Author : Ayjaz Wani

Published on Apr 08, 2023 Updated 0 Hours ago

কাশ্মীর উপত্যকাকে অর্থনৈতিক ও আদর্শগতভাবে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে ক্ষয়িষ্ণু শিক্ষাব্যবস্থার মোকাবিলা করতে হবে

কাশ্মীরে ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা

৮ মার্চ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল (ইউটি) জম্মু ও কাশ্মীরের একটি সরকারি কলেজ অনির্দিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন বিভাগে – যেখানে কর্মীদের ঘাটতি চলছে – পাঠদানের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। সেই বিজ্ঞপ্তিতে রসায়ন বিভাগের শিক্ষকদের জনপ্রশাসন বিদ্যা পড়াতে বলা হয়েছে; অর্থনীতি পড়ানোর জন্য নিয়োগ করা হয়েছে উদ্ভিদবিদ্যার শিক্ষকদের। এর পাশাপাশি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্চ (আইসিএসএসআর) ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্থিতিশীল শহুরে অঞ্চল নির্মাণ: কাশ্মীরের বিশেষ উল্লেখ-সহ ভারতে নগরায়ণ এবং নগর পরিকল্পনা’ বিষয়ে একটি দুই দিনের জাতীয় সেমিনারের অর্থায়ন করে, যার আয়োজনের দায়িত্বে ছিল কাশ্মীর ইউনিভার্সিটির (কেইউ) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, অথচ সেই বিভাগ শহুরে বিষয় নিয়ে কাজ করে না। আদর্শগত ভাবে নগরায়ণ এবং স্থিতিশীল উন্নয়নে বিশেষীকরণের প্রেক্ষিতে আইসিএসএসআর-এর স্কুল অফ আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেসের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে উচিত ছিল। নির্দিষ্ট বিষয়ে শিক্ষকের ক্রমবর্ধমান ঘাটতির কারণে মার্চের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল এবং এই ধরনের সেমিনার থেকে শহুরে পরিবেশবিদ্যার ছাত্ররা অত্যন্ত উপকৃত হতে পারত। যাই হোক, পক্ষপাতিত্বের বিদ্যমান সংস্কৃতি এবং গুণমানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য বিবেচনার অভাব আইসিএসএসআর-এর সঙ্গে একটি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বিভাগের সংযুক্তি ঘটিয়েছে।

কাশ্মীরে দ্বন্দ্ব এবং শিক্ষাব্যবস্থা

কয়েক দশক ধরে পাকিস্তান-সমর্থিত সশস্ত্র উগ্রবাদ হাজার হাজার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, মনস্তাত্ত্বিক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে এবং রাষ্ট্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতাকেও নষ্ট করেছে। এই সংঘাত উপত্যকার শিক্ষাব্যবস্থায় দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছে, মানব পুঁজির বিকাশ ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকেও বাধা দিয়েছে। সন্ত্রাসবাদী ও রাষ্ট্রবিরোধীরা স্কুল জ্বালিয়ে দিয়েছে, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ধর্মঘট ও পাথর নিক্ষেপের ডাক দিয়েছে এবং রাষ্ট্র দ্বারা জারি করা কারফিউ ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত ধরপাকড়ের মতো ঘটনা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মাসের পর মাস ও বছরের পর বছর দূরে সরিয়ে রেখেছে।

অবনতিশীল শিক্ষার পরিবেশ এবং ব্যাপক হিংসা ও সংঘাতের ক্ষতিকর প্রভাব জনগণের মধ্যে সামাজিক-মানসিক আতঙ্ককে তীব্রতর করে তুলেছে এবং হাজার হাজার শিক্ষার্থীর জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে।

পরবর্তী কালে পাকিস্তান-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং আঞ্চলিক রাজনৈতিক নেতারা প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত ছাত্রদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদের অনুভূতি তীব্র করার জন্য লোক নিয়োগ করেছিল। ব্যাপক পক্ষপাতিত্ব এবং অবৈধ নিয়োগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে বিচ্ছিন্নতাবাদের কেন্দ্রে পরিণত করে, তরুণদের মধ্যে একটি ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ মনোভাব জাগিয়ে তোলে। শূন্য অ্যাকাডেমিক পদ পূরণের জন্য এই নিয়োজিত শিক্ষকরা দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ায় সামগ্রিক শিক্ষার ক্ষতি হয়েছে। অবনতিশীল শিক্ষার পরিবেশ এবং ব্যাপক হিংসা ও সংঘাতের ক্ষতিকর প্রভাব জনগণের মধ্যে সামাজিক-মানসিক আতঙ্ককে তীব্রতর করে তুলেছে এবং হাজার হাজার শিক্ষার্থীর জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে।

দুঃখজনকভাবে, ৩৭০ ধারা বাতিল হওয়া সত্ত্বেও এই বিরক্তিকর স্থিতাবস্থার কিছুই পরিবর্তন হয়নি। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে কেইউ-এর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান তাঁর ভাইপোর সহায়তায় সমাজবিজ্ঞান শাখার প্রধানকে লাঞ্ছনা করেন এবং উভয়ই শিক্ষার্থীদের সামনে অশ্রাব্য গালিগালাজ বিনিময় করেন। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের এই লজ্জাজনক ঘটনা শিক্ষা সংক্রান্ত ক্রমের মধ্যকার ক্ষমতার লড়াইকে উন্মোচিত করেছে। সমস্যার সমাধানে হস্তক্ষেপ করার পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সমাজবিজ্ঞানের ডিন হিসাবে উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপককে নিয়োগ করে এক অবোধ্য সমাধানপথ বেছে নেয়। আর একটি মর্মান্তিক ঘটনার উদাহরণ হল, এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ৬০,০০০ টাকা ঘুষ নেওয়ার সময় একজন অধ্যক্ষ-সহ কলেজের দুই অধ্যাপককে দুর্নীতি দমন ব্যুরো গ্রেফতার করে।

উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় অনেক অধ্যাপক ও প্রশাসক বিচ্ছিন্নতাবাদী আদর্শের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন এবং তহবিল আত্মসাৎ করে জাতীয় আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে আপস করছেন। পড়াশোনার চর্চা এবং শিক্ষাদানের প্রতি সামান্যতম গুরুত্ব না দিয়ে শিক্ষকরা কেবলমাত্র মোটা বেতনে আগ্রহী। শিক্ষকদের উদাসীন মনোভাব প্রকাশ পায় যখন সন্ধ্যার ক্লাস চলাকালীন সাপ্লিমেন্টারি সেশন (শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাড়াতে প্রশাসন এই ব্যবস্থা নিয়েছে) নেওয়ার জন্য অতিরিক্ত অর্থ পাওয়া সত্ত্বেও শিক্ষকরা কখনই দ্বিতীয় সেশনে পড়াননি। হয় শিক্ষকরা যৌথভাবে সেশন পড়াতেন অথবা মেধাবী ও উজ্জ্বল ছাত্রদের পড়াতে বলতেন।

অন্যায্য নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং কলঙ্কিত নিয়োগ সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ইউটি-র শিক্ষিত যুবকদের বিক্ষোভ একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এর ফলস্বরূপ এই অঞ্চলে শেখানো পাঠ্যক্রমটি জাতীয়তাবাদী বা বাজারমুখী নয় এবং শিক্ষার মূল ভিত্তিকে অস্বীকার করে। ব্যাপক দুর্নীতি ও কেন্দ্রমুখী প্রবণতা অনুপযুক্ত ও অযোগ্য ব্যক্তিদের চাকরি বরাদ্দ করেছে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সম্ভাবনা-সহ প্রতিভাকে দমন করেছে এবং ইউটি-র বেকারত্বের হার বাড়িয়েছে। অন্যায্য নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং কলঙ্কিত নিয়োগ সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ইউটি-র শিক্ষিত যুবকদের বিক্ষোভ একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোকসভার কক্ষে ভারত সরকারের বেকারত্ব হ্রাস পাওয়ার দাবিকে নস্যাৎ করে দিয়ে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে এই অঞ্চলে বেকারত্বের হার ২২.২ শতাংশ ছুঁয়েছিল, যা ভারতে সর্বোচ্চ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি ও পক্ষপাতিত্ব সমাজকে এতটাই নিম্নগামী করেছে যে, অধিকাংশ সরকারি চাকরিই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে, সিবিআই জম্মু ও কাশ্মীর সার্ভিস সিলেকশন বোর্ডের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অনিয়ম এবং রাজ্যের সমস্ত সরকারি ও প্যারাস্টেটাল চাকরির জন্য প্রধান নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। ইউটি প্রশাসন অভিযুক্ত ২২৭৪টি বেআইনি স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা শিক্ষা বিভাগে নিয়োগের তদন্তের জন্য একটি কমিটিও গঠন করেছে।

এই অঞ্চলের প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষয় সত্ত্বেও, ইউটি প্রশাসন নীরব দর্শক হয়েই থেকে গিয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে।

সামনের পথ

নয়াদিল্লি সফলভাবে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদের মোকাবিলা করা চেষ্টা চালালেও এই অঞ্চলের দ্বন্দ্ব-বিক্ষত শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য গুরুতর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। শিক্ষার ক্ষয়িষ্ণু পরিবেশকে লক্ষ্যযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে মোকাবিলা করা দরকার, যাতে দ্বন্দ্বচালিত সমাজকে অর্থনৈতিক ও আদর্শগতভাবে রূপান্তরিত করতে ভারতীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বৃহত্তর সমন্বয় এবং আত্তীকরণ সম্ভব হয়। লেফটেন্যান্ট গভর্নরের প্রশাসনের উচিত শিক্ষাক্ষেত্রকে অগ্রাধিকার দেওয়া যাতে এটিকে আরও বেশি বাজারমুখী করা যায় এবং যুবকদের দক্ষতা বিকাশের সুযোগও বাড়ানো যায়। ইউটি-র উচিত এমন ক্ষেত্রের জন্য বিশেষ কলেজ নির্মাণ করা, যেখানে শিল্প বিশেষজ্ঞরা আঞ্চলিক চাহিদা অনুযায়ী বিষয়-নির্দিষ্ট শিক্ষা প্রদান করবেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যেহেতু পর্যটন হল কাশ্মীরের অর্থনীতির মূল ভিত্তি, সরকারের উচিত বেসরকারি অংশীদারিত্বে পর্যটন এবং হোটেল ম্যানেজমেন্ট শিক্ষায় একটি উৎকর্ষকেন্দ্র প্রতিষ্ঠাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। একইভাবে, একটি কলেজের উচিত স্থিতিশীল অর্থনীতি এবং উন্নয়নমূলক অর্থনীতির উপর একটি বিস্তৃত ডিগ্রির সুযোগ করে দেওয়া এবং সেখানে শিল্প বিশেষজ্ঞ ও ভারত জুড়ে স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদদের ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে নিয়োগ করা। এই উদ্যোগগুলির ফলে সমগ্র ভারতে বেসরকারি ক্ষেত্রে যুবকদের কর্মসংস্থান বাড়াবে এবং সরকারি চাকরির উপর চাপও কমিয়ে দেবে।

শিক্ষার ক্ষয়িষ্ণু পরিবেশকে লক্ষ্যযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে মোকাবিলা করা দরকার, যাতে দ্বন্দ্বচালিত সমাজকে অর্থনৈতিক ও আদর্শগতভাবে রূপান্তরিত করতে ভারতের ইউনিয়নের সঙ্গে বৃহত্তর সমন্বয় এবং আত্তীকরণ সম্ভব হয়।

ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি (NEP) ২০২০-র সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য নয়াদিল্লির উচিত আমলা ও অন্য অংশীদারদের জন্য তার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া ও মসৃণ বাস্তবায়নের নিরিখে একটি পথনির্দেশিকা দেওয়ার জন্য ভাবনাচিন্তা শুরু করা। এনইপি প্রণয়নকারী প্যানেলের বিশেষজ্ঞদের বিশেষ বক্তৃতা প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো উচিত। শিক্ষার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের এনইপি ২০২০-র সঙ্গে পরিচিতি প্রয়োজন। এই উদ্দেশ্যে ইউটি প্রশাসনের উচিত সারা ভারত জুড়ে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রী বিনিময় কর্মসূচি শুরু করা। এই ধরনের বিনিময় কর্মসূচির জন্য শিক্ষক নির্বাচন আঞ্চলিক পর্যায়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে করা যেতে পারে। এটি এই অঞ্চলের দ্বন্দ্ববিধ্বস্ত শিক্ষা ব্যবস্থাকে জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সমান করে তুলবে এবং শিক্ষকদের জাতীয় স্তরে স্বীকৃতি পেতে সাহায্য করবে।

কর্মসংস্থান এবং জাতীয় সমন্বয়কে উন্নীত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ পাঠ্যক্রম বিষয়ে গুরুতর আলোচনা প্রয়োজন। অন্যান্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পাঠ্যক্রম সমান হওয়া উচিত, যাতে ছাত্ররা চাকরির জন্য জাতীয় স্তরে প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম হয়। শিক্ষাখাতে সমন্বিত অ্যাকাডেমিক ব্যবস্থার সমাধান জরুরি। তাই নয়াদিল্লির উচিত এই অঞ্চলের দ্বন্দ্ববিধ্বস্ত শিক্ষানীতি সংশোধন করার জন্য শিল্প এবং কর্পোরেট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের একটি দল প্রেরণ করা। সমস্ত ইউটি-এর বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হওয়ার দরুন এলজি-র উচিত প্রশাসনের কঠোর দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলির অন্যায়ের তদন্ত করা। ইউটি প্রশাসনকে শিক্ষার গুণগতমান পুনরুদ্ধার, আদর্শগত অভিমুখীকরণ এবং এই অঞ্চলের যুবকদের মধ্যে জাতীয় সংহতি ও মূল্যবোধকে উন্নীত করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে কাজ করতে হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.