Author : Priya Rampal

Published on Mar 17, 2024 Updated 1 Days ago

নারীর ক্ষমতায়নে বেশ কিছু অগ্রগতি হলেও অবৈতনিক পরিচর্যার কাজ এখনও মূলধারার অর্থনীতিতে অবমূল্যায়িত এবং উপেক্ষিত রয়ে গিয়েছে।

সহায়ক নীতির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন

এই নিবন্ধটি ইন্টারন্যাশনাল উইমেন’স ডে সিরিজের অংশ।


আবহমান কাল ধরে ভারতে এবং সম্ভবত সারা বিশ্বে চিরাচরিত লিঙ্গ ভূমিকার অর্থ হল এই যে, গৃহস্থালির সুবিশাল কাজের বোঝা বাড়ির নারীদের পরেই ন্যস্ত হয়। সময় বদলালেও এখনও কেউ গৃহস্থালির কাজের জন্য বেতন পা না। সামগ্রিক ভাবে, জাতীয় আয় গণনা করার জন্য প্রাথমিক ভাবে নারীদের দায়িত্বে থাকা গৃহস্থালির কাজ বা পরিচর্যামূলক কর্মকাণ্ডকে অনুৎপাদনশীল বলে মনে করা হয় কারণ সেগুলি দেশের মোট উন্নয়ন পণ্যে বা গ্রস ডেভেলপমেন্ট প্রোডাক্টে (জিডিপি) কোনও মাত্রা যোগ করে না। এটি সম্ভবত দর্শায় যে, নারীদের দ্বারা সাধিত এত গুরুত্বপূর্ণ অবদানসমূহ এমন একটি বিশ্বে অলক্ষিতই রয়ে গিয়েছে, যেখানে অর্থই আসলে সাফল্য পরিমাপের সবচেয়ে সহজ মাপকাঠি। জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয় বা ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিস (এনএসও) দ্বারা পরিচালিত প্রথম বার সময় ব্যবহার সমীক্ষা বা টাইম ইউজ সার্ভে (টিইউএস) - যা ২০১৯ সালে পরিসংখ্যান ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন মন্ত্রকের একটি শাখাও বটে – দর্শিয়েছে যে, একজন গড় ভারতীয় নারী ২৪৩ মিনিট অবৈতনিক পরিচর্যামূলক কার্যক্রম এবং গৃহস্থালির কাজে ব্যয় করেন, যা কিনা একজন গড় পুরুষের ব্যয় করা সময়ের প্রায় ১০ গুণ।

 

এক জন অপুষ্টিতে ভোগা মায়ের অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর জন্ম দেওয়া আশঙ্কা বেশি, যা ভবিষ্যতের পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সন্তানের উপার্জনের উপর প্রভাব ফেলে।

 

সারা বিশ্বে আনুষ্ঠানিক অনানুষ্ঠানিক ক্ষেত্রে ব কেয়ারগিভার বা যত্নপ্রদানকারীদের মধ্যে ৮১ শতাংশই নারী এবং তাঁরা পুরুষদের তুলনায় এ ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ বেশি সময় ব্যয় করে থাকেন। পুরুষরা বর্তমানে যত্নপ্রদানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেও ভারতে নারীরা এখনও নিজের পরিবারের অসুস্থ বা অক্ষমদের যত্ন নেওয়ার দ্বিগুণ ভার বহন করে থাকেন এর পাশাপাশি প্রথম এক হাজার দিনকে অপারচুনিটি অফ উইন্ডো বা সুযোগের জানালা হিসাবে উল্লেখ করা হয়অর্থাৎ গর্ভাবস্থা এবং একটি শিশুর দ্বিতীয় বছরের জন্মদিনের মধ্যে ১০০০ দিনই হল এই সুযোগের জানালা, যা জরায়ুর মধ্যে থাকার সময় থেকে একটি শিশুর জ্ঞানগত শারীরিক বিকাশের উপর ইতিবাচক প্রভাবের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল। সুতরাং প্রথম ২৭০ দিনে ভ্রুণের স্বাস্থ্য পুষ্টি সম্পূর্ণ রূপে মায়ের উপর নির্ভরশীল। এক জন অপুষ্টিতে ভোগা মায়ের অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর জন্ম দেওয়াই আশঙ্কা বেশি, যা ভবিষ্যতের পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সন্তানের উপার্জনের উপর প্রভাব ফেলে।

ভারতে গ্রামীণ এলাকায় জল বয়ে আনাকে সাধারণত নারীদের কাজ বলে ধরে নেওয়া হয়, যা নারীদের উপর জলের লভ্যতার বোঝা চাপিয়ে দেয়। এই দায়িত্ব অর্পিত হওয়ায় মেয়েরা স্বাভাবিক ভাবেই স্কুল ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ভারতে নারীরা কাঠ সংগ্রহ করতে বছরে গড়ে প্রায় ৩৭৪ ণ্টা ব্যয় করে থাকেন প্রকৃতপক্ষে, পরিচর্যা পরিবারের দায়িত্ব - যা নারীদের দায়িত্ব বলে মনে করা হয় - সেগুলি তাঁদের এমন চাকরি খুঁজতে বাধ্য করে, যা তাঁদের প্রকৃত সম্ভাবনার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ হয় না এবং যখন নারীদের নিজের সম্ভাবনার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ কর্মসংস্থান খুঁজে পান, তখন তাঁদের পুরুষদের তুলনায় কম বেতন দেওয়া হয়।

গৃহস্থালির কাজে নারীদের অবদান, যেমন রান্না করা, জামা-কাপড় কাচা ও বাড়ি পরিষ্কার রাখা, জল আনা শিশুকে বহন করা থেকে শুরু করে তাদের যত্ন নেওয়া এবং পরিবারের অন্যান্য বয়স্ক, নানা ভাবে অক্ষম বা অসুস্থ ব্যক্তিদের যত্ন নেওয়ার কাজগুলিকে কোনও মতেই খাটো করা যায় না।

 

ভারতে গ্রামীণ এলাকায় জল বয়ে আনাকে সাধারণত নারীদের কাজ বলে ধরে নেওয়া হয়, যা নারীদের উপর জলের লভ্যতার বোঝা চাপিয়ে দেয়।

 

কেন নারীরা এই ধরনের কাজ করেন? এর উত্তর সহজ নয়। জীববিজ্ঞান মাতৃত্বের প্রবৃত্তি গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কারণ এতে হরমোন, স্নায়বিক এবং জিনগত প্রসঙ্গ জড়িত থাকে, যা মায়ের আচরণ একজন প্রাকৃতিক যত্নশীলের প্রবৃত্তিকে প্রভাবিত করে। যাই হোক, মাতৃত্বের প্রবৃত্তি শুধু মাত্র কোনও জৈবিক ঘটনা নয়, বরং তা সামাজিক ও সাংস্কৃতিকও বটে। শৈশব থেকেই অনেক মেয়েকে অন্যের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব পালন করতে শেখানো হয়। এটা ধরে নেওয়া হয় যে, একজন নারী স্বাভাবিক ভাবেই যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে ভাল এবং কোনও বাড়িতে এই কাজগুলির বেশির ভাগই নারীদের কাঁধেই চাপিয়ে দেওয়া হয়।

ভারতের সংবিধান লিঙ্গ সমতার নীতিকে সমর্থন করে এবং রাজ্যগুলিকে নারীদের জন্য ইতিবাচক ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করে। নারীরা যে সব কার্যক্রম সাধন করেন, তার জটিল প্রকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে - যাকে অনেকটা ওয়াটার-ডায়মন্ড প্যারাডক্সের মতো অনুৎপাদনশীল বলে মনে করা হয় - এমন একাধিক নীতি গৃহীত হয়েছে, যা নারীর ক্ষমতায়নের প্রচার চালায়। নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম (২০২৩) বিলটি লোকসভা, রাজ্য বিধানসভায় নারীদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে পাস করা হয়েছে। ওয়াশ (জল, পয়ঃপ্রণালী ও স্বাস্থ্যবিধি) এবং সাক্ষরতা স্বাস্থ্যের ফলাফলের উপর প্রত্যক্ষ ভাবে প্রভাব ফেলে হেন প্রকল্পগুলি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে নারীদের সম্পৃক্ত করলে, তা তাঁদের সামাজিক ভাবে অন্তর্ভুক্ত করবে এবং লিঙ্গ সমতাকে আরও সুনিশ্চিত করবে। বৃহত্তর লিঙ্গ সমতা আবার এ কথাও সুনিশ্চিত করবে যে, নারীরাও যেন বেতনের ক্ষেত্রে সমানাধিকার পা। আর্থিক স্বাধীনতা অর্জনে নারীদের সহায়তা করার জন্য ইতিমধ্যেই কয়েকটি প্রকল্প গৃহীত হয়েছেনারীরা প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা, স্ট্যান্ড-আপ ইন্ডিয়া এবং সরকার কর্তৃক সূচিত প্রাইম মিনিস্টার’স এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রামের (পিএমইজিপি) মতো প্রকল্পগুলির সাহায্যে নিজস্ব উদ্যোগ শুরু করতে পারেযোজনা (পিএমইউওয়াই) নারীদের দূষণহীন রান্নার জ্বালানি সরবরাহ করতে এবং জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের বোঝা থেকে তাঁদের মুক্তি দিয়ে সুস্থ রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ। তবে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য আরও সরকারি নীতি ও উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন

 

নারীরা যে সব কার্যক্রম সাধন করেন, তার জটিল প্রকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে - যাকে অনেকটা ওয়াটার-ডায়মন্ড প্যারাডক্সের মতো অনুৎপাদনশীল বলে মনে করা হয় - এমন একাধিক নীতি গৃহীত হয়েছে, যা নারীর ক্ষমতায়নের প্রচার চালায়।

 

নারীদের অবশ্যই নিজেদের অন্তর্নিহিত মূল্য স্বীকার করতে হবে এবং নিজেদের প্রশংসা করার পাশাপাশি তাঁরা যে কাজের তাত্পর্য প্রদান করে থাকেন, সে বিষয়ে নিজেদেরকেই স্বীকৃতি দিতে হবে। এটি শুধু মাত্র পরিবারের মধ্যে শিশুদের লালন-পালন করা গৃহস্থালির কাজ করার প্রবণতার মতো প্রথাগত যত্নশীল ভূমিকাকেই অন্তর্ভুক্ত করে না, তার পাশাপাশি তা প্রায়শই অস্বীকৃত মানসিক শ্রম সহায়তাতে প্রসারিত হয়, যা নারীরা জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রদান করে থাকেন। নারীদের অমূল্য অবদান ছাড়া পৃথিবী বাঁচবে না।

 


প্রিয়া রামপাল দিল্লির অক্সফোর্ড পলিসি ম্যানেজমেন্টের কোয়ান্টিটেটিভ লিড এবং রাজস্থানের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি প্রকল্পগুলি পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করেন।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Priya Rampal

Priya Rampal

PriyaRampal is the quantitative lead at the Oxford Policy Management office in Delhi working on the monitoring and evaluation of health and nutrition programmes in ...

Read More +