Published on Jul 15, 2023 Updated 0 Hours ago
একুশ শতকে ন্যায়সঙ্গত বৃদ্ধি: জি২০-র বহুপাক্ষিকতার মাধ্যমে অভিবাসন সমস্যার মোকাবিলা

টাস্ক ফোর্স ৭ টুওয়ার্ডস রিফর্মড মাল্টিল্যাটেরালিজম: ট্রান্সফর্মিং গ্লোবাল ইনস্টিটিউশনস অ্যান্ড ফ্রেমওয়ার্কস


সারসংক্ষেপ

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কয়েকটি জি২০ দেশ বিশ্বব্যাপী অভিবাসীদের সবচেয়ে বড় প্রবাহের সাক্ষী থেকেছে। অভিবাসন সমস্যা লক্ষাধিক মানুষকে বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থান খুঁজে নিতে সক্ষম করলেও এটি সাধারণত বৈষম্যকেই তুলে ধরে। জি২০-র কর্মসূচি সকলের জন্য ন্যায্য এবং ন্যায়সঙ্গত বৃদ্ধি সুনিশ্চিত করার চেষ্টা করে। এই পলিসি ব্রিফটি এমন তিনটি সমস্যাকে তুলে ধরেছে, যেগুলির সমাধান অত্যন্ত আবশ্যক: বলপূর্বক অভিবাসন, অমানবিক কাজের পরিস্থিতি এবং অভিবাসীদের সামাজিক সংহতির অভাব। এই সমস্যাগুলি মোকাবিলা করার জন্য নীতি সংক্ষেপটিতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির সংস্কার, দেশীয় নীতিতে আন্তর্জাতিক পরিকাঠামোকে সমন্বিত করা, অভিবাসন সমস্যা মোকাবিলায় বহুপাক্ষিক সহযোগিতাকে উত্সাহ জোগানো এবং নাগরিক সমাজের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রতিবন্ধকতা

অভিবাসন হল একটি প্রধান ভূ-রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সমস্যা যা জি২০-র দেশের অভ্যন্তরীণ নীতি পরিকাঠামোকে প্রভাবিত করে। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (অভিবাসন সংক্রান্ত আইন বা ইমিগ্রেশন বিলের মাধ্যমে), জার্মানি (স্কিলড ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট বা দক্ষ অভিবাসন আইনের মাধ্যমে) এবং সৌদি আরব (লেবার রিফর্ম ইনিশিয়েটিভ বা শ্রম সংস্কার উদ্যোগের মাধ্যমে)(১)। তাই অভিবাসন ব্যবস্থাপনার একটি সুবিন্যস্ত প্রক্রিয়া বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা সকলের জন্য ন্যায়সঙ্গত এবং ন্যায্য উন্নয়ন নিশ্চিত করে। জি২০ দেশগুলি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি গঠন করে এবং শ্রম অভিবাসন এই দেশগুলির সরবরাহ শৃঙ্খলে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে নীতি বাস্তবায়নের কিছু ক্ষেত্রে সমান বৃদ্ধির সুযোগ অর্জনে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা পরিলক্ষিত হয়েছে। এই নীতি সংক্ষেপটিতে তিনটি প্রধান সমস্যাকে চিহ্নিত করা হয়েছে:

  • বলপূর্বক অভিবাসনের জন্য আশ্রয়ের অভাব

যে সব জি২০ দেশ নিয়মিত ভাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্র (যেমন সৌদি আরব) থেকে বলপূর্বক অভিবাসন প্রবাহের সাক্ষী থেকেছে, সেই দেশগুলি প্রায়শই এই সমস্যাকে অস্থায়ী বলে মনে করে এবং তারা মনে করে তাদের দেশে বসবাসকারী অভিবাসীরা শুধু মাত্র একটি ট্রানজিট পিরিয়ড বা অনতিদীর্ঘ সময়ের জন্যই সে দেশে ঠাঁই নিয়েছেন।(২) এই দৃষ্টিকোণটি অভ্যন্তরীণ নীতিতেও প্রতিধ্বনিত হয়, যা ‘পলিসি অব নো পলিস’ নামে পরিচিত এবং যেখানে অভিবাসীরা কর্মসংস্থানের সুযোগ, স্বাস্থ্যসেবা বা সামাজিক পরিষেবাগুলির লব্ধতা ছাড়াই এক অদৃশ্য পরিকাঠামোর অংশ হয়ে ওঠেন।(৩) আন্তর্জাতিক নীতিগুলিও এই ধারণার ভিত্তিতেই নির্মিত, যে পরিস্থিতির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিরা তাদের মূল দেশে ফিরে যেতে পারেন।(৪) কিন্তু এ কথা স্বীকার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, এই বাস্তুচ্যুতির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দ্বন্দ্বের তীব্রতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ অতিমারির প্রভাবের কারণে স্থায়ী হয়ে রয়ে যাবে। তাই এ হেন নীতির প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ, যেগুলি আশ্রয়দাতা দেশগুলিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং অভিবাসী পরিবারগুলিকে সুরক্ষা জোগানোর মাধ্যমে অভিবাসীদের পুনর্বাসন ও সমন্বয় সাধন করবে।

  • অভিবাসীদের কাজের অবস্থা

অভিবাসীরা প্রায়শই অনিয়ন্ত্রিত পরিসরে কাজ খুঁজে নিতে বাধ্য হন, যে ক্ষেত্রগুলি অধীনতামূলক কাঠামোর ভিত্তিতে টিকে থাকে। ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন (আইএলও) অনুসারে, অভিবাসী ও শরণার্থীরা অস্থায়ী এবং কম মজুরির অপ্রাতিষ্ঠানিক ও সুরক্ষাবিহীন কাজ করার ফলে তীব্র পর্যায়ের ঝুঁকির সম্মুখীন হন।(৫) অনেক দেশে এই ব্যক্তিরা সামাজিক সুরক্ষা, স্বাস্থ্য বিমা বা ন্যূনতম মজুরির  প্রতিশ্রুতি পান না। আইএলও সকল শরণার্থী ও অভিবাসী শ্রমিককে ব্যাপক, ন্যায্য ও পর্যাপ্ত সামাজিক সুরক্ষা প্রদানের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে(৬) কিন্তু এই পরিসরে এখনও অনেক কিছু করা বাকি আছে। অনেক জি২০ অর্থনীতি তাদের অভিবাসী সম্প্রদায়ের অবদানের উপর ব্যাপক ভাবে নির্ভরশীল হলেও তাদের দুর্ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে এবং তারা যে সুযোগ প্রদান করে, সেখানে অসাম্যই প্রতিফলিত হয়।(৭)

  • সামাজিক সংহতির অভাব

অনেক জি২০ দেশে স্থানীয় জনগণ অভিবাসীদের সামাজিক ভাবে সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমন্বিত করার প্রচেষ্টাকে প্রতিরোধ করে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতার মান খারাপতর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিবাসন এবং শরণার্থী সমঝোতার বিষয়ে অভ্যন্তরীণ মতামত অনেক দেশেই নেতিবাচক হয়ে উঠেছে।(৮) এই ধরনের বৈরিতার পরিবেশ অভিবাসন বিরোধী আইনের প্রতি বর্ধিত সমর্থন দ্বারা সংজ্ঞায়িত, যা অভিবাসী কর্মীদের নির্বিচারে আটক এবং ব্যাপক বেকারত্বের প্রচারকারী সরকারি নীতিতেও প্রতিধ্বনিত হয়। সুষ্ঠু ও ন্যায়সঙ্গত উন্নয়ন সুনিশ্চিত করার জন্য এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা জরুরি এবং এমনটা করতে গেলে অভিবাসনকে শুধু মাত্র একটি আইনি ঘটনা হিসেবে দেখলেই চলবে না, বরং সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজে সুশীল সমাজ ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকেও সম্পৃক্ত করতে হবে।

জি২০-র ভূমিকা

জি২০ দেশগুলি বিশ্বব্যাপী জিডিপি-র ৮০ শতাংশের বেশি ও বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশের জন্য দায়ী এবং অভিবাসন প্রবাহ শ্রমশক্তির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে রয়েছে।(৯) ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ২৮১ মিলিয়ন অভিবাসীর মধ্যে ৬৪ শতাংশ প্রধানত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সৌদি আরব, রাশিয়া এবং ব্রিটেনের মতো জি২০ দেশগুলিতে বসবাস করেন। (দ্রষ্টব্য চিত্র ১)(১০)

চিত্র ১: জি২০ দেশগুলিতে বসবাসকারী অভিবাসী

সূত্র: ইউএন ডিপার্টমেন্ট অফ ইকোনমি অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স(১১)

জি২০ দেশগুলিতে বিশ্বের প্রবীণ জনসংখ্যার ৭০ শতাংশেরও বেশি (৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সি ব্যক্তি) মানুষ বসবাস করেন।(১২) বিশ্বব্যাপী জেরিয়াট্রিক বা প্রবীণ জনসংখ্যা ২০৫০ সাল নাগাদ ১ বিলিয়ন হবে বলে অনুমান করা হয়েছে, যা বিশ্ব জনসংখ্যার ২১ শতাংশে এসে দাঁড়াবে এবং জি২০ দেশগুলিতে আনুপাতিক বৃদ্ধি ঘটাবে (চিত্র ২ দ্রষ্টব্য)।(১৩) উপরন্তু, জি২০ দেশগুলিতে প্রজননের হার হ্রাস পাচ্ছে, ১৯৫৫ সালে ৪.৯ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রত্যাশিত ২.৩-এ নেমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।(১৪) এর ফল স্বরূপ, জি২০ দেশগুলিতে অভিবাসন প্রবাহকে তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়, যেহেতু অভিবাসীদের প্রায় ৮৬ শতাংশ কর্মজীবী বয়সের (২৫-৬৪ বছর) অন্তর্গত।(১৫)

চিত্র ২: জি২০ দেশগুলিতে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সি ব্যক্তিদের জনসংখ্যার অনুপাত

উত্স: ইউএন ওয়ার্ল্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ওইসিডি বিশ্লেষণ(১৬)

এই ধরনের অভিবাসীদের নিয়োগ করা শ্রমের খরচের পরিমাণ কমায় এবং বর্ধিত বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে, যার ফলে আর্থিক ভারসাম্য বা দীর্ঘমেয়াদে সরকারের রাজস্ব ও ব্যয়ের মধ্যে পার্থক্যের ইতিবাচক অবদান থাকে।(১৭) জি২০ দেশগুলিতে বর্ধিত বৃদ্ধির জন্য অভিবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এই দেশগুলিতে অভিবাসীদের প্রতি ব্যবহার, পুনর্বাসন ও তাদের সম্পর্কে ধারণা ন্যায়সঙ্গত বৃদ্ধি ও উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে চলেছে। আইএলও এই প্রতিবন্ধকতাগুলি কাটিয়ে উঠতে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও জি-২০ দেশগুলিতে সেগুলির বাস্তবায়নের অভাব রয়েছে। জি২০-কে অবশ্যই নিম্নলিখিত দ্বন্দ্বগুলির সমাধান করতে হবে:

  • বলপূর্বক অভিবাসন বৃদ্ধি

বলপূর্বক অভিবাসন এবং বাস্তুচ্যুতি হল নানাবিধ বিষয়ের মধ্যে ব্যাপক আন্তর্জাতিক বৈষম্য, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, সংঘাত এবং জলবায়ু প্ররোচিত বিপর্যয়ের ফলাফল। এই ধরনের চাপ বৃদ্ধির ফলে ব্যাপক ভাবে বাস্তুচ্যুতি ঘটেছে। ২০২০ সালে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তির সংখ্যা ৮০ মিলিয়নের বেশি বলে মনে করা হয়, যা ২০১০ সালের ৪১ মিলিয়নের তুলনায় এক উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি।(১৮) অর্থাৎ ৯৫ জনের মধ্যে এক জন বা বিশ্ব জনসংখ্যার এক শতাংশ বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এই বাস্তুচ্যুত জনসংখ্যার মধ্যে জি২০ দেশগুলি প্রায় ৭.৭ মিলিয়ন বা সমস্ত শরণার্থীর ৩৭ শতাংশ মানুষের বাসস্থল (দ্রষ্টব্য সারণি ১) এবং তাঁদের ইউনাইটেড নেশনস হাইকমিশনার ফর রিফিউজিস দ্বারা প্রদত্ত প্রবিধানের আওতায় সুরক্ষা প্রদান করা হয়।(১৯)

সারণি ১: জি২০ দেশগুলিতে শরণার্থীদের জনসংখ্যা

২০১৫ ২০১৬ ২০১৭ ২০১৮ ২০১৯ ২০২০
আর্জেন্টিনা ৩১৮৭ ৩২৬৭ ৩৩৩২ ৩৪৪২ ৩৮৫৭ ৪০৪৫
অস্ট্রেলিয়া ৩৬৯১৭ ৪২১৮৭ ৪৮৪৮০ ৫৬৯৩৪ ৫৯৫২৯ ৫৭৪৫১
ব্রাজিল ৮৭০৩ ৯৬৭৪ ১০২৬০ ১১৩০৪ ৩২৮৪৪ ৫৯১৪৭
কানাডা ১৩৫৮৯০ ৯৭৩২২ ১০৪৭৬৮ ১১৪১০১ ১০১৭৫৭ ১০৯২৬৪
চিন ৩০১০৪৪ ৩১৭২৫৪ ৩২১৭১৪ ৩২১৭৫৮ ৩০৩৩৭৯ ৩০৩৪১০
ফ্রান্স ২৭৩১১৭ ৩০৪৫২৭ ৩৩৭১৫৮ ৩৬৮৩৪৫ ৪০৭৯১৫ ৪৩৬১০০
ব্রিটেন ১২৩০৫১ ১১৮৯৭৩ ১২১৮২১ ১২৬৭০৮ ১৩৩০৮৩ ১৩২৩৪৯
জার্মানি ৩১৬০৯৮ ৬৬৯৪৬৮ ৯৭০৩৫৭ ১০৬৩৮৩৫ ১১৪৬৬৮২ ১২১০৬৩৬
ভারত ২০১৩৭৯ ১৯৭৮৪৮ ১৯৭১৪২ ১৯৫৮৮৭ ১৯৫১০৩ ১৯৫৪০৩
ইন্দোনেশিয়া ৫৯৫৪ ৭৮২৪ ৯৭৮২ ১০৭৮৬ ১০২৮৭ ১০১৩৪
ইতালি ১১৮০৩৬ ১৪৭৩৬২ ১৬৭৩৩০ ১৮৯২২৭ ২০৭৬০২ ১২৮০৩৩
জাপান ২৪৭৯ ২৫১২ ২১৮৯ ১৮৯৩ ১৪৬৩ ১১৩৭
কোরিয়া ১৪৫৫ ১৭৯৮ ২২৩৮ ২৮৯০ ৩১৯৬ ৩৪৯৮
মেক্সিকো ২৯০৪ ৬১৭৮ ৮৯৯৩ ১৬৫৩০ ২৮৫১৭ ৪৫৪৬৯
ইউরোপীয় ইউনিয়ন কান্ট্রির অন্যান্য দেশ ৫০৩৪৭৮ ৬৪৮৩৮৮ ৬৯২২৯৩ ৭৪১৪৩২ ৮২৯১৫০ ৮৮২৪৩০
দক্ষিণ আফ্রিকা ১২১৬৩৫ ৯১০১৮ ৮৮৬৯৪ ৮৯২৮৫ ৭৮৩৯৫ ৭৫৭৫৪
রাশিয়ান ফেডারেশন ৩১৪৪৯৮ ২২৮৯৮১ ১২৬০২১ ৭৭৩৮২ ৪২৪১৩ ২০৩২৫
সৌদি আরব ১২২ ১৩৬ ১৫৩ ২৬৩ ৩১৫ ৩৪০
তুরস্ক ২৫১৪৩৪৮ ২৮৬৯৪১৯ ৩৪৮০৩৫০ ৩৬৮১৬৮৮ ৩৫৭৯৫৩১ ৩৬৫২৩৬২
আমেরিকা ২৭৩১৯৮ ২৭২৯৬৩ ২৮৭১৩৫ ৩১৩২৪২ ৩৪১৭১৫ ৩৪০৮৮১
মোট ৫২৮৪৪৯৩ ৬০৩৭০৯৯ ৬৯৮০২১০ ৭২৮৬৯৩২ ৭৫০৫৭৩৩ ৭৬৬৯১৬৮

সূত্র: জি২০-কে দেওয়া ওইসিডি-র রিপোর্ট(২০)

  • অমানবিক কাজের পরিবেশ

অভিবাসী শ্রমিকরা বলপূর্বক শ্রমের ক্ষেত্রে সাধারণের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি ঝুঁকির সম্মুখীন হন। প্রধানত কাজের দীর্ঘ সময়, অসম ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ বেতন এবং অর্থনৈতিক ও যৌন শোষণ দ্বারা এটি চিহ্নিত।(২১) সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ অতিমারি চলাকালীন অনেক জি২০ দেশই তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দেয় এবং সংস্থাগুলি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অভিবাসী শ্রমিকদের ছাঁটাই করে, যা তাঁদের কোনও সামাজিক সুরক্ষা ছাড়াই একটি অত্যন্ত অনিশ্চিত পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দেয়।

জি২০ দেশগুলি রাষ্ট্রপুঞ্জের গাইডিং প্রিন্সিপলস অন বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস-সহ মর্যাদাপূর্ণ শ্রমের আন্তর্জাতিক গুণমানগুলির বাস্তবায়ন করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যেখানে অভিবাসীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতির উপর জোর দেওয়ার পাশাপাশি পাচার এবং বলপূর্বক শ্রমের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের প্রস্তাব করা হয়েছে।(২২) জি২০ দেশগুলি তাদের অর্থনীতির জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও পরিষেবাগুলির দক্ষতা বিধান নিশ্চিত করতে সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিশীলতার উপর আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার জন্য সমালোচিত হয়েছে। গোষ্ঠীটি যেহেতু বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে, তাই ন্যায়সঙ্গত উন্নয়নের জন্য শ্রম অধিকার সমুন্নত রাখার জন্য একটি সুবিন্যস্ত উপায় প্রয়োগ করতে হবে।

  • ক্রমাগত সামাজিক বৈষম্য

সারা বিশ্বের মতো জি২০ দেশগুলিতে অভিবাসী-বিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, মিশরে সাব-সাহারান অভিবাসীদের বিরুদ্ধে হিংসা বৃদ্ধি পেয়েছে; সৌদি আরবে অভিবাসীদের নির্বিচারে আটক করা হয়েছে; এবং কানাডা, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনে অভিবাসীরা জাতি বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।(২৩) এটি অভিবাসন বিরোধী আইনের পক্ষে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক আন্দোলনের জন্ম দিয়েছে যা অভিবাসীদের অস্থায়িত্বের ধারণাকে জোরদার করছে এবং অনুন্নত দেশগুলিতে অভিবাসীদের অফশোরিং করছে (যেমন ব্রিটেন আশ্রয়প্রার্থীদের রোয়ান্ডায়(২৪) পাঠিয়ে দিচ্ছে)। স্থানীয় জনসাধারণ সাধারণত অভিবাসীদের সম্পর্কে এক নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। জি২০ দেশগুলিতে অভিবাসীদের ধারণার উপর ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন বা আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) দ্বারা করা ২০১৫ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, ইউরোপীয় জনসংখ্যার প্রায় ৫২ শতাংশ অভিবাসনকে নেতিবাচক ভাবে দেখেন এবং এ বিষয়ে সম্মত হয়েছে যে তাদের দেশে অভিবাসনের মাত্রা অবিলম্বে হ্রাস করা জরুরি।(২৫) অভিবাসীরা যেহেতু জি২০ দেশগুলির মধ্যে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, তাই শান্তিপূর্ণ ও দীর্ঘস্থায়ী বৃদ্ধিকে সুনিশ্চিত করার জন্য তাঁদের সঠিক সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি।

জি২০-র জন্য সুপারিশ

নীতিগত দ্বিধা জি২০-র কর্মসূচি এবং স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে। তবুও জি২০ দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতার উদ্দেশ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অবস্থানের মাধ্যমে শুধু শ্রম অনুশীলন এবং স্থিতিশীল অভিবাসন শৃঙ্খলকে উৎসাহ জোগানো যেতে পারে। এটি অভিবাসনের ভবিষ্যৎকে উন্নত করতে পারে, এমন সাধারণ মৌলিক আদর্শ এবং অনুশীলন তৈরির ভিত্তি হিসাবে কাজ করতে পারে। অগ্রগামীমূলক সংস্কারের জন্য জি২০ দেশগুলিকে নিম্নলিখিত উপায়ে নীতিগত পরিবর্তন আনতে হবে:

  • আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির সংস্কারমূলক অগ্রগতি

আইএলও-র মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির এমন ব্যবস্থা রয়েছে, যা মজুরি ও পেশাগত নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ করে এবং অভিবাসী শ্রমিকদের পরিবারগুলির জন্য সুরক্ষা প্রদান করে। কিন্তু এগুলি চিরাচরিত অভিবাসন নিদর্শনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছিল। তাই বলপূর্বক এবং স্বেচ্ছায় অভিবাসনের বর্তমান সঙ্কট মোকাবিলায় এ হেন ব্যবস্থা অপ্রতুল। আইএলও বর্তমানে সকলের জন্য ন্যায়সঙ্গত ও ন্যায্য বৃদ্ধি সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ও বিশ্বায়নের ভারসাম্য রক্ষা সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করছে।(২৬) জি২০ হল এমন এক আদর্শ মঞ্চ, যা আইএলও-র উচ্চাকাঙ্ক্ষায় ভারসাম্য অর্জনে সাহায্য করবে শুধু মাত্র এই কারণেই নয় যে এটি বেশ কয়েকটি বৃহত্তম অর্থনীতি দ্বারা নির্মিত, বরং একই সঙ্গে শ্রম ও অভিবাসী প্রবাহ এই দেশগুলির অর্থনৈতিক উন্নয়নকেও উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রভাবিত করে। জি২০ অতীতের সিদ্ধান্তগুলি মূল্যায়ন করতে এবং সেই অভিজ্ঞতাগুলি থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘লেসনস লার্নড ইউনিট’ অনুসারে একটি গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠার কথা বিবেচনা করতে পারে। এই ধরনের একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা অভিবাসন আইনগুলির সমালোচনামূলক বিশ্লেষণকে সক্ষম করার পাশাপাশি আশ্রয়দাতা দেশগুলিতে অভিবাসীদের প্রতি ব্যবহার সংক্রান্ত ব্যবস্থাগুলির বৃহত্তর সংস্কারকে উত্সাহিত করবে। এই ব্যবস্থাগুলি বৃহত্তর স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা তুলে ধরার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নীতি তৈরি করার জন্য একটি মঞ্চের প্রতিষ্ঠা করে। কোভিড-১৯ অতিমারি এবং অভিবাসীদের উপর এর অব্যবহিত প্রভাব আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিকে যে পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার প্রয়োজনীয়তাকেই তুলে ধরেছে। আইএলও-এর সহযোগিতায় রাষ্ট্রপুঞ্জের সেক্রেটারি জেনারেলের গ্লোবাল অ্যাক্সিলারেটর ইনিশিয়েটিভ হল বেকারত্ব মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে একটি ন্যায়সঙ্গত প্রক্রিয়া। এটি জার্মানি, বেলজিয়াম, ভারত এবং জাপানের মতো অনেক দেশ দ্বারা সমর্থিত এবং এটির আরও সুযোগ তৈরি করার সম্ভাবনা রয়েছে।(২৭) একই সঙ্গে, বলপূর্বক অভিবাসনকে কেবল মাত্র অস্থায়িত্বের একক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা উচিত নয়, বরং তার পরিবর্তে একটি দীর্ঘমেয়াদি আন্তঃদেশীয় আন্দোলনের উপায় হিসাবে তুলে ধরা উচিত, যার ফলে আশ্রয়দাতা দেশ এবং অভিবাসনের উৎস দেশটি উপকৃত হবে। এর ফল স্বরূপ, গ্লোবাল অ্যাক্সিলারেটর উদ্যোগের মাধ্যমে এই ধরনের পরিকল্পনাকে সমন্বিত করার জন্য আইএলও প্রক্রিয়ার সংস্কার একটি পারস্পরিক উপকারী শৃঙ্খল হিসাবে অভিবাসনকে তুলে ধরতে পারে।

  • দেশীয় নীতিতে আন্তর্জাতিক পরিকাঠামোর সমন্বিতকরণ

ন্যায়সঙ্গত এবং ন্যায্য বৃদ্ধি সুদৃঢ় করার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল সমসত্ত্বতার একটি প্রক্রিয়া, যা অভিবাসীদের জন্য মর্যাদাপূর্ণ ব্যবস্থাকে সুনিশ্চিত করে। তবে জি২০-র দেশগুলির সামনে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হল ভিন্ন ভিন্ন নীতি, যা তাদের নিজ নিজ এক্তিয়ারে অভিবাসীদের প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে। অভ্যন্তরীণ নীতিতে আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার সমন্বিতকরণের মাধ্যমে এটির পরিবর্তন করা যেতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই আন্তর্জাতিক কাঠামোগুলি তাদের প্রভাব দেখাতে বাধাপ্রাপ্ত হয়, যদি আশ্রয়দাতা দেশগুলি তাদের স্বাক্ষর বা অনুমোদন করতে ব্যর্থ হয়। এই পরিস্থিতিতে,আইনগত দায়বদ্ধতা প্রয়োগ করতে পারে এমন কোনও নিয়ন্ত্রক সংস্থা নেই। সুতরাং আন্তর্জাতিক প্রথাগত আইনে অন্তর্ভুক্ত দায়বদ্ধতার পরিকাঠামো তৈরির মাধ্যমে দেশগুলিকে অভিবাসীদের সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করতে পারে। আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া মৌলিক মানবাধিকারের নীতির নিরিখে একটি আইনি ভিত্তি প্রদান করায় তাই প্রতিটি জি২০ দেশের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যে এই ধরনের একটি প্রক্রিয়া কার্যকর করার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী আন্তঃদেশীয় অভিবাসন শৃঙ্খল প্রদান করা সম্ভব।

আইএলও, আইওএম এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের বিভিন্ন সংস্থা হল এমন প্রধান আন্তর্জাতিক সংস্থা, যেগুলি বিশ্বব্যাপী অভিবাসন ব্যবস্থাকে প্রভাবকারী নীতির প্রতিষ্ঠা করে। দেশগুলি আইএলও কনভেনশন ১০০, ১১১, ১৮২ এবং ১৯০ গ্রহণ করতে পারে, যা সমান পারিশ্রমিক, বৈষম্য ও বলপূর্বক শ্রমের বিরুদ্ধে সমান মজুরির উপর জোর দেয়।(২৮) ইউএন ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স এবং ইউএন গাইডিং প্রিন্সিপলস অন বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস দ্বারা প্রস্তাবিত নীতিগুলি গ্রহণ করার মাধ্যমে অভিবাসীদের উন্নয়ন সুনিশ্চিত করা যেতে পারে। এই ধরনের একটি উদ্যোগ সম্প্রতি ২০২২ সালের জি২০ বালি শীর্ষ সম্মেলনে গৃহীত হয়েছিল, যেখানে দেশগুলি আইএলও-এর সঙ্গে সহযোগিতায় সামাজিক ন্যায়বিচার এবং শালীন কাজের প্রতিশ্রুতি জোরদার করার লক্ষ্যে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে।(২৯) এই নীতিগুলির মূল ভাবধারাকে দেশীয় নীতিগুলির অনুমোদন এবং সমন্বিত করার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এটি বিদ্যমান নীতিগত দ্বিধাগুলির একটি বহুমুখী প্রতিক্রিয়া সুনিশ্চিত করবে। কারণ তারা শ্রম অভিবাসন ব্যবস্থাপনা ও তাদের দেশে বলপূর্বক অভিবাসীদের পুনর্বাসন এবং সমন্বিতকরণের একটি সামগ্রিক সমাধান প্রদান করবে।

  • অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় বহুপাক্ষিক সহযোগিতা

আন্তর্দেশীয় অভিবাসন শৃঙ্খলগুলি জি২০ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লেও এটিকে একটি বহুপাক্ষিক বাস্তবতার আলোকে দেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের শ্রম প্রবাহ থেকে সুফল পেতে এবং প্রত্যাবাসনের ন্যায্য ব্যবস্থাকে সুনিশ্চিত করতে জি২০ দেশগুলিকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সম্মত প্রশাসনিক দায়িত্বের পাশাপাশি এই ধরনের আন্তঃ-জি২০ স্ট্রিমলাইনিং একটি আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। এই আন্তঃসহযোগিতার কাঠামোটি সদস্য দেশগুলির মধ্যে একটি অভিবাসন শৃঙ্খলকে উত্সাহ জোগানোর পাশাপাশি শ্রম শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি প্রদান করবে এবং জি২০-র মধ্যে শ্রম বিনিময়ের আরও সুযোগ তৈরি করে দেবে। একটি আদর্শগত স্তরে জি২০ দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতাকে দৃঢ় করার জন্য মৌলিক মানবিক মূল্যবোধ এবং আদর্শগুলির উপর সাধারণ ঐকমত্যের একটি ‘প্রধান মূল্যবোধ’ ব্যবস্থা চালু করা অপরিহার্য, যে বিষয়ে জি২০ দেশগুলির একমত হওয়া এবং তার বাস্তবায়ন করা উচিত। এই আদর্শগুলি দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতার জন্য একটি সহজ উপায় তৈরি করার উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী নীতিগুলির পরিপূরক হওয়া জরুরি। বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক চুক্তিতে প্রায়শই প্রয়োগযোগ্যতার অভাব থাকার ফলে প্রধান মূল্যবোধ সংক্রান্ত এ হেন চুক্তি একটি স্থিতিশীল অভিবাসন ব্যবস্থা তৈরির দিকে পরিচালিত করবে। উপরন্তু, জি২০-কে বাধ্যতামূলক অভিবাসীদের পুনর্বাসনের জন্য একটি সু-সংজ্ঞায়িত কাঠামো স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে, যার প্রাথমিক লক্ষ্য হল সমন্বিতকরণের দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থার উপর নজর দেওয়া। জি২০ দেশগুলি শরণার্থীদের জন্য মর্যাদাপূর্ণ সামাজিক নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থান সংক্রান্ত কর্মসূচি সুনিশ্চিত করে, এমন নিয়ন্ত্রক সংস্কার গ্রহণ করতে পারে।। জি২০ সম্প্রদায়ের মধ্যে এই জাতীয় শৃঙ্খল বিশ্বব্যাপী অভিবাসন প্রশাসন ব্যবস্থাকে সশক্ত করতে পারে এবং একই সঙ্গে শরণার্থী ব্যবস্থাপনার বোঝাকে সুষ্ঠু ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

  • সুশীল সমাজের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি

আইনি প্রক্রিয়াগুলি প্রয়োগযোগ্য নিয়ন্ত্রক কাঠামোর জন্য একটি ভিত্তি প্রদানের নিরিখে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও সেগুলি দেশ ও সংস্থার ইচ্ছার দরুন সীমাবদ্ধ। আইএলও, আইওএম এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের কাঠামো এবং নীতির ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, যেখানে যতক্ষণ না কোনও সদস্য রাষ্ট্র প্রক্রিয়াগুলি স্বাক্ষর করে এবং অনুমোদন করে, ততক্ষণ তাদের প্রয়োগ সুনিশ্চিত করার জন্য খুব কম আইনি উপায় রয়েছে। একটি বিশ্বব্যাপী অভিবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য অভিবাসন ব্যবস্থাপনাকে কেবল মাত্র একটি আইনি বাস্তবতা ভাবার ঊর্ধ্বে ওঠা জরুরি। আইন প্রয়োগকারী ব্যবস্থার অতিরিক্ত এবং পরিপূরক, বিশেষ করে সুশীল সমাজের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই ধরনের পরিবর্তন আনা যেতে পারে। এই সংস্কারগুলি তখনই বাস্তবায়িত হতে পারে, যখন দেশগুলির অভ্যন্তরীণ পরিবেশ অভিবাসী ও শরণার্থীদের একত্র করার অনুকূল হয়। দেশগুলি যত অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির দিকে আলোকপাত করবে, অভিবাসনকে ততই নেতিবাচক ভাবে দেখা হবে। সরকারগুলি অভিবাসনকে সমর্থন করে এমন অভ্যন্তরীণ নীতিগুলি বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিলেও সরেজমিন পরিস্থিতি বৈষম্য, বর্ণবাদ এবং হিংসার ফলে এক অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশের জন্ম দিয়েছে। এর ফলস্বরূপ, স্থানীয় জনগণ যাতে এই ধরনের অন্তর্প্রবাহকে গ্রহণ করার জন্য সংবেদনশীল ও শিক্ষিত হয়ে ওঠে, তা সুনিশ্চিত করার জন্য দেশগুলিকে ব্যাপক দক্ষতা-নির্মাণ ব্যবস্থা গ্রহণের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। স্থানীয় সরকারি সংস্থা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে দ্বিমুখী সম্পৃক্ত করার জন্য যা যা করতে হবে, তা হল: শিক্ষামূলক কর্মসূচি ও স্থানীয় জনগণের প্রতি সংবেদনশীলতা প্রশিক্ষণ; এবং অভিবাসীদের ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ মডিউলের মাধ্যমে ক্ষমতায়ন করে তাদের দক্ষতা বাড়ানো, আইনি ভাষার ধোঁয়াশা কাটানো এবং অধিকারের সচেতনতায় সক্রিয় ভাবে সম্পৃক্ত হওয়া।


আরোপণ: নিধি পিপলানি কপূর, মৃণাল সুলে এবং বিদ্ধি ঠক্কর, ‘ইকুইটেবল গ্রোথ ইন দ্য টোয়েন্টিফার্স্ট সেঞ্চুরি: অ্যাড্রেসিং মাইগ্রেশন চ্যালেঞ্জেস থ্রু জি২০ মাল্টিল্যাটেরালিজম’, টি২০ পলিসি ব্রিফ, মে ২০২৩


পাদটীকা

১) রাওয়ান আলসামারি, ‘সৌদি আরবিয়া’জ লেবার রিফর্মস সিন অ্যাজ বিগ বুস্ট ফর প্রাইভেট সেক্টর’, আরব নিউজ, নভেম্বর ৪, ২০২০; ‘জার্মানি টু রিফর্ম ইমিগ্রেশন লজ’, স্মিথ স্টোন ওয়াল্টারস, এপ্রিল ৬, ২০২৩’ ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন সেন্ডস ইমিগ্রেশন বিল টু কংগ্রেস’, হোয়াইট হাউস প্রেস রিলিজ, জানুয়ারি ২০, ২০২১

২) মুল্কি আল-শর্মানি, ‘রিফিউজি মাইগ্রেশন টু ঈজিপ্ট: সেটলমেন্ট অর ট্রানজিট?’ ট্রানজিট মাইগ্রেশন ইন ইউরোপ, ২(২০১৪), ৫৫-৭৮

৩) আইরিস ইয়াশ, ‘রেসপন্সিবিলিটি অ্যান্ড গ্লোবাল লেবার জাস্টিস’, ইন রেসপন্সিবিলিটি ইন কনটেক্সট, স্প্রিঙ্গার (২০০৯)

৪) আন্দ্রিয়াজ ক্রেমার, ‘দ্য জি২০ অ্যান্ড বিল্ডিং গ্লোবাল গভর্ন্যান্স ফর ‘ক্লাইমেট রিফিউজি’, সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল গভর্ন্যান্স ইনোভেশন (২০১৭)

৫) ওইসিডি, ‘২০২১ অ্যানুয়াল ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশন অ্যান্ড ফোর্সড ডিসপ্লেসমেন্ট ট্রেন্ডস অ্যান্ড পলিসিজ রিপোর্ট টু দ্য জি২০’, ২০২১

৬) ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন, ‘এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ডিসেন্ট ওয়ার্ক ইন রিফিউজি অ্যান্ড আদার ফোর্সড ডিসপ্লেসমেন্ট কনটেক্সটস’, ডিসেম্বর ৩, ২০২০

৭) অমৃতা নার্লিকার, ‘ক্যান দ্য জি২০ সেভ গ্লোবালাইজেশন?’ জার্মান ইনস্টিটিউট অব গ্লোবাল অ্যান্ড এরিয়া স্টাডিজ (গিগা), (২০১৭)

৮) নীল এসিপোভা; জুলি রে, ‘হাউ দ্য জি২০ ভিউজ মাইগ্রেশন’, (দি ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন, ২০১৫)

৯) ‘দ্য জি২০ অ্যান্ড মাইগ্রেশন’, মাইগ্রেশন ডেটা পোর্টাল, জানুয়ারি ৩১, ২০২২

১০) ‘দ্য জি২০ অ্যান্ড মাইগ্রেশন’

১১) ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ডিভিশন, ‘ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেন্ট স্টক’, ২০২০

১২) আরতি রত্নম, ‘জি২০ কান্ট্রিজ: হাউ মাইগ্রেন্টস ক্যান এড ইকোনমিক গ্রোথ’, ওআরএফ, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২

১৩) রত্নম, ‘জি২০ কান্ট্রিজ: হাউ মাইগ্রেন্টস ক্যান এড ইকোনমিক গ্রোথ’

১৪) রত্নম, ‘জি২০ কান্ট্রিজ: হাউ মাইগ্রেন্টস ক্যান এড ইকোনমিক গ্রোথ’

১৫) রত্নম, ‘জি২০ কান্ট্রিজ: হাউ মাইগ্রেন্টস ক্যান এড ইকোনমিক গ্রোথ’

১৬) ওইসিডি, ‘প্রোমোটিং হেলদি এজিং’, ওইসিডি, অক্টোবর ১৯, ২০১৯

১৭) জোকা কোচান, জোভান্নি পেরি, মাগালি পিনাত এবং দিমিত্রি রোজকোভ, ‘দি ইমপ্যাক্ট অফ ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশন অন ইনক্লুসিভ গ্রোথ’, আইএমএফ, ২০২১

১৮) ওইসিডি, ২০২১ মাইগ্রেশন অ্যান্ড ফোর্সড ডিসপ্লেসমেন্ট ট্রেন্ডস

১৯) ওইসিডি, ২০২১ মাইগ্রেশন অ্যান্ড ফোর্সড ডিসপ্লেসমেন্ট ট্রেন্ডস

২০) ওইসিডি, ২০২১ মাইগ্রেশন অ্যান্ড ফোর্সড ডিসপ্লেসমেন্ট ট্রেন্ডস, ১২

২১) আইএলও, ‘৫০ মিলিয়ন পিপল ওয়ার্ল্ডোয়াইড ইন মডার্ন স্লেভারি’, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২

২২) ‘জি৭ ট্রেড মিনিস্টারস’ স্ট্রং স্ট্যান্স এগেইন্সট ফোর্সড লেবার ইন সাপ্লাই চেনস ইজ ওয়েলকাম, বাট মাস্ট বি ফলোড বাই কংক্রিট অ্যাকশন অন ফোর্সড লেবার অ্যান্ড আদার হিউম্যান রাইটস অ্যাবিউজেস সেজ ইউএন এক্সপার্ট গ্রুপ’, ওএইচসিএইচআর, নভেম্বর ২, ২০২১

২৩) সের্তান স্যান্ডারসন, ‘সাব-সাহারান মাইগ্রেন্টস ইন ঈজিপ্ট সাবজেক্ট টু ইনক্রিজিং অ্যাবিউস অ্যান্ড ভায়োলেন্স’, ইনফো মাইগ্রেন্টস, জানুয়ারি ৬, ২০২০; অবন্তী আধিয়া, ‘ভায়োলেন্স এগেইন্সট ইমিগ্র্যান্ট ইয়ুথ ইন কানাডা’, জেএএমএ নেটওয়ার্ক, মার্চ ৪, ২০২০

২৪) পিটার ওয়ালশ, ‘দি ইউকে’জ পলিসি টু সেন্ড অ্যাসাইলাম সিকারস টু রোয়ান্ডা’, দ্য মাইগ্রেশন অবজার্ভেটরি, জুন ১০, ২০২২; সোফিয়া আহমেদ, ‘হোয়াট ইজ দ্য ট্রাম্প-এরা ‘রিমেইন ইন মেক্সিকো’ প্রোগ্রাম?’ রয়টার্স, জুন ৩০, ২০২২

২৫) এসিপোভা, ‘হাউ দ্য জি২০ ভিউজ মাইগ্রেশন’

২৬) কেরি রিটিক, ‘দি আইএলও: চ্যালেঞ্জেস ইন টাইমস অব ক্রাইসিস’, ইন্টারন্যাশনাল লেবার রিভিউ, ১৫৪ (২০১৫)

২৭) আইএলও, ‘আইএলও কলস অন জি২০ টু সাপোর্ট দ্য ‘গ্লোবাল এ্যকসিলেটর ফর জবস অ্যান্ড সোশ্যাল প্রোটেকশন’, প্রেস রিলিজ, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২

২৮) আইএলও, ‘আইএলও কনভেনশনস’, মার্চ ২০, ২০২৩

২৯) আইএলও, ‘জি২০ কমিটিমেন্ট টু সোশ্যাল জাস্টিস অ্যান্ড ডিসেন্ট ওয়ার্ক ওয়েলকামড বাই আইএলও’, প্রেস রিলিজ, নভেম্বর ১৬, ২০২২

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Mrunal Sule

Mrunal Sule

Mrunal Sule Supervisor Symbiosis Centre for European Studies Symbiosis International (Deemed University) India

Read More +
Nidhi Piplani Kapur

Nidhi Piplani Kapur

Nidhi Piplani Kapur Irish Research Council PhD Scholar-Internationalisation at Home South East Technological University Ireland: Head Symbiosis Centre for European Studies Symbiosis International (Deemed University) ...

Read More +
Viddhi Thakker

Viddhi Thakker

Viddhi Thakker graduate student (International Security) at Sciences Po Paris

Read More +