একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসাবে ভারতে একটি সেমিকন্ডাক্টর প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে, যা জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা চাহিদা পূরণ করবে। কোয়াড সদস্য হিসাবে যার স্বার্থ মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সারিবদ্ধ, সেই ভারত প্রধান ভূ-কৌশলগত হুমকি ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ হিসাবে চিনের উত্থানের মুখে একটি বাধ্যতামূলক অংশীদার হয়ে উঠেছে।
আরও বিশেষভাবে, এই সর্বশেষ চুক্তিটি ভারত সেমি, ৩আরডিআইটেক, ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ বাহিনীর (ইউএসএসএফ)-এর একটি সম্মিলিত উদ্যোগের ফল। সেমিকন্ডাক্টর ডেভেলপমেন্ট ও ম্যানুফ্যাকচারিং-এর জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যেমন ইনফ্রারেড, গ্যালিয়াম নাইট্রাইড ও সিলিকন কার্বাইড, এই চুক্তির কেন্দ্রবিন্দু। যা এই চুক্তিটিকে আলাদা করে তুলেছে তা হল এর অনন্য সহযোগিতামূলক প্রকৃতি, যা মার্কিন সামরিক বাহিনী, ইউএসএসএফ এবং ভারতীয় শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখাকে জড়িত করে।
ভারত ইতিমধ্যেই সেমিকন্ডাক্টর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত সীমা পেরিয়ে এসেছে, যার উদাহরণ এই জেভি-র অন্যতম পক্ষ ভারত সেমি৷
কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে, চুক্তিটি মোদী সরকারের জাতীয় সেমিকন্ডাক্টর মিশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভারতের অভ্যন্তরীণ উচ্চপ্রযুক্তি শিল্পে যথেষ্ট সুবিধা নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন। যৌথ উদ্যোগের (জেভি) লক্ষ্য হল নিরাপদ, সুরক্ষিত ও স্থিতিস্থাপক সরবরাহ শৃঙ্খল অর্জনের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে একটি ফ্যাব্রিকেশন প্ল্যান্ট স্থাপন করা। এই সেমিকন্ডাক্টর চুক্তি জাতীয় নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য ভারতের বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক সেমিকন্ডাক্টর আমদানিকে কমিয়ে দেবে, এবং দেশটিকে সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহ শৃঙ্খলের একটি মূল কেন্দ্রে পরিণত করবে। ভারত ইতিমধ্যেই সেমিকন্ডাক্টর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত সীমা পেরিয়ে এসেছে, যার উদাহরণ এই জেভি-র অন্যতম পক্ষ ভারত সেমি৷ ভারত সেমির একটি ফ্যাব্রিকেশন ফেসেলিটি রয়েছে যা সিলিকন কার্বাইড ও গ্যালিয়াম নাইট্রাইডের মতো উপাদানগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে যৌগিক সেমিকন্ডাক্টর তৈরি করে। এটি প্রতিরক্ষা ও সবুজ প্রযুক্তি সম্পর্কিত উচ্চ-ভোল্টেজ ও উচ্চ-তাপমাত্রার প্রযোগগুলির সঙ্গে জড়িত ঐতিহ্যবাহী সেমিকন্ডাক্টরগুলির থেকে উচ্চতর কর্মক্ষমতা প্রদান করে।
ফেব্রিকেশন প্ল্যান্টের ফোকাস থাকবে, যেমন ইউএস-ইন্ডিয়া ফ্যাক্ট শিট বলে, "সংবেদন, যোগাযোগ, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ইলেকট্রনিক পাওয়ার অ্যাপ্লিকেশন, পরবর্তী প্রজন্মের টেলিযোগাযোগ এবং সবুজ শক্তি প্রয়োগের উপর"। এই ফ্যাব ফেসিলিটি শুধুমাত্র ভারতে তার ধরনের প্রথম প্ল্যান্ট নয়, এটি বিশ্বের যে কোনও জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রথম মাল্টি-মেটেরিয়াল ফ্যাব প্ল্যান্টগুলির মধ্যে একটি হবে৷ ফলস্বরূপ, চিপ উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে, এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে উভয় দেশের জন্য যথেষ্ট পারস্পরিক সুবিধা নিয়ে আসবে।
যুগান্তকারী চুক্তি সত্ত্বেও দুটি সতর্কতা সংক্রান্ত বিষয় অবশ্যই বিবেচনা করা উচিত। প্রথমত, ইউএসএসএফ, ভারত সেমি ও ৩আরডিআইটেক-এর মধ্যে সহযোগিতা শেষ পর্যন্ত মার্কিন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানের অধীন। এই প্রবিধানগুলি ২০১৮-র রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ সংস্কার আইন (ইসিআরও)-এর অধীন, যা মার্কিন প্রযুক্তিকে সেসব দেশে রপ্তানি করা থেকে রক্ষা করতে চায় যেগুলিকে ওয়াশিংটন তার স্বার্থের প্রতি বিরূপ বলে মনে করে। পিপলস রিপাবলিক অফ চায়না (পিআরসি)-কে সেমিকন্ডাক্টর ও সাইবার নিরাপত্তা ক্ষেত্রে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যাবশ্যক সীমিত ও মৌলিক প্রযুক্তিগুলি পেতে বাধা দেওয়ার জন্য মার্কিন কংগ্রেস ইসিআরএ পাস করেছিল। এই বিধিনিষেধগুলির মধ্যে প্রযুক্তিগত ক্ষমতা, সম্পর্কিত জ্ঞান ও স্পেসিফিকেশনগুলিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো জেভি-গুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে। প্রযুক্তি-সম্পর্কিত রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গি খুব বিস্তৃত পরিভাষায় সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
পিপলস রিপাবলিক অফ চায়না (পিআরসি)-কে সেমিকন্ডাক্টর ও সাইবার নিরাপত্তা ক্ষেত্রে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যাবশ্যক সীমিত ও মৌলিক প্রযুক্তিগুলি পেতে বাধা দেওয়ার জন্য মার্কিন কংগ্রেস ইসিআরএ পাস করেছিল।
এটি আমাদের দ্বিতীয় এবং সম্পর্কিত সতর্কতায় নিয়ে আসে: ইসিআরএ শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন করা পণ্যগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে না, আইনটি অন্যান্য দেশ থেকে রপ্তানি করা সেই পণ্যগুলির উপরও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে যেগুলি আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রপ্তানি করা মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিল, বিশেষ করে যদি ইউএস অরিজিন প্রযুক্তির শতাংশ ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। পরেরটি ২৫ শতাংশ নিয়ম হিসাবেও পরিচিত।
ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ২০২০ সালের প্রথম দিকে এই রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ নিষেধাজ্ঞাগুলি আরও কঠোর করা হয়েছিল। যদিও উচ্চ-প্রযুক্তি বিধিনিষেধের প্রাথমিক লক্ষ্য, বিশেষভাবে সেমিকন্ডাক্টর ক্ষেত্রে, ছিল এবং রয়ে গিয়েছে পিআরসি, পরবর্তী লক্ষ্যগুলিও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বিধিনিষেধের আওতায় আসতে পারে, যা ইসিআরএ-কে নিজস্ব ভূখণ্ডের বাইরেও এক্তিয়ার দেয়।
উদাহরণ স্বরূপ, মার্কিন কোম্পানিগুলি ইসিআরএ-র একটি ফাঁক কাজে লাগিয়েছিল, যা তাদের বিদেশের সংস্থান বা সহায়ক সংস্থাগুলোকে চিনা কোম্পানি হুয়াওয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করার অনুমতি দিয়েছিল। এই ছিদ্রপথটি বন্ধ করা হয়েছিল আরও সংশোধনী নিয়ে এসে, যা কার্যকরভাবে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগকে (ডিওসি) বিদেশি সংস্থানগুলি থেকেও এমন পণ্য রপ্তানি নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে আরও বেশি সুযোগ দিয়েছে যেগুলির কোনও সরাসরি আমেরিকান প্রযুক্তিগত বিষয়বস্তু বা ইনপুট না থাকলেও তৈরি হয়েছিল আমেরিকান মূল নকশা ও ব্লুপ্রিন্টের উপর ভিত্তি করে৷ এই নিষেধাজ্ঞার প্রাথমিক লক্ষ্যগুলির মধ্যে ছিল তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি), যা হুয়াওয়েতে যথেষ্ট পরিমাণে রপ্তানি করত।
মার্কিন কোম্পানিগুলি ইসিআরএ-র একটি ফাঁক কাজে লাগিয়েছিল, যা তাদের বিদেশের সংস্থান বা সহায়ক সংস্থাগুলোকে চিনা কোম্পানি হুয়াওয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করার অনুমতি দিয়েছিল।
ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্প্রতি সমাপ্ত সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাব্রিকেশন চুক্তি সম্পর্কে উদযাপন করার মতো অনেক কিছু রয়েছে, তবে নয়াদিল্লিকেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার নিজস্ব রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বিধিবিধান সারিবদ্ধ বা সামঞ্জস্যপূর্ণ করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সচেতন হতে হবে। অন্যথায়, ভারত মার্কিন রপ্তানি বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করার ঝুঁকিতে পড়বে, যা বিস্তৃতভাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে এবং ভবিষ্যতে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যে উত্তেজনা নিয়ে আসতে পারে। আপাতত, ইউএস-ভারত সেমিকন্ডাক্টর চুক্তিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ-প্রযুক্তি কৌশলের একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনকে চিহ্নিত করে, এবং আসন্ন অনেক ভাল জিনিসের আশ্রয়স্থল হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।
এই ভাষ্যটি প্রথম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে. প্রকাশিত হয়।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.