Author : Soumya Bhowmick

Published on Mar 12, 2024 Updated 0 Hours ago
বাংলাদেশে অতিমারি–পুনরুদ্ধার কেন বাধা পাচ্ছে

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বাংলাদেশ একটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে, এবং বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ থেকে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য দারিদ্র্য হ্রাস দ্বারা চিহ্নিত এই বৃদ্ধির গল্পটি ১৯৯০–এর দশকের গোড়ার দিকে বাণিজ্য উদারীকরণের সঙ্গে শুরু হয়েছিল, এবং ২০০০–এর দশক পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

২০২০ সালে কোভিড–১৯ অতিমারির চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ অনেক উন্নয়নশীল দেশকে ছাড়িয়ে গিয়ে
৩.৪ শতাংশ ইতিবাচক বৃদ্ধি অর্জন করেছিল। তারপর ২০২২ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মতো আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডারের (আইএমএফ) কাছে ঋণ চেয়ে, যার পরিমাণ ছিল প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যদিও আর্থিক সহায়তার এই অন্বেষণ একটি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হতে পারে, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণগুলি অর্থনীতির অন্তর্নিহিত কাঠামোর মধ্যে গভীরভাবে নিহিত।

এই ধরনের ঋণগুলি কড়া শর্তসমূহের সঙ্গে আসে, যা প্রাপক দেশগুলির জন্য বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, যার মধ্যে সামষ্টিক অর্থনৈতিক (‌ম্যাক্রো ইকনমিক)‌ স্থিতিশীলতার উপর সম্ভাব্য প্রভাব এবং বহিরাগত ঋণদাতাদের কাছে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়াও অন্তর্ভুক্ত। একটি চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে আইএমএফ বাংলাদেশের সংস্কারের অগ্রগতি ও সিদ্ধান্তমূলক নীতি পদক্ষেপের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা স্বীকার করেছে।
আইএমএফ স্বল্পমেয়াদি স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য মুদ্রানীতিগত আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া, একটি নিরপেক্ষ আর্থিক অবস্থান নেওয়া, এবং মুদ্রার নমনীয়তা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছে

২০২৩ সালে, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক দৃশ্যপটে স্থিতিস্থাপকতা ও গতিশীলতা প্রদর্শন করেছে। দেশটির অর্থনীতি মাঝারিভাবে বৃদ্ধি পাবে, এবং
জিডিপি বৃদ্ধি ৫.৩ শতাংশ থেকে ৬.০ শতাংশের মধ্যে থাকবে। বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি দ্বারা চালিত, কোভিড–১৯ অতিমারি থেকে একটি শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের ফলে এই বৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। তবে এই পুনরুদ্ধারে ব্যাঘাত ঘটেনি, এমন নয় — ক্রমবর্ধমান আর্থিক ক্ষেত্রগত দুর্বলতা, বাহ্যিক চাপ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

২০২৩ সালে বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবণতা হল এর অভ্যন্তরীণ বাজারের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা, যার বৈশিষ্ট্য একটি বৃহৎ ভোক্তা ভিত্তি এবং
দ্রুত প্রসারমান মধ্যবিত্ত ও ধনী শ্রেণি। এই জনসংখ্যাগত পরিবর্তন অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ উপভোগ ও চাহিদা বাড়িয়েছে, এবং বাহ্যিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে।

ডিজিটাল বিপ্লব রূপান্তরমূলক হয়েছে:‌ ব্যাপক ডিজিটাল গ্রহণের মাধ্যমে অর্থ,
শিক্ষা ও সরকারি পরিষেবাগুলিতে অগ্রগতি অনুঘটন করা হয়েছে, এবং অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধিতে অবদান রাখা গিয়েছে। এই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা সত্ত্বেও দেশটি শক্তির ঘাটতি, ব্যালান্স অফ পেমেন্ট (‌পণ্য, পরিষেবা ও মূলধনের আমদানি ও রপ্তানির ভারসাম্য)‌ ঘাটতি, ও রাজস্ব ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছে।

বস্ত্রবয়ন ও তৈরি পোশাক শিল্প, যার চালক একটি তরুণ জনসংখ্যা ও প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ, তা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে একটি বড় অবদান রেখেছে। কিন্তু বাংলাদেশের
রপ্তানি ঝুড়িতে বৈচিত্র্যের অভাব একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ। তৈরি পোশাক ক্ষেত্রটি শুধুমাত্র বৈশ্বিক চাহিদার অস্থিরতার সম্মুখীন হয় না, বরং এটি মানব শ্রমের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল এবং অপ্রতুল পরিকাঠামোর কারণে বাধাগ্রস্ত হয়।

যদিও পরিষেবা ক্ষেত্র স্বল্পমেয়াদে পোশাক উৎপাদনকে পরিপূরণ করে, তবে এটি পোশাক ক্ষেত্রের উপর নির্ভরতা হ্রাস করার জন্য একটি
কার্যকর দীর্ঘমেয়াদি বিকল্প হিসাবেও আবির্ভূত হয়েছে।

বিশ্ব ব্যাঙ্ক ২০২৩ সালে বাংলাদেশে মাথাপিছু জিডিপি বৃদ্ধি ৪.১ শতাংশের অনুমান করেছিল — যা বৈশ্বিক ফ্রন্টে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও দেশের ভাল আর্থিক স্বাস্থ্যের একটি সূচক। কিন্তু ১৯৮০–র দশক থেকে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়েছে, জনসংখ্যার
১ শতাংশের হাতে ২০২১ সালে ছিল জাতীয় আয়ের ১৬.৩ শতাংশ

অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ২০২৩ সালে ৮.৭–৯.০ শতাংশের পূর্বাভাসিত মূল্যস্ফীতির হারসহ জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় একটি কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক সমস্যা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। এই মূল্যস্ফীতির চাপ আংশিকভাবে চলতি ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সহ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার একটি উপজাত।

মূল্যস্ফীতির প্রবণতার আলোকে ক্রমবর্ধমান ব্যয় মেটাতে
সরকারের রাজস্ব কমে যাচ্ছে, যা দেশের রাজস্ব ঘাটতিকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই রাজস্ব ঘাটতি দেশের বাণিজ্য ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে, ফলস্বরূপ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস করে, এবং দেশীয় অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির চাপের একটি চক্রকে স্থায়ী করে।

আর্থিক ক্ষেত্রে দুর্বলতা, বিশেষ করে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রমকে সমর্থন করার জন্য ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার ক্ষমতা, অর্থনৈতিক পরিবেশে জটিলতা যোগ করে। একটি চ্যালেঞ্জিং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক আবহাওয়ার মধ্যে বাণিজ্যের প্রবাহ বজায় রাখতে ব্যাঙ্কগুলির লেটারস অফ ক্রেডিট ও বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন পরিচালনা করার ক্ষমতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।

বাংলাদেশের ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র উল্লেখযোগ্য অস্থিরতার সম্মুখীন হয়েছে, যার উদাহরণ হল বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাঙ্ক
ইসলামি ব্যাঙ্কের ২০২২ সালে আমানতকারীদের আস্থা পুনর্গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক থেকে আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন। প্রভাবশালী ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এবং ব্যক্তিদের দ্বারা সংঘটিত ঋণ জালিয়াতির কারণে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছিল — এমন একটি চ্যালেঞ্জ যার মুখোমুখি হয়েছিল দেশের আরও অনেক ব্যাঙ্ক। এই ব্যাঙ্কিং সঙ্কট, পুঁজি সরে যাওয়া, ক্রোনিজম, আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতি, এ সবই বাংলাদেশের পৃষ্ঠপোষকতার রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।

বাংলাদেশ ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের কাছাকাছি আসার সময় থেকে অর্থনৈতিক নীতি রাজনৈতিক আলোচনার অগ্রভাগে ছিল। দেশটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন এবং রাজনৈতিক সংকট ভঙ্গুর অর্থনীতির জন্য ‘
উচ্চ ঝুঁকি’‌ হিসেবে বিবেচিত হবে।

দেশের নেতৃবৃন্দ ও নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই ব্যালান্স অফ পেমেন্টের ঘাটতির মোকাবিলা করতে হবে, এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিগুলি যাতে স্থিতিশীল বৃদ্ধি ও উন্নয়নকে উৎসাহিত করে তা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ প্রাণবন্ত উপায়ে বৈশ্বিক অর্থনীতির উত্তাল জলরাশির মোকাবিলা করলেও ২০২৩ প্রতিশ্রুতিশীল বৃদ্ধি ও উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ উভয় দ্বারাই চিহ্নিত হয়েছে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.