২০২৩ সালের ২৪ নভেম্বর একটি সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতির জন্য ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে প্রাথমিক চুক্তি এবং ইজরায়েলের হাতে বন্দি প্যালেস্তাইনিদের সঙ্গে হামাসের হাতে বন্দি ইজরায়েলিদের সীমিত বিনিময় ৭ অক্টোবরের পর থেকে প্রথম স্বস্তি প্রদান করেছে। কাতারের শ্রমসাধ্য প্রচেষ্টার পরে এটা সম্ভব হয়েছে, যার সমন্বয়ের কাজটি মিশর ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করেছে। ৭ অক্টোবর ইজরায়েলি সৈন্য এবং নাগরিকদের উপর হামাসের নৃশংস সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ইজরায়েলের শক্তিশালী বিমানবাহিনী, সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনী গাজা উপত্যকার ২.২ মিলিয়ন অসহায় বাসিন্দার উপর নিরলস আক্রমণ চালায়। বোমায় বিধ্বস্ত আবাসিক এলাকা এবং আহত শিশু, কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত চিকিৎসক, সাংবাদিক ও রাষ্ট্রপুঞ্জের কর্মী এবং উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণে নিরাপত্তার খোঁজে অসহায় পরিবারদের মিছিলের সম্মিলিত দৃশ্যপট একটি শক্তিশালী বিরোধী শক্তির জন্ম দিয়েছে। সমষ্টিগত শাস্তি, যুদ্ধাপরাধ, এমনকি ইজরায়েলের গণহত্যার বর্ণনা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবিতে লক্ষ লক্ষ মানুষকে রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য করেছে। কায়রো থেকে কেপটাউন এবং লন্ডন থেকে লাহোর পর্যন্ত ব্যাপক বিক্ষোভে ‘প্যালেস্তাইনিদের অবিলম্বে মুক্ত করতে হবে’… এ হেন দাবিসম্পন্ন ব্যানার এবং টি-শার্ট প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছে। এমনকি একজন ১৯ নভেম্বর আমদাবাদে আইসিসি বিশ্বকাপ ফাইনালে্র সময় মাঠে প্রবেশ করেন এবং বেশ কিছুক্ষণের জন্য খেলাটি স্থগিত হয়ে যায়।
৭ অক্টোবর ইজরায়েলি সৈন্য এবং মানুষের উপর হামাসের নৃশংস সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ইজরায়েলের শক্তিশালী বিমানবাহিনী, সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনী গাজা উপত্যকার ২.২ মিলিয়ন অসহায় বাসিন্দার উপর নিরলস আক্রমণ চালায়।
ইজরায়েলের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। হামাস সুড়ঙ্গের মতো একটি সুবিশাল ভূগর্ভস্থ শৃঙ্খল তৈরি করেছে এবং অনিবার্য আনুষঙ্গিক ক্ষতি-সহ ব্যাপক বিমান বোমা হামলা ঘটিয়েছে… এটিই জঙ্গি সংগঠনকে ধ্বংস করার জন্য ইজরায়েলের ঘোষিত লক্ষ্য অর্জনের একমাত্র উপায়। কিন্তু এই অবস্থানের বৈধতা গুরুতর ভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে বিশিষ্ট ইজরায়েলি নেতাদের তরফ থেকে উঠে আসা বিবৃতির ফলে, যার মধ্যে রয়েছেন সরকারের পরিষেবাকারী সেই সকল সদস্য, যাঁরা অন্তত পক্ষে উত্তর গাজায় জাতিগত নির্মূলকরণের অভিপ্রায়কে নির্দেশ করেছেন। পশ্চিম তীরে সশস্ত্র ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা দিনের আলোয় প্যালেস্তাইনের সম্পত্তি দখল করার কারণে যে দায়মুক্তি প্রদর্শন করা হচ্ছে, তা ইজরায়েল সংক্রান্ত নিন্দার পরিমাণকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এটিও প্যালেস্তাইনিদের সঙ্গে ইজরায়েলের প্রথম সংঘাত, যেখানে মূলধারার গণমাধ্যম ইজরায়েলের পক্ষে ঘটনাপ্রবাহের ব্যাখ্যা দিতে অক্ষম। সোশ্যাল মিডিয়া বিপ্লব আবার তার সকল ত্রুটি সত্ত্বেও তথ্যের গণতন্ত্রীকরণের দিকে চালিত করেছে। কারণ অনেক নাগরিক সাংবাদিক নিজেদের সেলফোন ব্যবহার করে ছবি ও ভিডিয়ো তুলেছেন, যেগুলি ইনস্টাগ্রামে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু অতীতের মতোই একটি পরীক্ষিত ও সুনির্দিষ্ট পন্থা মেনে এ হেন চ্যালেঞ্জের প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন যা আসলে ক্ষোভ, অস্পষ্ট, অনড় মনোভাব ও গড়িমসির মিশ্রণ। কিন্তু ২০২৩ সালের পরিবর্তিত বাস্তবতায় এই পন্থা কাজ না-ও করতে পারে।
এ রকম একটি পরিবর্তিত বাস্তবতা হল কূটনৈতিক তৎপরতার উচ্ছ্বাস, যা রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের সঙ্কল্পগুলির স্বাভাবিক সীমার ঊর্ধ্বে। সদ্য সম্প্রসারিত ব্রিকস গ্রুপ ২১ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার সভাপতিত্বে একটি জরুরি ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করে এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়, যখন ২২ নভেম্বর ভারতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জি২০ ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনে একটি সাত দফার পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়, যাতে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের আওতায় প্যালেস্তাইনের সমস্যার একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। সম্ভবত আরও গুরুত্বপূর্ণ হল ১১ নভেম্বর রিয়াধে আরব ও ইসলামিক দেশগুলির অসাধারণ যৌথ শীর্ষ সম্মেলন থেকে জারি করা কঠোর চূড়ান্ত বিবৃতি ও ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য এবং একটি গুরুতর ও বাস্তব রাজনৈতিক প্রক্রিয়া’ চালু করার জন্য চাপ প্রয়োগ করার উদ্দেশ্যে মন্ত্রী কমিটি গঠন। অনুমোদিত আন্তর্জাতিক সঙ্কল্প অনুযায়ী লক্ষ্য হল দীর্ঘস্থায়ী ও ব্যাপক শান্তি অর্জন করা। সৌদি আরব, মিশর, জর্ডন, তুর্কিয়ে, নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং প্যালেস্তাইন কর্তৃপক্ষের বিদেশমন্ত্রীদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি এবং আরব স্টেটস ও অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কো-অপারেশনের সেক্রেটারি জেনারেলরা অস্বাভাবিক উদ্দীপনার সঙ্গে নিজেদের মিশন শুরু করেছেন। তাঁরা ইতিমধ্যে বেজিং, মস্কো, প্যারিস ও লন্ডন পরিদর্শন করেছেন এবং ‘গাজায় সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির জন্য নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তরফে কার্যকর ও জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন।’ সৌদিরা ২০০২ সালের আরব পিস প্ল্যানের রূপরেখা অনুযায়ী ইজরায়েলকে আরও বিস্তৃত আরব স্বীকৃতির বিনিময়ে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান এবং প্রাক-১৯৬৭ সীমান্তের মানচিত্রে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এই গুরুতর প্রচেষ্টাকে অবশ্যই তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে, যদিও তা দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের প্রত্যাশা রাখে। এর মধ্যে রয়েছে, রামসফেল্ড-বক্তৃতায় উল্লিখিত জানা অথচ অজানা এবং অজানা অথচ জানা… দুইই।
যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে ইজরায়েলে স্পষ্টতই একটি পরিবর্তন দেখা যাবে। দেশের ক্ষয়িষ্ণু রাজনীতির উপর নেতানিয়াহুর অশান্ত রাজত্বের সমাপ্তি ঘটবে বলে ব্যাপক আশা করা হচ্ছে এবং তা একটি নতুন নেতৃত্বের নিঃশব্দ আশাকে প্ররোচিত করবে, যা প্যালেস্তাইনের অধিকারকে অস্বীকারকারী নীতির কাঠামোগত ব্যর্থতাকে স্বীকৃতি দেবে।
১. অবশিষ্ট বন্দিদের কী হবে? এক অর্থে, ৫০-এর বেশি নারী ও শিশুদের সংশ্লিষ্ট চুক্তিটি অপেক্ষাকৃত সহজতর অংশ। ‘সন্ত্রাসবাদী’ অপরাধের জন্য ইজরায়েলি আদালতের দ্বারা দোষী সাব্যস্ত হওয়া প্যালেস্তাইনিদের পরিবর্তে ইজরায়েলি সৈন্যদের বিনিময়ের ক্ষেত্রে বিষয়গুলি আরও জটিল হয়ে উঠবে।
২. এই বন্দি সংক্রান্ত আলোচনার প্রাথমিক সাফল্য স্পষ্ট প্রমাণ দেয় যে, ছ’সপ্তাহের তীব্র বোমাবর্ষণের পরেও এবং গাজার কেন্দ্রস্থলে ইজরায়েলি ট্যাঙ্ক ও সৈন্যদের উপস্থিতি সত্ত্বেও দোহায় হামাসের রাজনৈতিক শাখা ও গাজার সামরিক শাখার মধ্যে কার্যকরী সমন্বয় রয়েছে। তা হলে এরপর কী হবে? পরবর্তী মুক্তির প্রক্রিয়া সংক্রান্ত আলোচনা চলার পাশাপাশি কি যুদ্ধবিরতি বজায় থাকবে? নেতানিয়াহুর সরকারের উপর বন্দিদের পরিবারের তরফে ক্রমবর্ধমান চাপ ইঙ্গিত দেবে যে, এই ধরনের আলোচনা এখন হামাসকে নির্মূল করার অনড় লক্ষ্যের তুলনায় বেশি অগ্রাধিকার পেতে পারে।
৩. গাজা ধ্বংসের জন্য ইজরায়েলের পরিকল্পনা কী? বন্দি সংক্রান্ত চুক্তি সম্পন্ন হয়ে গেলে এবং হামাস না হলেও, অন্তত পক্ষে গাজার ধ্বংসাবশেষের ধুলো স্তিমিত হয়ে যাওয়ার পর নেতানিয়াহু কি গাজার উপর নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি অনুসরণ করবেন? আমরা কি ২০০৫ সালে এরিয়েল শ্যারনের অধীনে ইজরায়েলের একতরফা ভাবে গাজা ত্যাগ করার আগে পর্যন্ত ২১-এর মতো ইজরায়েলি বসতিগুলির প্রত্যাবর্তনকেই প্রত্যক্ষ করব? কিন্তু এর অর্থ এমন একটি পন্থায় ফিরে যাওয়া, যা পূর্বে পরীক্ষিত হলেও সফল হয়নি।
৪. ইজরায়েল না হলে যুদ্ধের পর গাজা শাসন করবে কে? ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইজরায়েলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগে পর্যন্ত এই অঞ্চলটি ১৯৪৮ সাল থেকে মিশরের এক্তিয়ারে ছিল। কিন্তু মিশর বা অন্য আরব রাষ্ট্রগুলির কেউই এই দায়িত্ব গ্রহণের জন্য আগ্রহী ছিল না। পশ্চিম তীর ও গাজা উভয়ের উপর সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে প্যালেস্তাইন অথরিটিকে (পিএ) সক্ষম করে তোলা একটি বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রেও দু’টি সমস্যা রয়েছে। ইজরায়েলকে পিএকে দুর্বল করার পরিবর্তে শক্তিশালী করার জন্য এক নাটকীয় অবস্থান বদল করতে হবে এবং পিএ-কে মাহমুদ আব্বাসের চেয়ে আরও কার্যকর নেতা নির্বাচন করতে হবে।
৫. এটি এখনও ৭ অক্টোবর দ্বারা সৃষ্ট অন্য নতুন বাস্তবতা এবং তার রক্তাক্ত পরিণতির সমাধান করে না। এই কার্যকলাপের ফলে গাজায় অসংখ্য মৃত্যু ও ধ্বংসের পরেও পিএ-কে খুব বেশি সংখ্যক প্যালেস্তাইনি তাঁদের ন্যায্য ক্ষোভ প্রকাশ ও অপূর্ণ উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য কার্যকর কণ্ঠস্বর বলে মনে করেন না। বরং পিএ-কে কখনও কখনও ইজরায়েলের সহযোগী বলে মনে করা যেতে পারে। হামাসকে ধ্বংস করার জন্য নেতানিয়াহুর প্রতিশ্রুতিও একটি বিপজ্জনক শূন্য-সমষ্টির খেলা সৃষ্টি করেছে, যেখানে হামাসের টিকে থাকা তার বিজয়ের সমান। মিশর, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো আরব রাষ্ট্রগুলির জন্য এর কোনওটিই কাম্য নয় যারা হামাসকে মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি শাখা বলে বিবেচনা করে। মুসলিম ব্রাদারহুড এমন একটি সংগঠন যাকে তারা অবৈধ এবং সন্ত্রাসবাদী সত্তা বলে ঘোষণা করেছে। এই অঞ্চলের তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে হামাস-অনুপ্রাণিত এবং ইরান-পরিচালিত ইসলামিক উগ্রবাদের উত্থানের সম্ভাবনা এই দেশগুলির কাছে অস্বস্তিকর। এবং তা সত্ত্বেও একটি বাস্তববাদী পদ্ধতির জন্য হামাসকে সেই ধরনের বৃহৎ প্রসারিত কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন হতে পারে, যা প্যালেস্তাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন ঐতিহ্যগত ভাবে গ্রহণ করে এসেছে এবং যেটি ফাতা, পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্তাইন (পিএফএলপি), ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইন (ডিএফএলপি) এবং পরস্পরবিরোধী ও বিবদমান গোষ্ঠীগুলিকে নিজেদের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছিল। হামাস কি ইজরায়েলকে তার নিজস্ব স্বীকৃতির মূল্য হিসাবে তাদেরও স্বীকৃতি দিতে সম্মত হবে এবং গাজার (ও সম্ভবত পশ্চিম তীরের) ভবিষ্যতের জন্য আলোচনা গতিশীল হলে মূল আরব রাষ্ট্রগুলি কি হামাসকে একই আলোচনায় আসন প্রদান করতে সম্মত হবে? এটি গাজা থেকে বিতাড়িত হামাস এবং পশ্চিম তীরে দুর্বল পিএ-র প্রেক্ষিতে প্যালেস্তাইন নেতৃত্বকে বিভক্ত করার জন্য নেতানিয়াহুর দৃষ্টিভঙ্গির একটি কার্যকর বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।
৬. ইরান আবারও এই অঞ্চলে তার বিধ্বংসী শক্তি প্রদর্শন করেছে। এটি ২০২০ সালে আব্রাহাম অ্যাকর্ডের সঙ্গে শুরু হওয়া উন্নয়নগুলি থেকে বাদ পড়েছিল, যা ২০২১ সালে আই২ইউ২ গোষ্ঠী এবং উচ্চাভিলাষী ভারত-মিডল ইস্ট-ইউরোপ ইকোনমিক করিডোর প্রকল্পের জন্ম দেয়, যা নয়াদিল্লিতে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি ঘোষিত হয়েছিল। কিন্তু তার মিত্র হামাস দ্বারা ৭ অক্টোবরের হামলা ইরান এবং প্যালেস্তাইন উভয়ের সমস্যাকেই সমীকরণের অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ কথা আশ্চর্যের নয় যে, প্রেসিডেন্ট রাইসি রিয়াধে আরব-ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে তির্যক প্রশ্ন তুলেছিলেন যে: ইরানকে কি সমস্যার একটি অংশ হিসেবে না দেখে সমাধানের অংশ হিসেবে যেতে পারে? অন্যথায়, শান্তি আলোচনা ও বহুপাক্ষিক প্রচেষ্টা কার্যকরী নয়, গাজা পশ্চিমী নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার নৈতিক ব্যর্থতা দর্শিয়েছে যেখানে কতিপয় জীবনের মূল্য অন্যদের চেয়ে বেশি বলে প্রমাণিত হয়েছে এবং একটি সশস্ত্র ও প্রতিরোধের সক্ষম অক্ষ একমাত্র বিকল্প… এ হেন ইরান-হিজবুল্লা-হামাসের আখ্যান শুধুমাত্র প্রভাবশালী আখ্যানেই পরিণত হবে না বরং আরও উগ্রবাদীকরণের ইন্ধন জোগাবে।
৭. গাজার প্রায় অর্ধেক আবাসন এবং শহরটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ইতিমধ্যেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। যুদ্ধ শেষ হলে অবিলম্বে যে কোনও পরিকল্পনায় শহরের পুনর্গঠন প্রচেষ্টা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শীত ১.৭ মিলিয়নেরও বেশি বাস্তুচ্যুত প্যালেস্তাইনিকে প্রকৃতির আক্রোশের মুখে অরক্ষিত করে দেবে। এই আসন্ন মানবিক বিপর্যয় কি সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার উপর আপৎকালীন মনোভাব আরোপ করতে সক্ষম? সম্ভবত একটি আরব নেতৃত্বাধীন উপসাগরীয় দেশগুলি অর্থায়িত এবং রাষ্ট্রপুঞ্জ-সমর্থিত প্রক্রিয়ার দিকে চালিত করতে পারে যা গাজার নিরাপত্তা ও পুনর্গঠন উভয়কেই সম্ভব করবে? ইজরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আশ্বাসের একটি বৃহত্তর কাঠামোর মধ্যে এমনটা করা জরুরি, যাতে পুনর্গঠন আবারও যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত না হয়।
৮. যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে ইজরায়েলে স্পষ্টতই একটি পরিবর্তন দেখা যাবে। দেশের ক্ষয়িষ্ণু রাজনীতির উপর নেতানিয়াহুর অশান্ত রাজত্বের সমাপ্তি ঘটবে বলে ব্যাপক আশা করা হচ্ছে এবং তা একটি নতুন নেতৃত্বের নিঃশব্দ আশাকে প্ররোচিত করবে, যা প্যালেস্তাইনের অধিকারকে অস্বীকারকারী নীতির কাঠামোগত ব্যর্থতাকে স্বীকৃতি দেবে। ৭ অক্টোবরের হামলার ভয়াবহতা কি ইজরায়েলে আরও মধ্যপন্থী নেতৃত্বের উত্থান ঘটাবে?
৯. এবং পরিশেষে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথাও মাথায় রাখতে হবে, যারা বিদ্যমান বন্দি আলোচনায় মিশর ও কাতারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করছে এবং গাজায় কিছু ত্রাণ সরবরাহের প্রবাহ নিশ্চিত করে আবারও তার কেন্দ্রীয়তা প্রদর্শন করেছে। কিন্তু নির্বাচনের মরসুম যখন পুরোদমে এগিয়ে আসছে, তখন প্রেসিডেন্ট বাইডেন যে ভাবে নেতানিয়াহুর নীতির প্রতি তাঁর বিতৃষ্ণা কাটিয়ে উঠে ইজরায়েলের প্রতি সুদৃঢ় সমর্থন প্রকাশ করেছেন এবং তাঁর ডেমোক্র্যাটিক দলের সমর্থকরা যে ভাবে বিষয়টিকে আরও ভারসাম্যপূর্ণ ভাবে দেখতে আগ্রহী… তার মধ্যে স্পষ্ট ব্যবধান রয়েছে। যেহেতু রিপাবলিকানরা মূলত নেতানিয়াহু ও ইজরায়েল… উভয়কেই সমর্থন করছে, তাই ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্রমবিবর্তিত রাজনৈতিক সমীকরণ আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাঁধা হয়ে উঠবে।
ইরান আবারও এই অঞ্চলে তার বিধ্বংসী শক্তি প্রদর্শন করেছে। এটি ২০২০ সালে আব্রাহাম অ্যাকর্ডের সঙ্গে শুরু হওয়া উন্নয়নগুলি থেকে বাদ পড়েছিল, যা ২০২১ সালে আই২ইউ২ গোষ্ঠী এবং উচ্চাভিলাষী ভারত-মিডল ইস্ট-ইউরোপ ইকোনমিক করিডোর প্রকল্পের জন্ম দেয়, যা নয়াদিল্লিতে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি ঘোষিত হয়েছিল।
লেবাননের সঙ্গে ইজরায়েলের সীমান্তে হিজবুল্লা-র মতো ইরানের মিত্রদের কার্যকলাপ এবং ইয়েমেনে তাদের দুর্গ থেকে লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচলকে লক্ষ করে হুতিদের আক্রমণের মতো অন্যান্য অজ্ঞাত সমীকরণকে বাইরে রাখলেও এই পরিস্থিতি যথেষ্ট জটিল। গাজার যুদ্ধ দুর্ঘটনাজনিত ধর্মঘট, যোগাযোগের ব্যর্থতা বা অ-রাষ্ট্রীয় শক্তিদের যে কোনও একজনের দ্বারা কোনও ভুল অভিযানের মাধ্যমে এখনও আঞ্চলিক দাঙ্গায় পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রাখে। বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের প্রাথমিক চুক্তিটি আশার একটি ক্ষুদ্র আলো দেখিয়েছে এবং সমস্ত মূল শক্তিকে অবশ্যই এটিকে কাজে লাগিয়ে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির সূচনা করতে হবে যাতে ডি-এস্কেলেশন বা তীব্রতা হ্রাস ও স্থিতিশীল সমাধানের লক্ষ্যে একটি অপরিহার্য প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়।
নবদীপ সুরি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ডিস্টিঙ্গুইশড ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.