Published on Feb 12, 2025 Updated 0 Hours ago
জিসিসি-ইরান সম্প্রীতি: ২০২৫ সালের চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ

২০২৫ সালের সূচনা, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে বেশ কয়েকটি বাধা দ্বারা চিহ্নিত হয়েছেগাজা যুদ্ধের প্রভাব সমগ্র অঞ্চল জুড়ে প্রতিধ্বনিত হয়েছে এবং লেবানন হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইরায়েলের সামরিক অভিযানের দরুন ব্যাপক ধ্বংসলীলার সম্মুখীন হয়েছে। সিরিয়াও আসাদ-পরবর্তী এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে, যা আশা ও অনিশ্চয়তায় ভরা। এই প্রেক্ষিতে ও ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় আসার দরুন পরিবর্তনশীল আন্তর্জাতিক পরিসর আঞ্চলিক আন্তর্জাতিক সমীকরণকে আরও বেশি প্রভাবিত করবে। গাজা, লেবানন সিরিয়ায় পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা বিশ্বব্যাপী মনোযোগের দাবি রাখলেও ২০২৫ সালে বৃহত্তর প্রক্রিয়ার কেন্দ্রীয় মনোযোগ থাকা উচিত সম্প্রীতিমূলক প্রচেষ্টার উপর। আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক অভ্যন্তরীণ সমীকরণ দ্বারা চালিত ২০২৫ সালটি আঞ্চলিক সম্প্রীতি প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার জন্য চ্যালেঞ্জ সুযোগ উভয়ই উপস্থাপন করবে।

জিসিসি-ইরান সম্প্রীতি পরীক্ষার মুখে পড়েছে

২০২১ সাল থেকে অঞ্চলটি গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) সঙ্কট আস্তে আস্তে দূর হওয়ার পাশাপাশি সম্প্রীতির প্রচেষ্টার প্রবণতা সাক্ষী থেকেছে। ২০২১ সালের গোড়ার দিকে সৌদি আরব কাতার সাড়ে তিন বছরের বয়কটের পর আল-উলা নামে নতুন চুক্তির মাধ্যমে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। ২০২২ সালে সংশ্লিষ্ট জিসিসি রাষ্ট্র তুর্কিয়ের তরফে উচ্চ-স্তরের সফরও হয়। যাই হোক, সম্প্রীতির নিরিখে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা হল জিসিসি-ইরান সম্পর্ক, বিশেষ করে ২০২৩ সালের চিনের মধ্যস্থতায় সৌদি-ইরান স্বাভাবিকীকরণ। কেউ কেউ আবার প্রচেষ্টার স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি এটিকে সৌদির তরফে নিছকই আরও বেশি সময় ক্রয় করার কৌশল বলে মনে করেছে। এই মনোভাব ঠিক হলেও সৌদি-ইরান সম্প্রীতি আরও বেশি সশক্ত হয়েছে বলেই মনে হয়, যা নানাবিধ আঞ্চলিক চাপানউতোর সত্ত্বেও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের স্থিতিস্থাপকতা থেকেই স্পষ্ট।

তাই সংক্ষেপে বললে, সৌদি-ইরান স্বাভাবিকীকরণ কেবল দুই দেশের সম্পর্কের কাঠামো পরিবর্তনের জন্য নয়, বরং সৌদি-ইরান সম্পর্কের প্রকৃতিকে মৌলিক ভাবে পরিবর্তন করার লক্ষ্যেই হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরিবর্তন বলতে পশ্চিমের তরফে চাপের মতো বাহ্যিক কারণ দ্বারা সম্পর্কের আকার পাওয়া থেকে অন্তর্নিহিত প্রেক্ষিতের কথা বলা হয়েছে।

২০২৫ সালটি অবশ্য এই কৌশলগত জিসিসি-ইরান সমঝোতার জন্য বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করবে। প্রথম চ্যালেঞ্জ হলেন স্বয়ং ট্রাম্প, যিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ২০১৮ সালের মে মাসে জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (জেসিপিওএ) থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। গাজা যুদ্ধ হামাসের প্রতি ইরানের সমর্থন দেশটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রায়েলের জন্য রাজনৈতিক ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে এবং তা স্বাভাবিক ভাবেই রানের বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছে। যাই হোক, ট্রাম্প প্রশাসন স্বীকার করে নেয় যে, ইরানের উপর এই ধরনের সর্বাধিক চাপ প্রচারাভিযানে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করবে নাকারণ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে এত সহজে দমানো সম্ভব নয়।

এই প্রসঙ্গে বলা যায়, নেতানিয়াহু ট্রাম্প উভয়ের অগ্নিগর্ভ বক্তৃতা ইরানের উদ্বেগকে বাড়িয়ে তুলবে এবং সৌদির শাসকগোষ্ঠীকেই ইরানের উদ্বেগের মোকাবিলা করতে হবে। কারণ সৌদি আরব কখনও ওয়াশিংটন ডিসি, তেল আভিভ তেহরানের মধ্যকার ত্রিপাক্ষিক তীব্র চাপানউতোরের মধ্যে জর্জরিত হতে চাইবে না। এই ত্রিপাক্ষিক উত্তেজনা শুধু ইরানের সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক নয়, ইরানের সঙ্গে জিসিসির সম্প্রীতির উপরও যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করবে।

এ কথা অনস্বীকার্য, যেহেতু ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৭ সালের তুলনায় অত্যন্ত আলাদা রকমের আঞ্চলিক বাস্তবতায় ক্ষমতায় এসেছেন এবং সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের পরিবর্তে ইরানের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্ভাব্য চুক্তিকে কেন্দ্র করে বাড়তে থাকা জনমতের প্রেক্ষিতে জিসিসি-ইরান সম্প্রীতিকে ট্রাম্পের নিরীক্ষণের সম্মুখীন হতে হবে। জিসিসি-ইরান সম্প্রীতি এই বাহ্যিক চাপ সহ্য করে নিতে পারলেও বিষয়টিকে আসল পরীক্ষার মুখে ফেলবে আঞ্চলিক সমীকরণ, বিশেষ করে হুতি বিদ্রোহীদের সম্মুখে যাদের এত দিন পর্যন্ত হওয়া অগ্রগতিকে ব্যাহত করার সম্ভাবনা রয়েছে।

হুতি: হুমকি সুযোগ

২০২২ সালে হওয়া সৌদি-হুতি যুদ্ধবিরতি বরাবরই ভঙ্গুর থেকেছে। সৌদি-ইরানের সম্প্রীতি যে সৌদি-হুতি আলোচনার দিকে চালিত করবে এমন আশা থাকা সত্ত্বেও, যুদ্ধবিরতিতে ফাটল দেখা দিয়েছে, যেমনটা ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সৌদি ঘাঁটিতে হুতি হামলার দ্বারা স্পষ্ট হয়েছে। ফলস্বরূপ, আব্দুল মালিক আল-হুতি সৌদি-বিরোধী বক্তব্যে ইন্ধন জোগাচ্ছেন, যা দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। গাজা যুদ্ধ শুধুমাত্র হুতির চরমপন্থাকেই সশক্ত করেনি, বরং একই সঙ্গে সৌদি নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে জিসিসি-ইরান সম্পর্কের জন্য হুতি গোষ্ঠীটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত করেছে। যদি হুতি বিদ্রোহীরা সৌদি অন্যান্য জিসিসি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের কার্যকলাপের মাত্রা বৃদ্ধি করে, তা হলে তারা সম্পর্কের উন্নতি ঘটানোর বিষয়ে তাদের প্রতিশ্রুতি পরিমাপ করতে ইরানের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবে। যদি তেহরানের প্রতিক্রিয়া তাদের আশানুরূপ না হয়, তা হলে তা উপসাগরীয় সম্পর্ককে ভেঙে দিতে পারে।

যাই হোক, জিসিসি রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে হুতিদেলড়াই এই সম্প্রীতির প্রক্রিয়াকে সশক্ত করার একটি সুযোগ প্রদান করতে পারে। গাজা যুদ্ধের অনুরূপ - যেখানে জিসিসি এবং ইরান অভিন্ন সাধারণ ভিত্তি খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছে হুতি পরিস্থিতি একই রকমের সম্ভাবনা বহন করে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের নিউইয়র্ক সফরের সময় তিনি সংক্ষেপে হুতিদের মধ্যকার চরমপন্থা মোকাবিলার অসুবিধা সম্পর্কে কথা বলেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এমনকি আমাদের দেশে [ইরানে] এমন কিছু মানুষ রয়েছে, যারা আমাদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে এবং তাদের নিজস্ব বিশ্বাস আছেতাই আমরা আমাদের দেশের অভ্যন্তরে পরিকল্পনাহীন কর্মকাণ্ড এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করিতা হলে আমরা কী ভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণ করব, যারা আমাদের রাষ্ট্রের বাইরে থেকে এসেছেন এবং আদর্শ ও আবেগ দ্বারা অনুপ্রাণিত?’

ইরানের প্রেসিডেন্টের তরফে এটি হুতিদের সম্পর্কে এক তীব্র সমালোচনা শোনালেও এই মন্তব্যগুলি সৌদি আরবের মনে আগ্রহের জন্ম দিয়েছে। এটি সম্ভবত জিসিসি এবং ইরানের মধ্যে আলাপ-আলোচনা বাড়ানোর ভিত্তি হিসাবে কাজ করতে পারে। উপসাগরীয় সমঝোতার আঞ্চলিক বিচ্যুতির ধারণাকে প্রসারিত করে এবং এটিকে অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক ভাবে দুর্বল ইরানের প্রণোদনার সঙ্গে যুক্ত করার মাধ্যমে, হুতিদের বৃদ্ধি জিসিসি-ইরান সম্প্রীতির জন্য একটি মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। এই ধরনের সহযোগিতার প্রকৃতি ২০২৫ সালে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

উপসংহার

গাজা যুদ্ধের পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার পর জিসিসি-ইরান সম্প্রীতি এমন এক গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা স্তম্ভ হয়ে উঠেছে, যা বজায় রাখা দরকার। এই সম্প্রীতি শুধু মাত্র জিসিসি রাষ্ট্র এবং ইরানের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এই অঞ্চলের জন্য একটি মৌলিক নিরাপত্তার ভিত্তি হিসেবেও আবির্ভূত হচ্ছে। এটি গাজা, লেবানন সিরিয়ার পুনর্গঠন প্রচেষ্টার পাশাপাশি ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বারা উত্থাপিত বৃহত্তর চ্যালেঞ্জ-সহ অন্য আঞ্চলিক সমস্যাগুলির সঙ্গে সমাপতিত হয়েছে এবং তাই এটি এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা আনতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।

 


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ওআরএফ মিডল ইস্ট-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.