Published on Aug 26, 2023 Updated 0 Hours ago

এই বছর গ্লোবাল পার্টনারশিপ অন এআই–এর সভাপতি হিসাবে ভারতের সামনে সুযোগ রয়েছে সাধারণ–উদ্দেশ্যসাধক এআই প্রযুক্তিগুলি ঘিরে আন্তর্জাতিক সংলাপে নেতৃত্ব দেওয়ার এবং দায়িত্বশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক এআই–এর জন্য চাপ দেওয়ার।

উদীয়মান প্রযুক্তি, উদীয়মান শক্তি: এআই–এর যুগে ভারত

গত কয়েক বছরে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিকট (এবং সম্ভবত, দূরের) ভবিষ্যতের সবচেয়ে বিশিষ্ট প্রযুক্তিগুলির অন্যতম হয়ে উঠবে। যাই হোক, এআই নিজে বা নিজের ভিতর থেকে একটি জড় একক সত্তা নয়, ‌বরং সাধারণ ভাবে শব্দটির ব্যবহার প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন ক্ষেত্রজুড়ে এবং তার বাইরেও বহু সদা–বিকাশশীল প্রাসঙ্গিক প্রযুক্তি ও প্রয়োগগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে। এই কারণেই ইতিমধ্যেই ব্যাপকভাবে প্রযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও এআই এখনও একটি ‘‌উদীয়মান’‌ প্রযুক্তি হিসাবে সমষ্টিগতভাবে শ্রেণিবদ্ধ, কারণ এর বিবর্তনের প্রবণতা এখনও উচ্চ ও তা অবিরাম ঘটে চলেছে। যদিও এআই–এর বিকাশ ও স্থাপনা প্রায় সম্পূর্ণ অপরীক্ষিত ক্ষেত্রে ঘটছে, এবং এর প্রভাব সময়ভিত্তিক ও স্থানিক ভৌগোলিক অঞ্চলে বিস্তৃত হবে, এটা বলা নিরাপদ যে বিশ্ব এখন এআই–এর একটি উত্তেজনাপূর্ণ ও ভীতিপ্রদ যুগে প্রবেশ করেছে।

ইতিমধ্যেই ব্যাপকভাবে প্রযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও এআই এখনও একটি ‘‌উদীয়মান’‌ প্রযুক্তি হিসাবে সমষ্টিগতভাবে শ্রেণিবদ্ধ, কারণ এর বিবর্তনের প্রবণতা এখনও উচ্চ ও তা অবিরাম ঘটে চলেছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০১৭ সালেই এর ইঙ্গিত দিয়ে বলেছিলেন, ‘’যে বর্তমান এআই প্রতিযোগিতায় নেতৃত্ব দেবে সেই বিশ্বের শাসক হবে।’‌’‌ তারপর থেকে প্রতি বছর এই ধারণাটি আরও শক্তিশালী হয়েছে। এআই নিয়ে নিয়মিত বিস্ময়কর অগ্রগতি হয়েছে, এবং বেশ কয়েকটি দেশ সুযোগ থাকতে থাকতে লাভের ভাগ পেতে দৌড়াদৌড়ি করছে। যদিও ভারত তার সমসাময়িক অনেকের তুলনায় বিলম্বে পথে নেমেছে, দেশটি অনেক দ্রুত নানা ধরনের অগ্রগতি করেছে এবং এখন বিশ্বব্যাপী এআই মানচিত্রে একটি উদীয়মান শক্তি হিসাবে স্বীকৃত। ভারত সরকারি পরিষেবা, প্রতিরক্ষা, ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে শিক্ষা, অর্থ, ও সৃজনশীল পেশা পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি শিল্পে কীভাবে এআই ব্যবহার করা যায় তার অন্বেষণ করেছে

যদিও এই সমসাময়িক রূপান্তরের একটি অংশ সরকারি উদ্যোগ এবং ফলস্বরূপ প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার দ্বারা পরিচালিত হয়েছে, বেসরকারি ও বিগ টেক কোম্পানি এবং অসংখ্য স্বদেশী এআই স্টার্টআপ কিন্তু অনেক পরিবর্তন এনেছে। ভারতীয় বাজার এবং মানব পুঁজিও এই ক্রান্তিকালীন পরিবর্তনের জন্য নিজেদের গড়ে তুলেছে, এবং ভারত এখন এআই দক্ষতার গভীরতায়  ও এআই প্রতিভা ঘনত্বের ক্ষেত্রে বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে, এবং অন্য সব জি২০ দেশের থেকে এগিয়ে আছে। ডেটা এবং এআই ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতের জিডিপি–তে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগ করবে বলে মনে করা হয়েছে, এবং আগামী পাঁচ বছরে নতুন এআই–সম্পর্কিত চাকরিগুলি ভারতীয় বাজারকে চালিত করার জায়গায় এসে পৌঁছেছে।

ভারত সরকারি পরিষেবা, প্রতিরক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে শিক্ষা, অর্থ ও সৃজনশীল পেশা পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি শিল্পে কীভাবে এআই ব্যবহার করা যায় তার অন্বেষণ করেছে।

তবে এআই–এর এই ব্যাপক প্রবাহের পাশাপাশি ভারতের বিশাল তথ্য প্রযুক্তি (আইটি) ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত চাকরি হারানোর বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে , যা এখনও অত্যাধুনিক গবেষণা ও উদ্ভাবনী দক্ষতার পরিবর্তে নিম্ন পর্যায়ের এআই প্রতিভা দিয়ে পরিপূর্ণ। এটি জেনারেটিভ এআই–এর বর্তমান যুগে  একটি বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক বিবেচ্য, যা গত বছরের শেষদিকে ওপেনএআই –এর অত্যন্ত জনপ্রিয় ও বহু ভাষার মডেল চ্যাটজিপিটি প্রকাশের পর আরও উজ্জীবিত হয়েছে। অবশ্যই অন্য যে কোনও ব্র্যান্ডের নতুন প্রযুক্তির মাত্রার মতোই জেন–এআই –ও যে দেশগুলির বিনিয়োগ ও বিকাশ করার ক্ষমতা রয়েছে তাদের অনেকগুলি সুযোগ ও প্রথম–প্রবর্তক সুবিধা প্রদান করে। ভারত একে গ্রহণে ধীরগতিতে এগিয়েছে, এবং তার কারণ মূলত তহবিলের অভাব এবং সরকার ও বিনিয়োগকারীদের এই প্রযুক্তি সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণা।

ভারত যদি এআই ফ্রন্টে তার ঊর্ধ্বগামী আরোহণ চালিয়ে যেতে চায়, তবে তার বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে জেন–এআই অন্তর্ভুক্তির ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকে উপেক্ষা করতে পারে না। শুধু তাই নয়, ভারতকে এআই–এর মতো অগ্রবর্তী প্রযুক্তিগুলিকে কেন্দ্র  করে আরও লক্ষ্যযুক্ত শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। এর সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ও বিবিধ প্রয়োগের জন্য এআই সিস্টেম তৈরি করার কাজে নিযুক্ত দেশীয় প্রযুক্তি সংস্থাগুলির জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় স্তরে আরও বেশি তহবিলের সংস্থানও গুরুত্বপূর্ণ, যাতে এআই ক্ষেত্রে পরবর্তী যুগান্তকারী উদ্ভাবন ভারতেই ঘটে। তার উপর ভারতের জন্য অগ্রাধিকার হওয়া উচিত এআই–সম্পর্কিত বাণিজ্য ও উন্নয়নে তার কৌশলগত অংশীদার দেশগুলির ও বহুপাক্ষিক গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে সহযোগিতা করা, এবং এখনকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) , কোয়াড ইত্যাদি ছাড়াও আরও বেশি দেশ বা গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হওয়া।।

ভারতের জন্য অগ্রাধিকার হওয়া উচিত এআই–সম্পর্কিত বাণিজ্য ও উন্নয়নে তার কৌশলগত অংশীদার দেশগুলির ও বহুপাক্ষিক গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে সহযোগিতা করা, এবং এখনকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), কোয়াড ইত্যাদি ছাড়াও আরও বেশি দেশ বা গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হওয়া।

দেশের এআই বিপ্লবের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তনের এই পর্যায়ক্রমিক বৃহত্তর ধারাবাহিকতাকে কার্যকর এবং সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে ভারতকে প্রথম যে পদক্ষেপটি করতে হবে তা হল এআই–কেন্দ্রিক নীতি প্রক্রিয়া ও ফলাফলগুলিকে শক্তিশালী ও বৈচিত্র্যময় করা, যাতে করে তার একটি ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা তৈরি থাকে। এই বিষয়টি নিয়ে গঠনমূলক কাজ ২০১৮ সালে শুরু হয়েছিল, যখন নীতি আয়োগ এআই–এর উপর ভারতের জাতীয় কৌশল প্রকাশ করেছিল। কিন্তু পরবর্তী পাঁচ বছরে এআই ঘিরে যথেষ্ট অগ্রগতির কারণে এটি এখন পুরনো হয়ে গিয়েছে, এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে এর সংশোধন করা এবং একে মানানসই করা প্রয়োজন। ইতিমধ্যে নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্র, জনগোষ্ঠী ও মন্ত্রকের জন্য অন্যান্য জাতীয় এআই নীতি তৈরি করা হয়েছে, কিন্তু এগুলি সীমিত প্রযোজ্যতা ও কার্যকারিতার খণ্ডিত প্রচেষ্টা। এই নীতিগুলির জন্য কোনও সরকারি পর্যবেক্ষণ বা মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নেই, এবং এআই–র জন্য একটি জাতীয় শীর্ষ সংস্থাও নেই যা বাস্তবে এই সব প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধান করতে পারে।

এই বছর এআই (জিপিএআই) বিষযক গ্লোবাল পার্টনারশিপ–এর সভাপতিত্ব যে ভারতের হাতে রয়েছে তা বিবেচনা করে বলা যায়, ভারতের সামনে সুযোগ এসেছে সাধারণ–উদ্দেশ্যসাধক এআই প্রযুক্তিগুলি নিয়ে আন্তর্জাতিক সংলাপে নেতৃত্ব দেওয়া এবং দায়িত্বশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক এআই–এর জন্য চাপ দেওয়ার, যা ভারতের কাছেও একটি নীতিগত অগ্রাধিকার। সরকার এ কথাও উপলব্ধি করেছে যে এআই–কেন্দ্রিক কাজ বিচ্ছিন্নভাবে করা যাবে না, এবং এর জন্য এআই নিয়ে জ্ঞান–চর্চাকারী সম্প্রদায়ের সমর্থন ও অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এই কারণেই সম্প্রতি এই বছরের শেষদিকে বার্ষিক জিপিএআই শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতিপর্বে বিভিন্ন গবেষণাপত্রের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে

সরকার এ কথাও উপলব্ধি করেছে যে এআই–কেন্দ্রিক কাজ বিচ্ছিন্নভাবে করা যাবে না, এবং এর জন্য এআই নিয়ে জ্ঞান–চর্চাকারী সম্প্রদায়ের সমর্থন এবং অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এই কারণেই সম্প্রতি এই বছরের বার্ষিক জিপিএআই শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তুতিপর্বে বিভিন্ন গবেষণাপত্রের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

সামনের দিনে ভারতকে একটি উদীয়মান এআই শক্তি হিসাবে তার বর্তমান অবস্থানকে ধরে রাখতে, শক্তিশালী করতে, এবং এগিয়ে নিয়ে যেতে তার এআই বাস্তুতন্ত্রের জন্য একটি হাইড্রা পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। তার জন্য মূল এআই দর্শন ও রোডম্যাপকে একটি শীর্ষ সংস্থা ও জাতীয় নীতিতে একত্র করতে হবে, এবং সেইসঙ্গে থাকবে বিভিন্ন স্তরে কার্যকর নীতি সংশ্লেষণ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য আলাদা ক্ষেত্রভিত্তিক নির্দেশিকা, মান ও কৌশল। সরকার, শিল্প, অ্যাকাডেমিয়া ও সুশীল সমাজের সমন্বিত অংশীদারিত্ব এই কাঠামোগত সেটআপ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। সেইসঙ্গে নতুন ও উদীয়মান এআই–ভিত্তিক প্রযুক্তিগুলির নিয়মিত মূল্যায়নের পাশাপাশি সেগুলির উপর জাতীয় স্তরে পদক্ষেপ করা উচিত, যাতে এই বিষয়টি নিশ্চিত করা যায় যে এই এআই যুগে ভারত ব্যর্থ হবে না এবং ভবিষ্যৎ হবে নিশ্ছিদ্র।


শিমোনা মোহন সেন্টার ফর সিকিউরিটি, স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড টেকনোলজি (সিএসএসটি), অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন–এর একজন গবেষণা সহকারী

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.