-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ভারত যখন এক দিকে পহেলগাঁওয়ের হতাহতদের জন্য শোক প্রকাশ করছে, তখন তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্য চাপও বৃদ্ধি পেয়েছে। কৌশলগত এবং রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া সবেমাত্র শুরু হয়েছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের (ইউটি) পহেলগাঁও এলাকায় পাকিস্তান-সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসবাদীদের হাতে দুই ডজনেরও বেশি হিন্দু পর্যটকের হত্যাকাণ্ড অঞ্চলটিকে একটি গুরুতর সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিয়েছে, যা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাতের সূচনা করতে পারে। এই হামলা যতটাই ভয়াবহ এবং ঘৃণ্য ছিল, ততটাই ছিল প্রত্যাশিতও। একাধিক লক্ষণ ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী-নিয়ন্ত্রিত হাইব্রিড বা মিশ্র সরকার কাশ্মীরে কিছু ঘটানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এই হামলার নেপথ্যে দু’টি কারণ রয়েছে। প্রথম খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তানে ঘটে চলা জোড়া বিদ্রোহে ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ দর্শিয়ে পাকিস্তান চেয়েছে ভারতকে উচিত শিক্ষা দিতে। এবং অন্য দিকে পাকিস্তান সে দেশের জনগণকে একত্রিত করে সেনাবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করতেও মরিয়া হয়ে উঠেছে। কারণ পাকিস্তান জানে, ভারতের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘর্ষের কারণ দর্শিয়েই একমাত্র এমনটা করা সম্ভব। আর একটি সম্ভাব্য কারণ ছিল এই যে, পাকিস্তান মনে করেছিল, জম্মু ও কাশ্মীর থেকে সন্ত্রাসবাদ কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে এবং তারা কাশ্মীরের পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে।
একাধিক লক্ষণ ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী-নিয়ন্ত্রিত হাইব্রিড বা মিশ্র সরকার কাশ্মীরে কিছু ঘটানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।
হামলার সময়কালেও সুনির্দিষ্ট বিন্যাস লক্ষ করা গিয়েছে। যখনই কোনও মার্কিন বিশিষ্ট ব্যক্তি উচ্চ পর্যায়ের সফরে ভারতে এসেছেন, তখনই এই ধরনের কোনও না কোনও বড় সন্ত্রাসবাদী হামলা ঘটেছে। পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সফর ভারত ও বিশ্বব্যাপী খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে। এর পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী মোদীও সৌদি আরব সফর করছিলেন, যাকে একটি ঐতিহাসিক সফর হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছিল এবং যে সফরের ফলে অগ্রগতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল যথেষ্ট। উপরোক্ত ঘটনাবলির ধারাবাহিকতা কাশ্মীরে আক্রমণ করা, কাশ্মীরকে ফের আলোচনায় তুলে আনা এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর সৌদি আরব সফরকে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য এক আদর্শ মুহূর্তে পরিণত হয়েছিল।
গণহত্যার কয়েকদিন আগে পাকিস্তানের শাসক তথা সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির ‘দ্বি-জাতি’ তত্ত্বের সমালোচনা করেছিলেন এবং কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘জুগুলার ভেন’ বা ‘ঘাড়ের শিরা’ বলে অভিহিত করেছিলেন, যার প্রত্যাশা তারা কখনও ত্যাগ করতে পারে না। একই সঙ্গে মুনির বলেন যে, ভারতের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের (জম্মু ও কাশ্মীরের বেশিরভাগ সন্ত্রাসবাদীই পাকিস্তানের পাঞ্জাবি মুসলিম) লড়াইয়ের কথা পাকিস্তানিরা ভুলে যেতে পারে না। মুনিরের বক্তব্য স্পষ্টতই দর্শায় যে, তিনি পাকিস্তানি ইসলামপন্থী জিহাদি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে সক্রিয় তাদের সহযোগীদের সমর্থন বৃদ্ধি করতে চলেছেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রচারকরা - যাদের মধ্যে নাজাম শেঠির মতো সাংবাদিকরাও রয়েছেন - টেলিভিশনের সংবাদ অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, কাশ্মীর উত্তপ্ত হতে চলেছে। তাই পহেলগাঁওয়ের হত্যাকাণ্ডে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
এই হত্যাকাণ্ডের প্রতি পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া প্রত্যাশামাফিক এবং তা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলবে। জিহাদি ও প্রক্সিদের দ্বারা বেসামরিক নাগরিকদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ন্যূনতম লজ্জিত বা অনুতপ্ত না হয়ে পাকিস্তান নিজের দায় অস্বীকার করেছে এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঘটনা থেকে মনোযোগ সরানোর জন্য এবং পরিস্থিতিকে আরও ঘোলা করার জন্য নিজেদের মুখপাত্রকে এগিয়ে দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া তাদের আদর্শ নীতি অনুসরণ করেছে এবং তা হল একটি রীতিমাফিক নিন্দা জানানো, এটিকে ট্রোল ও রাজনীতিবিদদের তরফে আনা ‘মিথ্যা হামলা’র ঘটনা হিসেবে তুলে ধরা এবং একই সঙ্গে ভারত কোনও পদক্ষেপ নিলে তার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ব্যাপক ও অপ্রতিসম প্রতিশোধের হুমকি দেওয়া। এবং খুব বেশি হলে, ভারতের প্রদত্ত প্রমাণের ভিত্তিতে সহযোগিতা ও তদন্তের প্রস্তাব দেওয়া।
উপরোক্ত ঘটনাবলির ধারাবাহিকতা কাশ্মীরে আক্রমণ করা, কাশ্মীরকে ফের আলোচনায় তুলে আনা এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর সৌদি আরব সফরকে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য এক আদর্শ মুহূর্তে পরিণত হয়েছিল।
এখন ভারত সরকারের উপর চাপ হল, দেশকে এই সন্ত্রাসবাদী হামলার জবাব দিতে হবে। এ কথা সহজেই অনুমেয় যে, এই সন্ত্রাসবাদী হামলার ফলে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে সামরিক ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে। অবশ্যই এর প্রথম প্রভাব পড়বে কাশ্মীর উপত্যকায় ক্রমবর্ধমান পর্যটনের উপর, যা পর্যটনের উপর নির্ভরশীল হাজার হাজার কাশ্মীরির জীবন ও জীবিকাকে প্রভাবিত করবে। কিন্তু পাকিস্তান কাশ্মীরিদের কল্যাণের কথা কখনওই চিন্তা করে না এবং একজন কাশ্মীরিও বেঁচে থাকা পর্যন্ত পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাবে। স্বভাবসিদ্ধ ভাবেই এই হামলার ঘটনায় ভারতের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক তরজা ও দোষারোপের খেলা শুরু হয়েছে – বিশেষ করে সেই সকল রাজনৈতিক দলের তরফে, যারা সন্ত্রাসবাদী ও তাদের পৃষ্ঠপোষক দেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবির বিরুদ্ধে সরকারকেই দোষ দিতে বেশি আগ্রহী। এর মধ্যে রয়েছে ভারতে উপস্থিত পাকিস্তানি লবি, যার মধ্যে প্রাক্তন গুপ্তচর থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী-সহ একাধিক ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত। তবে এই বিশৃঙ্খলা সরকারকে তার অবশ্য কর্তব্য থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না।
ভারতের সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা হল পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি ও তাদের মদতদাতাদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া। ২০১৬ সালে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ও ২০১৯ সালে বালাকোট বিমান হামলার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার ফাঁদের’ সম্মুখীন হয়েছিলেন, তারই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। পদক্ষেপ না নিলে তিনি কেবল রাজনৈতিক সমর্থনই হারাবেন না, বরং পূর্ববর্তী হামলাগুলির সময়ে যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা হয়েছিল, সেটিকেও ক্ষুণ্ণ করবেন। যতক্ষণ না ভারত এই সংঘাতে অংশ গ্রহণ করা এবং পাকিস্তানের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে সামরিক ভাবে প্রস্তুত হতে পারছে, ততক্ষণ পর্যন্ত যে কোনও সামরিক পদক্ষেপের প্রভাব সীমিতই থাকবে। তা না হলে মানুষের জীবন ও সামরিক, এমনকি বেসামরিক সম্পদেরও ক্ষতি হবে। যদি ভারত এই সংঘর্ষে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ার যোগ্য জবাব না দিতে পারে, তার অর্থ হবে এই যে, আসলে পাকিস্তান প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, ভারত নয়। ২০১৯ সালে পাকিস্তানের অপারেশন সুইফট রিটর্টের প্রতিক্রিয়া জানাতে ভারত অস্বীকৃত হলে এমনটাই ঘটেছিল।
ভারতের সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা হল পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি ও তাদের মদতদাতাদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া।
বালাকোট হামলা পাকিস্তানকে এই বার্তাই পৌঁছে দিয়েছিল যে, ভারত লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত এবং সেই সময় ভারত কয়েক বছরের জন্য হলেও পাকিস্তানের তরফে সন্ত্রাসবাদ রফতানির কাজটি বন্ধ করতে সমর্থ হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও পাকিস্তান এমনটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল যে, দরকার পড়লে তারাও প্রতিশোধ নেবে। কিন্তু সেই প্রতিশোধ হবে প্রতিক্রিয়াভিত্তিক এবং কখনওই তা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে পরিণত হবে না। সেই সময় ভারতের বোঝা উচিত ছিল, পাকিস্তান মরিয়া হয়ে এই আশাই করছে যে, এই প্রতিশোধমূলক বিনিময়ের পরে ভারত আর চাপানউতোর বৃদ্ধির পথে হাঁটবে না। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের বর্তমান স্পিকার সেই সময় বলেছিলেন যে, পূর্ণাঙ্গ সংঘর্ষের সম্ভাবনায় পাকিস্তানি প্রশাসন ‘অত্যন্ত দুশ্চিন্তায় ছিল ও ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।’ পরে দেখা গেল, তৎকালীন সেনাপ্রধান কামার বাজওয়া সাংবাদিকদের বলেছিলেন যে, পাকিস্তান যুদ্ধের জন্য কোনও মতেই প্রস্তুত নয়। কারণ তাদের সামরিক শক্তি হ্রাস পেয়েছে।
তবুও একই প্রশ্ন আবার ভারতের সামনে তুলে ধরা উচিত – ভারত কি পূর্ণাঙ্গ সংঘর্ষের পথে হাঁটবে না কি শত্রু পিছু হঠে না যাওয়া পর্যন্ত সামরিক পদক্ষেপই নেবে? এক বার সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হলে এটি কী ভাবে এবং কত দিন চলবে, তা নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয়। তাই প্রশ্ন হল: ভারতের কাছে কি পর্যাপ্ত পরিমাণে কামান, ক্ষেপণাস্ত্র, বিমান যুদ্ধাস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামের মজুদ আছে? না কি ভারত আবারও জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্র ক্রয়ের জন্য ফ্রান্স ও ইজরায়েলের মতো দেশগুলির দিকে ঝুঁকবে? যদি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতেই হয়, তাহলে অস্ত্রাগারে কমপক্ষে কয়েক হাজার অস্ত্র থাকতে হবে এবং হাতেগোনা কয়েকটি অস্ত্র থাকলে চলবে না। ‘অপর পক্ষ একটি সীমা অতিক্রম করে আর এগোবে না’… এই ধারণার উপর ভিত্তি করে গৃহীত যে কোনও পদক্ষেপই অগ্রহণযোগ্য, অপ্রতিরোধ্য এবং বিপজ্জনক রকমের
বিভ্রান্তিকর।
ভারত পাকিস্তানকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে ও সীমান্ত পেরিয়ে ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানকে ধাঁধায় ফেলতে পারে, যাতে দেশটি নিজের সৈন্যদের পশ্চিমাঞ্চলে পুনরায় মোতায়েন না করতে পারে, যেখানে ইতিমধ্যে দু’টি অভ্যুত্থান জারি রয়েছে।
যা-ই হোক না কেন, ভারতের বিকল্প হল নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর যুদ্ধবিরতি বাতিল করা এবং কামান ও রকেট ব্যবহার করে পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরের (পিওকে) ভিতরের ঘাঁটিগুলিকে ধ্বংস করা। পাকিস্তান নিঃসন্দেহে প্রতিশোধ নেবে। কিন্তু ভারতের কি বেসামরিক জনগণ ও সামরিক কর্মীদের সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে না কি ভারত চার বছরের যুদ্ধবিরতি শুধুমাত্র প্রস্তুতিহীনতায় কাটিয়েছে? নিয়ন্ত্রণ রেখা উত্তপ্ত করে ও আন্তর্জাতিক সীমান্ত জুড়ে সামরিক চাপ প্রয়োগ করে ভারত পাকিস্তানকে তার বেশির ভাগ বাহিনীকে নিজেদের পূর্বাঞ্চলে সরিয়ে নিয়ে যেতে এবং প্রেরণ করতে বাধ্য করতে পারে। ভারত পাকিস্তানকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে ও সীমান্ত পেরিয়ে ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানকে ধাঁধায় ফেলতে পারে, যাতে দেশটি নিজের সৈন্যদের পশ্চিমাঞ্চলে পুনরায় মোতায়েন না করতে পারে, যেখানে ইতিমধ্যে দু’টি অভ্যুত্থান জারি রয়েছে। এটি পাকিস্তানি বাহিনীর উপর অসম্ভব চাপ সৃষ্টি করবে। এই সম্ভাবনা রয়েছে যে, তারা তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের সঙ্গে একটি চুক্তিতে আসার চেষ্টা করবে এবং পশ্চিমিদের কাছ থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে তাদের দাবিও মেনে নেবে। পাকিস্তানের নিরাপত্তার নিরিখে এর প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকারক। বিকল্প ভাবে পাকিস্তান দুই ফ্রন্টের পরিস্থিতিতে আটকা পড়বে। উপরন্তু, পাঞ্জাবকে কেন্দ্র করে এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জল চুরির পরিকল্পনার কারণে সিন্ধু উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, যা আর একটি ফ্রন্ট খুলতে পারে এবং ভারতও সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে। সিন্ধু অঞ্চলের মরুকরণের বিনিময়ে পাকিস্তানকে সবুজায়ন করার সেনাবাহিনীর পরিকল্পনাও মাঠে মারা যেতে পারে। কারণ সিন্ধু অঞ্চলকে শান্ত রাখতে গেলে সেনাবাহিনীকে নিজেদের পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হবে, যা সেনাবাহিনীর মর্যাদা ও ক্ষমতার জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে।
সীমান্ত উত্তপ্ত করার পাশাপাশি ভারত কামান, বিমান বাহিনী বা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি এবং সম্ভবত পাকিস্তানের সামরিক কেন্দ্রগুলিকে লক্ষ্য করে হামলা চালাতে পারে। নিশ্চিত ভাবেই, পাকিস্তান এর প্রতিক্রিয়া জানাবে। ভারতকে সেই আক্রমণগুলি সহ্য করতে হবে এবং পূর্ণাঙ্গ সংঘর্ষের পথে এগোতে হবে। আর একটি দিক, অর্থনৈতিক দিকও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। ভারত একতরফা ভাবে সিন্ধু জল চুক্তি বাতিলের ঘোষণা করে দিয়েছে। আবার বিশ্ব ব্যাঙ্ক এবং অন্য বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলি থেকেও পাকিস্তানকে প্রতিহত করা হবে। পাকিস্তান নিজেকে আন্তর্জাতিক সালিশিসভার অংশ হয়ে ওঠার চেষ্টা করতে পারে। ভারতের কি সেই কূটনৈতিক প্রভাব রয়েছে, যাতে সে তার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণকারী শক্তিগুলিকে পরাজিত করতে পারে? মার্কিন ও ইউরোপীয়রা কি ভারতের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকবে না কি তারা শুধুই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবে? চিনের প্রতিক্রিয়াই বা কেমন হবে? ইসলামি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে ভারত কি চিনকে ‘হয় আমাদের পক্ষে অথবা আমাদের বিরুদ্ধে’… এই বার্তা দিতে সক্ষম হবে? এবং যদি চিন ভারতের বিরুদ্ধে যায়, তা হলে চিনের জন্য কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক পরিণতি কী হবে? ভারত কত দূর পর্যন্ত এগোতে ইচ্ছুক?
ভারত এমন এক নীতির সূচনা করতে পারে, যেখানে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ব্যবসারত যে কোনও সংস্থাকে ভারতের সঙ্গে ব্যবসা করা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে।
আর একটি যে প্রেক্ষিতকে ভারত কাজে লাগাতে পারে, তা হল অর্থনৈতিক। ভারত এখনও পাকিস্তানে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের রফতানি করে। ভারত এমন এক নীতির সূচনা করতে পারে, যেখানে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ব্যবসারত যে কোনও সংস্থাকে ভারতের সঙ্গে ব্যবসা করা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে। খেলাধূলার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও একই রকম পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। পাকিস্তান ক্রিকেট লিগের কোনও খেলোয়াড়কে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) খেলতে দেওয়া হবে না। ভারত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ও অন্যান্য খেলাধূলা থেকে পাকিস্তানকে বহিষ্কার করার জন্যও চাপ দেবে। কেউ যদি চলচ্চিত্র বা সঙ্গীত প্রযোজনার জন্য কোনও পাকিস্তানিকে নিয়োগ করে, তা হলে সেই নির্মাতাও শাস্তির আওতায় আসবেন।
পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক দিন ধরেই ভারত অনিচ্ছাসত্ত্বেও ‘সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত সহ্যসীমা’র এই চক্রে আটকে পড়েছে - কেবলমাত্র সহ্যের সীমা অতিক্রম হলেই ভারত সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। আরও খারাপ বিষয় হল এই যে, সহ্যসীমার এখনও সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। পাঁচ জন সৈনিক নিহত হলে কি সেই সীমা লঙ্ঘিত হবে? না কি দশ জন, কুড়ি জন, পঞ্চাশ জন মারা গেলে এমনটা হবে? পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদীদের হাতে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার সংখ্যা কত হলে সেই সীমা লঙ্ঘন করা হবে? ভারতের এই সহ্যসীমা সংক্রান্ত ফাঁদ অতিক্রম করে একটি কার্যকর, নির্মম ও ভয়ঙ্কর প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার সময় এসেছে আজ।
সুশান্ত সারিন অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Sushant Sareen is Senior Fellow at Observer Research Foundation. His published works include: Balochistan: Forgotten War, Forsaken People (Monograph, 2017) Corridor Calculus: China-Pakistan Economic Corridor & China’s comprador ...
Read More +