১২ নভেম্বর মনোরম দীপাবলির সকালে আবুধাবিতে অলঙ্কৃত আতশবাজির অভাব ছিল না, কারণ সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে গ্লোবাল সাউথের দাবিগুলি নিয়ে চাপ দেওয়ার জন্য ৬১টি দেশের ১০০ জনেরও বেশি প্রতিনিধির একটি বৈচিত্র্যময় দল মিলিত হয়েছিল। দিল্লিভিত্তিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন এই বিশেষ সম্মেলনের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরশাহির এমিরেটস পলিসি সেন্টারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেছিল, যাতে নিশ্চিত করা যায় যে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে যে সুপারিশগুলি ভারতের জি২০ সভাপতিত্বের সময় কঠোর পরিশ্রমের সঙ্গে তৈরি করা হয়েছিল তা বিশ্বস্ততার সঙ্গে কপ২৮–এ প্রেরণ করা হয়। কপ২৮ সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে ৩০ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে এবং ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।
আবুধাবি সম্মেলনটি জলবায়ু সক্রিয়তার জন্য এমন চারটি মূল থিমের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে যা সারা বছর ধরে অনুরণিত হয়েছে এবং গ্লোবাল সাউথের প্রধান উদ্বেগগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করেছে:
১। সকলের জন্য শক্তি সমৃদ্ধি
আমাদের গ্রহকে ১.৫ ডিগ্রি লাল রেখার মধ্যে থাকতে সক্ষম করার জন্য সবুজ ও পরিচ্ছন্ন শক্তির উৎসের দিকে পরিবর্তনের বৈশ্বিক আবশ্যিকতাকে অবশ্যই শক্তির ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচারের নীতিনির্ভর হতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলির বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার মূল্যে শক্তির স্থানান্তরকরণ চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। জি২২–এর ভারতীয় প্রেসিডেন্সির সময় গঠিত এনার্জি ট্রানজিশন ওয়ার্কিং গ্রুপ চারটি গুরুত্বপূর্ণ সভা করেছে এবং শক্তি পরিবর্তনে ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য ছয়টি স্বতন্ত্র অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র নিয়ে এসেছে আমাদের ‘এক পৃথিবী’র নিরাময়ের লক্ষ্যে, আমাদের ‘এক পরিবার’–এর মধ্যে সম্প্রীতি তৈরি করার লক্ষ্যে, এবং আমাদের ‘এক ভবিষ্যৎ’–এর জন্য আশা প্রদান করতে।
২। জলবায়ু এবং প্রযুক্তি
যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ভূমিকা ব্যাপকভাবে স্বীকৃত, বৈশ্বিক প্রযুক্তি স্থানান্তর প্রক্রিয়া সহজতর করার জন্য মেধা সম্পত্তি অধিকার ব্যবস্থার সংস্কার এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা তৈরির জন্য আরও অনেক কিছু করার আছে। জি২০ জলবায়ুবান্ধব প্রযুক্তি গ্রহণকে ত্বরান্বিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, বিনিয়োগ ও নীতি কাঠামোর প্রয়োজনীয়তাকে সমর্থন করেছে, তবে তার জন্য আরও অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা এখন কপ২৮–এর উপর নির্ভর করছে।
৩। জলবায়ু অর্থায়ন
উন্নয়নশীল দেশগুলি যাতে নেট–শূন্য গতিপথের দিকে যেতে পারে তার জন্য বিশ্বব্যাপী জলবায়ু অর্থায়ন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা ২০০৯ সালে কোপেনহেগেনের কপ১৫ থেকে স্বীকৃত হয়েছে, যখন উন্নত দেশগুলি ২০২০ সালের মধ্যে বছরে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহের সম্মিলিত লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল। এদিকে, জলবায়ু অর্থায়নের প্রয়োজনীয়তা দ্রুতগতিতে বেড়েছে এবং জি২০ দ্বারা অনুমান করা হয়েছে যে ২০৩০ সাল পর্যন্ত ৫.৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে। এমনকি যদি ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রকৃতপক্ষে উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য প্রেরণ করা হয়, তা হলেও তা অত্যন্ত অপ্রতুল হবে। কিছু দরিদ্র ও সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশকে সাহায্য করার জন্য কপ২৭–এ ঘোষিত ক্ষয়ক্ষতি তহবিল (লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড) হল আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, কিন্তু বর্তমানে তা একটি খালি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়ে গেছে। জলবায়ু প্রশমনে সক্রিয়তা অভিযোজনের চেয়ে ১০ গুণ বেশি সংস্থান পাওয়ায় বৈশ্বিক অগ্রাধিকারের অসংবদ্ধতা প্রকট হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজন বেসরকারি ও মিশ্র অর্থের দ্বারা সম্পূরণ করা সরকারি অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি, এবং তার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (আইএফআই) ও বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাঙ্কগুলির (এমডিবি) সংস্কার ও পরিবর্ধন।
৪। জলবায়ু–স্বাস্থ্য–লিঙ্গ যোগসূত্র
জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, মরুকরণ ও দূষণের অসমতাপূর্ণ প্রভাবকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং জলবায়ু কর্মের মূলে লিঙ্গ সমতা রাখার সুপারিশগুলি ভাল ছিল। তীব্র তাপপ্রবাহ, বায়ু দূষণ ও উদীয়মান রোগের ধরনগুলির আকারে জলবায়ু নকশা পরিবর্তনের এক মারাত্মক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত পরিণতি রয়েছে, এবং তা অবশ্যই জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
জি২০ থেকে কপ২৮ পর্যন্ত একটি পথ
আবুধাবি সম্মেলনে কপ২৮–এর প্রেসিডেন্ট–নির্বাচিত ডক্টর সুলতান আল জাবেরের উপস্থিতি এই স্বস্তিকর বার্তা পাঠিয়েছিল যে আর্মেনিয়া থেকে আর্জেন্টিনা, মোজাম্বিক থেকে মরক্কো এবং জাম্বিয়া থেকে জিম্বাবোয়ে পর্যন্ত প্রতিনিধিদের কণ্ঠস্বর উচ্চ স্তরে শোনা যাচ্ছে। আল জাবের জোর দিয়ে বলেছেন যে কপ২৮ জলবায়ু কর্মকে বৃদ্ধির একটি সুযোগ হিসাবে তৈরি করবে, এবং আহ্বান জানিয়েছেন যাতে বিশ্বব্যাপী ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শক্তির রূপান্তর নিশ্চিত করার জন্য জলবায়ু অর্থ কাঠামোর রূপান্তর ঘটে। গ্লোবাল সাউথের ন্যায্য দাবির প্রতিধ্বনি করে তিনি বলেন, ‘‘১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতির মতো অপূর্ণ প্রতিশ্রুতি অবশ্যই পূরণ করতে হবে। সবুজ জলবায়ু তহবিল সম্পূর্ণরূপে পুনরায় পূরণ করা আবশ্যক। অভিযোজন অর্থায়ন দ্বিগুণ করতে হবে। এবং ক্ষয়ক্ষতির জন্য তহবিল অবশ্যই কপ২৮–এ সম্পূর্ণরূপে চালু করা উচিত... আইএফআই–গুলি এবং এমডিবি–গুলিকে জরুরিভাবে ক্রমবর্ধমান জলবায়ু চাহিদা মেটাতে তাদের কার্যনির্দেশ পুনর্বিন্যাস করতে হবে।’’ তাঁর ‘পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তিগুলি যেগুলি উত্তরে যাত্রা শুরু করছে তা অবশ্যই গ্লোবাল সাউথ জুড়ে উপলব্ধ, প্রাপ্তিযোগ্য এবং সাশ্রয়ী মূল্যের হতে হবে’ বলে আহ্বান প্রতিনিধিদের একটি স্পষ্ট আশ্বাস প্রদান করেছিল।
আল জাবের জি২০ সভাপতিত্বের মাধ্যমে ভারতের দ্বারা অনুসৃত শক্তির রূপান্তর দৃষ্টিভঙ্গিরও প্রশংসা করেছেন, এবং এমন একটি বোঝাপড়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করেছেন যেখানে বিশ্ব অর্থনীতির ৮৫% প্রতিনিধিত্বকারী দেশগুলি কপ২৮–এ নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষমতা তিনগুণ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে শক্তি দক্ষতা দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে সম্মত হয়েছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তাঁর কপ সভাপতিত্বের সময় তিনি সেই ধরনের সহযোগিতা ও বহুপাক্ষিকতার পদ্ধতি অনুসরণ করবেন যেমনটা ভারত তার জি২০ সভাপতিত্বের সময় প্রদর্শন করেছিল।
ভারত তার সভাপতিত্ব থেকে বাস্তব ফলাফল প্রদানের উপর যেভাবে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছিল, তার অনুরণন ১২৫টি দেশের অংশগ্রহণে ১২–১৩ জানুয়ারি ২০২৩–এ আয়োজিত প্রথম ভয়েস অফ দ্য গ্লোবাল সাউথ ভার্চুয়াল সামিটে এবং ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ফলোআপ ভার্চুয়াল সামিটে শোনা গিয়েছিল। ২২ নভেম্বর জি২০ ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনেও একই দৃঢ়তা দেখা গিয়েছে। আবুধাবি সম্মেলন থেকে কপ২৮ জুড়ে জরুরি কল ফর অ্যাকশন উচ্চস্বরে এবং স্পষ্টভাবে ধ্বনিত হওয়া উচিত, এবং জি২০ থেকে কপ ২৮ পর্যন্ত একটি গতিশীল ও স্থিতিশীল পথ তৈরি করা উচিত।
এই ভাষ্যটি প্রথমে ‘হিন্দুস্তান টাইমস’–এ প্রকাশিত হয়েছিল।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.