Author : Shoba Suri

Published on Jun 26, 2023 Updated 0 Hours ago

অনেক জি২০ দেশেই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা একটি বড় রকম চ্যালেঞ্জ; সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা

ভারতের প্রেসিডেন্সির অধীনে উন্নত খাদ্য নিরাপত্তার জন্য জি২০ অ্যাজেন্ডা

বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিগুলির অন্যতম হওয়া সত্ত্বেও কিছু জি২০ দেশে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা একটি বড় রকম চ্যালেঞ্জ। কোভিড–১৯ অতিমারি অনেক দেশে এই সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে, বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই খাদ্য নিরাপত্তার সমস্যা ছিল।

কোভিড–১৯ এবং ইউক্রেন সংঘাত উভয়ই জি২০ দেশগুলির খাদ্য নিরাপত্তায়  উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। অতিমারিটি খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলকে ব্যাহত করেছিল, যার ফলে কিছু অঞ্চলে ঘাটতি দেখা দেয় ও দাম বেড়ে যায়। লকডাউন ও ভ্রমণ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞাগুলি কৃষকদের পণ্য বিক্রি করা এবং উপ‌ভোক্তাদের খাদ্যের নাগাল পাওয়া কঠিন করে তুলেছিল। চাকরি হারানো এবং আয় কমে যাওয়া–সহ  অতিমারির অর্থনৈতিক প্রভাব অনেক মানুষের খাদ্য কেনার সামর্থ্য কমিয়ে দেয়, এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও অপুষ্টি বাড়িয়ে তোলে। তারপর যুদ্ধ ও সংঘাতের পরিস্থিতি কৃষি উৎপাদন ব্যাহত করেছে, পরিকাঠামো ও বাজার ধ্বংস করেছে, এবং বাস্তুচ্যুতি ও খাদ্য সংকটের দিকে চালিত করেছে। যুদ্ধ ও সংঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়ার ফলেও মানুষ জীবিকা হারিয়েছেন এবং তাঁদের খাদ্য জোগাড়ের ক্ষমতা হ্রাস  পেয়েছে।

যুদ্ধ ও সংঘাতের পরিস্থিতি কৃষি উৎপাদন ব্যাহত করেছে, পরিকাঠামো ও বাজার ধ্বংস করেছে, এবং বাস্তুচ্যুতি ও খাদ্য সংকটের দিকে চালিত করেছে।

অপুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত; পর্যাপ্ত ও পুষ্টিকর খাবার না-পাওয়া উভয় সমস্যাকেই যথেষ্ট জটিল করে তুলেছে। অপুষ্টি একটি জটিল সমস্যা যা অপুষ্টি এবং অতিরিক্ত পুষ্টি উভয়কেই অন্তর্ভুক্ত করে। যদিও অনেক জি২০ দেশে অপুষ্টি একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ, নির্দিষ্ট পরিস্থিতি বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন হয়। জি২০ দেশগুলির মধ্যে ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় শিশুদের মধ্যে ঠিকমতো বৃদ্ধি না–হওয়া, দুর্বলতা ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি–সহ অপুষ্টির সর্বাধিক প্রকোপ রয়েছে। একটি উচ্চ আয়ের দেশ হওয়া সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়াতেও অপুষ্টির প্রকোপ রয়েছে, বিশেষ করে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে। কিছু জি২০ দেশে, যেমন ব্রাজিল ও মেক্সিকোয়, অপুষ্টি হ্রাস পাচ্ছে, কিন্তু এখনও তা জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অনুপাতকে প্রভাবিত করছে। অন্যদিকে, অনেক জি২০ দেশে অতিপুষ্টি একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা, বিশেষ করে যাদের আয় এবং নগরায়ণের উচ্চ হার রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি স্থূলতার হারের দেশগুলির মধ্যে রয়েছে;‌ আবার ব্রাজিল, চিন ও ভারতের মতো দেশগুলিতেও এই হার বাড়ছে৷ সামগ্রিকভাবে, জি২০ দেশগুলিতে অপুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা উভয়ের মোকাবিলা করার জন্য একটি বহুমুখী ও সমন্বিত পদ্ধতির প্রয়োজন, যার মধ্যে মূল মনোযোগ দিতে হবে খাদ্যপ্রাপ্তির সুযোগের উন্নতি, স্বাস্থ্যকর খাদ্য ও জীবনযাত্রার প্রসার, এবং দারিদ্র্য ও অসমতা মোকাবিলায়।

চিত্র ১: অপুষ্টির প্রাদুর্ভাব (জনসংখ্যার শতাংশ)

বিশ্ব ব্যাঙ্কের ২০২০ সালের জন্য উপলব্ধ তথ্য অনুযায়ী, জি২০ দেশগুলিতে অপুষ্টির প্রকোপ ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। যদিও কিছু জি২০ দেশে অপুষ্টির মাত্রা খুবই কম (যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া), অন্যদের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে সাব–সাহারান আফ্রিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ায় এর বিপরীত চিত্র পরিলক্ষিত হয়। চিত্র ১ জনসংখ্যার শতাংশ হিসাবে প্রকাশ করা নির্বাচিত জি২০ দেশে অপুষ্টির প্রাদুর্ভাব দেখায়। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছেন ভারতে, তারপরে দক্ষিণ আফ্রিকা। মেক্সিকো বিশ্বের একাদশ–বৃহত্তর অর্থনীতি, কিন্তু সে দেশে  উচ্চমাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা রয়েছে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়। ইন্দোনেশিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ক্ষুধা হ্রাসে অগ্রগতি করেছে, তবে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এখনও একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ। ব্রাজিল বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ খাদ্য উৎপাদনকারী দেশ, কিন্তু অনেক ব্রাজিলিয়ান এখনও ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ভুগছেন। যদিও পরিস্থিতি দেশ থেকে দেশে পরিবর্তিত হয়, এটা স্পষ্ট যে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এমন একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ যার জন্য সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সুশীল সমাজের সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।

জি২০ দেশগুলি তাদের নিজস্ব দেশে এবং সেইসঙ্গে বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে:

১। জলবায়ু পরিবর্তন: জলবায়ু পরিবর্তন খাদ্য নিরাপত্তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ, কারণ এটি চরম আবহাওয়ার ঘটনা, যেমন খরা ও বন্যার প্রকোপ বাড়াতে পারে এবং সেই কারণে ফসল ও খাদ্য উৎপাদনকে ধ্বংস করতে পারে।

২। জনসংখ্যা বৃদ্ধি: ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা ৯.৭ বিলিয়নে পৌঁছবে বলে মনে করা হচ্ছে, যা খাদ্য উৎপাদন ও বিতরণের উপর উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করবে।

৩। জলের ঘাটতি: জলের ঘাটতি খাদ্য নিরাপত্তার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে শুষ্ক ও আধা–শুষ্ক অঞ্চলে।

৪। দ্বন্দ্ব ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা: দ্বন্দ্ব ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা খাদ্য উৎপাদন ও বণ্টন ব্যাহত করতে পারে, যার ফলে খাদ্য ঘাটতি এবং ক্ষুধা দেখা দেয়।

৫। বাণিজ্য বাধা: শুল্ক ও আমদানি নিষেধাজ্ঞার মতো বাণিজ্য বাধা বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে খাদ্য ও কৃষি পণ্যের উপলব্ধতা কঠিন করে তুলতে পারে।

যদিও পরিস্থিতি দেশ থেকে দেশে পরিবর্তিত হয়, এটা স্পষ্ট যে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এমন একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ যার জন্য সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সুশীল সমাজের সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।

জি২০ সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে বিভিন্ন উদ্যোগ ও সহযোগিতার মাধ্যমে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দুটি মূল উদ্যোগ হল মাতেরা ঘোষণা এবং রাষ্টপুঞ্জের ফুড সিস্টেমস সামিট। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ইতালির মাতেরাতে জি২০ কৃষিমন্ত্রীদের বৈঠকে মাতেরা ঘোষণা গৃহীত হয়েছিল। ঘোষণাটি কৃষি–খাদ্য ব্যবস্থার স্থিতিস্থাপকতা এবং স্থায়িত্ব জোরদার করা, বিশ্ব জুড়ে সহযোগিতা বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র কৃষকদের সহায়তা এবং খাদ্যের অপচয় ও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর প্রয়োজন তুলে ধরে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত ইউএন ফুড সিস্টেমস সামিট খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি ও স্থায়িত্বের আন্তঃসংযুক্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার, বেসরকারি ক্ষেত্র, সুশীল সমাজ ও অন্য অংশীদারদের একত্র করেছে। শীর্ষ সম্মেলনটি পাঁচটি অ্যাকশন ট্র্যাকের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল: সকলের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের প্রাপ্তি নিশ্চিত করা; স্থিতিশীল উপভোগের কাঠামোর দিকে রূপান্তর; বৃহদায়তনে প্রকৃতি–ইতিবাচক উৎপাদন বৃদ্ধি; ন্যায়সঙ্গত জীবিকা ও মূল্য বণ্টনের অগ্রগতি; এবং দুর্বলতা, ধাক্কা ও চাপের মোকাবিলায় স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করা।

জি২০ খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কিত অন্যান্য উদ্যোগও গ্রহণ করেছে, যেমন বাজারের স্বচ্ছতা উন্নত করার জন্য কৃষি বাজার তথ্য ব্যবস্থা (এএমআইএস), খাদ্যমূল্যের অস্থিরতা হ্রাস করা, এবং উন্নয়নশীল দেশে ক্ষুদ্র কৃষকদের সহায়তা করতে অর্থায়নের জন্য গ্লোবাল এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটি প্রোগ্রাম  (জিএএফএসপি)। ।

ঘোষণাটি কৃষি–খাদ্য ব্যবস্থার স্থিতিস্থাপকতা এবং স্থায়িত্ব জোরদার করা, বৈশ্বিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র কৃষকদের সহায়তা ও খাদ্যের অপচয় ও ক্ষয়ক্ষতি কমানোর প্রয়োজন তুলে ধরে।

যেহেতু ভারত জি২০–র সভাপতিত্বে রয়েছে, তাই তার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সমস্যা মোকাবিলার একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে।

১। খাদ্যের অপচয় কমানো, সম্পদের দক্ষ ব্যবহারের প্রসার, এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের সহায়তা করা–সহ স্থিতিশীল কৃষিকে উন্নীত করা। এটি খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে এবং কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে।

২। পরিকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা–সহ গ্রামীণ উন্নয়নে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা। এটি গ্রামীণ সম্প্রদায়কে সহায়তা করতে এবং খাদ্য ও পুষ্টির প্রাপ্তির সুযোগ উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে।

৩। স্বাস্থ্যকর খাদ্য, পুষ্টি, শিক্ষা, এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যার জন্য লক্ষ্যযুক্ত হস্তক্ষেপ বিকাশের মাধ্যমে সমস্ত ধরনের অপুষ্টির সমাধান করা।

৪। বিশ্বব্যাপী খাদ্য বাজারে স্বচ্ছতা ও তথ্য আদান–প্রদানের মাধ্যমে উন্নত খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য খাদ্যমূল্যের অস্থিরতার মোকাবিলা করা, এবং মূল্যের অস্থিরতার প্রভাব প্রশমিত করার জন্য নীতি তৈরি করা।

৫। খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা উন্নীত করা, যার মধ্যে অন্য জি২০ দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির সঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা মোকাবিলার জন্য যৌথ কৌশল ও উদ্যোগ বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করাও অন্তর্ভুক্ত।

সামগ্রিকভাবে, অনেক জি২০ দেশে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ। স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার প্রাপ্তির সুযোগের উন্নতি, স্বাস্থ্যকর জীবনধারার প্রসার, এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বিনিয়োগ–সহ বিভিন্ন ধরনের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এই সমস্যাটি মোকাবিলার জন্য  সমন্বিত প্রয়াস প্রয়োজন।


শোভা সুরি ওআরএফ–এর স্বাস্থ্য উদ্যোগ বিভাগের সিনিয়র ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.