Author : Sujan R. Chinoy

Published on Mar 24, 2023 Updated 0 Hours ago

তাঁর বালি ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জি২০–র ক্রমবর্ধমান প্রাসঙ্গিকতার বিষয়টি তুলে ধরেন। একটি নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার জন্য তাঁর আহ্বান বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলির সংস্কারে বিশ্ব সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার দিকেই আলোকপাত করেছিল।

জি২০ প্রেসিডেন্সি: ভারতের জন্য বৈশ্বিক দক্ষিণের নেতৃত্ব গ্রহণের একটি সুযোগ

বালিতে জি২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলন ছিল ইন্দোনেশিয়ার বছরব্যাপী প্রেসিডেন্সির গ্র্যান্ড ফিনালে। ১ ডিসেম্বর, ২০২২–এ ব্যাটনটি ভারতের হাতে চলে আসে। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সঙ্কটের পরে জি২০ একটি বার্ষিক সর্বোচ্চ স্তরের শীর্ষ সম্মেলন হিসাবে পুনঃস্থাপিত হয়, এবং তারপর থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলি মাত্র চারবার এর সভাপতিত্ব করেছিল — মেক্সিকো ২০১২ সালে, চিন ২০১৬ সালে, আর্জেন্টিনা ২০১৮ সালে এবং তারপর ইন্দোনেশিয়া ২০২২ সালে। ভারতের প্রেসিডেন্সি এই ধরনের পঞ্চম উপলক্ষকে চিহ্নিত করে। একটি ঐতিহাসিক প্রথম হিসাবে ১ ডিসেম্বরের পরে উন্নয়নশীল দেশগুলি প্রেসিডেন্সির ক্ষেত্রে জি২০ ত্রোইকা তৈরি হয়েছে, যেখানে অতীত, বর্তমান ও পরবর্তী জি২০ প্রেসিডেন্সিগুলি যথাক্রমে ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও ব্রাজিলের ৷

বৈশ্বিক দক্ষিণের জন্য এটি শুধু বালি সম্মেলনের থিমটিকে — ‘‌একসাথে পুনরুদ্ধার করুন, শক্তিশালী পুনরুদ্ধার করুন’‌ — রূপায়ণের চেষ্টা করার উপযোগী সময়ই নয়, বরং দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া ও অন্যান্য আঞ্চলিক গোষ্ঠীর জন্যও একটি স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার উপর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অভিন্নতা তৈরিরও সময়।

বালিতে তাঁর ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড–১৯ অতিমারি ও ইউক্রেনের যুদ্ধকে প্রধান বিঘ্নকারী হিসাবে উল্লেখ করে একটি চ্যালেঞ্জিং বৈশ্বিক পরিবেশে জি২০–র ক্রমবর্ধমান প্রাসঙ্গিকতার দিকে সঠিকভাবে নির্দেশ করেছেন। কোভিড–পরবর্তী সময়ের জন্য একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলতে তাঁর আহ্বান রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলির সংস্কারে বিশ্ব সম্প্রদায়ের ব্যর্থতা এবং সামনের পথে বিশ্বব্যাপী ঐকমত্যের অভাবের একটি স্পষ্ট প্রতিফলন।

মোদীর সতর্কবার্তা আজকের কঠিন বাস্তবতা এবং বেশ কিছু ফল্ট লাইনের অস্তিত্বকে চিহ্নিত করে। ইউক্রেনের পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ব গভীরভাবে বিভক্ত, এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিকে খাদ্য, শক্তি ও সারের ঘাটতির পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে। উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রাথমিক উদ্বেগ দৈনন্দিন বিষয়গুলির সঙ্গে সম্পর্কিত, যুদ্ধের ভূ–রাজনীতির সঙ্গে নয়।

জি২০ প্রেসিডেন্সি ভারতকে বৈশ্বিক দক্ষিণের পক্ষে শান্তি–নির্মাণকারীর দায়িত্ব গ্রহণের সুযোগ দিতে পারে। আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব রয়েছে। ইউক্রেনে প্রক্সি যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয়দের মতো প্রধান শক্তিগুলি পক্ষ নিয়েছে। চিন আবার রাশিয়ার সমর্থক রয়ে গেছে। এর মধ্যে শুধু ভারতই ব্যতিক্রম, যে যুদ্ধবাজ ও তাদের সমর্থকদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে ঘটনাবলি সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে সঙ্গতিপূর্ণ ও বিষয়ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছে। ইউক্রেনের যুদ্ধের অবসানের জন্য পর্দার আড়ালে কাজ করার উপযুক্ত বিশ্বাসযোগ্যতা ভারতের আছে।

মোদীর ভাষণটি সেই বিষয়গুলির একটি আভাস দেয় যা ভারতের প্রেসিডেন্সির সময় প্রাধান্য পেতে পারে। বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। ২০১৮ সালের প্রথম দিকে ভারত ২০২৩–কে আন্তর্জাতিক বাজরা বর্ষ হিসাবে পালনের প্রস্তাব করেছিল। এটি এফএও দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল এবং পরবর্তিকালে, ২০২১ সালের মার্চ মাসে, ইউএনজিএ–র ৭৫তম অধিবেশনেও অনুমোদিত হয়েছিল৷ ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম বাজরা উৎপাদক, আর দেশে ২০১৫–১৬ সালের ১৪.৫২ মিলিয়ন টন থেকে বেড়ে ২০২০–২১ সালে ১৭.৯৬ মিলিয়ন টন বাজরা উৎপাদন হয়েছিল৷ তার প্রেসিডেন্সি থাকাকালীন ভারতের উচিত কৃষিতে প্রযুক্তি ও সর্বোত্তম অনুশীলনগুলি ভাগ করে নেওয়ার জন্য প্রধান বাজরা উৎপাদনকারীদের একটি জোট তৈরি করা। বাজরা উৎপাদনের জন্য তিনটি উৎকর্ষ কেন্দ্র তৈরি করার ক্ষেত্রে ভারতের অভিজ্ঞতা বিশ্বের অন্যান্য উপযুক্ত অংশে যথাযথ বৈশ্বিক অর্থায়ন ব্যবস্থার মাধ্যমে সমর্থিত হতে পারে।

ভারতের এই ধরনের উদ্যোগ ২০২১ সালের জি২০ মাতেরা ঘোষণার সঙ্গে যুক্ত হবে, যা দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা ও স্থিতিশীল খাদ্যব্যবস্থা সম্পর্কিত বিষয়গুলি উত্থাপন করেছে। সারা বিশ্বে ঘন ঘন খরা ও বন্যার কারণে খাদ্যশস্যের দীর্ঘায়িত ঘাটতি কিন্তু পশ্চিমে গবাদি পশুর খাদ্যের ঘাটতি ও খাদ্য সরবরাহকে প্রভাবিত করতে পারে।

বালি জি২০ সম্মেলনের কর্মসূচির মধ্যে ছিল তামান হুতান রায়া ম্যানগ্রোভ বন পরিদর্শন। উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে, উপকূলীয় ক্ষয়রোধে এবং ‘‌কার্বন সিঙ্ক’‌ হিসাবে কাজ করার ক্ষেত্রে ম্যানগ্রোভগুলি যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা অত্যন্ত প্রতীকী। ভারত গ্লোবাল ম্যানগ্রোভ অ্যালায়েন্স–এ যোগ দিতে সম্মত হয়েছে, এবং এর উপরে আরও জোর দেওয়ার জন্য তার সভাপতিত্ব ব্যবহার করা উচিত।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ থিম যা মোদী উল্লেখ করেছিলেন তা হল শক্তির বাজারে সরবরাহ–পার্শ্বের বাধা এড়ানোর প্রয়োজন। ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে তার বিদ্যুতের চাহিদার অর্ধেক উৎপাদন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও কয়লা শুধু ভারতের জন্য নয়, অন্য অনেকের জন্যও শক্তির ম্যাট্রিক্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে থাকবে। কয়লার ব্যবহার কমানোর পদ্ধতিতে একটি আকস্মিক হ্রাসের পরিকল্পনার বিপরীতে ভারতের পর্যায়ক্রমিক  হ্রাসের পরিকল্পনা একটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদা থেকে প্রবাহিত হয়।

জার্মানি কিছু কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনরায় সক্রিয় করছে৷ মাত্র ১০ মাস আগে মনে হয়েছিল জার্মান জলবায়ু উৎসাহীরা ২০৩০ সালের মধ্যে কয়লা ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার ধারণা গ্রহণ করেছেন, এবং তাঁরা বিলম্বের জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে ভর্ৎসনা করেছিলেন। তারপর শীতের আগমনের সময় ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে শক্তির ঘাটতির প্রেক্ষাপটে বার্লিন তার জনগণের চাহিদা মেটাতে কয়লার স্বল্পমেয়াদি ব্যবহারে ন্যায্যতা দেয়। এটা বোধগম্য ছিল।

একইভাবে বিশ্ব সম্প্রদায়কে অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে যে ভারতের কয়লার ক্রমাগত ব্যবহার এবং রাশিয়া–সহ বিভিন্ন উৎস থেকে সর্বাধিক প্রতিস্থাপনযোগ্য ও সাশ্রয়ী মূল্যের শক্তি সংগ্রহ তার ১.৩৫ বিলিয়ন জনগণের উন্নয়নমূলক প্রয়োজনের সঙ্গে যুক্ত।

কয়লা একমাত্র দূষণকারী জীবাশ্ম জ্বালানি নয়। কিছুটা কম হলেও অপরিশোধিত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসও দূষণ করছে। ভারতের প্রেসিডেন্সি থাকাকালীন সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা উচিত ব্রিজটাউন ইনিশিয়েটিভের প্রতি সমর্থন সংগ্রহের জন্য, যা উন্নয়নশীল দেশগুলিকে তাদের জলবায়ু পরিবর্তন ও স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণে সক্ষম করতে সবুজ ও উন্নয়ন অর্থায়নের জন্য একটি সমতাভিত্তিক, প্রাপ্তিযোগ্য ও সাশ্রয়ী মূল্যের পরিকল্পনা নেওয়ার আহ্বান জানায়৷

যদিও উন্নত দেশগুলি জলবায়ু অর্থায়নের জন্য উন্নয়নশীল বিশ্বকে বার্ষিক ১০০  বিলিয়ন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য এগিয়ে যাচ্ছে, এই পরিমাণটি কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। শুধু যারা তা করার সামর্থ্য রাখে তাদের শক্তি রূপান্তর একটি অপ্রতুল পদক্ষেপ। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ একটি সময়–সীমাবদ্ধ পদ্ধতিতে মোকাবিলা করা তবেই সম্ভব যদি বিশ্ব ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে। মোদী তাই বলেছেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক শক্তির রূপান্তর অর্জনের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের অর্থ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রয়োজন।

এখন সময় এসেছে যখন উন্নত বিশ্বকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শক্তি রূপান্তরের দাবি থেকে সরে এসে একটি অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে প্রয়োজনীয় আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রসারিত করতে হবে।


নিবন্ধকার ভারতের জি২০ প্রেসিডেন্সির থিঙ্ক–২০ চেয়ার, এবং মনোহর পারিকর ইনস্টিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালিসিস–এর ডিরেক্টর জেনারেল। প্রকাশিত মতামত ব্যক্তিগত।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.