একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিসর হিসাবে সাইবার নিরাপত্তার সঙ্গে জাপানের সম্পৃক্ততা ২০০০ সাল থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বিকশিত হয়েছে, যখন সরকার বিষয়টির গুরুত্ব সম্পর্কে প্রথম সচেতনতা দেখায় তার অ্যাকশন প্ল্যান ফর এস্ট্যাবলিশিং ইনফরমেশন সিস্টেম প্রোটেকশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এই স্বীকৃতি জাপানের সাইবার প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে একাধিক উদ্যোগকে উৎসাহিত করেছে, যার মধ্যে রয়েছে সাইবার-সন্ত্রাসবাদের উপর বিশেষ কর্ম পরিকল্পনা এবং তথ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বোধনী জাতীয় কৌশল, যা প্রাথমিকভাবে অপরাধ প্রতিরোধ ও পরিকাঠামো উন্নয়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে একটি প্রতিরোধমূলক পদ্ধতি গ্রহণ করেছিল। ২০১৪ সালে বেসিক অ্যাক্ট অন সাইবার সিকিউরিটি প্রণয়নের মাধ্যমে জাপানের সাইবার নিরাপত্তা পরিকাঠামোর ভিত্তি আরও মজবুত হয়, যার ফলে সাইবার সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজিক হেডকোয়ার্টার এবং সাইবার সিকিউরিটি কাউন্সিল তৈরি হয়। পরবর্তীকালে, সাইবার নিরাপত্তা কৌশল প্রবর্তনের মাধ্যমে ২০১৫ সালে জাপানের সাইবার নিরাপত্তা কৌশলের ভূচিত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়, যা প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং বৈদেশিক ও প্রতিরক্ষা নীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি স্বতন্ত্র ক্ষেত্র হিসেবে পরিসরটির উত্থানকে চিহ্নিত করে।
২০১৪ সালে বেসিক অ্যাক্ট অন সাইবার সিকিউরিটি প্রণয়নের মাধ্যমে জাপানের সাইবার নিরাপত্তা পরিকাঠামোর ভিত্তি আরও মজবুত হয়, যার ফলে সাইবার সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজিক হেডকোয়ার্টার এবং সাইবার সিকিউরিটি কাউন্সিল তৈরি হয়।
টোকিওর সাইবার নিরাপত্তা কৌশলটি সাইবার হুমকির ক্রমবর্ধমান জটিলতা মোকাবিলায় একটি শক্তিশালী গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) ফোকাসের উপর জোর দেয়, এবং বিশেষ করে ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি)-এর উত্থানের সঙ্গে নেটওয়ার্ক, হার্ডওয়্যার ও সফ্টওয়্যার-এর সাইবার নিরাপত্তা প্রযুক্তি উন্নত করার জন্য বিভিন্ন শিল্পের অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার পক্ষে কথা বলে। এই কৌশলটির লক্ষ্য হল উন্নত সাইবার-আক্রমণের বিরুদ্ধে সনাক্তকরণ ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা, এবং সাইবারস্পেস ও ভৌত বাস্তবতার আন্তঃসংযুক্ততা তুলে ধরে আইনি, নীতি ও প্রযুক্তিগত পরিসরগুলিতে বিস্তৃত বহু-বিভাগীয় গবেষণাকে সমর্থন করা। স্বায়ত্তশাসিত সাইবার প্রতিরক্ষা সক্ষমতার জন্য মূল প্রযুক্তিগুলি সুরক্ষিত করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, এবং সেইসঙ্গে অগ্রগামী সাইবার নিরাপত্তা সমাধানগুলি বিকাশের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিকেও। অন্যদের মধ্যে কাউন্সিল ফর সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন পরিবর্তনশীল সাইবার হুমকির ভূচিত্রের মধ্য দিয়ে এগোতে এবং অংশীদারদের স্বার্থের সঙ্গে সারিবদ্ধ করার জন্য শিল্প-অ্যাকাডেমিয়া-জনগণ সমন্বয়কে উন্নত করেছে।
তার সাইবার নিরাপত্তা পরিকল্পনা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে জাপান সাইবার নিরাপত্তা ক্ষমতা এবং কর্মীদের উন্নতির জন্য তার প্রতিরক্ষা বাজেট উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। ২০২০ অর্থবছরে সাইবার নিরাপত্তার জন্য আনুমানিক ২৫.৬ বিলিয়ন ইয়েন (২৩৭.১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বরাদ্দ করা হয়েছিল, যার মধ্যে দূষিত ইমেলগুলি সনাক্তকরণ ও সাইবার হুমকি মূল্যায়নের জন্য একটি এআই-চালিত সিস্টেমের বিকাশ এবং সাইবার প্রতিরক্ষা গ্রুপের কর্মীদের সম্প্রসারণ অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই বিনিয়োগটি প্রতিরক্ষা বাজেটে টানা নয় বছরের বৃদ্ধির অংশ, যা সাইবার নিরাপত্তায় চলতি বিনিয়োগের উপর জোর দেয়। উপরন্তু, ২০২০ সালের মার্চ মাসে একটি উন্নত ভেহিকল-মাউন্টেড নেটওয়ার্ক ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম (নিউজ) স্থাপন এবং ২০২১ সালের মার্চ মাসে একটি ইলেকট্রনিক যুদ্ধ ক্ষমতা ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা জাপানের ইলেকট্রনিক যুদ্ধের ক্ষমতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে, এবং জাতীয় প্রতিরক্ষায় ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রাম-এর কৌশলগত গুরুত্বকে স্বীকৃতি দেয়।
স্বায়ত্তশাসিত সাইবার প্রতিরক্ষা সক্ষমতার জন্য মূল প্রযুক্তিগুলি সুরক্ষিত করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, এবং সেইসঙ্গে অগ্রগামী সাইবার নিরাপত্তা সমাধানগুলি বিকাশের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিকেও।
২০১৭ গ্লোবাল সাইবারসিকিউরিটি ইনডেক্স (জিসিআই) ১৫৭টি প্রশ্নের সমন্বিত একটি প্রশ্নাবলির উত্তরের উপর ভিত্তি করে পাঁচটি স্তম্ভ জুড়ে — আইনি, প্রযুক্তিগত, সাংগঠনিক, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সহযোগিতা — সাইবার নিরাপত্তার প্রতি দেশের প্রতিশ্রুতি মূল্যায়ন করে। জাপান এই সূচকে ০.৭৮৬ স্কোর সহ দ্বাদশ স্থানে রয়েছে, যা সাইবার নিরাপত্তার জন্য একটি শক্তিশালী জাতীয় প্রতিশ্রুতি নির্দেশ করে, যদিও দেশের সাইবার প্রতিরক্ষা ক্ষমতাগুলিকে আরও উন্নয়ন ও পরিপক্বতার প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও, জাপানের প্রচেষ্টাগুলি জিসিআই-এর 'গতিশীল' পর্যায়ের ১৬টি অ্যাকশন আইটেমের সঙ্গে সারিবদ্ধ, যা তার সাইবার নিরাপত্তা ভঙ্গি শক্তিশালী করার অগ্রগতি প্রদর্শন করে।
তার সাইবার প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একটি কৌশলগত পদক্ষেপে জাপান সরকার ১৬ ডিসেম্বর ২০২২-এ জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল (এনএসএস) ও প্রতিরক্ষা বিল্ডআপ প্রোগ্রাম (ডিবিপি)-সহ গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা নথি অনুমোদন করেছে৷ এই নথিগুলি আসন্ন দশকে জাপানের কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা কৌশলগুলির রূপরেখা দেয়, এবং ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা ভূচিত্র, বিশেষ করে চিনের সামরিক সম্প্রসারণের প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। সংশোধিত এনএসএস বর্ধিত প্রতিরক্ষা বাজেট, বর্ধিত-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সংগ্রহ এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রপ্তানির জন্য সমর্থনের পক্ষে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলি চিহ্নিত করে। এটি উল্লেখযোগ্যভাবে সাইবার নিরাপত্তা বাড়ানো, তথ্য যুদ্ধের ক্ষমতার বিকাশ এবং সক্রিয় সাইবার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দেয়।
এই উদ্যোগগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিদেশ মন্ত্রক ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রক তথ্য পরিসরের উচ্চতর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করতে প্রস্তুত, এবং সাইবার কর্মী ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বৃদ্ধি করে ডিবিপি লক্ষ্য পূরণের দিকে এগোচ্ছে। ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনসিডেন্ট রেডিনেস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি ফর সাইবারসিকিউরিটি (এনআইএসসি) ২০১৫ সালে জাপান সেলফ-ডিফেন্স ফোর্স (জেএসডিএফ) ও পুলিশের পাশাপাশি নীতি ও সাইবার ইউনিটকে নির্দেশ করার জন্য একটি পুনর্গঠিত কেন্দ্র হিসাবে গঠিত হয়েছিল। এই উন্নয়নগুলি ব্যাপক আইনি কাঠামোর মাধ্যমে এর সাইবার প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করার প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতার উপর জোর দেয়। যাই হোক, এই অগ্রগতি সত্ত্বেও, জাপান এখনও সাইবার প্রতিরক্ষার জন্য একটি স্বতন্ত্র কৌশল প্রণয়ন করতে পারেনি; পরিবর্তে এই বিবেচনাগুলিকে বৃহত্তর জাতীয় প্রতিরক্ষা কাঠামো যেমন ডিফেন্স হোয়াইট পেপার এবং ন্যাশনাল ডিফেন্স প্রোগ্রাম নির্দেশিকাগুলির মধ্যে একীভূত করতে বেছে নিয়েছে।
ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনসিডেন্ট রেডিনেস অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি ফর সাইবারসিকিউরিটি (এনআইএসসি) ২০১৫ সালে জাপান সেলফ-ডিফেন্স ফোর্স (জেএসডিএফ) ও পুলিশের পাশাপাশি নীতি ও সাইবার ইউনিটকে নির্দেশ করার জন্য একটি পুনর্গঠিত কেন্দ্র হিসাবে গঠিত হয়েছিল।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি কাউন্টার-সাইবার অ্যাটাক গ্রিড তৈরি করার জন্য জাপান সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছে, যার লক্ষ্য তার মিত্রতা বাড়ানো এবং সাইবার হুমকি থেকে রক্ষা করা। এই উচ্চাভিলাষী উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ জুড়ে সাইবার প্রতিরক্ষার একটি সহযোগী নেটওয়ার্ক স্থাপন, এবং প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানো। এই পদক্ষেপটি একটি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য জাপানের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, যা রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং বিশেষ করে চিনের মতো শক্তির ক্রমবর্ধমান প্রভাব প্রতিহত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। জাপানের লক্ষ্য হল সাইবার আক্রমণ আগে থেকে প্রতিহত করা, এইভাবে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এবং এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। এই লক্ষ্যে, জাপানের বিদেশ মন্ত্রক দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলির সঙ্গে শক্তিশালী অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সাইবার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য, ২০২৪ সালের খসড়া বাজেটে ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের প্রস্তাব করেছে, যার ফলে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি, সংযোগ এবং নিরাপত্তার উন্নতি হবে। তদুপরি, জাপান কোয়াড এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলির সংস্থার (আসিয়ান) মধ্যে তার সাইবার ক্ষমতা প্রসারিত করছে। সাইবারস্পেস সুরক্ষিত করা এবং বিভিন্ন যৌথ কার্যক্রম, সেমিনার ও অনুশীলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সহযোগিতা বাড়ানোর উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ন্যাটোর সঙ্গে এর অংশীদারিত্বও বছরের পর বছর ধরে গভীর হয়েছে। এই সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার একটি মাইলফলক ছিল ২০২০ সালে ইন্ডিভিজুয়াল পার্টনারশিপ অ্যান্ড কোঅপারেশন প্রোগ্রাম স্বাক্ষর করা, যা সাইবার নিরাপত্তায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রতি জাপানের প্রতিশ্রুতির উদাহরণ দেয়।
এই অগ্রগতিগুলি টোকিওর একটি নেতৃস্থানীয় "সাইবার শক্তি" হয়ে ওঠার অভিপ্রায়কে ইঙ্গিত করে। এটি এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি যা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আবে শিনজোর প্রশাসনের অধীনে গতি লাভ করেছিল, এবং যা ক্রমবর্ধমান সাইবার হুমকির গুরুতর নিরাপত্তা প্রভাবকে স্বীকৃতি দেয়৷ জাপান শুধুমাত্র তার অভ্যন্তরীণ নীতি কাঠামো এবং প্রতিরক্ষামূলক সাইবার নিরাপত্তা সক্ষমতা বাড়ায়নি, বরং চিন থেকে সাইবার হুমকির সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার কৌশলগুলি সারিবদ্ধ করছে। সাইবার নিরাপত্তার উপর বর্ধিত গুরুত্ব জাপানের নিরাপত্তা ভঙ্গিতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের উপর জোর দেয়, এবং প্রতিরক্ষা ও কৌশলে সাইবার নিরাপত্তার অপরিহার্য ভূমিকা স্বীকার করে। 'ক্রস-ডোমেন' অপারেশনগুলিকে একীভূত করার লক্ষ্যের সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য জাপানের প্রচেষ্টাগুলি স্থল, সমুদ্র, বায়ু এবং মহাকাশ জুড়ে তার প্রতিরক্ষা ক্ষমতাকে রূপান্তরিত করছে, যা তার জাতীয় এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা কৌশলে একটি রূপান্তর চিহ্নিত করছে।
প্রত্নশ্রী বসু অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন সহযোগী ফেলো
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.