Published on Mar 06, 2024 Updated 0 Hours ago

১৯৭০ সালে সূচনা হওয়ার পর এফএমআর ২০১৬ সালে একটি পুনরুত্থানের সাক্ষী থেকেছে এবং নয়াদিল্লির বিস্তৃত অ্যাক্ট ইস্ট পলিসির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

মায়ানমার সীমান্তে বেড়া দেওয়া: ভারত-মায়ানমার সীমান্তে এফএমআর-এর সুবিধা এবং চ্যালেঞ্জ

এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এ।


ভারত-মায়ানমার সীমান্তে ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম (এফএমআর) দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যকার বৃহত্তর সম্পর্কের একটি প্রধান দিক। ১৯৭০ সালে সূচনা হওয়ার পর এফএমআর ২০১৬ সালে একটি পুনরুত্থানের সাক্ষী থেকেছে এবং নয়াদিল্লির বিস্তৃত ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ পলিসির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই ব্যবস্থা সীমান্তের ১৬ কিমি ব্যাসার্ধের মধ্যে বসবাসকারী ব্যক্তিদের ভিসা বা অন্যান্য নথির স্বাভাবিক প্রয়োজনীয়তা ব্যতীতই অবাধে যাতায়াত করার অনুমতি প্রদান করে।

যাই হোক, সাম্প্রতিক ঘটনাবলি একদা প্রায় দ্‌যাপিত এই ব্যবস্থার দিকে প্রশ্ন তুলেছে এবং এই অবাধ সীমান্ত চলাচলের ব্যাপারে সমাপ্তি টেনে এবং বেশ কিছু কড়াকড়ি নিয়ম লাগু করার বিষয়ে ভারত সরকারকে বাধ্য করেছে মায়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে।

ভারত-মায়ানমার সীমান্তে ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম (এফএমআর) ভারত মায়ানমারের চিন রাজ্যের বাসিন্দাদের মধ্যে গভীর জাতিগত পারিবারিক সংযোগের মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল। মিজো, কুকি এবং চিন - যাঁরা সম্মিলিত ভাবে জো সম্প্রদায় নামে পরিচিত - একটি সাধারণ বংশ এবং শক্তিশালী জাতিগত বন্ধন দ্বারা সংযুক্ত। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগে জাতিগত সখ্যের তুলনায় রাজনৈতিক বিবেচনা দ্বারা বেশি প্রভাবিত ঐতিহাসিক সীমান্ত নির্ধারণের ফলে জো জনগণ আন্তর্জাতিক সীমান্ত জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

এই ঐতিহাসিক সম্পর্কগুলিকে স্বীকৃতি দিয়ে মায়ানমারের সঙ্গে সীমান্তটি মণিপুরের প্রায় ১০ কিমি ব্যাপী এক ছোট অংশ ব্যতীত বেড়াহীন বা অরক্ষিত থেকেছে। ঘন বন বরাবর বিস্তৃত সীমান্তটির উপর কার্যকর পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে। মিজোরাম মায়ানমারের সঙ্গে একটি ৫১০ কিমি দীর্ঘ অবাধে যাতায়াতের সুযোগসম্পন্ন সীমানা ভাগ করে নেয়। মায়ানমারের সঙ্গে নাগাল্যান্ড অরুণাচল প্রদেশের সীমানা যথাক্রমে ২১৫ কিমি এবং ৫২০ কিমি দীর্ঘ এবং তা উপজাতিদের মধ্যে সাংস্কৃতিক সংযোগ বৃদ্ধি করে।

এফএমআর-কে পুনর্বিবেচনা করা হয়েছে বিদ্রোহ, চোরাচালান, মাদক ব্যবসা এবং ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পরে মায়ানমারের নাগরিকদের বর্ধিত প্রবাহের অস্থির বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে। গত বছর মণিপুরের জাতিগত সংঘাতের প্রেক্ষাপটে এটি বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, যেখানে মেইতেই সম্প্রদায় মায়ানমার থেকে উপজাতীয় কুকি-চিন সম্প্রদায়ের তরফে অনুভূত অবৈধ অভিবাসনের জন্য সীমান্ত বরাবর উত্তেজনাকে দায়ী করে। মণিপুরের কুকিরা নিজেদের সুবিধার্থে এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগানোর জন্য অভিযুক্ত হয়েছে। এফএমআর তাই ঐতিহাসিক বন্ধন এবং বর্তমান চ্যালেঞ্জের জটিল আন্তঃক্রিয়ার মধ্যেই নানাবিধ নিরীক্ষণের সম্মুখীন হয়েছে।

 

এফএমআর-কে পুনর্বিবেচনা করা হয়েছে বিদ্রোহ, চোরাচালান, মাদক ব্যবসা এবং ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পরে মায়ানমারের নাগরিকদের বর্ধিত প্রবাহের অস্থির বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে।

 

এমএমআর-এর উচ্চতর নিরীক্ষণের নেপথ্যে রয়েছে বিভিন্ন কারণ, যার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য উদ্বেগ মায়ানমারে মাদক উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত। মায়ানমারের গোপন গবেষণাগার থেকে মাদকদ্রব্যের ধারাবাহিক প্রবাহ অব্যাহত থাকায় রাষ্ট্রপুঞ্জের মাদক ও অপরাধ সংক্রান্ত কার্যালয় বা ইউনাইটেড নেশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম-এর (ইউএনওডিসি) একটি প্রতিবেদনে এই অঞ্চলের নিরাপত্তার প্রভাবের পর জোর দেওয়া হয়েছে। মায়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে সরাসরি যোগসূত্র অনুমান করা গেলেও সামরিক শাসনের উপাদান-সহ বিভিন্ন অংশীদারের জড়িত থাকা এই পরিস্থিতিকে জটিলতর করে তুলেছে।

২০২১ সালে মায়ানমারে সামরিক হুন্তার পুনরুত্থানের পরে মণিপুরে মাদকদ্রব্য আটকের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে। ২০২১ সালে মাত্র ৩ টন থেকে এক বছরের মধ্যে এই পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ১০ টনের বেশি হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সম রাইফেলস ১৮টি অস্ত্র, ৮৮৯০০০ মার্কিন ডলার মূল্যের নিষিদ্ধ জিনিসপত্র এবং ২০.৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের মাদক উদ্ধার করেছে। প্রাথমিক ভাবে অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর এবং মিজোরামে ৫০০ কিলোমিটার বিস্তৃত চোরাচালান এবং অনুপ্রবেশের জন্য চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলি এই উদ্বেগগুলিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচল প্রদেশে ৪৪০০০ জনেরও বেশি বাস্তুচ্যুত ব্যক্তির আগমনের সঙ্গে সঙ্গে সীমান্তের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। উদ্বাস্তু অনুপ্রবেশকারীদের কাছ থেকে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের নির্দেশাবলির লক্ষ্য ছিল একটি তালিকা তৈরি করা, নাগরিকদের জন্য আধার ভোটিং কার্ডের মতো নথিগুলির লভ্যতাকে সীমাবদ্ধ করা। মণিপুর যখন এ হেন কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন মিজোরাম সরকার প্রায় হাত তুলে নিয়েছে। কারণ তারা মায়ানমারের সঙ্গে পারিবারিক এবং জাতিগত সম্পর্কের উপরেই বেশি জোর দিচ্ছে। মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালডুহোমা ইতিমধ্যেই সীমান্তে বেড়া লাগানোর বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন

ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স দ্বারা পরিচালিত অপারেশন ১০২৭ পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর করে তুলেছে। কয়েকশো হুন্তা সৈন্য মিজোরামে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছে কারণ মায়ানমারের প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলি হুন্তাদের সরকারি পোস্ট ধ্বংস করেছে বা দখল করে নিয়েছে। এ সব কিছুই এমন এক প্রেক্ষাপট প্রদান করেছে, যা ভারতকে নিজের পদক্ষেপ পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে। বর্তমান পরিস্থিতি হুন্তার কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছে এবং ভারতকে ঐতিহাসিক জটিলতায় ক্রমবর্ধমান সংঘাতের গতিশীলতার নিরিখে একটি জটিল পরিস্থিতির মুখে ফেলেছে।

 

মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচল প্রদেশে ৪৪০০০ জনেরও বেশি বাস্তুচ্যুত ব্যক্তির আগমনের সঙ্গে সঙ্গে সীমান্তের পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।

 

এই পটভূমিতে, এফএমআর-এর সঙ্গে সম্পর্কিত উদ্বেগগুলি মোকাবিলায় আরও সমন্বয়ের জন্য সীমান্তে চলাচলের বিষয় সুনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আরও স্পষ্ট প্রবিধান প্রবর্তন করা নয়াদিল্লির জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। সামরিক হুন্তা সীমান্ত এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারানোর ফলে অর্থনৈতিক বিপর্যয় প্রকট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চ্যালেঞ্জও বাড়ছে। কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টের মতো উচ্চাভিলাষী প্রকল্পগুলিতে বাধা এই কাজের অগ্রগতিতে একটি বিচ্যুতি এবং দ্বন্দ্বের মাঝে অর্থনৈতিক উদ্যোগের দুর্বলতাকে দর্শায়। অর্থনৈতিক কর্মসূচির পুনরুজ্জীবন স্থিতিশীলতায় ফিরিয়ে আনার উপর নির্ভরশীল, যা মায়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতন্ত্রের অধরা সম্ভাবনার প্রতীক।

ভারত সরকার তার মায়ানমার সমকক্ষদের কাছে এই বাধ্যতামূলক প্রশ্ন উত্থাপন করার পাশাপাশি স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিলের (এসএসি) সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাঠামোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের দাবি করে। এই পরিবর্তনগুলি জনগণ জাতিগোষ্ঠীর অনুভূতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ হওয়া জরুরি, যা বর্তমানে এক দুরূহ আশাই বটে।

এফএমআর নিয়ে পুনর্বিবেচনা একটি বিস্তৃত কৌশলগত পুনর্নির্মাণের অংশ কারণ নয়াদিল্লি ভারত-মায়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতির জটিলতাগুলির মধ্যেই দিশা খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি সুনিশ্চিত করার জন্য কূটনৈতিক সূক্ষ্মতা, অভিযোজনযোগ্যতা এবং সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +
Sreeparna Banerjee

Sreeparna Banerjee

Sreeparna Banerjee is a Junior Fellow at the Observer Research Foundation Kolkata with the Strategic Studies Programme.

Read More +