Author : Nilanjan Ghosh

Published on Aug 15, 2021 Updated 0 Hours ago

বাংলাদেশ–ভারতের জল–সম্পর্কের ভবিষ্যত শুধু নয়াদিল্লি ও ঢাকা কী ভাবছে তা দিয়ে নির্ধারিত হবে না, সেই সঙ্গেই তা নির্ভর করবে কেন্দ্র–রাজ্য সম্পর্ক এবং আন্তঃসীমান্ত জল–নীতি  নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় অবস্থানের উপর।

বাংলাদেশ–ভারতের মধ্যে জল নিয়ে রাজনীতির নানা দিক

এই প্রবন্ধটি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী স্মারক সিরিজের অন্তর্গত


ভারত–বাংলাদেশের বন্ধুত্ব আরও সুদৃঢ় হল ২০২১ সালের ৯ মার্চ, দুই নদীতটবর্তী দেশের প্রধানমন্ত্রীদের বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী ফেনি নদীর ওপর ‘‌মৈত্রী সেতু’‌ উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে। বাংলাদেশের জন্মের পর থেকেই বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্ক ব্যাখার ক্ষেত্রে জল একটা গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক হয়ে উঠেছে। মোট ৫৪টি নদী একে অপরের সীমান্ত অতিক্রম করছে। দুই দেশের ৫০ বছরের জল কেন্দ্রিক রাজনৈতিক সম্পর্কটি এক কথায় বলতে গেলে ”অম্লমধুর”। এই “অম্লতা”র সুত্রপাত আজকের বাংলাদেশ যখন পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্গত ছিল সেই সময়কার ভারত–পাকিস্তান সম্পর্কের ফল। সেই অম্লতার কিছু কারণকে নির্দিষ্ট করা গেলেও, সবগুলোকে করা এখনও সম্ভব হয় নি।

বাংলাদেশ–ভারত আন্তঃসীমান্ত জল–সম্পর্ককে দেখতে হবে গঙ্গা–ব্রক্ষ্মপুত্র–মেঘনা অববাহিকার ভৌগোলিক ক্ষেত্রের পরিপ্রেক্ষিতে। এখনও পর্যন্ত দুই দেশের জল কেন্দ্রিক রাজনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সব থেকে বিবাদস্পদ বিষয় হল ফারাক্কা ব্যারেজের বিষয়টি। ব্যারেজটি বাংলাদেশ সীমান্তের থেকে উজানে মোটামুটি ১৬.‌৫ কিমি দূরে।‌ বিবাদের শুরু সেই সময়ে যখন ব্যারেজের নকশা তৈরি হচ্ছিল। সেই সময় বর্তমান বাংলাদেশ ছিল পূর্ব পাকিস্তানে। ১৯৭৫ সাল থেকে ব্যারেজ চালু হল। ব্যারেজের মূল উদ্দেশ্য ছিল পলি সরিয়ে কলকাতা বন্দর বাঁচিয়ে তোলার জন্য ভাগীরথী–হুগলি নদীতে জলের প্রবাহ বাড়ানো। এদিকে বাংলাদেশের আশঙ্কা ছিল নদীর নীচের অংশে থাকা ব্যারেজ ও তার ফিডার ক্যানেল শুষ্ক মরসুমে বংলাদেশে যাওয়া মূল স্রোতে জল কমিয়ে দেবে। ১৯৯৬ সালের ভারত ও বাংলাদেশের গঙ্গাজল ভাগাভাগি চুক্তি বা গ্যাঞ্জেস ওয়াটার শেয়ারিং এগ্রিমেন্ট (‌জিডব্লুএ)‌ এই অচলাবস্থার অবসান ঘটায়। সেই সময় এই চুক্তিকে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন শাসকদল সমর্থন করেছিল, এবং বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী এই বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন।

বাংলাদেশভারত আন্তঃসীমান্ত জলসম্পর্ককে দেখতে হবে গঙ্গাব্রক্ষ্মপুত্রমেঘনা বদ্বীপের ভৌগোলিক ক্ষেত্রের পরিপ্রেক্ষিতে।

এই চুক্তিতে ফারাক্কা ব্যারেজ দিয়ে শুকনো মরসুমে, অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মে মাসে, কতটা জল প্রবাহিত হবে তার তালিকা দেওয়া হয়েছিল। তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, ভারত কঠোরভাবে তা মেনে চলেছে। এখানে উল্লেখ করা য়েতে পারে যে, যুগ্ম নদী কমিশনের থেকে পাওয়া কিছু সাম্প্রতিক তথ্য বলছে ব্যারেজ থেকে যতটা জল ছাড়া হয়েছে তার তুলনায় বাংলাদেশ তার প্রথম পরিমাপ স্টেশন, অর্থাৎ হার্ডিঞ্জ ব্রিজে, অনেক বেশি জল পেয়েছে। এই অতিরিক্ত জলের প্রবাহের কারণ হয় মহানন্দা ও পাগলা দিয়ে বেশি জল আসা — এই দুটি নদীই ভারত সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশ গঙ্গার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে — অথবা মাটির তলা দিয়ে প্রবাহিত জল উপরে চলে আসা। প্রকৃত কারণ যে কি তা এখনও বার করা হয়নি।

উপরের তথ্যটি একদিকে সুসংবাদ হলেও অন্যত্র সমস্যার কারণ। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে ফারাক্কা ব্যারেজকে ‘রিডাকশনিস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং প্যারাডাইমে’ নিরিখে ভাবা হয়েছিল, যা শুধুই নদী উপত্যকায় ব্যবহারযোগ্য কতটা জল রয়েছে তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করে। উপত্যকার বৃহত্তর বাস্তুতন্ত্রের দিকে তা দৃষ্টি দেয় না। এই পরিস্থিতিতে জিডব্লুএ হল সেই ক্ষুদ্রতর বৃত্ত নিয়ে ভাবনাচিন্তার ফসল যা ভারতের জলসংক্রান্ত শাসনব্যবস্থার মধ্যে নিয়ে এসেছে ‘গাণিতিক জলবিদ্যা’‌। হিমালয় থেকে আসা গঙ্গার মত নদীগুলো প্রচুর পরিমাণ পলি নিয়ে আসে যা মৃত্তিকায় পরিণত হয় এবং জমির উর্বরতা বাড়ায়- একথা জিডব্লুএতে কোন উল্লেখ পায় নি। সেজন্যই এই চুক্তিতে শুধু জলের প্রবাহের বিষয়টির উল্লেখ আছে, কিন্তু পলি নিয়ে কী করা হবে অথবা বাস্তুতন্ত্রের ক্ষেত্রে তার কী ভূমিকা আছে সেসব নিয়ে কোনও কথা নেই।

গঙ্গা জল বন্টন চুক্তির (‌জিডব্লুএ)‌ মেয়াদ ছিল ৩০ বছরেরআর সেই মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে ২০২৬ সালে। কাজেই ২০২৬ সালের পরবর্তী সময়ের প্রস্তুতির জন্য পলি এবং বদ্বীপ সংক্রান্ত উদ্বেগের বিষয়গুলি মাথায় রেখে আলোচনা চালানো আবশ্যিক

ফারাক্কা ব্যারেজের উজানে পলি আটকে যাওয়ার ফলে এই অনুযোগ সামনে আসছে যে তা বদ্বীপের মৃত্তিকা গঠন প্রক্রিয়াকে বাধাপ্রাপ্ত করছে, এবং তার ফলে সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশের উপরেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এখানে এমন ধারণা আছে যে এই বদ্বীপ মূলত কোশী নদীর (‌নেপাল থেকে আসা গঙ্গার উপনদী)‌ বয়ে আনা পলি দিয়ে তৈরি হয়েছিল, যা এখন ব্যারেজে আটকে যাচ্ছে। তার ফলে উপত্যকার বাস্তুতন্ত্রের সেই গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক পরিষেবা রুদ্ধ হচ্ছে যা বদ্বীপের মৃত্তিকার পুনরুজ্জীবন ঘটাত। এই বদ্বীপ ইতিমধ্যেই সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, জমিতে লবণাক্ত জল ঢুকে পড়া এবং সেই কারণে ভূমি হারানোর শিকার হয়েছে। ‌জিডব্লুএর‌ মেয়াদ ছিল ৩০ বছরের, আর সেই মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে ২০২৬ সালের শেষে। কাজেই ২০২৬ সালের পরবর্তী সময়ের প্রস্তুতির জন্য পলি এবং বদ্বীপ সংক্রান্ত উদ্বেগের বিষয়গুলি মাথায় রেখে আলোচনা চালানো আবশ্যিক। তাহলে বাংলাদেশ-ভারত জল কূটনীতির ক্ষেত্রে আরেকটি নতুন মাত্রা যুক্ত হতে দেখা যাবে।

জিডব্লুএ বা ফেনী নদীর উপর মৈত্রী সেতু উভয় দেশের জল–কূটনীতির ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক দিক হলেও তিস্তা দুই নদী দেশের মধ্যে এখনও বিবাদের কারণ হয়ে রয়েছে। মূল সমস্যাটা হল শুকনো মরসুমে (‌ডিসেম্বর থেকে মে মাসে)‌ জলপ্রবাহের বন্টন নিয়ে। এই সময়টা হল সেই সময় যখন পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ- উভয় জায়গাতেই সেচনির্ভর বোরো ধান চাষ করা হয়। ১৯৮৩ সালে একটা অ্যাডহক সমঝোতায় ৩৯ শতাংশ জল ভারতকে এবং ৩৬ শতাংশ জল বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছিল, আর বাকি জল বন্টনের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। কিন্তু দু’বছরের মধ্যেই তার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। ১৯৮৪ সালের সুপারিশ অনুযায়ী ২০১১ সালে একটি চুক্তি করার জন্য বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের প্রয়াস পশ্চিমবঙ্গের আপত্তির কারণে রূপায়ণ করা সম্ভব হয়নি। এখন বাংলাদেশ অভিযোগ করছে যে উজান থেকে আসা জলের প্রবাহ কমে যাওয়ায় তাদের ধান এবং মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে, এবং পরিণতিতে জীবিকাহানি ঘটছে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান হল পশ্চিমবঙ্গে তিস্তার জলের সামগ্রিক প্রবাহ কমে গিয়েছে। তবে যেসব হিসাবের ভিত্তিতে এই ধরনের দাবি করা হচ্ছে তা নিয়ে আগে প্রশ্ন উঠেছে

জলবিদ্যাগত হস্তক্ষেপের দৌলতে সেচের উন্নতি হওয়ায় বাংলাদেশ  ভারত উভয় দেশেই শুকনো মরসুমে ধান চাষের বল্গাহীন ঝোঁক আরও বেড়েছে হয়েছেএবং তার উল্টো পথে হাঁটার কোনও ইচ্ছা কারোরই আছে বলে মনে হচ্ছে না।

অতীতে এই নিবন্ধের লেখক উত্তরবঙ্গের গাজলাডোবা থেকে তিস্তা–মহানন্দা লিঙ্ক ক্যানাল দিয়ে জল সরিয়ে এনে তা দিয়ে শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ির মতো ক্রমবর্ধমান নগরাঞ্চলের জলের চাহিদা মেটানো এবং লিঙ্ক ক্যানালের সংলগ্ন অঞ্চলে সেচের জমিতে বোরো ধান চাষের ব্যাপকতা ও আধিপত্যের কথা বলেছিলেন। শুকনো মরসুমে জলের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় সেচের মাধ্যমে বোরো ধানের উৎপাদন করার জন্য — এর জন্য জলের প্রয়োজন হল মোটামুটি ১৮০০–২৮০০ মিলিমিটার, অর্থাৎ জোয়ার বা রাগির মত অন্য শুকনো খাদ্যশস্যের ১০ গুণ। জলবিদ্যাগত হস্তক্ষেপের দৌলতে সেচের উন্নতি হওযায় বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশেই শুকনো মরসুমে ধান চাষের বল্গাহীন ঝোঁক আরও বেড়েছে, এবং তার উল্টো পথে হাঁটার কোনও ইচ্ছা কারোরই আছে বলে মনে হচ্ছে না। অবশ্য এর জন্য আরেকটা ঘটনাও দায়ী, তা হল ন্যুনতম মূল্য সহায়ক ব্যাবস্থা (মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস রেজিম) যা বাণিজ্য–শর্ত (বা terms-of-trade) বদলে দিয়ে ১৯৮০ ও ১৯৯০–এর দশক থেকে শুষ্ক খাদ্যশস্যের তুলনায় অনেক বেশি জমিতে ধান চাষ করতে আগ্রহী করে তুলেছে কৃষকদের ।

এদিকে উজানে আরও সমস্যা তৈরি করছে তিস্তার উপর নির্মিত অনেকগুলি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প (‌অন্তত ৩০টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হয় চালু হয়েছে না হলে পরিকল্পনা স্তরে রয়েছে এবং এর অধিকাংশই সিকিমে)‌। এখানের বেশিরভাগ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলিই রান অফ রিভার বা জলের স্বাভাবিক প্রবাহকে কাজে লাগায়। এতে জলের অভোগ্য (‌‌নন–কনজাম্পটিভ‌)‌ ব্যবহারের দাবিও করা হয়। যদিও উজানের প্রকল্পগুলির থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য দরকার হয় জলাধারের যেখানে টারবাইনের উপযোগী যথেষ্ট জল ধরে রাখতে হয়। এর ফলে জলের প্রবাহ বিঘ্নিত হয়। স্বল্প দূরত্বে অবস্থিত এই প্রকল্পগুলি একদিকে যেমন নদীকে খণ্ডিত করেছে, নদীর নীচের অংশকে শুকিয়ে দিচ্ছে তেমনই জৈব বৈচিত্র ও বাস্তুতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে উঠেছে। প্রকৃতপক্ষে শুস্ক মরসুমে নদীগুলি আক্ষরিক অর্থেই ‘মৃতপ্রায়’ হয়ে যাচ্ছে। এ হল স্বল্পমেয়াদি অর্থনীতির ধারণা যা দীর্ঘমেয়াদি প্রশ্নগুলির গুরুত্ব নিয়ে ভাবে না।

বর্তমানে তিস্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘‌সংঘাতমূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো’‌ বিষয়যেখানে কেন্দ্র  পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মধ্যে জলের ব্যবহার নিয়ে ভিন্নমত।

প্রাতিষ্ঠানিক ও শাসন সংক্রান্ত পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিস্তা নিয়ে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে তার মূল কারণ ভারতীয় সংবিধানে জল রাখা হয়েছে রাজ্যের বিষয় হিসাবে। ভারতীয় সংবিধানে যেভাবে জলসংক্রান্ত শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, তার ফলে পশ্চিমবঙ্গ অনিচ্ছুক থাকলে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনও চুক্তি করা কেন্দ্রের পক্ষে সম্ভব নয়। অতএব বর্তমানে তিস্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘‌সংঘাতমূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো’‌র বিষয়, যেখানে কেন্দ্র ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মধ্যে জলের ব্যবহার নিয়ে ভিন্নমত।

এখানে একথা বুঝতে হবে যে বাংলাদেশ–ভারতের জল–সম্পর্কের ভবিষ্যত শুধু নয়াদিল্লি ও ঢাকা কী ভাবছে তা দিয়ে নির্ধারিত হবে না, সেইসঙ্গেই তা নির্ভর করবে কেন্দ্র–রাজ্য সম্পর্ক এবং আন্তঃসীমান্ত জল–নীতি কী হবে তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় অবস্থানের উপর। জিডব্লুএ–র ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ তা কার্যকর করতে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল, আর তিস্তার ক্ষেত্রে তার উল্টো ঘটনা ঘটেছে। অতএব বাংলাদেশ–ভারত আন্তঃসীমান্ত জল–সম্পর্ক ভারতের দিক থেকে সব সময়েই হয়ে থাকবে এক ‘‌টু–লেভেল গেম’‌ বা দ্বিস্তরীয় খেলা।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.