Image Source: Getty
রাশিয়া বনাম পশ্চিমের প্রভাব বিস্তারের নিরিখে জর্জিয়া দীর্ঘদিন ধরে টানাপড়েনের মধ্যে রয়েছে। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে জর্জিয়ান ড্রিম পার্টি এক অভূতপূর্ব বিজয় অর্জন করেছিল। তবুও, তিবিলিসির রাজপথ সেই সময় থেকেই নির্বাচনে কথিত কারচুপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে। এই উত্তেজনাগুলি জর্জিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভকে উস্কে দিয়েছে, যা সম্ভবত এই দক্ষিণ ককেশীয় প্রজাতন্ত্রের গণতান্ত্রিক সমন্বিতকরণের নিরিখে সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ পরিণতি বয়ে আনে। ২৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া জর্জিয়ার নতুন পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশনটিকে বিরোধীরা অবৈধ বলে দাগিয়ে দিয়েছেন এবং তাঁরা অধিবেশনটি বয়কট করেন।
সুষ্ঠু নির্বাচন না কি রাশিয়ার বিশেষ অভিযান?
রাজনৈতিক পরিসরে নির্বাচনী প্রচারের সময় উভয় পক্ষই জর্জিয়ার বৈদেশিক নীতির সাযুজ্য এবং দেশটির সম্ভাব্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যোগদানের বিষয়ে সরব হয়েছে।
২৫ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া জর্জিয়ার নতুন পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশনটিকে বিরোধীরা অবৈধ বলে দাগিয়ে দিয়েছেন এবং তাঁরা অধিবেশনটি বয়কট করেন।
তার নির্বাচনী ইতিহাসে প্রথম বারের মতো জর্জিয়া ইলেকট্রনিক ভোটিং চালু করেছে এবং ইইউ-চালিত সংস্কারের মাধ্যমে, একটি সম্পূর্ণ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যা সংশ্লিষ্ট প্রতিটি দলের ভোটের অংশ সুনিশ্চিত করতে সক্ষম। নির্বাচনে মোট ১৮টি দল ও জোট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ২০১২ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা জর্জিয়ান ড্রিম পার্টি প্রায় ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে, জর্জিয়ান পার্লামেন্টে ১৫০টি আসনের মধ্যে ৮৯টিতে জয়লাভ করে চতুর্থ মেয়াদের জন্য পুনরায় নির্বাচিত হয়েছে।
জর্জিয়ান ড্রিম পার্টি সামৎশে-জাভাখেটি, কেভেমো কার্টলি এবং আদজারার মতো তুলনামূলক ভাবে গ্রামীণ অঞ্চলে নিজের দৃঢ় অবস্থান বজায় রেখেছে। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, কুতাইসি (ইমেরেতি), পোটি (সামেগ্রেলো) এবং বাতুমির (আদজারা) মতো অন্যান্য বড় শহরে যথেষ্ট হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে, যেখানে দলটি ৫০ শতাংশের কম ভোট পেলেও সেই পরিমাণ চারটি পশ্চিমপন্থী বিরোধী দলের চেয়ে বেশি। সালেনজিখার (সামেগ্রেলো) বিরোধী দৌড়ে ড্রিম পার্টি ৪৮ শতাংশ ভোট পায়, যা বিরোধী চারটি দলের মোট প্রাপ্ত ভোটের তুলনায় বেশি। মিংরেলিয়ায় যেখানে বিরোধী দলগুলি, বিশেষ করে ইউনাইটেড ন্যাশনাল মুভমেন্ট, ২০২১ সালের স্থানীয় নির্বাচনে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল, সেখানে জর্জিয়ান ড্রিম পার্টি (জিডি) সেই ধারাকে উলটে দিয়েছে এবং সমস্ত জেলায় জয়লাভ করে। যাই হোক, দলটি শহুরে কেন্দ্রগুলিতে বিরোধিতার সম্মুখীন হয় এবং যথাক্রমে রাজধানী তিবিলিসি ও রুস্তাভিতে যথাক্রমে ৪২.২ শতাংশ এবং ৪১.৪ শতাংশ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়। তাদের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে ৪২টি দেশে ৬৭টি ভোটকেন্দ্র স্থাপনের জন্য সরকারের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দলটি জর্জিয়ান প্রবাসীদের মধ্যে বিরোধী পক্ষের নিরিখে পিছিয়ে ছিল। উপরন্তু, জিডি পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয় যা দলটিকে ব্যাপক সাংবিধানিক পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছে।
আশ্চর্যের বিষয় হল, ইউনিটি-টু সেভ জর্জিয়া (ইউএনএম) জোট – যা মিখাইল সাকাশভিলির অনুপস্থিতিতে বৃহত্তম বিরোধী দল - মাত্র ১০.১৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে, যা ২০২০ সালের নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের অর্ধেকের চেয়েও কম। পরিবর্তনের জন্য জোট – এমন একটি নতুন জোট যা ইউএনএম-এর কিছু নেতাকে আকৃষ্ট করেছিল - বৃহত্তম বিরোধী ব্লকে পরিণত হয় এবং ১১ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিল। সামগ্রিক ভাবে, যে চারটি বিরোধী দল পার্লামেন্টে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় ৫ শতাংশ থ্রেশহোল্ড বা মাত্রা অতিক্রম করেছে, তারা সম্মিলিত ভাবে ৩৭.৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে।
দলটি শহুরে কেন্দ্রগুলিতে বিরোধিতার সম্মুখীন হয় এবং যথাক্রমে রাজধানী তিবিলিসি ও রুস্তাভিতে যথাক্রমে ৪২.২ শতাংশ এবং ৪১.৪ শতাংশ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়।
যাই হোক, বিরোধী দল নির্বাচনকে জালিয়াতি বলে দাবি করেছে এবং এই পরিস্থিতি দেশকে একটি জাতীয় রাজনৈতিক সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষক নির্বাচনী অনিয়ম, জবরদস্তি, ভোটারদের ভয় দেখানো এবং রাষ্ট্র ও প্রশাসনিক সাধনীর অপব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন, যার ফলে হাজার হাজার জর্জিয়ান নাগরিক ও সুশীল সমাজ গোষ্ঠীর ব্যাপক প্রতিবাদ দেখা দিয়েছে। জর্জিয়ান ড্রিম পার্টির প্রাক্তন মিত্র সমালোচক প্রেসিডেন্ট সালোমে জোরাবিচভিলি এ হেন নির্বাচনকে ‘রাশিয়ান বিশেষ অভিযান’ বলে তীব্র নিন্দা করেছেন।
একটি দ্বিধাবিভক্ত রাজনৈতিক পরিসর
অত্যন্ত মেরুকৃত ও অস্থির রাজনৈতিক পরিসরে শরৎকালীন নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গত কয়েক বছরে জর্জিয়ান ড্রিম পার্টি পশ্চিম-বিরোধী বক্তব্যকে তুলে ধরার জন্য আইন প্রণয়নের ক্ষমতাকে কাজে লাগানোর অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে, যার ফলে জর্জিয়ার ইউরো-আটলান্টিক আকাঙ্ক্ষাও খর্ব হয়। বেশ কিছু বিতর্কিত নীতি, বিশেষ করে ফরেন এজেন্টস ল (রাশিয়ান আইন হিসাবে বলা হয়), বর্তমান অচলাবস্থার জন্য একটি উল্লেখযোগ্য অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। পশ্চিমপন্থী বিরোধীরা প্রেসিডেন্ট জোরাবিচভিলির অধীনে একত্র হয়েছে এবং জর্জিয়ার ইইউ সমন্বিতকরণের পথ পুনরুদ্ধার করতে জর্জিয়ান সনদে স্বাক্ষর করেছে।
যাই হোক, জর্জিয়ানদের ব্যাপক রাজনৈতিক প্রতিবাদ ও সমাবেশ সত্ত্বেও – যাঁদের ৮৯ শতাংশ ইইউ-তে জর্জিয়ার যোগদানকে সমর্থন করেন - ড্রিম পার্টি চতুর্থ মেয়াদের জন্য প্রস্তুত বলে মনে করা হচ্ছে। বৃহৎ ব্যবধানে জয়ের চাবিকাঠি ছিল এই যে, দলটি সমাজের রক্ষণশীল অংশের পাশাপাশি জর্জিয়ার গ্রামীণ অঞ্চলের মধ্যেও তুলনামূলক ভাবে দৃঢ় অবস্থান বজায় রাখতে সক্ষম রয়েছে। ঐক্য, নেতৃত্ব ও সমন্বিত নীতির অভাব একটি দ্বিধাবিভক্ত বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ড্রিম পার্টির বিজয়কে সহজতর করেছিল। জর্জিয়ান ড্রিম পার্টির নির্বাচনী প্রচারের কেন্দ্রে ছিল বেশ কিছু উচ্চাকাঙ্ক্ষী অর্থনৈতিক লক্ষ্য, যেমন ১৩০ বিলিয়ন জর্জিয়ান লারির জাতীয় আউটপুট অর্জন, পেনশন ও বেতন বৃদ্ধি, বেকারত্ব হ্রাস, স্বাস্থ্যসেবা ও কৃষির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং ২০৩০ সালের মধ্যে জ্বালানি স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠা। এই সব কিছুই সম্ভবত ভোটারদের মন জিততে সমর্থ হয়। এই প্রেক্ষাপটে, দলটি তিবিলিসি ও বাতুমিকে সংযুক্তকারী একটি চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণকে ত্বরান্বিত করা এবং জর্জিয়াকে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার সঙ্গে সংযোগকারী অবকাঠামো প্রকল্পগুলি সম্পূর্ণ করার অভিপ্রায়ও ব্যক্ত করেছে। সর্বোপরি, জর্জিয়ান ড্রিম পার্টির আখ্যান – যে আখ্যানে নির্বাচনকে ‘যুদ্ধ বনাম শান্তি’ এবং ‘চিরাচরিত মূল্যবোধ বনাম নৈতিক অবক্ষয়’-এর মধ্যে লড়াই রূপে তুলে ধরেছিল - বিরোধীপক্ষ দ্বারা জর্জিয়ার ভবিষ্যৎকে রাশিয়া ও ইইউ-এর মধ্যে একটি দ্বিমুখী বিকল্প হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টার চেয়ে মানুষের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়েছে।
জর্জিয়ানদের ব্যাপক রাজনৈতিক প্রতিবাদ ও সমাবেশ সত্ত্বেও – যাঁদের ৮৯ শতাংশ ইইউ-তে জর্জিয়ার যোগদানকে সমর্থন করেন - ড্রিম পার্টি চতুর্থ মেয়াদের জন্য প্রস্তুত বলে মনে করা হচ্ছে।
জর্জিয়ান ড্রিম পার্টি ২০২৮ সালের মধ্যে তার ইইউ অ্যাসোসিয়েশন চুক্তির ৯০ শতাংশ পূরণ করার লক্ষ্যে আসীন এবং একই সঙ্গে রাশিয়ার প্রতি একটি বাস্তবসম্মত মনোভাব বজায় রাখতে আগ্রহী। ‘ভারসাম্যমূলক বৈচিত্র্যের’ এই কৌশলটি ২০০৮ সালের রুশ-জর্জিয়া দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটকে মাথায় রেখে তার জাতীয় সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করে, যেখানে জর্জিয়া আবখাজিয়া ও দক্ষিণ ওসেটিয়ার অঞ্চল-সহ তার ২০ শতাংশ ভূখণ্ড হারিয়েছিল।
তিবিলিসির জন্য মস্কোর সঙ্গে একটি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতা অনতিক্রম্য। এই আখ্যানটি সম্ভবত জর্জিয়ান ভোটারদের মধ্যেও অনুরণিত হয়েছে, যার মধ্যে অন্তত ২০ শতাংশ দারিদ্র্যে নিমজ্জিত এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও জাতীয় নিরাপত্তা উভয় বিষয়কেই অগ্রাধিকার দেয়।
জর্জিয়ান ড্রিম পার্টির সামনে এক কঠিন পথ
জর্জিয়ান ড্রিম পার্টির দাবি করা বিজয় এই অঞ্চল ও তার বাইরের বিশ্ব নেতাদের তরফে মেরুকৃত প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। জর্জিয়ার পশ্চিমী মিত্ররা নির্বাচনী কারচুপির তদন্তের রব তুলেছে। অন্য দিকে, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া এবং আজারবাইজান-সহ এই অঞ্চলে রাশিয়া ও তার মিত্ররা দলটির বিজয়কে সমর্থন করেছে। নভেম্বর মাসে আহ্বান করা প্রথম পার্লামেন্ট অধিবেশনের পরে বর্তমান প্রেসিডেন্ট সাংবিধানিক আদালতে প্রতিকার চেয়েছিলেন এবং দিনটিকে জর্জিয়ার জন্য ‘ব্ল্যাক মনডে’ (বা ‘কালো সোমবার’) হিসাবে আখ্যায়িত করেছিলেন। এ দিকে, জর্জিয়ান পার্লামেন্ট ১৪ ডিসেম্বর পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য একটি খসড়া প্রস্তাব পাস করেছে, যেখানে প্রেসিডেন্ট প্রথম বারের মতো জনপ্রিয় ভোটের পরিবর্তে ইলেকটোরাল কলেজ বা বিজয়ী সাংসদ দ্বারা নির্বাচিত হবেন।
আগামিদিনে জর্জিয়ান ড্রিম সরকারকে নিজের বৈধতার সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি মস্কো ও ব্রাসেলস উভয়ের প্রত্যাশার ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য একটি সূক্ষ্ম পথে হাঁটতে হবে।
জয়া আউপ্লিশ অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের রিসার্চ ইন্টার্ন।
শায়রী মলহোত্র অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের ডেপুটি ডিরেক্টর।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.