Author : Harsh V. Pant

Published on May 09, 2022 Updated 0 Hours ago

ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার প্রতি তার অবস্থান সত্ত্বেও ইউরোপের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে

প্রাচ্য-পাশ্চাত্য সম্পৃক্ততা

ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলেও ভারতের সঙ্গে পাশ্চাত্যের সম্পর্কের উন্নতি ত্বরান্বিত হয়েছে। মজার ব্যাপার হল যে, ইউক্রেন সংক্রান্ত পশ্চিমী ঐকমত্যের সঙ্গে সহমত হওয়ার জন্য ভারতের উপরে চাপ সৃষ্টি করা হবে বলে যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তার পরিবর্তে রাশিয়া সংক্রান্ত ভারতীয় নীতি এবং তার নেপথ্যের কারণগুলি সম্পর্কে এক ক্রমবর্ধমান বোঝাপড়া গড়ে উঠেছে। প্রকৃতপক্ষে ইউক্রেনের যুদ্ধ সত্ত্বেও ইউরোপ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে এবং উভয় দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব একগুচ্ছ বিষয়ের উপরে একযোগে  মনোনিবেশ করেছে।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লেইন সম্প্রতি ভারতে এসেছিলেন এবং তিনি স্পষ্ট ভাবে জলবায়ু পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র্যের হ্রাস, শক্তি ও ডিজিটাল রূপান্তর, সংযোগ ব্যবস্থা, নিরাপত্তা এবং ইন্দো-প্যাসিফিকে প্রতিরক্ষা ও সহযোগিতার উপর মনোনিবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত বছর মে মাসে ভারত-ইইউ নেতাদের যুগান্তকারী শীর্ষ সম্মেলনের হাত ধরে তিনি এ বছর ভারত সফরে এসেছিলেন, যে শীর্ষ সম্মেলন দেশ দু’টিকে পুনরায় বাণিজ্যিক আলোচনায় বাধ্য করে এবং যার ফলস্বরূপ উচ্চাভিলাষী ভারত-ইইউ সংযোগ অংশীদারিত্বের সূচনা হয়। ইউক্রেনের সঙ্কট দ্বিপাক্ষিক আলোচনার অংশ হলেও তা ডের লেইনের সফরের আসল উদ্দেশ্যকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি।

পাশ্চাত্যের শীর্ষ নেতাদের আপ্যায়ন জানানোর পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারত-ইউরোপীয় অংশীদারিত্বকে জোরদার করতে মে মাসের শুরুতে তিন ইউরোপীয় দেশ জার্মানি, ডেনমার্ক এবং ফ্রান্স সফরে গেছেন৷

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও যখন ভারত সফরে আসেন, তাঁরও দৃষ্টিভঙ্গি একই রকম ছিল। তিনি রাশিয়া প্রসঙ্গে মতপার্থক্যকে কম গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে সম্পর্কের পরিপূরকতার উপরে জোর দেন। অনেকেই পাশ্চাত্যের তুলনায় ইউক্রেন সংক্রান্ত নয়াদিল্লির ভিন্ন অবস্থানকে তুলে ধরলেও, জনসনের ভারতে আসার সিদ্ধান্ত তাঁর ভারত-ব্রিটেন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে কৌশলগত আঙ্গিকে দেখার মনোভাবকেই তুলে ধরে।

ভারতও তার অবস্থান নিয়ে রক্ষণাত্মক নয়। রাশিয়া প্রসঙ্গে নয়াদিল্লিও তার পশ্চিমী অংশীদারদের সঙ্গে স্পষ্ট অবস্থান বজায় রেখেছে যা বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় এবং নতুন ধারার। পাশ্চাত্যের শীর্ষ নেতাদের আপ্যায়ন জানানোর পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারত-ইউরোপীয় অংশীদারিত্বকে জোরদার করতে মে মাসের শুরুতে তিন ইউরোপীয় দেশ জার্মানি, ডেনমার্ক এবং ফ্রান্স সফরে গেছেন৷ বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ইতিমধ্যেই ২+২ সংলাপের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছেন, ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক কর্মসূচিকে আরও সুদৃঢ় করেছেন এবং একই সঙ্গে ভারত ইতিহাসের ভুল পক্ষ অবলম্বন করছে, এমন ধারণাকেও বদলে দিয়েছেন।

বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপনে ভারতের স্পষ্ট অবস্থান জাতীয় স্বার্থ চরিতার্থে নয়াদিল্লির একরোখা মনোভাবকেই দর্শায়। পাশ্চাত্য দেশগুলিকে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হলে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাগুলির সমাধান প্রদানেও তাদের অংশীদার হয়ে উঠতে হবে। মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের ভারতকে অতিরিক্ত রুশ তেল না কেনার পরামর্শের প্রতিক্রিয়ায় জয়শঙ্করের প্রত্যুত্তর ছিল, একটি মাত্র সন্ধেয় ইউরোপ যে পরিমাণ জ্বালানি কেনে, ভারতের এক মাসে কেনা মোট জ্বালানির পরিমাণ তার চেয়ে কম। জয়শঙ্করের এই প্রতিক্রিয়া নতুন আবিষ্কৃত আত্মবিশ্বাসকেই তুলে ধরে যে, নয়াদিল্লির সিদ্ধান্ত কৌশলগত বাধ্যবাধকতা দ্বারা চালিত হতে চলেছে৷

ইন্দো-প্যাসিফিকের মতো উল্লেখযোগ্য ভৌগোলিক অঞ্চলে তার কৌশলগত সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির অভিপ্রায়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলটির প্রধান লক্ষ্য হল নিজেকে এক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক শক্তি হিসেবে তুলে ধরার কাজে সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা।

গত কয়েক বছরে ভারতীয় বিদেশনীতির অন্যতম উল্লেখযোগ্য উদ্দেশ্য হল পাশ্চাত্যের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি, স্থিতিশীল সম্পর্ক গড়ে তোলা। নয়াদিল্লি সেই লক্ষ্য অর্জনে কিছু গুরুতর কূটনৈতিক পুঁজি ব্যয় করেছে এবং তার ফলাফলও স্পষ্ট। পশ্চিমী দেশগুলিকে অবশ্যই ভারতের পরিবর্তনশীল উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে উদ্ভূত ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছে।

ইন্দো-প্যাসিফিকের মতো উল্লেখযোগ্য ভৌগোলিক অঞ্চলে তার কৌশলগত সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির অভিপ্রায়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলটির প্রধান লক্ষ্য হল নিজেকে এক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক শক্তি হিসেবে তুলে ধরার কাজে সমমনস্ক দেশগুলির সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা। তার গ্লোবাল গেটওয়ে উদ্যোগ  চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের তুলনায় আরও নির্ভরযোগ্য বিকল্প হিসেবে আঞ্চলিক শক্তিগুলিকে পরিকাঠামোগত অংশীদারিত্ব প্রদানের একটি প্রচেষ্টা। এই বিন্যাসে ভারত-ই ইউ অংশীদারিত্ব অবশ্যই ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। বর্তমানে ভারতের প্রেক্ষিতে ব্রিটেন এবং ই ইউ-এর মধ্যে ইতিবাচক প্রতিদ্বন্দ্বিতা লক্ষ করা গেছে। ভারতের দিক থেকে এগুলি হল উল্লেখযোগ্য অংশীদারিত্ব, যেগুলির মাধ্যমে ভারত তার স্বার্থগুলি চরিতার্থ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

ইউক্রেন সঙ্কট পশ্চিমী শক্তিগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ক্ষুণ্ণ করার পরিবর্তে তাকে আরও সুসংহত করে তুললে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আর তাতেই নিহিত রয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় কূটনীতির প্রকৃত সাফল্য।


এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশিত হয় দ্য টেলিগ্রাফ-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.