Published on Jul 12, 2023 Updated 0 Hours ago

ভারতের প্রযুক্তি শিল্পে লিঙ্গ ভারসাম্যহীনতার সমস্যা সুবিশাল। এই সমস্যার সমাধান করতে এআই-কে কি কাজে লাগানো যেতে পারে?

রুট টু স্টেম: প্রযুক্তি কি ভারতের প্রযুক্তি প্রতিভা সমস্যার সমাধান করতে পারে?

১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে সহস্রাব্দের প্রবণতা দেশটিকে একটি আইটি পাওয়ার হাউসে পরিণত করার পর থেকে ভারতের প্রভূত এসটিইএম প্রতিভা একটি প্রতিষ্ঠিত রূপকে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে ভারতীয়রা গুগল, ইউটিউব, মাইক্রোসফট, আইবিএম এবং নোকিয়া-সহ বিশ্বের বেশ কিছু বৃহত্তম প্রযুক্তি এবং হার্ডওয়্যার সংস্থার নেতৃত্বে রয়েছে৷ ২০২১ সালে ৩৪ শতাংশ ভারতীয় স্নাতক স্টেম-এর (এসটিইএম অর্থাৎ সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যানেজমেন্ট) অংশ ছিলেন এবং দেশটি বিশ্বের বৃহত্তম স্টেম কর্মশক্তি তৈরি করে চলেছে। ইন্টারন্যাশনাল গার্লস ইন আইসিটি দিবসকে স্টেম পরিসরে নারীদের তালিকাভুক্তির উত্থানে উদযাপন করার প্রস্তাব যথাযথ। যদিও সমতা না থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে এই পরিমাণ ৪৩.২ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।

তবুও আশ্চর্যজনক ভাবে, স্টেম ডিগ্রি-সহ স্নাতক নারীদের মধ্যে মাত্র ২৯ শতাংশ কর্মীবাহিনীতে যোগদান করেন। এবং নিবিড় পাঠকরা এ বিষয়ে সহমত হবেন যে, অনেক ভারতীয় প্রযুক্তি প্রধান কর্মকর্তাদের (সিইও) মধ্যে নারী সিইও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তালিকাভুক্তির সংখ্যা স্পষ্টতই দর্শায় যে, স্টেম একটি ‘পুরুষ’ অধ্যুষিত পরিসর নয়, তা হলে এই নারীরা যাচ্ছেন কোথায়পূর্ববর্তী ওআরএফ বিশ্লেষণগুলিতে প্রতিটি পর্যায়ে যে যে বাধা নথিভুক্ত করা হয়েছে: সাক্ষাত্কারের সময়ে অবান্তর প্রশ্ন, কাজের প্রতিকূল পরিবেশ, কর্মক্ষমতার পক্ষপাতমূলক মূল্যায়ন এবং বিবাহের পরে কাজ ছেড়ে দেওয়ার জন্য সামাজিক চাপ। নারীরা কি এই বাধার প্রাচীর অতিক্রম করে নিজস্ব উদ্যোগ শুরু করতে পারবেন? এটি অবশ্য একটি পর্বতপ্রমাণ কাজ: নারী-চালিত স্টার্টআপগুলির তুলনামূলক ভাবে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা কম, শিল্প শৃঙ্খলগুলি ‘ভ্রাতৃ সংস্কৃতি’তে (ব্রো-কালচার বা প্রকৃত পক্ষে পুরুষতান্ত্রিক) নিমজ্জিত এবং ‘নারীরা কাদের বিয়ে করবেন, সেটিই তাঁদের প্রধান পেশাগত সিদ্ধান্তে পরিণত হয়’। ঘটনাচক্রে গত বছর ওআরএফ তাদের বার্ষিক টেক কনফারেন্স সাইফাই-এর পাশাপাশি একটি স্টার্টআপ-কেন্দ্রিক কর্মসূচি আয়োজন করে। এবং ইনকিউবেটরদের কাছে বক্তা/মেন্টরদের মধ্যে লিঙ্গ সমতা বজায় রাখার অনুরোধ করা হলে স্পষ্ট ভাবে জানানো হয়েছিল, এমনটা করা অসম্ভব।

পূর্ববর্তী ওআরএফ বিশ্লেষণগুলিতে প্রতিটি পর্যায়ে যে যে বাধা নথিভুক্ত করা হয়েছে: সাক্ষাত্কারের সময়ে অবান্তর প্রশ্ন, কাজের প্রতিকূল পরিবেশ, কর্মক্ষমতার পক্ষপাতমূলক মূল্যায়ন এবং বিবাহের পরে কাজ ছেড়ে দেওয়ার জন্য সামাজিক চাপ।

এআই-এর প্রবেশ?

এআই একটি সাধনী হওয়া সত্ত্বেও এটি আবার আয়নাসম, যা আমাদের পক্ষপাত এবং ত্রুটিগুলিকে আমাদের সামনেই প্রতিফলিত করে। মেশিন কোনও অজুহাত দেয় না: ‘এমনকি সেগুলিকে সংশ্লিষ্ট মানদণ্ডের প্রতি ‘ব্লাইন্ড’ বা ‘নির্বিকার’ হওয়ার জন্য প্রোগ্রাম করা হলেও অ্যালগরিদমগুলির পক্ষে লিঙ্গবৈষম্য করা সম্পূর্ণ সম্ভব।’ এগুলি নিয়োগ, কর্মসংযুক্তি এবং কর্মক্ষমতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কঠোর পক্ষপাতগুলিকে শনাক্ত করতে পারে।

এআই-তে প্রায়শই উপেক্ষিত, কিন্তু কিছু মৌলিক কাজ, যেমন ডেটা লেবেলিং, সম্পূরক আয়ের সন্ধানকারী তরুণীদের জন্য সুযোগ প্রদান করছে। ভারত একটি ডেটা লেবেলিং হাব হিসাবে উদ্ভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্লেমেন্ট এবং আইমেরিট-এর মতো সংস্থা তাদের অনন্য অবস্থান ব্যবহার করে নারীদের কাজের সময়সীমা ও অবস্থান এবং দক্ষতা উভয় ক্ষেত্রেই নমনীয়তা প্রদান করতে পারে যাতে তাঁরা এআই পরিসরে অন্যান্য জীবিকার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন। সামনের দিকে তাকালে কয়েক জন বিশ্লেষক এআই এবং অটোমেশনকে একটি সমতা প্রদানকারী বলে মনে করেন: ‘বর্তমানে নিযুক্ত ২০% নারী ২১% পুরুষের তুলনায় ২০৩০ সালের মধ্যে অটোমেশনের দরুন তাঁদের চাকরি হারাতে পারেন’। কিন্তু ‘আজকের তুলনায় ২০৩০ সালের মধ্যে ২০% বেশি নারী কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন, পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ১৯%।’

ইতিমধ্যেই মানুষের জীবনের অন্যান্য ‘দৈনন্দিন’ অপরিসরে এআই-এর ইতিবাচক সুবিধা পরিলক্ষিত হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, সোশ্যাল মিডিয়া দ্বারা নারীদের ক্ষমতায়নের কথা। অ্যালগরিদমগুলি আমাদের মধ্যকার ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি করে, সম্প্রদায়ের ভাবনা জাগিয়ে তোলে এবং সাধারণ কারণগুলিকে কেন্দ্র করে মানুষকে একজোট হতে সাহায্য করে। সোশ্যাল মিডিয়া মঞ্চগুলি নারী উদ্যোক্তাদের ও ছোট ব্যবসার জন্য আরও বৃহত্তর ভোক্তাদের কাছে পৌঁছনো এবং অনলাইন সম্পৃক্ততার মাধ্যমে উন্নতির সুযোগ প্রদান করে। অন্যদের মধ্যে ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউবে্র মতো মঞ্চে অসামান্য নারী কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের উত্থান প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে। অন্যদের সঙ্গে এঁরাও চিরাচরিত নিয়মের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন এবং অন্যদের অনুপ্রাণিত করছেন।

সামনের দিকে তাকালে কয়েক জন বিশ্লেষক এআই এবং অটোমেশনকে একটি সমতা প্রদানকারী বলে মনে করেন: ‘বর্তমানে নিযুক্ত ২০% নারী ২১% পুরুষের তুলনায় ২০৩০ সালের মধ্যে অটোমেশনের দরুন তাঁদের চাকরি হারাতে পারেন’। কিন্তু ‘আজকের তুলনায় ২০৩০ সালের মধ্যে ২০% বেশি নারী কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন, পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ১৯%।’

এ ছাড়াও এআই-কে কাজে লাগানোর জন্য অন্যান্য সৃজনশীল উপায় রয়েছে: এআই-চালিত মঞ্চগুলি স্টেম-এ নারীদের জন্য নেটওয়ার্কিং বা সংযোগ স্থাপন এবং পরামর্শদানের সুযোগগুলিকে সহজতর করতে পারে৷ যে কোনও বাধার প্রাচীর একা ভাঙা সম্ভব নয়। পরামর্শদাতা, সহকর্মী এবং শিল্প পেশাদারদের সঙ্গে নারীদের সংযুক্ত করে এআই একটি সহায়তামূলক বাস্তুতন্ত্র তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে, যেটি কর্মজীবনে বৃদ্ধি এবং অগ্রগতিকে উত্সাহিত করে।

এআই কোনও একক, সোজাসাপটা, সুবর্ণ ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দেয় না। জেন্ডার-ব্লাইন্ড বা লিঙ্গ-নির্বিকার পদ্ধতির মাধ্যমে লিঙ্গ সমতা অর্জন করা যায় না। নমনীয়তা প্রদানের পাশাপাশিই গিগ ওয়ার্ক বা স্বাধীন কাজ কাজের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে না। অনলাইন পরিসরে নারীরা এখনও অসামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘনিষ্ঠতার চেষ্টা, হয়রানি, হিংসার হুমকি এবং সূক্ষ্ম, কপট যৌনতার শিকার। এবং যে কোনও সংখ্যক নারী-কেন্দ্রিক মঞ্চের এই সত্য থেকে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয় যে, স্টেম-এ নারীদের প্রতিনিধিত্ব একটি কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার চেকবক্স নয় বা এমন একটি সমস্যা নয় যা একটি সংস্থার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নেহাত প্রান্তিক।

সমতার পথে কারিগরি শিল্পের মধ্যে বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তির সংস্কৃতি তৈরি করা জরুরি, যেখানে নারী ও নিম্ন প্রতিনিধিত্বকারী গোষ্ঠীগুলির নিজস্ব পরিসর বা অধিকার রয়েছে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াগুলিতেও তাদের কণ্ঠস্বর শোনা যায়। এক দিকে যখন নারীদের নিজেদের এবং অন্য নারীদের হয়ে আওয়াজ তুলতে হবে, তেমন অন্য দিকে আমাদের পুরুষ সহকর্মীদের এই বিষয়ে নিজেদের অপ্রাসঙ্গিক মনে করলে চলবে না।

অনলাইন পরিসরে নারীরা এখনও অসামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘনিষ্ঠতার চেষ্টা, হয়রানি, হিংসার হুমকি এবং সূক্ষ্ম, কপট যৌনতার শিকার।

এবং এ কথাও সত্য যে, নারীদের নিয়ে কথা বলা (যেমন শুধুমাত্র পুরুষ সদস্যবিশিষ্ট প্যানেলে নারী প্রতিনিধিত্বের গুরুত্ব আলোচনা) এবং অবস্থা কী করে সার্থকভাবে উন্নত করা যায়, সে বিষয়ে একটি সদর্থক আলোচনার মধ্যে ফারাক রয়েছে।


তৃষা রায় অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সেন্টার ফর সিকিউরিটি, স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড টেকনোলজির ডেপুটি ডিরেক্টর।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.