Published on Dec 26, 2021 Updated 0 Hours ago

গত বছর জুড়ে কোভিড–১৯ অতিমারি সামনে এনেছে এখনকার বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা, এবং তার ফলে কৌশলগত স্বল্পপাক্ষিকগুলো বা সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিস্থাপকতা–সহ বিভিন্ন প্রশ্নে আরও নির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি করে জন্ম নিচ্ছে।

ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্বল্পপাক্ষিকগুলির উত্থানের ব্যাখ্যা

বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব বেড়ে যাওয়ার কারণে বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঐকমত্য গড়ে তোলার প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এই কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে উঠে আসছে নানা স্বল্পপাক্ষিক (‌অল্প কয়েকটি দেশের)‌ প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। স্বল্পপাক্ষিকগুলো যদিও সমালোচিত হয়েছে বড় বেশি অনানুষ্ঠানিক হওয়ার এবং সুনির্দিষ্ট আলোচনার উপযোগী কাঠামো না–থাকার কারণে, চিনের লড়াইক্ষ্যাপা আচরণ এই অঞ্চলে স্বল্পপাক্ষিক গোষ্ঠীগুলোর পক্ষে মতামত গড়ে তুলেছে এবং তাদের ভেতরে নজর কেন্দ্রীভূত করেছে। গত বছর জুড়ে কোভিড–১৯ অতিমারি সামনে এনেছে এখনকার বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা, এবং তার ফলে কৌশলগত স্বল্পপাক্ষিকগুলো বা সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিস্থাপকতা–সহ বিভিন্ন প্রশ্নে আরও নির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি করে জন্ম নিচ্ছে। এই নিবন্ধে ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্বল্পপাক্ষিকগুলোর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, এবং যুক্তি দিয়ে দেখানো হয়েছে কেন সেগুলি অনুমেয় ভবিষ্যতে টিকে থাকবে।

আরোপণ: রাজেশ্বরী পিল্লাই রাজাগোপালন, “এক্সপ্লেনিং দ্য রাইজ অফ মিনিল্যাটরাল্‌স ইন দি ইন্ডো–প্যাসিফিক,” ওআরএফ ইস্যু ব্রিফ নাম্বার ৪৯০, সেপ্টেম্বর ২০২১, অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন।


ভূমিকা

গত দশক সাক্ষী থেকেছে ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এক ভূরাজনৈতিক মন্থনের:‌ নতুন নামকরণ হয়েছে (‌যেমন এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় থেকে ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয়)‌;‌ তৈরি হয়েছে নতুন কৌশলগত বিন্যাস;‌ আর আবির্ভূত হয়েছে কোয়াড্রিল্যাটরাল সিকিউরিটি ডায়ালগ (‌বা কোয়াড)‌–এর মতো স্বল্পপাক্ষিক গোষ্ঠীগুলো। এই ফোরামগুলো তৈরি হয়েছে এই অঞ্চলের পরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক গতিশীলতার কারণে, এবং এরপর তারা এই অঞ্চলে কৌশলগত প্রভাব ফেলবে।[১]

নিশ্চিত ভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট-ভিত্তিক অংশীদারিগুলো, যেগুলো প্রাথমিক ভাবে দ্বিপাক্ষিক, সেগুলো এখনও এশিয়ার কৌশলগত মানচিত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই জোটগুলো নতুন চরিত্র পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের মতো মিত্র ও অংশীদারেরা নিরাপত্তার প্রশ্নে অধিকতর দায় বহন করতে এগিয়ে আসায়। ইতিমধ্যে চিন এমন ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলছে যেগুলোর ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গভীর কৌশলগত ভিত্তি থাকবে। মার্কিন ও চৈনিক সমান্তরাল কূটনীতির টানাপড়েন এই অঞ্চলে স্বল্পপাক্ষিকের প্রকরণে নতুন নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা সামনে নিয়ে এসেছে। চিন তার জাতীয় স্বার্থের সিদ্ধির জন্য আগ্রাসী কূটনীতি অনুসরণ করতে থাকায়, এবং শক্তিপ্রয়োগ করায় বা করার হুমকি দেওয়ায়, অ্ন্য রাষ্ট্রগুলো বাধ্য হয়েছে ভিন্ন পথে জবাব দিতে।

সাম্প্রতিক সময়ে মনে হচ্ছে চিন ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার আঞ্চলিক পুলিশ হিসেবে নিরাপত্তা বজায় রাখার দায়িত্ব নিতে চাইছে, এবং তা এমন ভাবে করতে চাইছে যা হবে কর্তৃত্ববাদী এবং যার শীর্ষে থাকবে চিন।[২] এই প্রয়াস ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শক্তিগুলি যা চেয়েছিল তার বিপরীত, কারণ তারা কর্তৃত্ববাদী এশিয়া চায়নি।[৩] বেজিংয়ের এই একচেটিয়া ব্যবস্থার বিরোধী–স্বার্থই সমমনোভাবাপন্ন দেশগুলোকে এক জায়গায় এনেছে, যাদের লক্ষ্য ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিকৃত কৌশলগত শৃঙ্খলা বজায় রাখা।[৪] উইলিয়ম টাউ–এর বক্তব্য, এখন ‘‌সনাতনী নিরাপত্তা’‌ রাজনীতির‌ প্রকৃত ও জরুরি প্রয়োজন পড়েছে। ‘‌সনাতনী নিরাপত্তা’কে‌ সংজ্ঞায়িত করতে তিনি উদ্ধৃত করেছেন হেনরিক সেং–কে: “বৈদেশিক রাষ্ট্রীয় স্তরের বিপদ থেকে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এবং বড় শক্তিগুলির প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রভাব সামাল দেওয়া।”[৫] আগামী বছরগুলোতে ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এমন স্বার্থভিত্তিক জোট বা ‘‌ইচ্ছুকদের অ্যাড–হক জোট’‌ আরও বাড়তে থাকবে,[৬] ‌যা কিনা এখনকার গভীর অনিশ্চয়তার প্রতিফলক।

স্বল্পপাক্ষিকতার যুক্তি

বিশ্লেষকরা মনে করেন এখন স্বল্পপাক্ষিকতার দিকে ঝোঁকের কারণ পুরনো আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলির ঐকমত্যে পৌঁছনোর ধীর গতি এবং অনেক ক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যর্থতা।[৭] আঞ্চলিক ও বিশ্বব্যাপী শক্তির ভারসাম্যের পরিবর্তনশীলতা বড় বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকর হওয়ার প্রয়াসের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এমন ধারণা তৈরি হয়েছে যে আঞ্চলিক সমস্যা মোকাবিলার জন্য আনুষ্ঠানিক বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর, এবং সেই জন্যই রাষ্ট্রগুলো অন্য পথ খুঁজতে একপ্রকার বাধ্য হচ্ছে।

তা ছাড়া, পর্যবেক্ষকদের মতে, অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়ান নেশন্‌স (‌আসিয়ান)‌–এর মতো যে সব আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠান ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজ করে, সেগুলো ‘‌ফলাফল নামিয়ে আনে ন্যূনতম বিভাজকে’‌।[৮] এক সময় আসিয়ানকে বলা হত আঞ্চলিক সমস্যাগুলোর কার্যকর মোকাবিলায় সক্ষম অর্থনৈতিক ভাবে সুসংহত আদর্শ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে আসিয়ান হয়ে পড়ল আরও বেশি করে বিভক্ত ও অক্ষম, যা অনেক সময়ে একটা যৌথ বিবৃতিও জারি করতে পারে না।[৯] যখনই এর মধ্যে চিনের পরিপ্রেক্ষিতে ভূখণ্ডগত সংহতি ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন এল, তখনই সদস্যরা বিভক্ত হয়ে পড়ল। চিনের লড়াইক্ষ্যাপা মনোভাব ও বিভাজনমূলক কৌশল আসিয়ান–এর যা মূল নীতি, অর্থাৎ সব দেশের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত সংহতিকে সম্মান করা, তাকেই আঘাত করল।

এর অর্থ এই নয় যে রাষ্ট্রগুলো আসিয়ান, রাষ্ট্রপুঞ্জ বা এশিয়া–প্যাসিফিক ইকনমিক কোঅপারেশন (‌অ্যাপেক)‌–এর মতো পুরনো বহুপাক্ষিক ও আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে বিনিয়োগ বন্ধ করেছে। কিন্তু রাষ্ট্রগুলো বুঝেছে যে সব বিতর্কিত প্রশ্নের সমাধান বড় মঞ্চে হচ্ছে না, সেগুলো নিয়ে ক্ষুদ্রতর, ঘরোয়া, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও স্বার্থভিত্তিক গোষ্ঠীগুলোতে কাজ করা বেশি লাভজনক।[১০] ক্রমশ বেশি করে এই বোধ তৈরি হচ্ছে যে আঞ্চলিক সমস্যা মোকাবিলার প্রশ্নে তেমন কোনও বিকল্প বা সমাধানের সন্ধান দেয় না এমন বিভাজিত আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর থেকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা বা কৌশলগত ক্ষেত্রে তৎপর নানা স্বল্পপাক্ষিক গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে কাজ করাই শ্রেয়। যে হেতু এই অঞ্চলে উত্তেজনা অনেক দিন ধরে চলবে, তাই এমন আরও বেশি স্বল্পপাক্ষিক তৈরি হবে, আর তাদের ভিত্তি হবে বৃহত্তর কৌশলগত স্বার্থরক্ষা বা ত্রিপাক্ষিক সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিস্থাপকতার মতো নির্দিষ্ট বিষয়। ভুবিন্দর সিং ও সারা তেও যুক্তি দেখিয়েছেন যে স্বল্পপাক্ষিক ব্যবস্থাগুলো দ্বিপাক্ষিক (আমেরিকা বা চিনের নেতৃত্বাধীন)‌ ও বৃহত্তর আঞ্চলিক বহুপাক্ষিকগুলোর (‌যেমন আসিয়ান)‌ মাঝের জায়গাটা নিয়ে নিচ্ছে তিন থেকে নয়টি দেশকে একত্র করে, এবং হয়ে উঠছে ‘প্রকৃতিগত ভাবে অল্প কয়েকজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ, নমনীয় ও কার্যকর’‌।[১১]

ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্বল্পপাক্ষিকগুলি অনেক বৃহৎ শক্তির কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে এই অঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষায় মার্কিন জোট–ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতার কারণে। বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্নটিই এই অঞ্চলের অন্য গুরুত্বপূর্ণ শক্তিগুলির সঙ্গে মার্কিন মিত্রদের ঘনিষ্ঠতর কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে ওঠার বড় কারণ। মার্কিন নিরাপত্তা জোট–ব্যবস্থা অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের মতো দেশগুলির কাছে একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলেও তারা ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতর কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এই ঘটনাই ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্বল্পপাক্ষিকগুলো তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়ার একটা উদাহরণ। তারপর কিছু বছরের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ অংশীদারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি চতুর্ভুজে পরিণত হল। বিশেষজ্ঞরা অতীতে বলেছিলেন ‘‌সৃষ্টিশীল স্বল্পপাক্ষিক পথ’‌ এই কৌশলগত অংশীদারির গঠন ও বিন্যাস বদলে দিয়ে দ্বিতীয় বার কোয়াডকে ফিরিয়ে আনবে।[১২] মার্কিন দেশকে নিয়ে অনিশ্চয়তা, বিশেষ করে ট্রাম্পের বছরগুলোতে, অনেকগুলো শিথিল জোটের জন্ম দেয়। একটা উদাহরণ হল অস্ট্রেলিয়া–ফ্রান্স–ভারত ত্রিপাক্ষিক মন্ত্রী-পর্যায় সংলাপ, যার প্রথম সংস্করণ তৈরি হয় ২০২১ সালের মে মাসে। কিন্তু এর উৎস হল ট্র‌্যাক ১.‌৫ ডায়ালগ, যা ছিল তিন দেশের তিন থিঙ্ক ট্যাঙ্কের সমন্বিত প্রয়াস।[১৩] অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার ত্রিপাক্ষিক বৈঠকও প্রথমে ট্র‌্যাক টু আঙ্গিকেই শুরু হয়েছিল ২০১৩–র সেপ্টেম্বরে। তার কয়েক বছর পরে ২০১৭–র নভেম্বরে তিন দেশের সিনিয়র অফিসারদের প্রথম বৈঠক হয়েছিল।[১৪]

এই যুক্তিও দেওয়া হয় যে স্বল্পপাক্ষিকগুলোর আরও বিকাশের জন্য আগে ট্র‌্যাক টু ও ট্র‌্যাক ১.‌৫ আঙ্গিকে প্রত্যেকের স্বার্থ, বিপদসংক্রান্ত ধারণা, ও বাস্তবিক সম্ভাবনার অভিন্নতা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করে নিয়ে তারপর আনুষ্ঠানিক গোষ্ঠীর সূচনা করা ভাল। এসব অবশ্য খুব বড় বাধা নয়, কারণ স্বল্পপাক্ষিকগুলো ঘরোয়া নেটওয়র্ক এবং এখনও সেগুলো প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা পায়নি। যে বিশ্লেষকেরা এই যুক্তি দেন তাঁরা প্রথম কোয়াড–এর কথা বলেন, যা অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের নেতৃত্ব বদলের পর উঠে গিয়েছিল। কোয়াড–এর বিরুদ্ধে চিনের প্রতিবাদও কোনও সাহায্যে আসেনি। এখন যে আবার কোয়াড–কে নতুন করে উজ্জীবিত করা হচ্ছে তা একথাই প্রমাণ করে যে সেই চাপগুলো যা অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রথম একত্র করেছিল তা আরও তীব্র হয়েছে। কাজেই এই গোষ্ঠীগুলো শীঘ্রই উঠে যাবে এমন উদ্বেগের কোনও কারণ নেই।

ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্বল্পপাক্ষিকগুলোর কার্যকর হওয়ার আরেকটা বাধ্যবাধকতা হল রাজনীতিতে ক্ষমতার ভারসাম্যের খেলার প্রত্যাবর্তন। ঐতিহাসিক ভাবে ভারত এই অঞ্চলের ক্ষমতার ভারসাম্যের গতিশীলতার পথনির্ণয়ে কোনও ভূমিকা নিতে চায়নি;‌ কিন্তু বিবাদকামী চিন আঞ্চলিক শৃঙ্খলার প্রশ্নে ক্ষমতাকেন্দ্রিক ও বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিতে বাধ্য করল ভারতকে, এবং ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আরও অনেক দেশকে।[১৫] নিউজিল্যান্ড বা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো কিছু দেশ অবশ্য নতুন কৌশলগত গতিশীলতার বিষয়টিকে তেমন আমল দেয়নি। তারা অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে চিনকে চটাতে চায়নি। তবে শীঘ্রই এর পরিবর্তন হতে পারে, কারণ ওয়েলিংটন ও সোল সম্প্রতি কোয়াড–প্লাস–এর মতো গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে যুক্ত হতে শুরু করেছে।[১৬]

ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্বল্পপাক্ষিকগুলো তৈরি হওয়ার আর একটা কারণ হল ধারণক্ষমতার সীমাবদ্ধতা। চিন তার প্রায় সমস্ত প্রতিবেশীর সঙ্গে সক্রিয় ভূখণ্ডগত বিবাদে জড়িয়েছে, এবং নানা ব্যবস্থা নিয়ে বেজিং শুধু উত্তেজনা বাড়িয়েই চলেছে। এই সব ব্যবস্থার মধ্যে আছে এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন (‌এডিআইজেড)‌ তৈরি ও প্রসারিত করা, এবং দক্ষিণ চিন সমুদ্রে নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য উডি আইল্যান্ডের সানশা সিটিতে সদর দফতর করে নতুন প্রশাসনিক অঞ্চল তৈরি করা।[১৭] যে সব দেশ স্বল্পপাক্ষিকগুলোর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে তাদের সকলেরই উঠোনে চিনের আগ্রাসী কাজের ঢেউ এসে পড়ছে, অথচ তাদের চিনের মোকাবিলা করার সামরিক বা অর্থনৈতিক ক্ষমতা নেই।[১৮] এমনকি এদের কেউ যদি আরও বড় সামুদ্রিক শক্তির সঙ্গে হাত মেলায়, তা হলেও তারা চিনের সমকক্ষ হবে না। এই ঘটনা থেকেই স্পষ্ট ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলগত গতিশীলতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কতটা অপরিহার্য।

ভারতের ওপর নজর

স্বল্পপাক্ষিকতায় ভারত নতুন নয়। ভারত ছ’‌বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার শরিক হয়েছিল।[১৯] ২০১৫–র অক্টোবরে মালাবার নৌ–মহড়ায় (‌যা আগে ছিল ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অনেকগুলো দ্বিপাক্ষিক নৌ–মহড়া) জাপানও যোগ দেয়। মালাবার সিরিজ হয়ে আসছে ১৯৯২ থেকে, এবং কোনও কোনও সময়ে তাতে অন্য দেশও যোগ দিয়েছে। ২০১৫–র মালাবার মহড়া যদিও অনেক বেশি প্রচার পেয়েছে, এটি কিন্তু অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া তাদের ত্রিপাক্ষিক সংলাপকে বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ে উন্নীত করার পর। তখন থেকে জাপান মালাবার মহড়ার স্থায়ী অংশীদার হয়ে গিয়েছে। এই ত্রিপাক্ষিক অংশীদারির চালিকাশক্তি হল এরা সবাই চায় জাহাজ চলাচলের স্বাধীনতা ও মুক্ত সমুদ্র, আন্তর্জাতিক সমুদ্রে বাধাহীন আইনসঙ্গত বাণিজ্য, ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অটুট সম্মান। মানবিক সহায়তা ও বিপর্যয় ত্রাণ (‌এইচএডিআর) ‌ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্বল্পপাক্ষিকগুলি তৈরি হওয়ার ফলে আরও জোরদার হয়েছে, এবং তার মধ্যে মার্কিন–ভারত–জাপান ত্রিপাক্ষিক অংশীদারিও আছে। চিনের সামরিক বাহিনী ক্রমশ বেশি করে প্রতিবেশী দেশগুলোর স্থলসীমান্তে, আকাশে ও নৌপথে অনধিকার প্রবেশ করতে থাকায় এই লক্ষ্যগুলো আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এখন যা নিরাপত্তা পরিস্থিতি তাতে স্বল্পপাক্ষিক ব্যবস্থার দিকে এগনোর ঝোঁক কমবে না। এমনকি কোভিড–১৯ অতিমারিজনিত নানা সঙ্কটের সময়েও প্রতিবেশীদের সঙ্গে চিনের আচরণ আরও আগ্রাসী হয়েছে, এবং তার ফলে অনানুষ্ঠানিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরির গতি আরও বেড়েছে। বহুপাক্ষিকগুলোয় যেখানে ‘সবাইকে গ্রহণ করা ও বিভেদ না–করার’‌ বিষয়টি লালিত হয়, সেখানে স্বল্পপাক্ষিকগুলো তৈরি হয় অল্প সংখ্যক এমন দেশকে নিয়ে যারা একই ধরনের বিপদের সম্মুখীন এবং তার মোকাবিলার উপায় সম্পর্কে ধারণাও যাদের অভিন্ন। একটা ছোট জোটেও সব বিষয়ে সব দেশ একমত হবে এমন নয়। এই বিষয়টা সব থেকে বেশি স্পষ্ট হয় ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে:‌ সে অনেকগুলো স্বল্পপাক্ষিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছন্দ, যদিও এর অনেকগুলোতেই সে সবচেয়ে ধীরগতিসম্পন্ন সদস্য। ভারতসহ এই অঞ্চলের অনেক দেশের ভারত ও চিনের মধ্যে একটি দেশকে বেছে নেওয়া কঠিন। তা সত্ত্বেও কোয়াড ও অন্যান্য ত্রিপাক্ষিক ব্যবস্থা গড়ে উঠছে, এবং তার অনেকগুলিরই কৌশলগত পছন্দ স্পষ্ট।

ভারত, ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়ার সাম্প্রতিক ত্রিপাক্ষিক উদ্যোগ এর একটা উদাহরণ। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে এই গোষ্ঠীর প্রথম বৈঠক হয় ‘‌তিনটি দেশের প্রতিটির অন্যদের সঙ্গে যে ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রয়েছে তার ভিত্তিতে আরও এগিয়ে যাওয়া, এবং শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ, সমৃদ্ধ ও নিয়মনিষ্ঠ ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল গড়ে তোলার’‌ লক্ষ্যে।[২০] ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছিলেন এই উদ্যোগের লক্ষ্য ‘ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নিয়ে সকলের দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয় এবং ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতার উপায়ের সন্ধান, বিশেষ করে সামুদ্রিক ক্ষেত্রে‌।[২১] যদিও তিন দেশের বিদেশমন্ত্রকই বিবৃতি দিয়েছিল, সবচেয়ে খোলাখুলি কিন্তু কথা বলেছিল ফ্রান্স, এবং জোর দিয়েছিল ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আন্তর্জাতিক আইন, শান্তি ও নিরাপত্তার উপর। বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, এই ত্রিপক্ষ বৈঠক ‘‌ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার লক্ষ্যের উপর গুরুত্ব আরোপণে সহায়তা করেছে’, এবং তা সম্ভব হয়েছে ‘‌ফ্রান্স, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার নিজেদের মধ্যেকার অসাধারণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে’‌‌।[২২] আরও এগিয়ে এই বছরের মে মাসে ত্রিপক্ষ বৈঠককে মন্ত্রিপর্যায়ে উন্নীত করা হয়। ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, ফ্রান্সের ইওরোপ ও বিদেশ সংক্রান্ত মন্ত্রী জঁ ইভ লে দ্রিয়াঁ, ও অস্ট্রেলিয়ার বিদেশমন্ত্রী মারাইজ পেইন লন্ডনে জি–৭ বিদেশমন্ত্রী বৈঠকের সাইডলাইনে আলাদা বৈঠকে মিলিত হন। তিন মন্ত্রীই আইনের শাসন, জলপথে যাতায়াত ও দেশের উপর দিয়ে বিমান যেতে দেওয়া, বিবাদের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত সংহতির উপর আবার গুরুত্ব আরোপ করেন, এবং ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিকৃত ও আইনের শাসন–নির্ভর ব্যবস্থার জন্য কাজ করার কথা বলেন।[২৩]

ভারত এই অঞ্চলে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বল্পপাক্ষিকের সঙ্গে কাজ করছে। সেটি হল ভারত–অস্ট্রেলিয়া–ইন্দোনেশিয়া ত্রিপাক্ষিক, যার সূচনা হয় ২০১৭ সালে সিনিয়র অফিসিয়াল্‌স মিটিং থেকে। এরপর এর আরও তিনটি বৈঠক হয়েছে।[২৪] ভারত–ফ্রান্স–অস্ট্রেলিয়া ত্রিপাক্ষিকের মতোই এই ফোরামটির নজরও ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন ঘটনার উপর কেন্দ্রীভূত, আর তার মধ্যে আছে উন্নয়ন সহায়তা কর্মসূচি, সামুদ্রিক প্রশ্নাবলি, ও এইচএডিআর উদ্যোগ। এই তিন দেশের আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছিল বিদেশমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের নিয়ে।[২৫] তিন দেশকেই মোকাবিলা করতে হচ্ছে চিনের শক্তিপ্রয়োগের—যেমন ইন্দোনেশিয়ার নতুনা দ্বীপে নৌ–অনুপ্রবেশ, লাদাখ ও অন্য জায়গায় ভারত–চিন সীমান্ত বিবাদ, এবং অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক জোর খাটানোর চেষ্টা—আর এই সমস্যাগুলো গত বছর থেকে বেড়েই চলেছে।

২০২০–র জুনে ভার্চুয়াল দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন তৃতীয় দেশগুলির সঙ্গে ভারত–অস্ট্রেলিয়ার কৌশলগত অংশীদারির গুরুত্বের উপর আলোকপাত করেছিলেন। বিবৃতিতে ভারত–অস্ট্রেলিয়া–জাপান ও ভারত–অস্ট্রেলিয়া–ইন্দোনেশিয়ার মতো ত্রিপাক্ষিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং তার পাশাপাশি নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনামকে নিয়ে কোয়াড–প্লাসের মতো আর একটু বড় স্বল্পপাক্ষিকগুলির সঙ্গে যোগাযোগের কথাও বলা হয়েছিল।[২৬]

অবশ্যই ভারত–অস্ট্রেলিয়া–জাপান ত্রিপাক্ষিক ব্যবস্থা অনেক বেশি উচ্চতায় উঠছে তার সক্রিয়তার জন্য। ২০২০–র সেপ্টেম্বরে তিন দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীরা ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সরবরাহ শৃংখল স্থিতিস্থাপকতা কর্মসূচি নিতে সম্মত হন। অস্ট্রেলিয়ার সাইমন বার্মিংহ্যাম, জাপানের কাজিয়ামা হিরোশি ও ভারতের পীযূষ গয়ালের মধ্যে ভার্চুয়াল বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়। এই সক্রিয়তার পেছনে ছিল একটি উৎসের (‌অর্থাৎ চিনের)‌ উপর অত্যধিক অর্থনৈতিক নির্ভরতার বিপদ সম্পর্কে সকলের অভিন্ন ভাবনা। এই প্রস্তাবের অর্থ হল একটা বিকল্প সরবরাহ শৃঙ্খল তৈরি করা ও তা লালন করার পথ ও উপায় বার করা।

২০২১–এর এপ্রিলে তিন দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীরা এক ত্রিপাক্ষিক ভার্চুয়াল বৈঠকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ‘‌সরবরাহ শৃঙ্খল স্থিতিস্থাপকতা উদ্যোগ’‌ (‌সাপ্লাই চেন রেজিলিয়েন্স ইনিশিয়েটিভ বা এসসিআরআই)–এর উদ্বোধন করেন। ২০২০–র সেপ্টেম্বরে যে আলোচনা হয়েছিল তার ভিত্তিতে তিন মন্ত্রী চিহ্নিত করেন কিছু নীতিগত ব্যবস্থা, যার মধ্যে ছিল ডিজিটাল প্রযুক্তির আরও বেশি ব্যবহার এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বৈচিত্র‌্য আনায় সহায়তা করা‌।[২৭] এসসিআরআই এই দুটো বিষয়কেই প্রথমে রূপায়ণের জন্য বেছে নিয়েছে। এই উদ্যোগের আরও লক্ষ্য হল:‌ ‘‌সরবরাহ শৃঙ্খল স্থিতিস্থাপকতা‌য় শ্রেষ্ঠ কার্যশৈলী ভাগ করে নেওয়া; এবং (২) সরবরাহ শৃঙ্খলে বৈচিত্র‌্য আনার উপায় খুঁজতে অংশীদারদের সামনে সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে বিনিয়োগবৃদ্ধি অনু্ষ্ঠান ও ক্রেতা–বিক্রেতা যোগাযোগ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।” ভবিষ্যতে এসসিআরআই–এর পরিধি আরও বিস্তৃত হবে কি না তা তিন দেশের ঐকমত্যের উপর নির্ভর করবে।[২৮]

ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্বল্পপাক্ষিকগুলির তাৎপর্য

ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে স্বল্পপাক্ষিকগুলির বিভিন্ন চালিকাশক্তির মধ্যে আছে এইচএডিআর–এ সহযোগিতা, নৌ–চলাচলের স্বাধীনতা, এবং আইনের শাসন ও আইন–নির্ভর ব্যবস্থায় উৎসাহদানের বিষয়গুলি। তবে এগুলি তৈরি হওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণটি হল এই অঞ্চলে ও তার বাইরে পরিবর্তিত ক্ষমতার ভারসাম্য। ক্ষমতার গতিশীলতার এই খেলা, যা এখন অনেক দিন চলবে, তা থেকে মনে হয় আগামী বছরগুলোতে আরও অনেক স্বল্পপাক্ষিক তৈরি হবে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে এই স্বল্পপাক্ষিকগুলোর উত্থানের ফলাফল কী হবে এবং সেগুলো পুরনো আঞ্চলিক বহুপাক্ষিক কাঠামোগুলোকে কতটা বদলে দিতে পারবে তা অনুধাবন করা প্রয়োজন। কূটনীতির চিরাচরিত রাস্তাগুলো যদি আরও কার্যকর করা না–যায়, যার শুরুটাই হতে হবে অন্তত ফলপ্রসূ আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক আলোচনা দিয়ে, তা হলে স্বল্পপাক্ষিকতার মাধ্যমেই পথের সন্ধান চলতে থাকবে। স্বল্পপাক্ষিকগুলো যেমন একটি কর্মসূচিভিত্তিক নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে বিতর্ক ও দক্ষতার সঙ্গে ফলদানের অনেক বেশি সুযোগ দেয়, তেমনই অনানুষ্ঠানিক ও নমনীয় হয়। বিশ্বের ক্ষমতা–সম্পর্কগুলো যে হেতু বিবাদাস্পদ হয়েই থাকবে এবং ঐকমত্যে পৌঁছনো কঠিন করবে, তাই অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে স্বল্পপাক্ষিকগুলোর অনেকটা বাড়তি সুবিধা থাকবে, এবং এগুলো পরে ধীরে ধীরে পরিণত হতে পারে বৃহত্তর, আরও পরম্পরাগত আনুষ্ঠানিক মঞ্চে।

এই উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে চিন একটা ভূমিকা নিয়েছে। বেজিংয়ের আগ্রাসী কাজকর্ম অন্যদের নজর কেন্দ্রীভূত করেছে এবং আভ্যন্তর বা আঞ্চলিক ক্ষেত্রে সমর্থন জুগিয়েছে এই ধরনের ব্যবস্থা তৈরি করতে, এবং সেই সঙ্গেই কোয়াড–গোছের বিন্যাস ও ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলভিত্তিক কৌশলের প্রতি আরও দেশের আকর্ষণ বাড়াচ্ছে। ইওরোপের অনেক দেশ এখনও এই ঘটনার সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আরও অনেক আঞ্চলিক শক্তির ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় নীতি প্রণয়নের ঘটনার মধ্যে দিয়েই এই বিবর্তনশীল কৌশল, এবং বিশেষ করে স্বল্পপাক্ষিকতা, অনুমোদিত হয়ে যাচ্ছে।

ভারত–সীমান্তে নিরাপত্তা পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে, এবং এই পরিবর্তিত গতিশীলতার কেন্দ্রবিন্দু হল চিন। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ত্রিপাক্ষিক বা অন্য কৌশলগত স্বল্পপাক্ষিক গোষ্ঠীগুলোর সম্পর্কে ভারত তার পুরনো আপত্তি ঝেড়ে ফেলেছে। আগে যদিও এই ধরনের ছোট ও কয়েকটি দেশের–মধ্যে–সীমাবদ্ধ গোষ্ঠীগুলোতে যোগ দিতে ভারত দ্বিধাগ্রস্ত ছিল, গত কয়েক বছরে চিনের আগ্রাসী আচরণ তাকে বাধ্য করেছে প্রকরণগত পরিবর্তনের পথে যেতে। এই স্বল্পপাক্ষিক ব্যবস্থাগুলো ভারতের সামনে তুলে ধরেছে নানা কৌশলগত বিকল্প।

এখন আরও বেশি দেশের কাছে পৌঁছে যাওয়া ছাড়াও নয়া দিল্লি ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে সামরিক ও লজিসটিক্‌স সংক্রান্ত সমঝোতা করেছে, এবং তার ফলে কাছের সমুদ্র ছাড়িয়ে ভারতের পদচিহ্ন দূর সমুদ্রের তটগুলিতে পৌঁছে গিয়েছে।[২৯] এই ঘটনা সমমনস্ক কৌশলগত অংশীদারদের সঙ্গে সামরিক প্রস্তুতি ও আন্তঃকার্যক্ষমতা বৃদ্ধির সহায়ক হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া সহ সব ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশের সঙ্গে ভারত এখন চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের চারটি মূলভিত্তিগত সমঝোতার ফলে সামরিক যোগাযোগের গুণগত মানের পরিবর্তন হয়েছে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কমিউনিকেশনস কমপ্যাটিবিলিটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষরের পর ভারতের সেনাবাহিনী অবাধ যোগাযোগের জন্য এনক্রিপটেড কমিউনিকেশন সিস্টেমে প্রবেশের অধিকার পেয়ে গিয়েছে। ২০১৯–এর মার্চে ভারতীয় নৌবাহিনী ও মার্কিন নৌবাহিনী একটি লোন এগ্রিমেন্ট করে যার ফলে প্যাসিফিক ফ্লিটের দেওয়া দুটি সেনট্রিক্স (‌কম্বাইনড এন্টারপ্রাইজ রিজিওনাল ইনফরমেশন এক্সচেঞ্জ সিস্টেম) ‌কিট এসে গিয়েছে ভারতের নৌবাহিনীর সদর দফতরে।[৩০] এটি বিভিন্ন জায়গায় ও মঞ্চে এমন আরও সিস্টেম বসানোর পরিকল্পনার অংশ, এবং এর ফলে ইন্টারপোর্টেবিলিটি অনেক বেড়ে যাবে। এখন ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক ও স্বল্পপাক্ষিক ব্যবস্থায় ভারত যথেষ্ট বিনিয়োগ করার পর চিন ও রাশিয়া সহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তার যোগাযোগের মৌলিক চরিত্র বদলে গিয়েছে। গালওয়ান দ্বন্দ্বের পর চিন নিজেকে শুধরে নিলেও ইতিমধ্যেই ভারতের কৌশলগত অংশীদারিতে যে সব পরিবর্তন হয়েছে সেগুলির পরিবর্তন ঘটা কঠিন। এর প্রভাব শুধু দ্বিপাক্ষিক পরিপ্রেক্ষিতেই নয়, পড়বে আঞ্চলিক এবং আরও বৃহত্তর বিশ্বব্যাপী কৌশলগত ক্ষেত্রেও।

এই স্বল্পপাক্ষিকগুলো আসিয়ান, আসিয়ান রিজিওনাল ফোরাম (‌এআরএফ)‌, ও ইস্ট এশিয়া সামিট–এর মতো আঞ্চলিক বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপরীতে গিয়ে কতটা সক্রিয় হতে পারে এবং তাদের ভূমিকা কতটা সংক্ষিপ্ত করে দিতে পারে তা থেকে এদের প্রভাবের আর একটা ক্ষেত্র স্পষ্ট হবে। ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তায় যদিও আসিয়ান ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলির এখনও কেন্দ্রীয় ভূমিকা আছে, এবং আসিয়ান–এর সেই কেন্দ্রীয় ভূমিকার কথা অনেকগুলি ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশ আবারও বলেছে, তা হলেও সেই ক্ষেত্রে চিনের কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। লাওস ও কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলিকে বেজিংয়ের ছত্রছায়ায় নিয়ে এসে চিন তাদের নিজের ইচ্ছার অনুগত করে তুলেছে, এবং তার ফলে এই প্রতিষ্ঠানগুলির নিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা ও কেন্দ্রীয় ভূমিকা দুর্বল হয়ে পড়েছে।

উপসংহার

স্বল্পপাক্ষিকগুলোর উত্থানের ঘটনা আসিয়ান–এর মতো এখনকার আনুষ্ঠানিক ও প্রতিষ্ঠানগত ব্যবস্থাগুলোকে জোরদার করবে, এমন ভাবার অবকাশ নেই। এর ফলে সম্ভবত এখনকার বিভক্ত এশিয়ার বিভাজনরেখা আরও স্পষ্ট হওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে, এবং সেখানে সমান্তরাল কূটনৈতিক প্রক্রিয়া চলতে থাকবে:‌ এর একটির নেতৃত্বে থাকবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আর অন্যটির নেতৃত্বে থাকবে চিন এবং আঞ্চলিক শক্তিগুলির নেতৃত্বাধীন যে কোনও সংখ্যক স্বল্পপাক্ষিক। এই অঞ্চলের প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতি আরও বেশি করে বাধা দিতে পারে ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পুনর্মিলন ও সমঝোতা তৈরির প্রক্রিয়ায়। এই ঘটনা এই অঞ্চলের শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থায়িত্বের পক্ষে ক্ষতিকর। স্বল্পপাক্ষিকগুলো বহুপাক্ষিকতার অবমূল্যায়ন ঘটাতে পারে যদি, উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এই ‘স্বল্পপাক্ষিক প্রয়াসগুলো বৃহৎ শক্তির প্রতিযোগিতার‌ মঞ্চ হয়ে ওঠে।’‌[৩১]

মূলগত ভাবে স্বল্পপাক্ষিকতা হল এই অঞ্চলের বেড়ে চলা শক্তি–দ্বন্দ্বের লক্ষণ, তার কারণ নয়। অন্য দিকে, উইলিয়াম টাউ যুক্তি দিয়ে যেমন বলেছেন, স্বল্পপাক্ষিকতার বেড়ে–চলা ঘটনাকে এই ভাবে দেখা ঠিক নয় যে তা ‘এখনকার জোট ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুরোপুরি প্রতিস্থাপিত করবে, বরং তা সেগুলোর পরিপূরক হবে’‌।[৩২] এর মধ্যে সত্য আছে, কারণ আগেই বলা হয়েছে রাষ্ট্রগুলো স্বল্পপাক্ষিকগুলোর অংশীদার হওয়া সত্ত্বেও আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক মঞ্চে যুক্ত থাকবেই। স্বল্পপাক্ষিকগুলোর সফল পরিণতি ধীরে ধীরে বৃহত্তর সমর্থনের জন্য আঞ্চলিক বা বহুপাক্ষিকগুলোর কাছে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। তার জন্য এই সংঘাতমূলক ও বিভাজিত আন্তর্জাতিক রাজনীতির সময় একটি ছোট গোষ্ঠীর মধ্যে ঐকমত্য ও সহযোগিতা আবশ্যক।


এই পেপারটি এই বিষয়ের উপর ওআরএফ–গ্লোবাল পলিসি ভলিউমে আগে প্রকাশিত অন্য একটি নিবন্ধের সম্প্রসারিত ও হালনাগাদ সংস্করণ। আগের নিবন্ধটির নাম:‌ ‘‌ব্রাস ট্যাক্‌স: আনপ্যাকিং দি ইন্ডো–প্যাসিফিক টেমপ্লেট,’ জুলাই ২০২১।


লেখক সম্পর্কে

ডঃ রাজেশ্বরী পিল্লাই রাজাগোপালন ওআরএফ–এর সেন্টার ফর সিকিউরিটি, স্ট্র‌্যাটেজি অ্যান্ড টেকনোলজি–র ডিরেক্টর।


এন্ডনোট্‌স

[১] ট্রয় লি–ব্রাউন, “এশিয়া’‌জ সিকিউরিটি ট্রায়াঙ্গল্‌স: মেরিটাইম মিনিল্যাটরালিজম ইন দ্য ইন্ডো–প্যাসিফিক,” ইস্ট এশিয়া, ৩৫ (‌২০১৮)‌: ১৬৩–১৭৬।

[২] উইলিয়ম টি টাউ, “মিনিল্যাটরাল সিকিউরিটি’‌জ রেলেভ্যান্স টু ইউএস স্ট্র‌্যাটেজি ইন দ্য ইন্ডো–প্যাসিফিক: চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড প্রসপেক্টস,” দ্য প্যাসিফিক রিভিউ, ৩২:২ (২০১৯) পৃষ্ঠা ২৩২–২৪৪, DOI:10.1080/09512748.2018.1465457।

[৩] বিদেশমন্ত্রক, “সিঙ্গাপুরে বিদেশসচিব এস জয়শঙ্করের আইআইএসএস ফুলারটন বক্তৃতা ,” জুলাই ২০, ২০১৫।

[৪] সি রাজা মোহন, “শি, ট্রাম্প, এশিয়ান ডিসঅর্ডার,” ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, নভেম্বর ১১, ২০১৭।

[৫] উইলিয়ম টাউ, “মিনিল্যাটরাল সিকিউরিটি’‌জ রেলেভ্যান্স”।

[৬] গর্ডন আল, “দ্য বেনেফিট্‌স অফ মিনিল্যাটরাল ডিপ্লোম্যাসি,” লাইটহাউজ জারনাল, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, এপ্রিল ১৮, ২০১৯।

[৭] এমন কিছু বিষয়ের জন্য দেখুন আমালিনা আনুয়ার ও নাজিয়া হুসেন, “মিনিল্যাটরালিজম ফর মাল্টিল্যাটরালিজম ইন দ্য পোস্ট–কোভিড এজ ,” পলিসি রিপোর্টস, এস রাজারত্নম স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ, জানুয়ারি ২০২১।

[৮] প্রশান্ত পরমেশ্বরন, “দ্য লিমিটস অফ মিনিল্যাটরালিজম ইন আসিয়ান,” দ্য স্ট্রেট্‌স টাইমস, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৮।

[৯] আরনেস্ট জেড বোয়ার, “চায়না রিভিলস ইট্‌স হ্যান্ড অন আসিয়ান ইন নম পেন,” কমেন্টারি, সেন্টার ফর স্ট্র‌্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (‌ওয়াশিংটন ডিসি)‌, জুলাই ২০, ২০১২; অঙ্কিত পান্ডা, “আসিয়ান ফরেন মিনিস্টার্‌স ইস্যু, দেন রিট্র‌্যাক্ট কমিউনিকে রেফারেন্সিং সাউথ চায়না সি,” দ্য ডিপ্লোম্যাট, জুন ১৫, ২০১৬।

[১০] স্টিউয়ার্ট প্যাট্রিক, “দ্য নিউ “নিউ মাল্টিল্যাটরালিজম: মিনিল্যাটরাল কোঅপারেশন:‌ বাট অ্যাট হোয়াট কস্ট?” গ্লোবাল সামিট্রি, খণ্ড ১, ইস্যু ২, উইন্টার ২০১৫।

[১১] ভুবিন্দার সিং ও সারা টেও, মিনিল্যাটরালিজম ইন দি ইন্ডো–প্যাসেফিক: দ্য কোয়াড্রিল্যাটরাল সিকিউরিটি ডায়ালগ, ল্যানক্যাং–মেকং কোঅপারেশন মেকানিজম, অ্যান্ড আসিয়ান (লন্ডন: টেলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস, ২০২০), পৃ ২। স্বল্পপাক্ষিক বা স্বল্পপাক্ষিকতার কোনও সর্বগ্রাহ্য সংজ্ঞা না থাকলেও ধারণাটির ব্যাখ্যার জন্য দেখুন উইলিয়ম টাউ, “মিনিল্যাটরাল সিকিউরিটি’‌জ রেলেভ্যান্স”।

[১২] জন নিলসন–রাইট, “ক্রিয়েটিভ মিনিল্যাটরালিজম ইন আ চেঞ্জিং এশিয়া:‌‌ অপরচুনিটিজ ফর সিকিউরিটি কনভারজেন্স অ্যান্ড কোঅপারেশন বিটুইন অস্ট্রেলিয়া, ইন্ডিয়া অ্যান্ড জাপান,” রিসার্চ পেপার, চ্যাটহ্যাম হাউজ, জুলাই, ২০১৭।
[১৩] বিদেশ মন্ত্রক, কেন্দ্রীয় সরকার, “ত্রিপাক্ষিক মন্ত্রিপর্যায় আলোচনার পর ভারত–ফ্রান্স–অস্ট্রেলিয়া যুগ্ম বিবৃতি (৪ মে, ২০২১)” ৫ মে, ২০২১।

[১৪] অশোক মালিক, “ অস্ট্রেলিয়া, ইন্ডিয়া, ইন্দোনেশিয়া: আ ট্রাইল্যাটরাল ডায়ালগ অন ইন্ডিয়ান ওশন ,” কমেন্টারি, অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৩; ডিপার্টমেন্ট অফ ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড, অস্ট্রেলিয়ান গভর্নমেন্ট, “ ইন্দোনেশিয়া–অস্ট্রেলিয়া–ভারতের সিনিয়র অফিসারদের প্রথম কৌশলগত আলোচনা, বোগোর, ইন্দোনেশিয়া,” প্রেস রিলিজ, নভেম্বর ২৮, ২০১৭।

[১৫] রাজেশ্বরী পিল্লাই রাজাগোপালন, “ইন্ডিয়া’‌জ ভিশন অফ দ্য ইস্ট এশিয়ান অর্ডার,” এশিয়া পলিসি, খণ্ড ১৩, সংখ্যা ২ (‌এপ্রিল, ২০১৮)‌, পৃ ৩৯।

[১৬] কোয়াড–প্লাস কোনও নিরাপত্তা গোষ্ঠী নয়; এটি তৈরি হয় কোভিড–১৯ এর পরিপ্রেক্ষিতে অতিমারি–উত্তর অর্থনৈতিক পুনর্নির্মাণের, টীকা কূটনীতি ও অন্যান্য অ–চিরাচরিত নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজকর্ম সমন্বিত করতে। তা সত্ত্বেও এই গোষ্ঠীর অতিমারি –উত্তর সময়ে কৌশলগত বাঁক নেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। দেখুন রাজেশ্বরী পিল্লাই রাজাগোপালন, “টুওয়র্ডস আ কোয়াড–প্লাস অ্যারেঞ্জমেন্ট? ” ইন্ডো–প্যাসিফিক অ্যানালিসিস ব্রিফস ২০২০, ২১ এপ্রিল ২০২১।

[১৭] ইয়েন ই রাইনহার্ট ও বার্ট এলিয়াস, “চায়না’‌জ এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন (‌এডিআইজেড)”, সিআরএস রিপোর্ট, কংগ্রেসনাল রিসার্চ সারভিস, জানুয়ারি ৩০, ২০১৫;‌ ভিরলা নওয়েন্স ও ব্লেক হারজিনগার, “এবাভ দ্য ল: হোল্ডিং চায়না টু অ্যাকাউন্ট ইন দ্য সাউথ চায়না সি,” অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, ১২ এপ্রিল ২০২১।

[১৮] প্রেমেশ সাহা, বেন ব্ল্যান্ড ও ইভান এ লক্সমন, “অ্যাঙ্করিং দি ইন্ডো–প্যাসিফিক: দ্য কেস ফর ডিপার অস্ট্রেলিয়া–ইন্ডিয়া–ইন্দোনেশিয়া ট্রাইল্যটরাল কোঅপরেশন””, ওআরএফ, দ্য লোয়ি ইনস্টিটিউট অ্যান্ড সিএসআইএস পলিসি রিপোর্ট, জানুয়ারি ২০২০, পৃ ৩১।

[১৯] বিদেশমন্ত্রক, “নিউ ইয়র্কে মার্কিন–ভারত–জাপানের প্রথম ত্রিপক্ষ মন্ত্রিপর্যায়ের সংলাপ” সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৫; রাজেশ্বরী পিল্লাই রাজাগোপালন ও সিলভিয়া মিশ্র, “ইন্ডিয়া–জাপান–ইউএস ট্রাইল্যাটরাল ডায়ালগ গেন্‌স অ্যাডিশনাল ট্র‌্যাকশন,” এশিয়া প্যাসিফিক বুলেটিন নং ৩২৭, (‌অক্টোবর ২২, ২০১৫)।

[২০] বিদেশমন্ত্রক, “ভারত–ফ্রান্স–অস্ট্রেলিয়ার প্রথম সিনিয়র অফিসারদের ত্রিপক্ষ সংলাপ,” ভারত সরকার, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২০।

[২১] অরিন্দম বাগচি (@MEAIndia), “রিঅ্যাফারমিং আওয়ার ক্লোজ পার্টনারশিপস ইন দি ইন্ডো–প্যাসিফিক রিজিয়ন, FS@harshvshringla কো–চেয়ার্‌ড দ্য ইনঅগরাল ইন্ডিয়া–ফ্রান্স–অস্ট্রেলিয়া ট্রাইল্যটরাল ডায়ালগ টুডে।” টুইটার, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২০।

[২২] দি ইন্ডো–প্যাসিফিক: ফার্স্ট ট্রাইল্যাটরাল ডায়ালগ বিটুইন ফ্রান্স, ইন্ডিয়া অ্যান্ড অস্ট্রেলিয়া,” নয়াদিল্লিস্থ ফরাসি দূতাবাস, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০।

[২৩] বিদেশমন্ত্রক, “ইন্ডিয়া–ফ্রান্স–অস্ট্রেলিয়া যৌথ বিবৃতি।”

[২৪] থার্ড ইন্ডিয়া–অস্ট্রেলিয়া–ইন্দোনেশিয়া ট্রাইল্যাটরাল সিনিয়র অফিশিয়াল্‌স ডায়ালগ,” ডিপার্টমেন্ট অফ ফরেন অ্যাফেয়ারস অ্যান্ড ট্রেড, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯; “ইন্ডিয়া–অস্ট্রেলিয়া বাইল্যাটরাল রিলেশনস,” বিদেশমন্ত্রক, সেপ্টেম্বর ২০১৯।

[২৫] অ্যান্ডু টিলেট ও এমা কোনর্স, “নিউ ব্লক অফ অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া টেকস শেপ অ্যামিড চায়না ফিয়ারস,” অস্ট্রেলিয়ান ফিনান্সিয়াল রিভিউ, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২০।

[২৬] ভারতীয় প্রজাতন্ত্র ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সার্বিক কৌশলগত অংশীদারি সংক্রান্ত যৌথ বিবৃতি”, বিদেশমন্ত্রক, জুন ৪, ২০২০।

[২৭] বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রক, “সরবরাহ শৃঙ্খল স্থিতিস্থাপকতা উদ্যোগ–এর সূচনায় অস্ট্রেলিয়া–ভারত–জাপান বাণিজ্য মন্ত্রীদের যৌথ বিবৃতি,” প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো, ২৭ এপ্রিল, ২০২১।

[২৮] বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রক, “সরবরাহ শৃঙ্খল স্থিতিস্থাপকতা উদ্যোগ–এর সূচনায় অস্ট্রেলিয়া–ভারত–জাপান বাণিজ্য মন্ত্রীদের যৌথ বিবৃতি,” প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো, ২৭ এপ্রিল, ২০২১।

[২৯] রাজেশ্বরী পিল্লাই রাজাগোপালন, “ইন্ডিয়া’‌জ মিলিটারি আউটরিচ: মিলিটারি লজিসটিক্‌স এগ্রিমেন্টস,” দ্য ডিপ্লোম্যাট, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২১।

[৩০] দীনকর পেরি, “ইন্ডিয়া ইন টক্‌স ফর লজিস্টিকস প্যাক্ট উইথ রাশিয়া, ইউকে অ্যান্ড ভিয়েতনাম,” দ্য হিন্দু, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২০।

[৩১] সারা টিও, “কুড মিনিল্যাটরালিজম বি মাল্টিল্যাটরালিজম’‌স বেস্ট হোপ ইন দ্য এশিয়া–প্যাসিফিক?” দ্য ডিপ্লোম্যাট, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৮।

[৩২] উইলিয়ম টি টাউ, “মিনিল্যাটরাল সিকিউরিটি’‌জ রেলেভ্যান্স”।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.