমিক পান। মহিলা ও পুরুষদের পারিশ্রমিকের সর্বোচ্চ ফারাকের — যা কিনা ৩২.৮% — উদাহরণটি পাকিস্তানে লক্ষ করা গেছে।[৯]

চিত্ৰ ৪ কৃষিক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যান (দক্ষিণ এশীয় দেশগুলিতে, ২০১৯)

সূত্র: বিশ্ব ব্যাঙ্ক ২০২০

দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাসকারী কমবয়সি মেয়ে এবং মহিলারা প্রগতির অন্য সূচকগুলিতেও পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মহিলাদের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে আছেন। তাঁরা অবৈতনিক দেখভালের কাজ এবং ঘর-গেরস্থালির কাজে ছেলে এবং পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি সময় অতিবাহিত করেন। পাকিস্তানে কমবয়সি তরুণী এবং মহিলারা পানীয় জল ও জ্বালানি সংগ্রহের মতাে গৃহস্থালির কাজে পরিবারের পুরুষদের তুলনায় ১১ গুণ বেশি সময় (ঘণ্টার নিরিখে) কাটাতে বাধ্য হন।[১০] এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলিতে সাক্ষরতা অভিযান, মাধ্যমিক এবং উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণের প্রচেষ্টা দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এই চেনা ছকের বাইরে আছে শুধু মাত্র মলদ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কা।[১১] আর্থিক পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও লিঙ্গ বৈষম্যের প্রভাব স্পষ্ট। দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাসকারী মহিলাদের মধ্যে মাত্র ৩২.৩% মহিলার নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে, পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা ৪২.৮%। এই পরিসংখ্যান সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলির চেয়ে ভাল। গ্লোবাল ফিনডেক্স ২০১১ অনুযায়ী, মাত্র ১৭% দক্ষিণ এশীয় দেশে ব্যবসা সংক্রান্ত অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অনুপাত ৮০%এরও বেশি — সাব-সাহারান আফ্রিকায় এ রকমটা লক্ষ করা গেছে প্রায় ৩৯% দেশে।[১২] দক্ষিণ এশিয়ায় মহিলারা লাভদায়ক পুঁজি যেমন জমি এবং আর্থিক নিবেশের ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছেন। ফলে, দক্ষিণ এশিয়া উচ্চ অর্থনৈতিক বৃদ্ধি সম্পন্ন একটি অঞ্চল হলেও লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণের সূচক অনুসারে খুবই খারাপ ফল করেছে। এবং এর পাশাপাশি উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলিতেও লিঙ্গ সাম্যের। দিকটি প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে অঞ্চলটির খাদ্য এবং পুষ্টি সংক্রান্ত বাস্তবতায়। কারণ, প্রজন্মগত অপুষ্টির শৃঙ্খল ভাঙার কাজে মহিলারাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।[১৩] লিঙ্গ বৈষম্য, ক্ষুধা এবং খাদ্য সুরক্ষার অভাব — এই তিনটি বিষয় একে অন্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। খাদ্য সুরক্ষা এবং পুষ্টি সংক্রান্ত বিষয়গুলিতে লিঙ্গ বৈষম্যের মূলে আছে নারী-পুরুষের সামাজিক ভূমিকায় ভেদ, খাদ্য এবং পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের অসমতা এবং সাংগঠনিক শক্তির । অভাব। আশ্চর্যজনক ভাবে এ কথা সত্যি, যে সমস্ত দেশ বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের উপরের দিকে আছে, সেই দেশগুলিতে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণের প্রক্রিয়াটি ততটাই খারাপ।[১৪] দক্ষিণ এশিয়ায় পুষ্টি সংক্রান্ত বাস্তব ফলাফলের ক্ষেত্রে পূর্বোল্লিখিত বিষয়গুলির সম্মিলিত প্রভাব সুস্পষ্ট।[১৫] [১৬] এর ফলে অঞ্চলটিতে এস ডি জি লক্ষ্যমাত্রা ২ (ক্ষুধাশূন্য) এবং এস ডি জি লক্ষ্যমাত্রা ৫ (লিঙ্গ সাম্য)-এর আবশ্যিক ও প্রয়ােজনীয় পুনর্বহালের দিকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মহিলাদের সশক্তিকরণ এবং অঞ্চলটির অর্থনীতিতে তাদের আরও বেশি করে অংশগ্রহণের দিকটিতে বিশেষ নজর দিতে হবে।

কৃষিক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ দক্ষিণ এশিয়ায় জীবিকার প্রেক্ষিতে মহিলাদের জন্য সর্ববৃহৎ নিয়ােগের জায়গাটি হল কৃষিক্ষেত্র ও কৃষি সংক্রান্ত অঞ্চল — মােট নিয়ােগের ৫৭% এই ক্ষেত্রটিতেই হয়ে থাকে। এই নিয়ােগের অনুপাত দেশ ভেদে পালটায় — শ্রীলঙ্কায় ২৮% থেকে শুরু করে নেপালে ৭৪%-র মতাে বড় সংখ্যকও হতে। পারে। মলদ্বীপে মাত্র ২% মহিলার কৃষিক্ষেত্রে নিযুক্ত হওয়ার পরিসংখ্যান নিতান্তই ব্যতিক্রম। ১৯৮০ এবং ১৯৯০-এর দশকে উদারীকরণের পরবর্তী সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় গ্রাম ছেড়ে কাজের সন্ধানে শহরে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। নেপালে প্রতি চারটি পরিবারের একটিতে অন্তত একজন সদস্য এ ভাবে গ্রাম ছেড়েছেন, আর এর ৮৮%-ই করেছেন পরিবারের পুরুষ সদস্যেরা।[১৭] ভারতে। এই পরিযায়ী জনসংখ্যার পরিমাণ হল ২৯.৯%।[১৮] পরিযায়ী মানুষদের মধ্যে আনুমানিক ৮% পুরুষ, কিন্তু দেশের বিপুল জনসংখ্যার কথা মাথায় রাখলে এই পরিমাণ অনেকটাই।[১৯] পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বাসস্থান ছেড়ে অন্যত্র কাজের সন্ধানে গেলে মহিলারা কৃষিকাজে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। এই ঘটনাটিকেই ‘ফেমিনাইজেশন অফ এগ্রিকালচার’ বলা হয়ে থাকে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত এবং নেপালে সর্বাধিক মাত্রায় ফেমিনাইজেশন অফ এগ্রিকালচারের প্রক্রিয়াটি লক্ষ করা যায়।। এগ্রিকালচারাল ফেমিনাইজেশন এবং কৃষিক্ষেত্রে নারী ক্ষমতায়নকে একই দৃষ্টিভঙ্গিকে দেখার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা দ্বিধাবিভক্ত। এবং ফেমিনাইজেশন বা অধিক সংখ্যায় মহিলাদের কৃষিক্ষেত্রে যােগদানের ব্যাপারটি সীমিত এবং ব্যাপক উভয়ার্থেই ব্যবহার করা হয়।[২০] সীমিত অর্থে ফেমিনাইজেশন বলতে কৃষিজমি সংক্রান্ত কাজের (বৈতনিক এবং অবৈতনিক দু ক্ষেত্রেই) পরিমাণ বৃদ্ধি এবং পারিবারিক। চাষের কাজে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকে বােঝায়।[২১] এই প্রক্রিয়ায় প্রয়ােজনীয় রসদ, কাজ সংক্রান্ত জ্ঞান, প্রযুক্তি ইত্যাদি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতাটুকুও প্রায় না থাকা সত্ত্বেও মহিলাদের কাজের পরিমাণ ক্রমশ বেড়ে চলে। মােবাইল ফোনের সর্বজনীনতার সুবাদে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বহু দূরের শহরে থেকেও তাঁদের পারিবারিক এবং চাষবাস সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।[২২]

ব্যাপকতর অর্থে ফেমিনাইজেশন বলতে মহিলাদের কৃষিকাজের মতাে সামাজিক প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করে তাঁদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা এবং মহিলাদের শ্রমশক্তির নির্মাণ বােঝায়। বৃহত্তর অর্থে এই। ধারণাটির আওতায় উৎপাদনশীল বা কার্যকর পুঁজি বা কাঁচামালের উপর মহিলাদের অধিকার এবং মালিকানা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং যে সব ক্ষেত্র এত দিন পুরুষদের দ্বারা শাসিত ছিল, সেখানেও মহিলাদের অবদানের স্বীকৃতির মতাে বিষয়গুলিকে বিবেচনা করা হয়।[২৩] [২৪] ফেমিনাইজেশনের এই পদ্ধতিটিকে ‘মনেজেরিয়াল ফেমিনাইজেশন’ও বলা হয়। এই দ্বিতীয় মতে ফেমিনাইজেশনকে কৃষিক্ষেত্রে মহিলাদের অবস্থার উন্নতি এবং লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণের একটি সুযােগ বলে মনে করা হয়। অর্থাৎ, মহিলাদের অবস্থার উপর কৃষিক্ষেত্রে ফেমিনাইজেশনের প্রভাব নির্ভর করে সেই সব সামাজিক ও ব্যবহারিক এবং লিঙ্গভিত্তিক বিধিবিধানের উপর, যা সমগ্র পদ্ধতিটিকে সম্পূর্ণতা দেয়।[২৫]

নেপালের সিন্ধলি জেলায় কৃষিকাজ এবং পশুপালনের সঙ্গে যুক্ত একাধিক পরিবারকে নিয়ে করা এক সমীক্ষায় দেখা যাচেছ যে, কৃষিক্ষেত্রের রূপান্তরের প্রেক্ষিতে ফেমিনাইজেশন সীমিত ভূমিকা পালন করেছে।[২৬] এই গবেষণাটিতে মহিলাদের স্বার্থে এমন এক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে যাতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার সঙ্গে পারিবারিক চাষবাসের ঐচ্ছিক সুযােগের দিকটিও যােগ করা যায়। অঞ্চলটিতে মহিলাদের ভূমিকার সঙ্গে অ্যাডাপ্টিভ প্রেফারেন্স বা ঐচ্ছিক সুযােগের দিকটি এত দিন যাবৎ চলে। আসা সামাজিক এবং লিঙ্গ বৈষম্যের ভিত্তিতেই স্থির করা হত। এবং মহিলারা সংবৎসরের চাষবাসের কাজ ছাড়াও পরিবারের ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য ফসল উৎপাদনের কাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

পালন করে থাকেন। প্রাত্যহিক কৃষিজমি ও চাষবাসের দেখাশােনা এবং অর্থনৈতিক শস্য ও খাদ্যশস্য — উভয় প্রকার শস্যেরই দেখভাল করা মহিলাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। অথচ যে কোনও রকম শস্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত উপার্জন সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তাঁদের কোনও ভূমিকা থাকে না।

নেপালের পূর্ব দিকের পাহাড়ি অঞ্চলে ১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে সশস্ত্র সংগ্রামের সময় বস্তু সংখ্যক পুরুষের গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যাওয়ার (আউট মাইগ্রেশন) ফলে কৃষিক্ষেত্রে মহিলাদের। ভূমিকা এবং দায়িত্ব বৃদ্ধি পায়। এই প্রক্রিয়াটিতে মহিলারা বহু বছর ধরে চলে আসা পুরুষদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন — সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা তাঁরা নিজের হাতে তুলে নেন, বাজার এবং সরকারি পদ্ধতির । সঙ্গে তাঁরা প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত হন এবং পারস্পরিক আলাপ আলােচনার জন্য সামাজিক স্বীকৃতির দাবিও তােলেন।[২৭] এর ফলে সংকট পরবর্তী সময়ে যে রাজনৈতিক প্রেক্ষিত তৈরি হয় তার জেরে বেশ কিছু মূল্য শৃংখলের শীর্ষে মহিলারা তাঁদের জায়গা করে নিতে সমর্থ হন। সংহতিকরণ এবং মহিলাদের জন্য সমবায় ব্যবস্থা চালু হওয়ার ফলে অর্থকরী শস্য চাষের ক্ষেত্রে মহিলাদের কাজের সুযােগ বেড়েছে বহু গুণ। ২০১৫ সালে করা একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, তৃণমূল স্তরে লিঙ্গ সংবেদনশীল এবং সর্বাত্মক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও নীতি বৃহত্তর ক্ষেত্রে লিঙ্গ ও সামাজিক বিধিবিধানকে চ্যালেঞ্জ করে এমন বদল আনতে পারে যাতে চিরাচরিত ভাবে পুরুষশাসিত, অধিক গুরুত্বপূর্ণ কৃষিজ উৎপাদন ব্যবস্থায় মহিলাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযােগ তৈরি হয়।[২৮] হিমালয় এবং তরাই অঞ্চলের মাঝে অবস্থিত নেপালের মিডল হিল অঞ্চলে ফেমিনাইজেশনের প্রভাবে এক ধরনের বিভাজন সুস্পষ্ট। এই অঞ্চলটিতে দরিদ্র এবং তথাকথিত নিচু জাতির পরিবারের মহিলারা শস্য উৎপাদনে কোনও বৃদ্ধি না হওয়া সত্ত্বেও চাষের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কাজের চাপের সম্মুখীন। হয়েছেন।[২৯] উঁচু জাতের মহিলাদের তুলনায় এই সব মহিলার পক্ষে বদলি শ্রমিক জোগাড় করা অনেক বেশি কষ্টসাধ্য। এবং বদলি হিসেবে কাজ করার মতাে শ্রমিক পাওয়া গেলে সে ক্ষেত্রে মাথা পিছু একজন পুরুষ শ্রমিকের জন্য দু’জন মহিলার সমতুল্য শ্রম আশা করা হয়। আগে ‘গুরুং’দের মতাে সামাজিক সুসংগঠিত গােষ্ঠীগুলি মজুরির পরিমাণ ঠিক করে দিতে সক্ষম ছিল, যে ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারী উভয়েই সমহারে মজুরি পেতেন। গুরুং মহিলাদের কাজের জন্য পুরুষ শ্রমিক ভাড়া করা অপেক্ষাকৃত সহজ। জাতি-শ্রেণি এবং এথনিসিটি বা বিশেষ বৈশিষ্ট্যজনিত ফারাক এই পরিবারগুলির উপার্জিত অর্থের পরিমাণের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে। সমাজের উঁচু তলার মানুষদের প্রাপ্ত অর্থ বেশি। হওয়ার ফলে এই সব পরিবারের মহিলারা চাষবাস ও অন্যান্য কাজের জন্য শ্রমিক খোঁজার ক্ষেত্রে অনেক বেশি স্বাধীনতা উপভােগ করেন।

ভারতের উত্তরপ্রদেশের পূর্বাংশের গ্রামগুলিতেও ধান চাষের ক্ষেত্রে মজুর নিয়ােগ সংক্রান্ত সমস্যা লক্ষ করা গেছে যেখানে শহর থেকে পুরুষদের পাঠানাে অর্থের পরিমাণ কম হওয়ায় অর্থাভাবে মহিলারা দিনমজুরদের কাজে নিয়ােগ করতে পারেননি। ফলে তাঁদের নিজেদেরই অতিরিক্ত কাজগুলি করতে হয়েছে।[৩০] পরিবারের পুরুষদের আউট মাইগ্রেশন বা স্থানান্তরণের সময়ে গ্রামীণ পরিবারটি একক না একান্নবর্তী, তার উপরে একজন নারীর ভূমিকা অনেকাংশে নির্ভর করে।[৩১] বিশেষত পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারগুলিতে ঘর-গেরস্থালি এবং বাইরে দু’জায়গাতেই কাজের ক্রমবর্ধমান চাপের জন্য এই সব পরিবারের মহিলারা পুরােদমে কৃষির কাজ ছেড়ে স্বল্প পরিসরে সেচ, জমিতে লাঙ্গল দেওয়া ইত্যাদি ছাড়া চাষবাস বা লেস ইনটেনসিভ ফার্মিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন।[৩২] এই বাস্তব। পরিস্থিতির চিত্রটি স্পষ্ট হয় যখন দেখা যায় যে, মধ্যপ্রদেশের গ্রামগুলিতে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ নিয়ে গ্রাম ছাড়ার ফলে ক্রমবর্ধমান কাজের চাপ সামলাতে না পেরে । মহিলাদের নিয়মমাফিক চাষবাসের কাজ থেকে সরে আসতে হয়।[৩৩] নেপালের মিডল হিলস বা পাহাড়ি অঞ্চলেও এমনটাই লক্ষ করা গেছে।[৩৪]

২০২১ সালে ভারতের জনগণনার সময়ে মানুষের অর্থনৈতিক কার্যক্ষেত্র সংক্রান্ত পরিসংখ্যানে এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, কৃষিকাজে নিযুক্ত পুরুষ ও নারীর সংখ্যা নিম্নমুখী, বিশেষত পুরুষ কর্মীদের সংখ্যা ব্যাপক ভাবে হ্রাস পাওয়ায় কৃষিক্ষেত্রে মহিলাদের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেড়েছে অর্থাৎ ফেমিনাইজেশন ঘটেছে। পুরুষ কর্মীদের স্থানান্তরণের ফলে আরও বেশি সংখ্যক মহিলা মুখ্য কৃষকের ভূমিকা পালন করছেন এবং পাশাপাশি বেড়েছে কৃষিক্ষেত্রে মহিলা শ্রমিকের সংখ্যাও। যদিও এই সব ঘটনা পরম্পরা কৃষিক্ষেত্র সংক্রান্ত সম্পত্তির মালিকানা অথবা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মহিলাদের অধিকারকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। বেঁচে থাকার জন্য কোনও বিকল্প কার্যকর পথের সন্ধান না থাকায় এই মহিলারা পরিবারের পুরুষ সদস্যদের ছেড়ে যাওয়া উপার্জনের পথ অবলম্বন করতে বাধ্য হন। এই প্রতিবেদনের লেখকরা ফেমিনাইজেশনের পদ্ধতিটিকে বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণ’ বা ‘কৃষি। সঙ্কটে মহিলাদের অংশগ্রহণ’ বলে চিহ্নিত করেছেন। তাঁরা এ-ও মনে করেন যে, ভারতীয় কৃষিক্ষেত্রে। মহিলা শ্রমিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি এক প্রকারে ‘ফেমিনাইজেশন অব পভার্টি’ বা ‘দারিদ্রের বিরুদ্ধে যুঝতে মহিলাদের একত্রীকরণ’[৩৫] কৃষিকাজে মহিলাদের অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা মাথায় রাখলে এ কথা বলা যায় যে, এগ্রিকালচারাল ভ্যালু চেন বা কৃষিকাজের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিতে লিঙ্গ বৈষম্যের ফলে মহিলাদের অংশগ্রহণে বাধা পড়লে তার কুপ্রভাব পড়বে সমগ্র অঞ্চলটির খাদ্য এবং পুষ্টিগত সুরক্ষার উপরে। ফলে কৃষিক্ষেত্রের মূলধারা থেকে লিঙ্গ বৈষম্যের দূরীকরণে যথাযথ আইন বা নীতি এবং কর্মসূচি নির্ধারণের প্রয়ােজনীয়তা আবশ্যিক হয়ে উঠেছে। এবং এটি ঠিক মতাে করতে গেলে কৃষিক্ষেত্রে মহিলাদের ভূমিকা সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান থাকা অত্যন্ত প্রয়ােজনীয়। সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াতেই মহিলাদের সার্বিক অবনমনের ছবিটি কৃষিক্ষেত্রেও সুস্পষ্ট এবং স্বাভাবিক ভাবেই এর প্রভাব তাঁদের জীবিকার উপরেও পড়েছে। দক্ষিণ এশিয়াব্যাপী সমস্ত দেশেই মহিলারা লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার এবং উৎপাদনশীল জমি ও অন্যান্য মূলধনের উপরে তাঁদের ন্যায্য অধিকার থেকে। বঞ্চিত। ফলে অর্থনৈতিক পরিসরে তাঁদের অংশগ্রহণ সীমিত হয়ে পড়ে। এ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ায় খুব সহজেই চোখে পড়ার মতাে কৃষিক্ষেত্রে ফেমিনাইজেশন বা মহিলাদের সংযুক্তিকরণের প্রকৃতি এবং পদ্ধতি অঞ্চলটিতে নারী-পুরুষের ভূমিকা এবং কৃষির সঙ্গে তাঁদের পারস্পরিক সম্পর্কের পুনর্বিন্যাসে গভীর প্রভাব ফেলেছে। কৃষিক্ষেত্রে মহিলাদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য কৌশল নির্ধারণে এই বিষয়গুলি অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। দেখা গেছে যে, জেনডারড ইল্ড গ্যাপ বা মহিলা এবং পুরুষ দ্বারা উৎপাদিত শস্যের পরিমাণের ফারাক ২০%-৩০%।[৩৬] এর প্রধান কারণ, মহিলা এবং পুরুষদের সম্পদ ব্যবহারের পার্থক্য। তথ্য থেকে এ কথা প্রমাণিত যে, শস্য উৎপাদনে এই ফারাক অনেকটাই কমিয়ে আনা যায় যদি মহিলারা পুরুষদের সমপরিমাণ সম্পদ ব্যবহার করার সুযােগ পান। সম্পদ পাওয়ার সুযােগ ও তার ব্যবহারে লিঙ্গভিত্তিক। অসমতা দূর করতে পারলে শুধু মাত্র কৃষিজাত উৎপাদনই বাড়বে না, কৃষিক্ষেত্রে মহিলাদের কাজের গুণমানও বাড়বে। কৃষিক্ষেত্রে জমির মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত লিঙ্গ বৈষম্য মহিলাদের অবস্থার উন্নতি এবং কৃষিক্ষেত্রে তাঁদের সদর্থক যােগদানের পথে অন্যতম প্রধান অন্তরায়।[৩৭] কৃষিক্ষেত্রে কাঁচামাল, প্রযুক্তি এবং সংশ্লিষ্ট পরিষেবা পাওয়ার সুবিধে কৃষিজমির মালিকানা সংক্রান্ত অধিকারের ওপরে নির্ভরশীল। অধিকাংশ কৃষি উন্নয়ন কর্মসূচি সরাসরি সম্পত্তির মালিকানার সঙ্গে যুক্ত, কারণ সংজ্ঞা অনুযায়ী প্রত্যেক কৃষকেরই নিজস্ব কিছু পরিমাণ জমি থাকার কথা। যে হেতু। মহিলারা জমির মালিকানা থেকে বঞ্চিত তাই তাঁদের সরকারি ভাবে কৃষক রূপে গণ্য করা হয় না এবং চাষবাসের প্রসার সংক্রান্ত কাজে এবং ঋণের ক্ষেত্রে তাঁদের অবহেলা করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার গ্রামাঞ্চলে কৃষিজাত উপার্জন এবং অন্য বস্তুগত সুবিধেগুলি পরিবারের সকল সদস্যের মধ্যে বণ্টনের ব্যাপারটি তীব্র লিঙ্গ এবং সামাজিক বৈষম্যের দ্বারা প্রভাবিত। ফলে কৃষিজমির উপরে পুরুষদের স্বভাবসিদ্ধ একক অধিকারের ব্যাপারটি পরিবারের সব সদস্যের অবস্থার উন্নতিতে সাহায্য করে না। দক্ষিণ এশিয়ার গ্রামীণ অর্থনীতির প্রেক্ষিতে কৃষিজমি শুধু মাত্র শস্য উৎপাদনের আকর নয়, সেটি। এক প্রকার সামাজিক পরিচয় এবং সুরক্ষার ভিত্তিও। জমির মালিকানা না থাকার দরুন কৃষক হিসেবে চিহ্নিত হওয়া সত্ত্বেও মহিলারা জমি ও শস্য সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত স্বাধীন ভাবে নিতে পারেন না। ফলে কৃষিক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্যের দূরীকরণ সম্ভব হয় না।[৩৮] [৩৯] [৪০] এশিয়ায় মহিলারা পুরুষদের তুলনায় কম পরিমাণ জমির মালিকানা ভােগ করেন এবং দক্ষিণ এশিয়ায় জমির মালিকানার প্রেক্ষিতে লিঙ্গ বৈষম্যের ফারাকটি সর্বোচ্চ। বড় বড় জমিও পুরুষদেরই অধিকারে।[৪১] [৪২] পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে পুরুষদের আওতায় থাকা জমি, ভূ-সম্পত্তির পরিমাণ মহিলাদের অধিকৃত জমির দ্বিগুণ। মহিলাদের মালিকানাভুক্ত জমির পরিমাণ পাকিস্তানে ২%, শ্রীলঙ্কায় ৯.৭%, বাংলাদেশে ১০% এবং ভারতে ১৩.৫%। এমনকি মহিলাদের মধ্যেও যাঁরা জমির মালিক, সব সময় জমির নিয়ন্ত্রণ তাঁদের হাতে থাকে না।[৪৩] ভুটান এশিয়ার একমাত্র দেশ যেখানে পুরুষদের তুলনায় মহিলা দ্বারা অধিকৃত জমির পরিমাণ অধিক: ভুটানে মােট কৃষিজমির ৭০% মহিলাদের মালিকানাধীন।[৪৪] এটি সম্ভব হয়েছে মাতৃকুলভিত্তিক জমি হস্তান্তরের সংস্কৃতি এবং কঠোর আইনি ঘেরাটোপের জন্য।[৪৫] দক্ষিণ এশিয়ায় মহিলাদের জমির স্বত্ব না থাকার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা একাধিক প্রতিবন্ধকতার কথা উল্লেখ করেছেন, যেগুলির মধ্যে মুখ্য হল পিতৃতান্ত্রিক সামাজিক নিয়ম। বহু দক্ষিণ এশীয় দেশেই পরিবারের সদস্যরা পুত্রসন্তান আশা করেন যাতে সে পরবর্তী কালে বয়স্ক মা-বাবার দেখাশােনা করতে। পারে। এবং এই মানসিকতাই দক্ষিণ এশিয়ায় মহিলাদের জমির মালিকানা না পাওয়ার সমস্যার মূল ভিত্তি।[৪৬] [৪৭] বংশ পরম্পরায় অধিকার হস্তান্তরের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানগুলিতেও মহিলাদের । পুরুষদের তুলনায় খাটো করে দেখা হয়। শরিয়তি আইন অনুযায়ী, মুসলিম মহিলারা তাঁদের পরিবারের পুরুষদের তুলনায় কেবল মাত্র অর্ধেক পরিমাণ সম্পত্তিরই অধিকারী হতে পারেন। তানাজকুল’ নামক এক ধর্মীয় রীতির মাধ্যমে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে পুরুষদের একচ্ছত্র আধিপত্যের দিকটি প্রতিষ্ঠিত করার ফলে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে বহু সংখ্যক মহিলা তাঁদের প্রাপ্য সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এবং তাঁরা তাঁদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্য সম্পত্তির ভাগ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। বাংলাদেশে মহিলারা উত্তরাধিকার সূত্রে শুধু মাত্র ৪৩% সম্পত্তিই পেতে পারেন।[৪৮] ভারতে হিন্দু সাকসেশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০০৫ অনুসারে জমি এবং সম্পত্তির উপরে মহিলা ও পুরুষের সমানাধিকারের বিধান দেওয়া থাকলেও আইনটি কঠোর ভাবে বলবৎ করা হয়নি।[৪৯] শিখ, জৈন এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষদেরও উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি প্রাপ্তির আইনগুলি হিন্দু সাকসেশন অ্যাক্ট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। পার্সি এবং খ্রিস্টানদের উত্তরাধিকার সংক্রান্ত দিকটি ভারতীয় উত্তরাধিকার আইন, ১৯২৫-এর আওতাভুক্ত। এই আইন অনুসারে ছেলে এবং মেয়ে সমান ভাবে সম্পত্তির ভাগ পাবে। অন্য দিকে মুসলিম মহিলারা শরিয়তি আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকেন।[৫০] খাস ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পলিসি অনুযায়ী বাংলাদেশে স্বামী এবং স্ত্রীর নামে যৌথ ভাবে জমির মালিকানা হস্তান্তরের বিষয়টির প্রচার চলছে। নেপাল সরকার জমির যৌথ মালিকানার। শংসাপত্র জারি করে যাতে একজন পুরুষের একক ভাবে অধিকৃত জমি তার স্ত্রীও যৌথ ভাবে ভােগ করতে পারেন। ভারতের জমির যৌথ মালিকানার পরিমাণ ২%, নেপালে ০.৪%, পাকিস্তানে ১.৮% এবং বাংলাদেশে ২.১৯%।[৫১] ভারতে উত্তরাধিকার সূত্রে মহিলাদের জমি এবং সম্পত্তির আইনি মালিকানার নিয়মটি সংবিধানে স্পষ্ট ভাবে উল্লিখিত আছে। নবম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৯৭-২০০২) সম্পত্তির মালিকানা সংক্রান্ত ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, মহিলাদের জমির মালিকানা পাওয়ার পক্ষে সওয়াল তােলা এবং জমি সংক্রান্ত আইনে লিঙ্গ নিরপেক্ষতার নীতি প্রণয়ন করার মতাে বিষয়গুলির উপরে জোর দেওয়া হয়।

এই সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, জমি এবং উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইনে মজ্জাগত পক্ষপাতিত্বের চিহ্ন দেশের প্রায় সব রাজ্যেই বর্তমান।[৫২] জমির বিষয়টি রাজ্যের আওতায় পড়ে এবং বিভিন্ন রাজ্যের ভিন্ন ভিন্ন জমি আইন মহিলাদের সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করার চেষ্টা করে। অথচ সংবিধান অনুযায়ী জমির উত্তরাধিকার ও জমির মালিকানার ক্ষেত্রে মহিলাদের অধিকার সব সময়েই পুরুষদের। সমান।[৫৩] রাজ্যের উদ্যোগে ভূমিসংস্কারের কোনও ক্ষেত্রেই মহিলাদের টার্গেট বেনিফিশিয়ারি হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। এ সবই আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে আইনি এবং সামাজিক স্বীকৃতির ফারাক ও নীতি প্রণয়ন এবং নীতি বাস্তবায়নের তফাত দেখায়।

কৃষিনীতিতে লিঙ্গ সমতা স্থাপন কৃষিক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে লিঙ্গ সংবেদী নীতি প্রণয়ন এবং সেই নীতির বাস্তবায়ন প্রয়ােজন। দক্ষিণ এশিয়ায় অধিকাংশ নীতিই নারীদের প্রতি অসংবেদনশীল এবং সেগুলি সামাজিক পরম্পরা এবং রীতিনীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত মহিলা ও পুরুষদের অসম ক্ষমতায়নের দিকটিকে এড়িয়ে যায়।

জমির মালিকানার ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে সবচেয়ে আগে ম্যাক্রো, মেসাে এবং মাইক্রো অথবা তৃণমূল, মধ্য এবং উচ্চ স্তরে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণের স্তরে পরিবর্তন। আনার জন্য সর্বপ্রথম জমি সংক্রান্ত আইন এবং সংশ্লিষ্ট উত্তরাধিকার, বিবাহ এবং সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনগুলির দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে যাতে ফাঁকফোকর ভরাট করে সেগুলির বাস্তবায়নে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা যায়। মধ্য স্তরে আমলাদের লিঙ্গ সংবেদনশীল করে তােলা এবং লিঙ্গ বৈষম্যের। কুপ্রভাব সম্পর্কে অবগত করা, লিঙ্গভিত্তিক নির্দেশিকা তৈরি করা এবং সেগুলি বাস্তবায়নের পদ্ধতি ধার্য করা, জমির যৌথ মালিকানার বিষয়টি আমলাতান্ত্রিক পরিকাঠামাের অন্তর্গত করা এবং জমির উপর মহিলাদের মালিকানা সুনিশ্চিতকরণের মতাে বিষয়গুলি লিঙ্গ বৈষম্য রুখতে কার্যকর হতে। পারে। তৃণমূল স্তরে মহিলাদের আইনি সুবিধে সম্পর্কে অবগত করা, তাঁদের শিক্ষার বন্দোবস্ত করা এবং কৃষিক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত সব মানুষকে মহিলাদের জমির মালিকানা দেওয়ার ব্যাপারে আরও সংবেদনশীল করে তােলা লিঙ্গভিত্তিক এবং সামাজিক সংরক্ষণশীলতার আবহ পরিবর্তনে সাহায্য। করবে।

সরকারি ভাবে ‘কৃষক’-এর সংজ্ঞা থেকে জমির মালিকানা থাকার দিকটি অপসারণ করলে মহিলা এবং ভাগচাষীদের পক্ষে উৎপাদনশীল সম্পদের নাগাল পাওয়া সম্ভব হবে।[৫৪] ভারতে ফার্ম। মেকানাইজেশন বা খামারের যন্ত্রায়ণের নীতিগুলির পরিবর্তন- যেমন মহিলা কৃষকদের চাষবাসের যন্ত্রপাতি কেনার জন্য অতিরিক্ত ভর্তুকির ব্যবস্থা চালু করা- তৃণমূল স্তরে মহিলাদের জমির মালিকানা সংক্রান্ত সামাজিক নিয়ম পরিবর্তনে সফল হয়েছে। অনেক পুরুষই তাঁদের পরিবারের মহিলাদের । নামে স্বল্প পরিমাণ জমি সরকারি ভাবে নিবন্ধিত করে রাখেন এই ভর্তুকি পাওয়ার লােভে। যদিও এর পরিমাণ নগণ্য, তবুও এর ফলে ভারতের একাধিক রাজ্যে মহিলাদের নামে জমির মালিকানা হস্তান্তরের প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছে। সর্বোপরি, কাস্টম হায়ারিং সেন্টার’বা মহিলা সমবায়গুলি দ্বারা পরিচালিত খামারের যন্ত্রপাতির পরিষেবা কেন্দ্রগুলির প্রচারের ফলে মহিলারা আরও বেশি করে । আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি এবং সহায়ক সরঞ্জাম ব্যবহার করার সুযােগ পাচেছন। আই সি টি টুলস বা । ইনফরমেশন কমিউনিকেশন টেকনােলজি টুলসের ব্যবহার এবং ফার্মার ফিল্ড স্কুল বা গােষ্ঠীভিত্তিক কৃষিশিক্ষার মাধ্যমে মহিলাদের কাছে সহায়তা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজটি ত্বরান্বিত করা যেতে পারে।

কৃষিক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক মূল্য শৃংখলের ব্যবস্থা চালু করা সম্পূর্ণ কৃষি পদ্ধতিটিতে মহিলাদের অংশগ্রহণের প্রক্রিয়াটিকে উন্নত করে তুলতে পারে। সম্পূর্ণ মূল্য শৃংখলটি জুড়ে লিঙ্গ সাম্য সংক্রান্ত বিষয়গুলির অনুভূমিক একীকরণের লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপগুলি মহিলাদের ভূমিকা এবং মূল্য শৃংখলে তাঁদের অবস্থানকে আরও মজবুত করে তুলতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তি এবং অনুশীলনের সূচনা করার মাধ্যমে মহিলা কৃষকদের প্রযুক্তিগত শিক্ষা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির মতাে উল্লম্ব সংহতিকরণ কৃষির মূল্য শৃংখলটির শীর্ষ স্তরে মহিলা কৃষকদের অংশগ্রহণের গুণমান বাড়াতে পারে। এটিকে স্বীকৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি যেমন ইউ এস এ আই ডি, ডি এ এন আই ডি এ এবং এফ এ ও সহ (বি) আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ফোরাম যেমন সাউথ এশিয়ান অ্যাসােসিয়েশন ফর রিজিওনাল কোঅপারেশন (সার্ক) এবং ইউরােপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) একটি মূল উন্নয়ন কৌশল হিসেবে লিঙ্গভিত্তিক মূল্য শৃংখলকে গুরুত্ব দিয়েছে। যথাযথ সরকারি পরিকাঠামাে এবং মহিলা কৃষক সমবায়গুলির মহিলা কৃষকদের সব রকমের সাহায্য প্রদানের ক্ষমতা বৃহত্তর ক্ষেত্রে মহিলাদের প্রয়ােজনীয় কাঁচামাল, সহায়ক পরিষেবা এবং কৃষিঋণ। পাওয়ার প্রক্রিয়াগুলিকে সহজতর করে তুলেছে। সমবায়গুলির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ফলে মহিলাদের। কৃষিজাত দ্রব্যের বিপণন এবং প্রক্রিয়াকরণ, দরাদরি করার ক্ষমতা এবং সম্পূর্ণ মূল্য শৃংখলটি জুড়ে সক্রিয় অংশগ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। কৃষক উৎপাদক সংস্থা এবং মহিলা কিসান সশক্তিকরণ পরিযােজনা সংক্রান্ত ভারতের জাতীয় নীতি দেশের কৃষিক্ষেত্রে লিঙ্গ সংবেদনশীল মূল্য শৃংখল তৈরি করার পক্ষে আদর্শ বলা চলে। রাজ্যের সহায়তায় মহিলা সমবায়গুলি দ্বারা জমির ইজারা দেওয়ার। বন্দোবস্ত করা কৃষিক্ষেত্রের সঙ্গে ভূমিহীন মহিলা শ্রমিকদের মূল্য শৃংখলের অন্তর্ভুক্ত করতে সমর্থ হয়েছে — এমন রাজ্যেও যেখানে কৃষিজমির ইজারা দেওয়া আইনত নিষিদ্ধ। নারী ক্ষমতায়নের প্রেক্ষিতে মহিলাদের সমষ্টিকরণের কাজটি স্বনির্ভর গােষ্ঠীগুলি (এস এইচ জি) অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করতে পেরেছে। স্বনির্ভর গােষ্ঠীগুলির অন্তর্ভুক্ত মহিলারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে বেশি তৎপর, উচ্চ উপার্জনে সক্ষম এবং ক্ষমতায়নের মাপকাঠিতে সামগ্রিক ভাবে অধিক শক্তিশালী।[৫৫] কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা সমবায় এবং নাগরিক সমাজসেবী সংস্থাগুলির দ্বারা গৃহীত কর্মসূচিগুলিতে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণের প্রচেষ্টা কৃষিক্ষেত্রে সার্বিক ভাবে লিঙ্গ সংবেদনশীলতা বাড়াতে এবং এই কর্মসূচিগুলিকে সফল করে তুলতে সদর্থক ভূমিকা পালন করবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রকের অধীনে যত স্বত্বভােগী অভিমুখী (বেনিফিশিয়ারি ওরিয়েন্টেড) প্রকল্প। আছে, ভারত সরকারের নিয়ম অনুযায়ী তাতে অন্তত ৩০% মহিলা কৃষককে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এবং সরকারের এই খাতে বরাদ্দ মােট অর্থের অন্ততপক্ষে ৩০% মহিলা কৃষকদের জন্য ধার্য থাকবে।[৫৬]

কৃষিক্ষেত্র সংক্রান্ত ববিধ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লিঙ্গভিত্তিক পরিসংখ্যান সংগ্রহ করা এবং পর্যায়ক্রমিক ভাবে সেগুলির পর্যালােচনা মহিলা কৃষকদের ক্ষমতায়নের উপর এই সব কর্মসূচির প্রভাব সম্পর্কে সম্যক ধারণা দিতে পারে। যেমন উইমেনস এমপাওয়ারমেন্ট ইন এগ্রিকালচার । ইনডেক্স (ডব্লিউ ই এআই), যা ইন্ডিয়ান ফুড পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট (আই এফ পি আর আই) এবং অক্সফোর্ড পভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (ও পি এইচ আই) দ্বারা করা একটি সমীক্ষাভিত্তিক সূচকব্যবস্থা — এর ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ এবং সংস্থাগুলি কৃষিক্ষেত্রে লিঙ্গ সাম্য এবং মহিলাদের ক্ষমতায়নের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে।[৫৭]

সর্বোপরি, কাজের সময় সংক্রান্ত ব্যাপারে মহিলাদের নানা সমস্যার মুখােমুখি হওয়া, পুরুষ কর্মীদের গ্রাম থেকে শহরে কাজে চলে যাওয়ার ফলে নারীদের পরিবারে পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই ভূমিকা। পালন করা এবং অন্য সদস্যদের দেখাশােনার কাজ করা ইত্যাদি বিষয়গুলির উপর নজর দিলে। কৃষিক্ষেত্রে মহিলাদের প্রতি সংবেদনশীল এক উন্নত পরিকাঠামাে গড়ে তােলার কাজ অনেকটাই এগােতে পারে। এর পাশাপাশি মহিলা কৃষকদের সার্বিক উন্নতির জন্য পরিস্রুত পানীয় জল এবং রান্নার জন্য জ্বালানির জোগান তাঁদের দৈনন্দিন বাড়ির কাজের বােঝা কমাতে পারে। এবং কৃষিকাজ ও অন্যান্য অর্থ উপার্জনক্ষম কাজ-সহ তাঁদের প্রয়ােজনীয় বিশ্রাম এবং অবসরের জন্যও সময় বের হতে পারে।

উপসংহার

পরিবারের মধ্যে এবং সমাজে মহিলাদের অবস্থান মজবুত করা এবং তাঁদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা দক্ষিণ এশিয়ায় ক্ষুধা এবং খাদ্য সুরক্ষার অভাবের সমস্যাগুলি অতিক্রম করার চাবিকাঠি। একই রকম ভাবে, কৃষি ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ এবং মহিলাদের অংশগ্রহণের পথ আরও সুগম করে তােলা দক্ষিণ। এশিয়ায় ক্ষুধা, খাদ্য সুরক্ষার অভাব এবং অপুষ্টিজনিত সংকটগুলির নিবারণে সম্ভাব্য পথ হতে পারে। কৃষির উন্নতিতে পুরুষ ও মহিলাদের লিঙ্গ সমতা অর্জন করার জন্য প্রয়ােজন কৃষিনীতি ও পরিকল্পনার ভাবনা, বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়নের স্তরে মহিলাদের মতামত নেওয়া এবং তাঁদের সমস্যাগুলিকে প্রাধান্য দেওয়া। সম্পদ ব্যবহারের উন্নততর সুযােগ, জমি থেকে উচ্ছেদ প্রতিরােধ এবং কৃষিক্ষেত্রে মহিলাদের ক্ষমতায়নের কাজকে সহজতর করে তুলতে লিঙ্গ সংবেদী কৌশল এবং নীতি প্রণয়ন শিশু এবং মহিলাদের খাদ্য ও পুষ্টিজনিত সুরক্ষা সংক্রান্ত উদবেগ দূর করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। একই সঙ্গে এই সব প্রচেষ্টা দারিদ্র্য দূরীকরণেও কার্যকর হবে।


এম. মঞজুলা কর্নাটকের বেঙ্গালুরু শহরে আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ডেভেলপমেন্টের ফ্যাকাল্টি।


পাদটীকা

এ) মলদ্বীপের মহিলারা মূলত মৎস্যব্যবসার সঙ্গে যুক্ত।

বি) ইউ এস এ আই ডি — ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট; ডি এ এন আই ডি এ- ড্যানিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি; এফ এ ও- ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন।


তথ্যসূত্র

[১] বিশ্ব ব্যাঙ্ক, ‘সাউথ এশিয়া ভ্যাকসিনেটস’, সাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস (মার্চ), ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক, ওয়াশিংটন, ডি সি, ২০২১।

[২] বিশ্ব ব্যাঙ্ক, ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস‘, ওয়াশিংটন, ডি সি: ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক ২০২০, লাইসেন্স: সি সি বাই ৩.০ আই জি ও।

[৩] গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স: ওয়ান ডেকেড টু জিরাে হাঙ্গার: লিঙ্কিং হেলথ অ্যান্ড সাসটেনেবল ফুড সিস্টেমস।

[৪] “মেটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড ডায়েটস অ্যাট দ্য হার্ট অফ ইমপ্রুভিং নিউট্রিশন’।

[৫] এল সি স্মিথ এবং এল হাদাদ, ‘রিডিউসিং চাইল্ড আন্ডারনিউট্রিশন: পাস্ট ড্রাইভারস অ্যান্ড প্রায়ােরিটিস ফর দ্য পােস্ট-এম ডি জি এরা’, ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট, ৬৮ (২০১৫): ১৮০-২০৪।

[৬] “মেটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড ডায়েটস অ্যাট দ্য হার্ট অফ ইমরুভিং নিউট্রিশন।

[৭] এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক অ্যান্ড ইউ এন-উইমেন, ‘জেন্ডার ইকুয়ালিটি অ্যান্ড দ্য সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গােলস ইন এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক: বেসলাইন অ্যান্ড পাথওয়েজ ফর ট্রান্সফর্মেটিভ চেঞ্জ বাই ২০৩০’, ব্যাঙ্কক: এ ডি বি অ্যান্ড ইউ এন উইমেন, ২০১৮।

[৮] এফ নাজিব, মাতিয়াস মাের্যালস অ্যান্ড গ্ল্যাডিস লােপেজ-আচিভেদো, ‘অ্যানালাইজিং ফিমেল এমপ্লয়মেন্ট ট্রেন্ডস ইন সাউথ এশিয়া’, ডিসকাশন পেপার সিরিজ, বন: আই জেড এ ইনস্টিটিউট অব লেবার ইকোনমিকস (২০২০)।

[৯] ওয়াই নিমি, ‘জেন্ডার ইকুয়ালিটি অ্যান্ড ইনক্লুসিভ গ্রোথ ইন ডেভেলপিং এশিয়া ইন ইনিকুয়ালিটি অ্যান্ড ইনকলুসিভ গ্রোথ: মেজারমেন্ট, পলিসি ইস্যু, অ্যান্ড কান্ট্রি স্টাডিজ, এ ডি বি একোনমিকস। ওয়ার্কিং পেপার সিরিজ নম্বর ১৮৬, ম্যানিলা: এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (২০০৯)।

[১০] “জেন্ডার ইকুয়ালিটি অ্যান্ড দ্য সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গােলস ইন এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক: বেসলাইন অ্যান্ড পাথওয়েজ ফর ট্রান্সফর্মেটিভ চেঞ্জ বাই ২০৩০’।

[১১] ওয়াই নিমি, ‘জেন্ডার ইকুয়ালিটি অ্যান্ড ইনক্লুসিভ গ্রোথ ইন ডেভেলপিং এশিয়া ইন ইনিকুয়ালিটি অ্যান্ড ইনক্লুসিভ গ্রোথ: মেজারমেন্ট, পলিসি ইস্যুস, অ্যান্ড কান্ট্রি স্টাডিজ।

[১২] মরসি এইচ, অ্যাকসেস টু ফিন্যান্স- মাইন্ড জেন্ডার গ্যাপ, কোয়ার্টারলি রিভিউ অফ ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্স (২০২০)।

[১৩] ইউনিসেফ (এন, ডি), উইমেনস নিউট্রিশন

[১৪] “গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স: ওয়ান ডেকেড টু জিরাে হাঙ্গার: লিঙ্কিং হেলথ অ্যান্ড সাসটেনেবল ফুড সিস্টেমস’।

[১৫] এন রাও, ‘দি অ্যাচিভমেন্ট অফ ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন সিকিওরিটি ইন সাউথ এশিয়া ইন ডিপলি জেন্ডারড’, নেচার ফুড ওয়ান (২০২০): ২০৬-২০৯।

[১৬] এস মেহরােত্রা, ‘চাইন্ড ম্যালনিউট্রিশন অ্যান্ড জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন ইন সাউথ এশিয়া’, ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যান উইকলি ৪১, নম্বর ১০ (২০০৬): ৯১২-৯১৮।

[১৭] সেন্ট্রাল ব্যুরাে অব স্ট্যাটিসটিক্স (সি বি এস), ন্যাশনাল পপুলেশন অ্যান্ড হাউজিং সেনসাস ২০১১, ন্যাশনাল রিপাের্ট, ভলিউম ০১, কাঠমান্ডু (২০১২)।

[১৮] সেনসাস ডেটা অন মাইগ্রেশন ২০১১, অফিস অফ দ্য রেজিস্ট্রার জেনারেল অ্যান্ড সেনসাস কমিশনার, মিনিস্ট্রি অব হােম অ্যাফেয়ার্স, ভারত সরকার (২০১১)।

[১৯] ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে অর্গানাইজেশন (এন এস এস ও), ‘মাইগ্রেশন ইন ইন্ডিয়া ২০০৭-২০০৮, এন এস এস ৬৪তম রাউন্ড (জুলাই ২০০৭-জুন ২০০৮), এন এস এস রিপাের্ট নম্বর ৫৩৩ (৬৪/১০.২/২), ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভে অফিস মিনিস্ট্রি অব স্ট্যাটিসটিক্স অ্যান্ড প্রােগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন, ভারত সরকার (২০১০)।

[২০] ইলা পট্টনায়ক, কে লাহিড়ি-দত্ত, এস লকি এবং বি প্রিচার্ড, ‘দ্য ফেমিনাইজেশন অফ এগ্রিকালচার অর দ্য ফেমিনাইজেশন অফ অ্যাএ্যারিয়ান ডিসট্রেস? ট্র্যাকিং দ্য ট্র্যাজেকটরি অফ উইমেন ইন এগ্রিকালচার ইন ইন্ডিয়া’, জার্নাল অফ দ্য এশিয়া প্যাসিফিক ইকোনমি ২৩, নম্বর ১ (২০১৮): ১৩৮১৫৫।

[২১] কে লাহিড়ি-দত্ত, ‘এক্সপিরিয়েন্সিং, কোপিং উইথ চেঞ্জ: উইমেন-হেডেড ফার্মিং হাউসহােল্ডস ইন দি ইস্টার্ন গ্যাঞ্জেটিক প্লেনস’, ক্যানবেরা: অস্ট্রেলিয়ান কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিসার্চ (২০১৪)।

[২২] টি কে অধিকারী, ‘ডু উইমেন ওয়ার্ক অ্যান্ড মেন ডিসাইড? জেন্ডার ডাইমেনস অব ক্যাশ ক্রপিং ইন দ্য মিডল হিলস’, বার্গন: ডিপার্টমেন্ট অব জিয়ােগ্রাফি, ইউনিভার্সিটি অব নরওয়ে (২০১৩)।

[২৩] এস লাস্তারিয়া-কনহিল, ‘ফেমিনাইজেশন অফ এগ্রিকালচার: ট্রেন্ডস অ্যান্ড ড্রাইভিং ফোর্সেস’, ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপাের্ট ২০০৮ (২০০৬)।

[২৪] সি ডি ডিয়ার, ‘দ্য ফেমিনাইজেশন অফ এগ্রিকালচার? ইকোনমিক রিস্ট্রাকচারিং ইন রুরাল লাতিন আমেরিকা’, অকেশনাল পেপার নম্বর ওয়ান, জেনেভা: ইউনাইটেড নেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর সােধ্যাল ডেভেলপমেন্ট, (২০০৫)।

[২৫] বি আগরওয়াল, ‘জেন্ডার অ্যান্ড কম্যান্ড ওভার প্রপার্টি: আ ক্রিটিক্যাল গ্যাপ ইন ইকোনমিক অ্যানালিসিস অ্যান্ড পলিসি ইন সাউথ এশিয়া’, ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট ২২, নম্বর ১০ (১৯৯৪): ১৪৫৫১৪৭৮।

[২৬] এইচ রানা, এম বাসকোটা এবং এস আর শর্মা, ‘এক্সামাইনিং এজেন্সি ইন এগ্রিকালচার: দ্য ফেমিনাইজেশন ডিবেট ইন নেপাল‘, জার্নাল অফ ইন্টারন্যাশনাল উইমেনস স্টাডিজ ১৯, নম্বর ৩ (২০১৮): ৩২-৪৮।

[২৭] বি আর উপরেতি, ওয়াই ঘেল, এস শিবকোটি এবং এস আচার্য, ‘ফেমিনাইজেশন অফ এগ্রিকালচার ইন দি ইস্টার্ন হিলস অফ নেপাল: আ স্টাডি অফ উইমেন ইন কার্ডামম অ্যান্ড জিঞ্জার ফার্মিং’, সেজ ওপেন (২০১৮)।

[২৮] এম আচার্য, এস সিং, বি আচার্য, এম সিং, এম বসনিয়াত, বি বি কে বাহাদুর এবং ভি এস সত্যল, ‘প্রােগ্রেস অফ উইমেন ইন নেপাল (১৯৯৫-২০১৬) সাবস্ট্যান্টিভ ইকুয়ালিটি: নন-নেগােশিয়েবল’, কাঠমান্ডু: সহভাগী (২০১৫)।

[২৯] ভাবনা কে সি এবং ডিগবি রেস, ‘উইমেনস অ্যাপ্রােচ টু ফার্মিং ইন দ্য কনটেক্সট অব ফেমিনাইজেশন অফ এগ্রিকালচার: আ কেস স্টাডি ফ্রম দ্য মিডল হিলস অব নেপাল’, ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট পার্সপেক্টিভ ২০ (২০২০)।

[৩০] টি প্যারিস, এ সিং, জে লুইস এবং এম হােসেন, ‘লেবার আউটমাইগ্রেশন, লাইভলিহুড অব রাইস ফার্মিং হাউসহােল্ডস অ্যান্ড উইমেন লেফট বিহাইন্ড: আ কেস স্টাডি ইন ইস্টার্ন উত্তর প্রদেশ’, ইকোনমিক অ্যান্ড। পলিটিক্যাল উইকলি ৪০, নম্বর ২৫ (২০০৫): ২৫২২-২৫২৯।

[৩১] এস দেশাই এবং এম ব্যানার্জি, ‘নেগােশিয়াটেড আইডেন্টিটিজ: মেল মাইগ্রেশন অ্যান্ড লেফট-বিহাইড ওয়াইভস ইন ইন্ডিয়া‘, জার্নাম অব পপুলেশন রিসার্চ ২৫ (২০০৮): ৩৩৭-৩৫৫।

[৩২] জি ভাণ্ডারী এবং বি ভি সি রেড্ডি, ‘ইমপ্যাক্ট অফ আউট-মাইগ্রেশন অন এগ্রিকালচার অ্যান্ড উইমেন ওয়ার্কলােড: অ্যান ইকোনমিক অ্যানালিসিস অব হিলি রিজিয়নস অফ উত্তরাখণ্ড, ইন্ডিয়া’, ইন্ডিয়া জার্নাল অফ এগ্রিকালচারাল ইকোনমিক্স ৭০, নম্বর ৩ (২০১৫): ৩৯৫-৪০৪।

[৩৩] জয়দীপ হার্দিকর, ‘মাইগ্রেশন, এগ্রিকালচার অ্যান্ড উইমেন‘।

[৩৪] ভাবনা কে সি এবং ডিগবি রেস, ‘উইমেনস অ্যাপ্রােচ টু ফার্মিং ইন দ্য কনটেক্সট অব ফেমিনাইজেশন অফ এগ্রিকালচার’।

[৩৫] এম ই গিমেনেজ, ‘দ্য ফেমিনাইজেশন অব পভার্টি: মিথ অর রিয়্যালিটি? ইনসার্জেন্ট সােশিওলজিস্ট ১৪, নম্বর ৩: ৫-৩০।

[৩৬] ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন, ‘উইমেন ইন এগ্রিকালচার: ক্লোজিং দ্য জেন্ডার গ্যাপ ফর ডেভেলপমেন্ট’, দ্য স্টেট অব ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার ২০১০-১১, রােম: এফ এ ও (২০১১)।

[৩৭] বি আগরওয়াল, ‘ফুড সিকিওরিটি, প্রােডাকটিভিটি, অ্যান্ড জেন্ডার ইনিকুয়ালিটি’, ওয়ার্কিং পেপার নম্বর ৩২০, বেঙ্গালুরু: ইনস্টিটিউট অফ ইকোনমিক গ্রোথ (আই ই জি) (২০১২)।

[৩৮] পট্টনায়ক, ‘দ্য ফেমিনাইজেশন অফ এগ্রিকালচার অর দ্য ফেমিনাইজেশন অফ অ্যাগারারিয়ান। ডিসট্রস? ট্র্যাকিং দ্য ট্রাজেকটরি অফ উইমেন ইন এগ্রিকালচার ইন ইন্ডিয়া’।

[৩৯] এইচ জি ভ্যালেরা, তাকাশি ওয়াই, রঞ্জিতা পি, প্রকাশন সি ভি, ঈশিকা জি, ফোব আর এবং রােহিনী আর এম, ‘উইমেনস ল্যান্ড টাইটেল ওনারশিপ অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট: এভিডেন্স ফ্রম ইন্ডিয়া’ এ ডি বি । ইকোনমিকস ওয়ার্কিং পেপার সিরিজ নম্বর ৫৫৯, ম্যানিলা: এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (২০১৮)।

[৪০] ও সারিয়েভ, টি কে লুজ, এম জিলার এবং টি গুরুং, ‘উইমেন ইন হাউসহােল্ড ডিসিশন মেকিং আক্সন্ড ইমপ্লিকেশন ফর ডায়েটরি কোয়ালিটি ইন ভূটান‘, এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড ফুড ইকোনমিকস ৮ (২০২০)।

[৪১] এ এন জি ও সি এবং ল্যান্ড ওয়াচ এশিয়া, ‘উইমেনস ল্যান্ড রাইটস ইন এশিয়া‘, ইস্যু ব্রিফ (২০১১)।

[৪২] সেন্সাস ‘ডেটা অন মাইগ্রেশন ২০১১’।

[৪৩] আর জে মণি এবং টি সুরমাইয়া, ‘স্কোপিং স্টাডি অন উইমেন অ্যান্ড ল্যান্ড রাইটস ইন বাংলাদেশ‘, অ্যাসােসিয়েশন অফ ল্যান্ড রিওর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এ এল আর ডি) (২০১৩)।

[৪৪] এফ এ ও, ‘ফ্যাক্ট শিট ভুটান: উইমেন ইন এগ্রিকালচার, এনভায়রেনমেন্ট অ্যান্ড রুরাল প্রােডাকশন’ (২০০০) ৪৫) বিশ্ব ব্যাঙ্ক, ‘ভুটান জেন্ডার পলিসি নােট’ (২০১৩)।

[৪৫] World Bank “Bhutan Gender Policy Note.” (2013).

[৪৬] এন রাও, ‘উইমেনস অ্যাকসেস টু ল্যান্ড:অ্যান এশিয়ান পার্সপেক্টিভ’, এক্সপার্ট পেপার প্রিপেয়ার্ড ফর দি ইউ এন গরুপ মিটিং ‘এনেবেলিং রুরাল উইমেনস ইকোনমিক এমপাওয়ারমেন্ট: ইনস্টিটিউশনস, অপারচুনিটিস অ্যান্ড পার্টিসিপেশন’, আক্রা, ঘানা (২০১১)।

[৪৭] রুরাল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (আর ডি আই), ‘উইমেনস ইনহেরিটেন্স রাইটস টু ল্যান্ড অ্যান্ড প্রপার্টি ইন সাউথ এশিয়া: আ স্টাডি অফ আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, নেপাল, পাকিস্তান, অ্যান্ড শ্রীলঙ্কা’, রিপাের্ট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রােজেক্ট (২০০৯)।

[৪৮] আবুল বরকর এবং হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার (এইচ ডি আর সি), ‘অ্যাসেসিং ইনহেরিটেন্স লজ অ্যান্ড দেয়ার ইমপ্যাক্ট অন রুরাল উইমেন ইন বাংলাদেশ’, পেপার প্রেজেন্টেড ডিওরিং দ্য সেমিনার অন ডেপ্রাইভেশন অফ উইমেন অ্যান্ড দেয়ার রাইটস টু ল্যান্ড, ঢাকা, ৪ মে, ২০১৫।

[৪৯] পি চৌধুরী, ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং উইমেনস ল্যান্ড রাইটস: জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন ইন ওনারশিপ’, ল্যান্ড রিফর্মস ইন ইন্ডিয়া (প্রেম চৌধুরী) ১৩, নিউ দিল্লি: সাজ পাবলিকেশনস ইন্ডিয়া (২০১৭)।

[৫০] চৌধুরী, ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং উইমেনস ল্যান্ড রাইটস: জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন ইন ওনারশিপ’।

[৫১] এ এন জি ও দি এবং ল্যান্ড ওয়াচ এশিয়া, ‘উইমেনস ল্যান্ড রাইটস ইন এশিয়া: ইস্যু ব্রিফ’।

[৫২] চৌধুরী, ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং উইমেনস ল্যান্ড রাইটস: জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন ইন ওনারশিপ।

[৫৩] চৌধুরী, ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং উইমেনস ল্যান্ড রাইটস: জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন ইন ওনারশিপ’।

[৫৪] এম মঞজুলা এবং পি আই দেবী, ‘রিডিফাইনিং আ ফার্মার‘, ২০২০।

[৫৫] নেহা কুমার, কল্যাণী রঘুনাথন, আলেজান্দ্রা আরিয়েতা, আমির জিলানি, শিঞ্জিনি পাণ্ডে, ‘দ্য পাওয়ার অব দ্য কালেকটিভ এমপাওয়ারস উইমেন: এভিডেন্স ফ্রম সেলহ-হেল্প গ্রুপস ইন ইন্ডিয়া‘, ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট (২০২১), ভলিউম ১৪৬।

[৫৬] মিনিস্ট্রি অফ এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফার্মারস ওয়েলফেয়ার, ভারত সরকার (জি ও আই), ‘পার্টিসিপেশন। অফ উইমেন ফার্মারস ইন এগ্রিকালচার সেক্টর‘, প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরাে।

[৫৭] জারবেরাে, আলেজান্দ্রা এবং এমিলিয়ে পেরগে, ‘মেজারিং উইমেনস এমপাওয়ারমেন্ট ইন এগ্রিকালচার: আ স্ট্রিমলাইনড অ্যাপ্রােচ‘, আই এফ এ ডি রিসার্চ সিরিজ, ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট, রােম, ইতালি।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

M. Manjula

M. Manjula

M. Manjula is a member of the faculty of School of Development Azim Premji University Bangalore Karnataka. She teaches and does research at the interface ...

Read More +